অ্যাসাঞ্জের বিরুদ্ধে যৌন হেনস্থার অভিযোগ আনলেও মুক্তি পাওয়ায় খুশি

জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ মুক্ত হওয়াতে খুশি হয়েছেন সুইডিশ মানবাধিকার কর্মী আনা আরডিন।
কিন্তু জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জের বিরুদ্ধে তিনি যেসব অভিযোগ এনেছিলেন, তাতে মি. অ্যাসাঞ্জের মুক্তিতে খুশি না হওয়ার সব কারণ তার আছে।
১৪ বছর আগে যে দুইজন নারী উইকিলিকসের প্রতিষ্ঠাতা অ্যাসাঞ্জের বিরুদ্ধে যৌন হেনস্থার অভিযোগ এনেছিলেন তাদের মধ্যে আনা একজন।
জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জের বিরুদ্ধে আনা এসব অভিযোগ ছিল মারাত্মক এবং তিনি সবসময় তা অস্বীকার করেছেন।
সারা বিশ্বজুড়ে এগুলো নিয়ে গণমাধ্যমে হেডলাইন হয়েছে। সুইডেনে প্রত্যর্পণ এড়াতে সাত বছর ধরে লন্ডন অ্যাম্বাসিতে আশ্রয় চেয়ে লুকিয়ে থাকতে বাধ্য হয়েছেন অ্যাসাঞ্জ।
সুইডিশ কর্তৃপক্ষ ২০১৯ সালে অ্যাসাঞ্জের বিরুদ্ধে তাদের তদন্ত শেষ করে এবং প্রত্যর্পণ নিষেধাজ্ঞা বাতিল করে।
পরের পাঁচ বছর তিনি ব্রিটিশ কারাগারে থেকে যুক্তরাষ্ট্রে প্রত্যর্পণের বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন। বিপুল গোপনীয় তথ্য ফাঁসের অভিযোগে তার বিরুদ্ধে মামলা ছিল যুক্তরাষ্ট্রে।
এসব তথ্যের মধ্যে ইরাকে বেসামরিক লোকদের হত্যার মার্কিন সেনাবাহিনীর ফুটেজ রয়েছে। এমন কিছু নথিপত্র পাওয়া গেছে যেগুলোতে ইউএস সামরিক বাহিনী কয়েকশ আফগান বেসামরিক নাগরিককে হত্যা করেছে এমন ইঙ্গিত পাওয়া যায়।
যুক্তরাষ্ট্রের সাথে একটি চুক্তির পর গত মাসে অ্যাসাঞ্জকে মুক্তি দেয়া হয়।
উইকিলিকস নিয়ে অ্যাসাঞ্জের কাজের জন্য অত্যন্ত গর্বিত আরডিন। এজন্য তাকে কারারুদ্ধ করা উচিত হয়নি বলে তিনি মনে করেন।
তিনি বলেন, “আমাদের নামে যেসব যুদ্ধ হয় সেগুলি সম্পর্কে আমাদের জানার অধিকার আছে”।
“আমি তার এবং তার পরিবারের জন্য আন্তরিকভাবে খুশি যে তারা একসাথে থাকতে পারবে। যে অভিযোগে তিনি শাস্তি ভোগ করেছেন, সেটা ঠিক হয়নি,” বলেন তিনি।
স্টকহোমে জুমে আরডিনের সাথে কথা বলার সময় খুব তাড়াতাড়ি স্পষ্ট হয়ে যায় যে, তার মাথার ভেতরে থাকা অ্যাসাঞ্জের দুইটি ভিন্ন প্রতিরূপ রয়েছে। একজন হলো দূরদর্শী অ্যাকটিভিস্ট অ্যাসাঞ্জ, আবার এমন একজন মানুষ যিনি নারীদের যথার্থ সম্মান দেন না।
জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জকে তিনি একজন নায়ক বা ভিলেন- কোনোটাই চিহ্নিত করতে চান না। বরং তিনি একজন জটিল মানুষ বলে বর্ণনা করছেন।
৪৫ বছর বয়সী এই মানবাধিকার কর্মী একজন খ্রিস্টান ডিকন (চার্চের কর্মী) যিনি ক্ষমাতে বিশ্বাস করেন। “সত্য” এবং “স্বচ্ছতা” এই শব্দ দুটো বারবার তিনি সাক্ষাৎকারে উচ্চারণ করেছেন।
এটাকে এভাবে ব্যাখ্যা করা যেতে পারে যে, উইকিলিকস যা করেছে তাতে তিনি অভিভূত। কিন্তু একই সময়ে তিনি হতাশও বোধ করেন, কারণ অ্যাসাঞ্জের বিরুদ্ধে তিনি যৌন হেনস্থার যেসব অভিযোগ করেছেন সেগুলি কখনো আনুষ্ঠানিকভাবে বিচার হয়নি।
‘নো হিরোস, নো মনস্টারস: ইন্টারনেটে সবচেয়ে ঘৃণ্য মহিলা হিসেবে আমি যা শিখেছি’ নামে যে বই লিখেছেন আরডিন, তাতে অ্যাসাঞ্জের সাথে তার মুখোমুখি হওয়ার ঘটনার বর্ণনা দিয়েছেন।
উইকিলিকসে আফগান যুদ্ধের বিভিন্ন তথ্য প্রকাশের মাত্র তিন সপ্তাহ পরে ২০১০ সালে আরডিন তাকে স্টকহোমে আমন্ত্রণ জানান। সুইডেনের সোশ্যাল ডেমোক্র্যাটদের ধর্মীয় শাখার আয়োজিত একটি সেমিনারে অংশ নিতে তাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল।
নিরাপত্তার কারণে অ্যাসাঞ্জ হোটেলে থাকতে চান নি এবং আরডিনের সেই সময় অন্যত্র যাওয়ার কথা ছিল। ফলে অ্যাসাঞ্জকে তিনি নিজের ফ্ল্যাটে থাকার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। যদিও আরডিন তাড়াতাড়ি বাসায় ফিরে আসেন।
রাজনীতি এবং মানবাধিকার নিয়ে আলোচনা শেষে এক সন্ধ্যায় আরডিন, তার ভাষায় অনাকাঙ্ক্ষিত এক যৌন সম্পর্কের মুখোমুখি হয়েছেন বলে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেছেন, অ্যাসাঞ্জ তখন তাকে হেনস্থা করেছে।
আরডিন বলেছেন, তিনি অ্যাসাঞ্জের সাথে যৌন সম্পর্ক করতে রাজি ছিলেন যতক্ষণ তিনি কনডম ব্যবহার করেন ততক্ষণ। কিন্তু কনডম ছিঁড়ে গেলেও অ্যাসাঞ্জ তা চালিয়ে যান।
আরডিন সন্দেহ করেন যে অ্যাসাঞ্জ ইচ্ছাকৃতভাবে এটি ছিঁড়েছেন। সেটা হয়ে থাকে তাহলে অ্যাসাঞ্জ সম্ভবত সুইডিশ আইন অনুযায়ী অপরাধ করেছেন।
পরে, সেমিনারে অংশ নিয়েছেন এমন একজন নারী, আইনি কাগজপত্রে যার নাম এস ডব্লিউ বলে উল্লেখ করা হয়েছে, তার কাছ থেকেও অ্যাসাঞ্জের বিরুদ্ধে অভিযোগ শুনেছেন বলে আরডিন লিখেছেন। এস ডব্লিউ বলেছিলেন, তিনি ঘুমিয়ে থাকার সময়ে অনুমতি ছাড়াই অ্যাসাঞ্জ তার সাথে শারীরিক সম্পর্ক করেন।
তবে সুইডিশ প্রসিকিউটরদের কাছে ২০১৬ সালে দেয়া এক বিবৃতিতে অ্যাসাঞ্জ বলেছিলেন, এসডব্লিউর সাথে তার যৌন সম্পর্ক ছিল সম্পূর্ণ সম্মতিপূর্ণ। তিনি তার আইনজীবীদের সেই খুদে বার্তা দেখিয়েছিলেন যাতে ওই নারী একজন বন্ধুকে বলেছিলেন যে তিনি “আধো ঘূমে ছিলেন”।
দুইজন মহিলাই পুলিশের কাছে রিপোর্ট করেছেন। আরডিনের মামলাটি যৌন অসদাচরণের অভিযোগে এবং এস ডব্লিউর অভিযোগকে ধর্ষণের অভিযোগ হিসাবে নথিভুক্ত করা হয়েছিল।
এসব খবর গণমাধ্যমে ব্যাপকভাবে প্রচারিত হয় এবং পরবর্তীতে বেশি কিছু ঘটনা ঘটে।
অ্যাসাঞ্জ এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, তারা যুক্তরাষ্ট্রের সাজানো অভিযোগ করছেন। উইকিলিকস তখন মাত্র ৭৬ হাজার মার্কিন সামরিক নথি ফাঁস করেছে। যেগুলো ব্যাপক বৈশ্বিক মনোযোগ আকর্ষণ করেছে। এর ফলে মার্কিন পররাষ্ট্র নীতি যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়ায় পড়ে।
২০১০ সালের ২১শে আগস্ট উইকিলিকস টুইট করেছে: “আমাদেরকে ‘নোংরা কৌশলের’ বিষয়ে সতর্ক করা হয়েছিল। এখন আমরা প্রথমটির মুখোমুখি হয়েছি''।
পরের দিন আরেকটি পোস্ট করা হয়েছে: “ সতর্কতা: যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দারা ২০০৮ সাল পর্যন্ত উইকিলিকসকে ধ্বংস করার পরিকল্পনা করেছে”।
অ্যাসাঞ্জের যুক্তরাজ্যের আইনজীবী মার্ক স্টিফেনস দাবি করেছেন, একটি “হানিট্র্যাপ” (যৌনতার প্রলোভন) স্পষ্ট হয়ে উঠেছে এবং “নেপথ্য শক্তি” এতে কাজ করছে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটা ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছিল, যাতে আরডিনকে “নরক”(জঘন্য) হিসাবে বর্ণনা করেছে। আরডিন বিবিসিকে বলেন, কী পরিমাণ হয়রানি এবং মৃত্যুর হুমকি তাকে এক পর্যায়ে সুইডেন ছেড়ে যেতে বাধ্য করেছিল।
“আমি কাজ করতে পারছিলাম না। আমার জীবন থেকে দুই বছর শেষ হয়ে গিয়েছে” বলেন আরডিন।
এখন পর্যন্ত অনেকে বিশ্বাস করে যে আরডিন যুক্তরাষ্ট্রের ষড়যন্ত্রের একটি অংশ এবং তার অভিযোগগুলো মিথ্যা।
অ্যাসাঞ্জের দীর্ঘদিনের সমর্থক গ্রিসের সাবেক অর্থমন্ত্রী ইয়ানিস ভ্যারোফাকিস। গত সপ্তাহে আরডিনের দাবিগুলিকে ‘কর্দমাক্ত, নোংরা’এবং ‘কটাক্ষ’ হিসাবে বর্ণনা করেছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দাদের সাথে আরডিনের যোগসূত্রের কোনো প্রমাণ পাওয়া যায় নি। তিনি স্বীকার করেছেন যে অ্যাসাঞ্জ যেসব বার্তা ছড়িয়ে দিয়েছেন তাতে কিছুটা সম্ভাব্যতা রয়েছে, কারণ তিনি “পেন্টাগনের সাথে ঝামেলা” করেছিলেন। কিন্তু তার দাবীগুলো “মিথ্যা” এবং “একজন পাবলিক ফিগারকে মিথ্যা অভিযোগে অভিযুক্ত করার পরিকল্পনা” ছাড়া আর কিছুই নয়।
এই ঘটনার কয়েক মাস পরে অ্যাসাঞ্জের বিরুদ্ধে একটি আন্তর্জাতিক গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছিল। সেই সময় লন্ডনে ছিলেন তিনি।
২০১০ সালের ডিসেম্বরে বিবিসির কাছে তিনি বলেছিলেন যে, তিনি যে 'হানি ট্রাপের' শিকার হয়েছিলেন, সেটা হয়তো ঠিক না। কিন্তু তিনি কোন অন্যায় করেছেন বলে স্বীকার করেন নি।
অ্যাসাঞ্জ নিশ্চিত ছিলেন, যদি তিনি সুইডেনে যান তাহলে তাকে যুক্তরাষ্ট্রে পাঠানো হবে। যেখানে মৃত্যুদণ্ডের শাস্তি অপেক্ষা করছে বলে তিনি আশঙ্কা করেছিলেন। ২০১২ সালে তিনি লন্ডনে ইকুয়েডর দূতাবাসে আশ্রয় নেন।
তাকে যুক্তরাষ্ট্রে ফেরানো হবে না সুইডেন এই নিশ্চয়তা দিতে রাজি হয়নি। তবে, যেকোনো পদক্ষেপের ক্ষেত্রে যুক্তরাজ্যের অনুমোদন নেয়া হবে বলে জানিয়েছিল। তবে দুই দেশই বলেছে তারা যদি মনে করে যে তাকে মৃত্যুদণ্ডের মুখোমুখি হতে পারে তাহলে তাকে হস্তান্তর করবে না।
দীর্ঘ সময় চলে যাওয়ায় ২০১৫ সালে সুইডিশ প্রসিকিউটররা আরডিনের অভিযোগের তদন্ত বাদ দিয়েছিলেন।
এস ডব্লিউর যৌন অভিযোগের দাবির বিষয়ে ২০১৯ সালে প্রসিকিউটররা তদন্ত বাদ দিয়েছিল।
তারা বলেছিল, “ ঘটনা নিয়ে প্রশ্ন ওঠার পরে লম্বা সময় পার হওয়ার কারণে প্রমাণগুলো দুর্বল হয়ে গেছে”।
এ সময়ের মধ্যে লন্ডনের বেলমার্শের হাই সিকিউরিটি কারাগারে অ্যাসাঞ্জকে রাখা হয়েছিল। গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে যুক্তরাষ্ট্রে প্রত্যর্পণের চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয়েছিল তাকে। সেখানে দোষী সাব্যস্ত হলে ১৭০ বছরের কারাদণ্ডের মুখোমুখি হতে হতো তাকে।
যুক্তরাষ্ট্রের গুপ্তচরবৃত্তি আইনের একটি অভিযোগে দোষ স্বীকার করে দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পরে ২০২৪ সালে অ্যাসাঞ্জ অবশেষে মুক্তি পেয়েছিলেন।
আরডিন এখনও চান, অ্যাসাঞ্জ যৌন হেনস্থার জন্য বিচারের মুখোমুখি হন। “কিন্তু সে করবে না। তাই আমি এটা বাদ দিয়ে দিয়েছি।''
তিনি বলেন, কেউ কেউ তাকে গুরুত্ব সহকারে নেয় নি। কারণ তারা মনে করে না যে, তার অভিজ্ঞতা বা প্রতিক্রিয়া যথেষ্ট নাটকীয় ছিল।
তিনি বলেন, ''যৌন নিপীড়ন সবসময় নৃশংস হবে, ব্যাপক পরিমাণে সহিংসতা জড়িত থাকবে এবং ভিকটিমকে প্রচণ্ড ট্রমাটাইজ করে ফেলবে এমন একটা ধারণা রয়েছে। যদি তা না হয় তবে আপনি প্রকৃত ভিকটিম বা প্রকৃত অপরাধী হতে পারবেন না।''
কিন্তু আরডিন তার অভিজ্ঞতা হিসাবে যা বর্ণনা করেছেন তার সাথে এটি মেলে না।
অ্যাসাঞ্জের অনেক সমর্থক এবং সাংবাদিকদের “একটি একতরফা ঘটনা" খোঁজার জন্য তিনি ধিক্কার করেছেন। যেটা অ্যাসাঞ্জকে একজন নায়ক এবং তাকে একজন দুষ্ট সিআইএ এজেন্টে পরিণত করে।
“ আমি মনে করি আমাদের একটি সমস্যা আছে, যে আমাদের এই নায়কদের নিখুঁত হতে হবে। কিন্তু আসলে রূপকথার বাইরে নায়কদের অস্তিত্ব আছে বলে আমি মনে করি না ”।
আ্যাসাঞ্জকে একজন ওয়ান ডাইমেনশনাল ভিলেন হিসেবে চিহ্নিত করে সমাজ থেকে বের করে দেয়া তার উদ্দেশ্য ছিল না বলে জানান আরডিন।
অপরাধীদেরকে “ দানব, অন্য সব পুরুষদের থেকে সম্পূর্ণ আলাদা " হিসেবে দেখা হয়, যার মানে সামাজিক সিস্টেম ঠিকঠাক মতো চলছে।
কিন্তু তিনি মনে করেন, “স্বাভাবিক” পুরুষরা বুঝতে পারে না যে তারাও সহিংস হয়ে উঠতে পারে। কারণ তারা কখনো নিজেকে নিয়ে প্রশ্ন করে না। '
“তাকে একজন সাধারণ মানুষ হিসেবে দেখা হোক এটা আমি চাই। যেটা স্বাভাবিক পুরুষরা মাঝে মাঝে করে। তারা অন্য মানুষের অধিকারের সীমানা অতিক্রম করে”।
আরডিন মনে করেন, প্রগতিশীল আন্দোলনগুলোর মধ্যে অনেক সময় ভীতি থাকে যে, নেতাদের সমালোচনা করা হলে পুরো আন্দোলনটি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
“আপনার আন্দোলনে সক্রিয় লোকদের সাথে খারাপ আচরণ করে আপনি একজন নেতা হতে পারবেন না, তাহলে আন্দোলন টিকবে না”।
তিনি আরো বলেন, প্রভাবশালী হলেই যৌন অপরাধ, বা অন্য কোনো অপরাধ থেকে লোকজনের পালানো উচিত নয়।
সাক্ষাৎকারে আরডিনের দাবির বিষয়ে অ্যাসাঞ্জের মন্তব্যের জন্য তার আইনজীবীদের সাথে বিবিসি যোগাযোগ করেছিল। কিন্তু তারা জানিয়েছে, তিনি “প্রতিক্রিয়া জানানোর অবস্থায় নেই”।
এই গল্প বা কাহিনীর শেষে তার জন্য ন্যায়বিচার কেমন হতো আরডিনকে আমি জিজ্ঞাসা করি।
আরডিন আমাকে বলেন, সত্য হিসাবে তিনি যা বলেছেন তা পেতেই শুধু তিনি আগ্রহী। শাস্তির প্রতি আগ্রহ কম তার।
“ স্বচ্ছতা পাওয়াই আমার জন্য ন্যায়বিচার হতো। তাকে কারাবন্দী করা হয়েছিল এতে আমি খুশি ছিলাম না। কারণ তাকে ভুল কারণে কারাবন্দী করা হয়েছিল”।
আরডিন একজন বামপন্থী খ্রিস্টান যিনি পুনর্মিলন এবং রূপান্তরকে অত্যন্ত গুরুত্ব দেন।
এ সমস্ত চিন্তাভাবনার পরে, আমি ভাবছি যদি এখন সে অ্যাসাঞ্জের মুখোমুখি হয় তবে তাকে কি বলবে।
অ্যাসাঞ্জকে নিজের বিষয়েআরো ভালোভাবে বিবেচনা করার জন্য আরডিন অনুরোধ করবে বলে আমাকে জানান।
“আমার সাথে সে যা করেছে তা করার অধিকার তার নেই এবং অন্য মহিলাদের প্রতিও তার সেই অধিকার নেই” এটা তাকে স্বীকার করতে বলবেন আরডিন।
“ নিজের জন্যই তাকে তা স্বীকার করতে হবে। সে যা করেছে তাকে তা ভাবতে হবে” বলেন আরডিন।
কিন্তু জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জের বিরুদ্ধে তিনি যেসব অভিযোগ এনেছিলেন, তাতে মি. অ্যাসাঞ্জের মুক্তিতে খুশি না হওয়ার সব কারণ তার আছে।
১৪ বছর আগে যে দুইজন নারী উইকিলিকসের প্রতিষ্ঠাতা অ্যাসাঞ্জের বিরুদ্ধে যৌন হেনস্থার অভিযোগ এনেছিলেন তাদের মধ্যে আনা একজন।
জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জের বিরুদ্ধে আনা এসব অভিযোগ ছিল মারাত্মক এবং তিনি সবসময় তা অস্বীকার করেছেন।
সারা বিশ্বজুড়ে এগুলো নিয়ে গণমাধ্যমে হেডলাইন হয়েছে। সুইডেনে প্রত্যর্পণ এড়াতে সাত বছর ধরে লন্ডন অ্যাম্বাসিতে আশ্রয় চেয়ে লুকিয়ে থাকতে বাধ্য হয়েছেন অ্যাসাঞ্জ।
সুইডিশ কর্তৃপক্ষ ২০১৯ সালে অ্যাসাঞ্জের বিরুদ্ধে তাদের তদন্ত শেষ করে এবং প্রত্যর্পণ নিষেধাজ্ঞা বাতিল করে।
পরের পাঁচ বছর তিনি ব্রিটিশ কারাগারে থেকে যুক্তরাষ্ট্রে প্রত্যর্পণের বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন। বিপুল গোপনীয় তথ্য ফাঁসের অভিযোগে তার বিরুদ্ধে মামলা ছিল যুক্তরাষ্ট্রে।
এসব তথ্যের মধ্যে ইরাকে বেসামরিক লোকদের হত্যার মার্কিন সেনাবাহিনীর ফুটেজ রয়েছে। এমন কিছু নথিপত্র পাওয়া গেছে যেগুলোতে ইউএস সামরিক বাহিনী কয়েকশ আফগান বেসামরিক নাগরিককে হত্যা করেছে এমন ইঙ্গিত পাওয়া যায়।
যুক্তরাষ্ট্রের সাথে একটি চুক্তির পর গত মাসে অ্যাসাঞ্জকে মুক্তি দেয়া হয়।
উইকিলিকস নিয়ে অ্যাসাঞ্জের কাজের জন্য অত্যন্ত গর্বিত আরডিন। এজন্য তাকে কারারুদ্ধ করা উচিত হয়নি বলে তিনি মনে করেন।
তিনি বলেন, “আমাদের নামে যেসব যুদ্ধ হয় সেগুলি সম্পর্কে আমাদের জানার অধিকার আছে”।
“আমি তার এবং তার পরিবারের জন্য আন্তরিকভাবে খুশি যে তারা একসাথে থাকতে পারবে। যে অভিযোগে তিনি শাস্তি ভোগ করেছেন, সেটা ঠিক হয়নি,” বলেন তিনি।
স্টকহোমে জুমে আরডিনের সাথে কথা বলার সময় খুব তাড়াতাড়ি স্পষ্ট হয়ে যায় যে, তার মাথার ভেতরে থাকা অ্যাসাঞ্জের দুইটি ভিন্ন প্রতিরূপ রয়েছে। একজন হলো দূরদর্শী অ্যাকটিভিস্ট অ্যাসাঞ্জ, আবার এমন একজন মানুষ যিনি নারীদের যথার্থ সম্মান দেন না।
জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জকে তিনি একজন নায়ক বা ভিলেন- কোনোটাই চিহ্নিত করতে চান না। বরং তিনি একজন জটিল মানুষ বলে বর্ণনা করছেন।
৪৫ বছর বয়সী এই মানবাধিকার কর্মী একজন খ্রিস্টান ডিকন (চার্চের কর্মী) যিনি ক্ষমাতে বিশ্বাস করেন। “সত্য” এবং “স্বচ্ছতা” এই শব্দ দুটো বারবার তিনি সাক্ষাৎকারে উচ্চারণ করেছেন।
এটাকে এভাবে ব্যাখ্যা করা যেতে পারে যে, উইকিলিকস যা করেছে তাতে তিনি অভিভূত। কিন্তু একই সময়ে তিনি হতাশও বোধ করেন, কারণ অ্যাসাঞ্জের বিরুদ্ধে তিনি যৌন হেনস্থার যেসব অভিযোগ করেছেন সেগুলি কখনো আনুষ্ঠানিকভাবে বিচার হয়নি।
‘নো হিরোস, নো মনস্টারস: ইন্টারনেটে সবচেয়ে ঘৃণ্য মহিলা হিসেবে আমি যা শিখেছি’ নামে যে বই লিখেছেন আরডিন, তাতে অ্যাসাঞ্জের সাথে তার মুখোমুখি হওয়ার ঘটনার বর্ণনা দিয়েছেন।
উইকিলিকসে আফগান যুদ্ধের বিভিন্ন তথ্য প্রকাশের মাত্র তিন সপ্তাহ পরে ২০১০ সালে আরডিন তাকে স্টকহোমে আমন্ত্রণ জানান। সুইডেনের সোশ্যাল ডেমোক্র্যাটদের ধর্মীয় শাখার আয়োজিত একটি সেমিনারে অংশ নিতে তাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল।
নিরাপত্তার কারণে অ্যাসাঞ্জ হোটেলে থাকতে চান নি এবং আরডিনের সেই সময় অন্যত্র যাওয়ার কথা ছিল। ফলে অ্যাসাঞ্জকে তিনি নিজের ফ্ল্যাটে থাকার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। যদিও আরডিন তাড়াতাড়ি বাসায় ফিরে আসেন।
রাজনীতি এবং মানবাধিকার নিয়ে আলোচনা শেষে এক সন্ধ্যায় আরডিন, তার ভাষায় অনাকাঙ্ক্ষিত এক যৌন সম্পর্কের মুখোমুখি হয়েছেন বলে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেছেন, অ্যাসাঞ্জ তখন তাকে হেনস্থা করেছে।
আরডিন বলেছেন, তিনি অ্যাসাঞ্জের সাথে যৌন সম্পর্ক করতে রাজি ছিলেন যতক্ষণ তিনি কনডম ব্যবহার করেন ততক্ষণ। কিন্তু কনডম ছিঁড়ে গেলেও অ্যাসাঞ্জ তা চালিয়ে যান।
আরডিন সন্দেহ করেন যে অ্যাসাঞ্জ ইচ্ছাকৃতভাবে এটি ছিঁড়েছেন। সেটা হয়ে থাকে তাহলে অ্যাসাঞ্জ সম্ভবত সুইডিশ আইন অনুযায়ী অপরাধ করেছেন।
পরে, সেমিনারে অংশ নিয়েছেন এমন একজন নারী, আইনি কাগজপত্রে যার নাম এস ডব্লিউ বলে উল্লেখ করা হয়েছে, তার কাছ থেকেও অ্যাসাঞ্জের বিরুদ্ধে অভিযোগ শুনেছেন বলে আরডিন লিখেছেন। এস ডব্লিউ বলেছিলেন, তিনি ঘুমিয়ে থাকার সময়ে অনুমতি ছাড়াই অ্যাসাঞ্জ তার সাথে শারীরিক সম্পর্ক করেন।
তবে সুইডিশ প্রসিকিউটরদের কাছে ২০১৬ সালে দেয়া এক বিবৃতিতে অ্যাসাঞ্জ বলেছিলেন, এসডব্লিউর সাথে তার যৌন সম্পর্ক ছিল সম্পূর্ণ সম্মতিপূর্ণ। তিনি তার আইনজীবীদের সেই খুদে বার্তা দেখিয়েছিলেন যাতে ওই নারী একজন বন্ধুকে বলেছিলেন যে তিনি “আধো ঘূমে ছিলেন”।
দুইজন মহিলাই পুলিশের কাছে রিপোর্ট করেছেন। আরডিনের মামলাটি যৌন অসদাচরণের অভিযোগে এবং এস ডব্লিউর অভিযোগকে ধর্ষণের অভিযোগ হিসাবে নথিভুক্ত করা হয়েছিল।
এসব খবর গণমাধ্যমে ব্যাপকভাবে প্রচারিত হয় এবং পরবর্তীতে বেশি কিছু ঘটনা ঘটে।
অ্যাসাঞ্জ এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, তারা যুক্তরাষ্ট্রের সাজানো অভিযোগ করছেন। উইকিলিকস তখন মাত্র ৭৬ হাজার মার্কিন সামরিক নথি ফাঁস করেছে। যেগুলো ব্যাপক বৈশ্বিক মনোযোগ আকর্ষণ করেছে। এর ফলে মার্কিন পররাষ্ট্র নীতি যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়ায় পড়ে।
২০১০ সালের ২১শে আগস্ট উইকিলিকস টুইট করেছে: “আমাদেরকে ‘নোংরা কৌশলের’ বিষয়ে সতর্ক করা হয়েছিল। এখন আমরা প্রথমটির মুখোমুখি হয়েছি''।
পরের দিন আরেকটি পোস্ট করা হয়েছে: “ সতর্কতা: যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দারা ২০০৮ সাল পর্যন্ত উইকিলিকসকে ধ্বংস করার পরিকল্পনা করেছে”।
অ্যাসাঞ্জের যুক্তরাজ্যের আইনজীবী মার্ক স্টিফেনস দাবি করেছেন, একটি “হানিট্র্যাপ” (যৌনতার প্রলোভন) স্পষ্ট হয়ে উঠেছে এবং “নেপথ্য শক্তি” এতে কাজ করছে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটা ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছিল, যাতে আরডিনকে “নরক”(জঘন্য) হিসাবে বর্ণনা করেছে। আরডিন বিবিসিকে বলেন, কী পরিমাণ হয়রানি এবং মৃত্যুর হুমকি তাকে এক পর্যায়ে সুইডেন ছেড়ে যেতে বাধ্য করেছিল।
“আমি কাজ করতে পারছিলাম না। আমার জীবন থেকে দুই বছর শেষ হয়ে গিয়েছে” বলেন আরডিন।
এখন পর্যন্ত অনেকে বিশ্বাস করে যে আরডিন যুক্তরাষ্ট্রের ষড়যন্ত্রের একটি অংশ এবং তার অভিযোগগুলো মিথ্যা।
অ্যাসাঞ্জের দীর্ঘদিনের সমর্থক গ্রিসের সাবেক অর্থমন্ত্রী ইয়ানিস ভ্যারোফাকিস। গত সপ্তাহে আরডিনের দাবিগুলিকে ‘কর্দমাক্ত, নোংরা’এবং ‘কটাক্ষ’ হিসাবে বর্ণনা করেছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দাদের সাথে আরডিনের যোগসূত্রের কোনো প্রমাণ পাওয়া যায় নি। তিনি স্বীকার করেছেন যে অ্যাসাঞ্জ যেসব বার্তা ছড়িয়ে দিয়েছেন তাতে কিছুটা সম্ভাব্যতা রয়েছে, কারণ তিনি “পেন্টাগনের সাথে ঝামেলা” করেছিলেন। কিন্তু তার দাবীগুলো “মিথ্যা” এবং “একজন পাবলিক ফিগারকে মিথ্যা অভিযোগে অভিযুক্ত করার পরিকল্পনা” ছাড়া আর কিছুই নয়।
এই ঘটনার কয়েক মাস পরে অ্যাসাঞ্জের বিরুদ্ধে একটি আন্তর্জাতিক গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছিল। সেই সময় লন্ডনে ছিলেন তিনি।
২০১০ সালের ডিসেম্বরে বিবিসির কাছে তিনি বলেছিলেন যে, তিনি যে 'হানি ট্রাপের' শিকার হয়েছিলেন, সেটা হয়তো ঠিক না। কিন্তু তিনি কোন অন্যায় করেছেন বলে স্বীকার করেন নি।
অ্যাসাঞ্জ নিশ্চিত ছিলেন, যদি তিনি সুইডেনে যান তাহলে তাকে যুক্তরাষ্ট্রে পাঠানো হবে। যেখানে মৃত্যুদণ্ডের শাস্তি অপেক্ষা করছে বলে তিনি আশঙ্কা করেছিলেন। ২০১২ সালে তিনি লন্ডনে ইকুয়েডর দূতাবাসে আশ্রয় নেন।
তাকে যুক্তরাষ্ট্রে ফেরানো হবে না সুইডেন এই নিশ্চয়তা দিতে রাজি হয়নি। তবে, যেকোনো পদক্ষেপের ক্ষেত্রে যুক্তরাজ্যের অনুমোদন নেয়া হবে বলে জানিয়েছিল। তবে দুই দেশই বলেছে তারা যদি মনে করে যে তাকে মৃত্যুদণ্ডের মুখোমুখি হতে পারে তাহলে তাকে হস্তান্তর করবে না।
দীর্ঘ সময় চলে যাওয়ায় ২০১৫ সালে সুইডিশ প্রসিকিউটররা আরডিনের অভিযোগের তদন্ত বাদ দিয়েছিলেন।
এস ডব্লিউর যৌন অভিযোগের দাবির বিষয়ে ২০১৯ সালে প্রসিকিউটররা তদন্ত বাদ দিয়েছিল।
তারা বলেছিল, “ ঘটনা নিয়ে প্রশ্ন ওঠার পরে লম্বা সময় পার হওয়ার কারণে প্রমাণগুলো দুর্বল হয়ে গেছে”।
এ সময়ের মধ্যে লন্ডনের বেলমার্শের হাই সিকিউরিটি কারাগারে অ্যাসাঞ্জকে রাখা হয়েছিল। গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে যুক্তরাষ্ট্রে প্রত্যর্পণের চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয়েছিল তাকে। সেখানে দোষী সাব্যস্ত হলে ১৭০ বছরের কারাদণ্ডের মুখোমুখি হতে হতো তাকে।
যুক্তরাষ্ট্রের গুপ্তচরবৃত্তি আইনের একটি অভিযোগে দোষ স্বীকার করে দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পরে ২০২৪ সালে অ্যাসাঞ্জ অবশেষে মুক্তি পেয়েছিলেন।
আরডিন এখনও চান, অ্যাসাঞ্জ যৌন হেনস্থার জন্য বিচারের মুখোমুখি হন। “কিন্তু সে করবে না। তাই আমি এটা বাদ দিয়ে দিয়েছি।''
তিনি বলেন, কেউ কেউ তাকে গুরুত্ব সহকারে নেয় নি। কারণ তারা মনে করে না যে, তার অভিজ্ঞতা বা প্রতিক্রিয়া যথেষ্ট নাটকীয় ছিল।
তিনি বলেন, ''যৌন নিপীড়ন সবসময় নৃশংস হবে, ব্যাপক পরিমাণে সহিংসতা জড়িত থাকবে এবং ভিকটিমকে প্রচণ্ড ট্রমাটাইজ করে ফেলবে এমন একটা ধারণা রয়েছে। যদি তা না হয় তবে আপনি প্রকৃত ভিকটিম বা প্রকৃত অপরাধী হতে পারবেন না।''
কিন্তু আরডিন তার অভিজ্ঞতা হিসাবে যা বর্ণনা করেছেন তার সাথে এটি মেলে না।
অ্যাসাঞ্জের অনেক সমর্থক এবং সাংবাদিকদের “একটি একতরফা ঘটনা" খোঁজার জন্য তিনি ধিক্কার করেছেন। যেটা অ্যাসাঞ্জকে একজন নায়ক এবং তাকে একজন দুষ্ট সিআইএ এজেন্টে পরিণত করে।
“ আমি মনে করি আমাদের একটি সমস্যা আছে, যে আমাদের এই নায়কদের নিখুঁত হতে হবে। কিন্তু আসলে রূপকথার বাইরে নায়কদের অস্তিত্ব আছে বলে আমি মনে করি না ”।
আ্যাসাঞ্জকে একজন ওয়ান ডাইমেনশনাল ভিলেন হিসেবে চিহ্নিত করে সমাজ থেকে বের করে দেয়া তার উদ্দেশ্য ছিল না বলে জানান আরডিন।
অপরাধীদেরকে “ দানব, অন্য সব পুরুষদের থেকে সম্পূর্ণ আলাদা " হিসেবে দেখা হয়, যার মানে সামাজিক সিস্টেম ঠিকঠাক মতো চলছে।
কিন্তু তিনি মনে করেন, “স্বাভাবিক” পুরুষরা বুঝতে পারে না যে তারাও সহিংস হয়ে উঠতে পারে। কারণ তারা কখনো নিজেকে নিয়ে প্রশ্ন করে না। '
“তাকে একজন সাধারণ মানুষ হিসেবে দেখা হোক এটা আমি চাই। যেটা স্বাভাবিক পুরুষরা মাঝে মাঝে করে। তারা অন্য মানুষের অধিকারের সীমানা অতিক্রম করে”।
আরডিন মনে করেন, প্রগতিশীল আন্দোলনগুলোর মধ্যে অনেক সময় ভীতি থাকে যে, নেতাদের সমালোচনা করা হলে পুরো আন্দোলনটি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
“আপনার আন্দোলনে সক্রিয় লোকদের সাথে খারাপ আচরণ করে আপনি একজন নেতা হতে পারবেন না, তাহলে আন্দোলন টিকবে না”।
তিনি আরো বলেন, প্রভাবশালী হলেই যৌন অপরাধ, বা অন্য কোনো অপরাধ থেকে লোকজনের পালানো উচিত নয়।
সাক্ষাৎকারে আরডিনের দাবির বিষয়ে অ্যাসাঞ্জের মন্তব্যের জন্য তার আইনজীবীদের সাথে বিবিসি যোগাযোগ করেছিল। কিন্তু তারা জানিয়েছে, তিনি “প্রতিক্রিয়া জানানোর অবস্থায় নেই”।
এই গল্প বা কাহিনীর শেষে তার জন্য ন্যায়বিচার কেমন হতো আরডিনকে আমি জিজ্ঞাসা করি।
আরডিন আমাকে বলেন, সত্য হিসাবে তিনি যা বলেছেন তা পেতেই শুধু তিনি আগ্রহী। শাস্তির প্রতি আগ্রহ কম তার।
“ স্বচ্ছতা পাওয়াই আমার জন্য ন্যায়বিচার হতো। তাকে কারাবন্দী করা হয়েছিল এতে আমি খুশি ছিলাম না। কারণ তাকে ভুল কারণে কারাবন্দী করা হয়েছিল”।
আরডিন একজন বামপন্থী খ্রিস্টান যিনি পুনর্মিলন এবং রূপান্তরকে অত্যন্ত গুরুত্ব দেন।
এ সমস্ত চিন্তাভাবনার পরে, আমি ভাবছি যদি এখন সে অ্যাসাঞ্জের মুখোমুখি হয় তবে তাকে কি বলবে।
অ্যাসাঞ্জকে নিজের বিষয়েআরো ভালোভাবে বিবেচনা করার জন্য আরডিন অনুরোধ করবে বলে আমাকে জানান।
“আমার সাথে সে যা করেছে তা করার অধিকার তার নেই এবং অন্য মহিলাদের প্রতিও তার সেই অধিকার নেই” এটা তাকে স্বীকার করতে বলবেন আরডিন।
“ নিজের জন্যই তাকে তা স্বীকার করতে হবে। সে যা করেছে তাকে তা ভাবতে হবে” বলেন আরডিন।