নতুন বছর ২০২৫ সালকে স্বগত জানাতে শুরু করেছে বিশ্ব।বিশ্বে সবার আগে ২০২৫ সালকে স্বাগত জানিয়েছে প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দ্বীপদেশ কিরিবাতি। সবার আগে দেশটি নতুন বছরে পা দিয়েছে। এরপর নিউজিল্যান্ডের অকল্যান্ড নতুন বছর বরণ করেছে। সেখানে আতশবাজিতে স্বাগত জানানো হয় নতুন বছরকে।
প্রায় একই সময়ে অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে ঝলমলে আতশবাজির মধ্য দিয়ে স্বাগত জানানো হয় ২০২৫ সালকে। ঘড়ির কাঁটা রাত ১২ টা ছুঁতেই আকাশ আলোকিত হয়ে ওঠে আতশবাজির ঝলকানিতে। অস্ট্রেলিয়ার নর্দার্ন টেরিটোরিও নতুন বছরে পা দিয়েছে।
এরপর নতুন বছরে পা দিয়েছে জাপান। রাজধানী টোকিওর তোদাই-জি মন্দিরে ঘন্টাধ্বনি বাজানোর ঐতিহ্য মেনেই বর্ষবরণ করেছে দেশটি।
জাপানের পর দক্ষিণ কোরিয়া, ভারত ও শ্রীলংকা একে একে ২০২৫ সালে পদার্পণ করবে। তারপর যুক্তরাজ্যসহ ২৫ টি দেশ স্বাগত জানাবে নতুন বছরকে।
চীনজুড়ে মানুষ নতুন বছরকে স্বগত জানাতে প্রস্তুত হয়ে আছে। চীনের শ্যানডং প্রদেশে নতুন বছরে শুভ ভাগ্য কামনা করে লেখা ব্যানার নিয়ে ২০২৫ সালকে বরণ করে নিতে প্রস্তুত একদল নারী।
ওদিকে, চীনের কংজিয়াং কাউন্টিতে একটি গ্রামের বাসিন্দারা প্রচলিত বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে স্বাগত জানাচ্ছে নতুন বছরকে। রাজধানী বেইজিংয়ে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং নতুন বছরের আগমনীতে দিচ্ছেন ভাষণ।
গোটা বিশ্বজুড়েই বিভিন্ন দেশ নতুন বছরকে স্বাগত জানানোর নানা প্রস্তুতি নিয়েছে।
তবে যুক্তরাজ্য আবহাওয়াজনিত কারণে নতুন বছর উদযাপানের কিছু অনুষ্ঠান বাতিল হয়েছে। ওদিকে, দক্ষিণ কোরিয়াও বছরের শেষের ভয়াবহ উড়োজাহাজ দুর্ঘটনার পর অনেটা নীরবেই পালন করছে নতুন বছর বরণের উৎসব।
অন্যান্য দেশগুলোতে ঐতিহ্য ও প্রচলিত প্রথা মেনে নতুন বছরকে স্বাগত জানানোর তোড়জোড় চলছে বলে জানিয়েছে বিবিসি। স্পেনে নতুন বছরের কাউন্টডাউনের প্রতি মুহূর্তে একটি করে আঙুর খাওয়াই প্রথা। ১৯০৯ সাল থেকে চলে আসছে এভাবে নতুন বছর বরণের রীতি।
আবার ডেনমার্কে থালা ছুড়ে স্বাগত জানানো হয়ে আসছে নতুন বছরকে। নতুন বছরের আগমনীতে যত বেশি থালা ছুড়া যাবে ততই শুভ ভাগ্য বয়ে আনবে নতুন সাল- এমনটিই বিশ্বাস করা হয় সেখানে।
ল্যাটিন আমেরিকার প্রথা হচ্ছে রঙচঙে অন্তর্বাস পরিধান করে নতুন বছরকে স্বাগত জানানো। অন্তর্বাসের রঙের ওপর নির্ভর করে নতুন বছর একেক জনের জন্য একেক রকম ভাগ্য বয়ে আনবে বলে সেখানে বিশ্বাস করা হয়- যেমন: হলুদ রঙ ধনসম্পদ আনে, লাল রঙ আনে ভালোবাসা।
ফিলিপিন্সের মানুষ আবার নতুন বছরের আগমনীতে কয়েনের প্রতীক হিসাবে গোল জিনিস দিয়ে নিজেদের ঘিরে রাখে। এছাড়াও পোলকা ডটের কাপড় পরা এবং আঙুর খাওয়াও রীতি দেশটিতে।
বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন দেশের পর অনেকটা দেরিতেই নতুন বছরে পা দেবে ব্রাজিল এবং আর্জেন্টিনা। সবশেষে ২০২৫ সালকে বরণ করবে যুক্তরাষ্ট্রের পূর্ব উপকূলীয় এলাকাগুলো।
ফরাসি সেনাদের আইভরি কোস্ট ছাড়ার নির্দেশ দিয়েছে আফ্রিকান দেশটি। গতকাল মঙ্গলবার আইভরি কোস্ট সরকার এই নির্দেশ দিয়েছে বলে এপির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
এপি বলছে, আইভরি কোস্ট হলো সর্বশেষ আফ্রিকান দেশ যারা তাদের পুরনো ঔপনিবেশিক শক্তির সঙ্গে সামরিক সম্পর্ক কমাল।
আইভরি কোস্টের প্রেসিডেন্ট আলাসানে ওয়াত্তারা বলেছেন, ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে সেনা প্রত্যাহার শুরু হবে। আইভরি কোস্টে ফ্রান্সের ৬০০ সেনা রয়েছে।
'আমরা আইভরি কোস্ট থেকে ফরাসি বাহিনীকে সমন্বিত ও সংগঠিতভাবে প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছি,' বলেন তিনি।
তিনি জানান, ফরাসি সেনাবাহিনী পরিচালিত পোর্ট বোয়েটের সামরিক পদাতিক ব্যাটালিয়ন আইভরিয়ান সেনাদের কাছে হস্তান্তর করা হবে।
পশ্চিম আফ্রিকার অন্যান্য দেশকে অনুসরণ করে এই ঘোষণা দিয়েছেন আইভরি কোস্টের প্রেসিডেন্ট আলাসানে ওয়াত্তারা। পশ্চিম আফ্রিকার অন্যান্য দেশ থেকেও ফ্রান্সের সামরিক বাহিনীকে চলে যেতে বলা হচ্ছে।
ফরাসি সেনাদের আফ্রিকা ছাড়ার অনুরোধকে প্যারিসের সঙ্গে এই অঞ্চলের সম্পর্কের কাঠামোগত পরিবর্তনের অংশ হিসেবে দেখছেন বিশ্লেষকরা।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চাঁদ, নাইজার ও বুরকিনা ফাসোসহ পশ্চিম আফ্রিকার বেশ কয়েকটি দেশে ফ্রান্স একই ধরনের বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয়েছে। যেখানে বহু বছর ধরে থাকা ফরাসি সেনাদের বের করে দেওয়া হয়েছে।
এছাড়া অভ্যুত্থানপীড়িত মালি, বুরকিনা ফাসো ও নাইজারসহ পশ্চিম আফ্রিকার বেশ কয়েকটি দেশ সম্প্রতি ফরাসি সেনাদের চলে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। তাদের মধ্যে সাম্প্রতিককালে সেনেগাল ও চাঁদ যোগ হয়েছে।
এপি বলছে, ঔপনিবেশিক শাসনের অবসানের পর থেকে এখন পর্যন্ত আফ্রিকার ৭০ শতাংশের বেশি দেশ ছাড়তে হয়েছে ফরাসি সেনাদের।
বাংলাদেশিদের জন্য ভ্রমণ সহজ করার লক্ষ্যে ই-ভিসা সেবা চালু করছে থাইল্যান্ড। এর ফলে দেশটিতে ভ্রমণের জন্য ভিসা আবেদন প্রক্রিয়া আরও সহজ ও কার্যকর হবে।
রোববার রয়াল থাই এম্বাসি এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিলেও সোমবার গণমাধ্যমে বিষয়টি প্রকাশ করা হয়েছে।
আগামী বছরের ২ জানুয়ারি থেকে বাংলাদেশিদের জন্য ই-ভিসা সেবা চালু করা হবে বলে দূতাবাসের এক বিজ্ঞপ্তি থেকে জানা গেছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বাংলাদেশের সাধারণ নাগরিকরা আগামী ২ জানুয়ারি থেকে ই-ভিসা সেবা পেলেও সরকারি পাসপোর্টধারীদের আগামী ১৯ ডিসেম্বর থেকে এ সুবিধা দেবে দেশটির সরকার।
আবেদনের ১০ দিনের মধ্যে ইমেইলে এ ভিসা দেওয়া হবে। আবেদনকারীদের https://www.thaievisa.go.th ওয়েবসাইটের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় তথ্য দিয়ে আবেদন করতে হবে।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, এই নতুন ব্যবস্থার মাধ্যমে আবেদনকারীরা ই-মেইলের মাধ্যমে অনুমোদিত ভিসা পাবেন। এরপর এটি প্রিন্ট করে থাই ইমিগ্রেশন সেন্টারে উপস্থাপন করতে পারবেন তারা।
আবেদনকারীরা https://www.combank.net.bd/thaievisa ওয়েবসাইটের মাধ্যমে দূতাবাসের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে আবেদন ফি জমা দিতে পারবেন। এরপর দূতাবাসের ফি যাচাইকরণের জন্য প্রণীত সিস্টেম পেমেন্ট ইনফো সামারিতে তার তথ্য দিতে হবে।
ই-ভিসা চালুর ফলে আগামী ২৪ ডিসেম্বর থেকে ঢাকার থাইল্যান্ডের ভিসা সেন্টারটি বন্ধ করে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছে দূতাবাস।
ইউক্রেনের গ্যাস ট্রানজিট অপারেটর নাফটোগাজ ও রাশিয়ার গ্যাজপ্রমের মধ্যে পাঁচ বছরের চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার পর ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোতে রাশিয়ার গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করেছে ইউক্রেন। আজ বুধবার বিবিসির এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
এর আগে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছিলেন, তার দেশ রাশিয়াকে 'আমাদের রক্তের ওপর দিয়ে অতিরিক্ত বিলিয়ন ডলার আয় করতে' দেবে না।
এজন্য ইইউকে প্রস্তুতি নিতে এক বছর সময় দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছিলেন তিনি।
পরে ইউরোপীয় কমিশন জানিয়েছিল, মহাদেশটির গ্যাস ব্যবস্থা 'স্বাভাবিক ও স্থিতিশীল' অবস্থায় আছে। তাই ইউক্রেনের মধ্য দিয়ে ট্রানজিট শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার পর্যাপ্ত সক্ষমতা তাদের রয়েছে।
তবে রাশিয়া এখনো কৃষ্ণ সাগর দিয়ে তুর্কস্ট্রিম পাইপলাইনের মাধ্যমে হাঙ্গেরির পাশাপাশি তুরস্ক ও সার্বিয়ায় গ্যাস পাঠাতে পারবে।
ইউক্রেনের মধ্য দিয়ে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ হওয়ায় ইউরোপীয় ইউনিয়নে রুশ গ্যাসের যুগের আপাতত অবসান হয়েছে বলে বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
রুশ গ্যাস সরবরাহ বন্ধ থাকায় স্লোভাকিয়া সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে ইউরোপীয় কমিশন বলেছে, ভিন্ন পরিকল্পনা ও বিকল্প সরবরাহের কারণে এর প্রভাব মারাত্মক হবে না।
অবশ্য বিবিসি বলছে, রুশ গ্যাস সরবরাহ বন্ধ হওয়ায় সমগ্র ইউরোপে বড় ধরনের কৌশলগত প্রভাব পড়বে।
রাশিয়া একটি গুরুত্বপূর্ণ বাজার হারালেও দেশটির প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেছেন, ইইউ দেশগুলো বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
এর আগে, ২০২২ সালে ইউক্রেনে হামলা শুরুর পর থেকে রাশিয়া থেকে গ্যাস আমদানি উল্লেখযোগ্যভাবে কমিয়েছিল ইইউ। তবে পূর্ব ইউরোপের কয়েকটি সদস্য দেশ রাশিয়ার সরবরাহের ওপর নির্ভরশীল ছিল। ফলে, গ্যাস রপ্তানি করে রাশিয়া বছরে প্রায় পাঁচ বিলিয়ন ইউরো (পাঁচ দশমিক দুই বিলিয়ন ডলার বা চার দশমিক দুই বিলিয়ন পাউন্ড) আয় করেছে।
ইইউয়ের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২৩ সালে ইউরোপীয় ইউনিয়নের গ্যাস আমদানির ১০ শতাংশের কম ছিল রাশিয়ান গ্যাস, যা ২০২১ সালে ছিল ৪০ শতাংশ।
তবে স্লোভাকিয়া ও অস্ট্রিয়াসহ ইইউভুক্ত বেশ কয়েকটি দেশ রাশিয়া থেকে গ্যাস আমদানি অব্যাহত রেখেছিল।
অস্ট্রিয়ার জ্বালানি নিয়ন্ত্রক সংস্থা জানিয়েছে, গ্যাসের অন্যান্য উৎস ও পর্যাপ্ত মজুত থাকায় তারা সরবরাহ বিঘ্নিত হওয়ার পূর্বাভাস দেয়নি।
ইউক্রেনের সিদ্ধান্ত ইতোমধ্যে স্লোভাকিয়ার ওপর প্রভাব ফেলেছে। কারণ দেশটি ইইউতে রাশিয়ার গ্যাসের প্রধান প্রবেশদ্বার এবং অস্ট্রিয়া, হাঙ্গেরি ও ইতালিতে গ্যাস পাইপ ব্যবহার করে ট্রানজিট ফি আয় করে।
গত শুক্রবার স্লোভাকিয়ার প্রধানমন্ত্রী রবার্ট ফিকো ইউক্রেনে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধের হুমকি দিয়েছিলেন। রবার্ট ফিকো সম্প্রতি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে আলোচনার জন্য মস্কো সফর করেন।
রবার্ট ফিকোর মস্কো সফরের পর ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি অভিযোগ করেন, স্লোভাকিয়ার প্রধানমন্ত্রী পুতিনকে 'যুদ্ধে অর্থায়ন ও ইউক্রেনকে দুর্বল করতে' সহায়তা করতে চাচ্ছেন।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট বলেন, 'ফিকো ইউক্রেনীয়দের জন্য আরও দুর্ভোগ ডেকে আনতে রাশিয়ার সঙ্গে স্লোভাকিয়াকে জড়াচ্ছেন।'
এদিকে পোল্যান্ড কিয়েভকে বৈদ্যুতিক সহায়তার প্রস্তাব দিয়েছে। তারা বলেছে, স্লোভাকিয়া বিদ্যুৎ রপ্তানি বন্ধ করলে তারা বিদ্যুৎ সহায়তা দেবে। বিদ্যুৎ সমস্যা ইউক্রেনের জন্য বড় একটি সমস্যা, কারণ দেশটির বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো রাশিয়ার নিয়মিত আক্রমণের শিকার হয়।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের অংশ না হলেও মলদোভা এই ট্রানজিট চুক্তি শেষ হওয়ায় সমস্যায় পড়তে পারে। কারণ দেশটির একটি বিদ্যুৎকেন্দ্রের জ্বালানি রাশিয়ার গ্যাসের ওপর নির্ভরশীল।
মলদোভার জ্বালানিমন্ত্রী কনস্ট্যান্টিন বোরোসান বলেছেন, সরকার স্থিতিশীল বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করার পদক্ষেপ নিয়েছে। তবে নাগরিকদের মানসিকভাবে শক্ত থাকার আহ্বান জানানো হয়েছে। এখানে উল্লেখ্য, ডিসেম্বরের মাঝামাঝি থেকে মলদোভায় জ্বালানি খাতে ৬০ দিনের জরুরি অবস্থা জারি রয়েছে।
রাশিয়া ১৯৯১ সাল থেকে ইউক্রেন হয়ে ইউরোপে গ্যাস সরবরাহ করে আসছিল।
ইইউ রাশিয়ার গ্যাসের ওপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে আনার পর কাতার ও যুক্তরাষ্ট্র থেকে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের (এলএনজি) পাশাপাশি নরওয়ে থেকে পাইপলাইনের মাধ্যমে গ্যাসের বিকল্প উৎস খুঁজে পেয়েছে মহাদেশটি।
ডিসেম্বরে ইউরোপীয় কমিশন একটি পরিকল্পনা প্রকাশ করেছিল। ওই পরিকল্পনা অনুযায়ী, ইইউ সদস্য দেশগুলোতে গ্যাস ট্রানজিট ব্যবস্থা পুরোপুরিভাবে প্রতিস্থাপন করা সম্ভব হবে।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের আপৎকালীন পরিকল্পনার আওতায় ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোতে ট্রান্স-বলকান রুট থেকে গ্রিস, তুর্কি ও রোমানিয়া থেকে গ্যাস সরবরাহ করা হবে। অন্যদিকে পোল্যান্ডের মধ্য দিয়ে পাইপের মাধ্যমে নরওয়ের গ্যাস সরবরাহ করা হবে। এছাড়া জার্মানির মধ্য দিয়ে অন্যান্য সরবরাহ মধ্য ইউরোপে পৌঁছাবে।
প্রতিদিন ভোরের আলো ফোটার আগেই লাইন শুরু হয়ে যেত। অ্যাভিগননের কাচ আর কংক্রিটের তৈরি কোর্টহাউসের বাইরে ব্যস্ত রিং রোডের পাশে ফুটপাথে শরতের ঠান্ডায় দাঁড়িয়ে থাকতেন একদল নারী। সব সময় নারীদেরই দেখা মেলে ওই লাইনে।
তারা কিন্তু দিনের পর দিন এসেছেন। কেউ কেউ সঙ্গে ফুলও নিয়ে এসেছেন। এরা সকলেই জিসেল পেলিকটকে প্রশংসা জানাতে জড়ো হন।
তার নির্দিষ্ট উদ্দেশ্য নিয়ে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে, কাচের দরজা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন মিজ পেলিকট, তখন জড়ো হওয়া নারীদের মধ্যে কেউ কেউ আবার সাহস করে তার কাছে গিয়েছেন।
কেউ আবার চিৎকার করে বলেছেন, "আমরা তোমার সঙ্গে আছি, জিসেল।"
"সাহস রাখো।"
জিসেল পেলিকটকে সমর্থন জানাতে আসা বেশিরভাগ নারীই আদালতে থেকে গিয়েছিলেন জনসাধারণের জন্য নির্দিষ্ট কক্ষে নিজেদের আসন সুরক্ষিত করার আশায়। ওই কক্ষের টেলিভিশনের পর্দায় তারা মামলার বিচার প্রক্রিয়া দেখতে পারেন।
এদের সবার উদ্দেশ্য ছিল একটাই, জিসেল পেলিকটের সাহসিকতার সাক্ষী থাকা।
আদালতে চুপচাপ বসেছিলেন এই নারী, যিনি ব্যক্তিগত জীবনে একজন দাদীও। আর বিচার চলাকালীন তার চারপাশে উপস্থিত ছিলেন তারই ধর্ষকরা।
আদালত চত্বরে যারা উপস্থিত ছিলেন, তাদের মধ্যে একজন বছর ৫৪-র ইসাবেল মুনিয়ার। তিনি বলছিলেন, "আমি ওর (জিসেল পেলিকট) মধ্যে নিজেকে দেখতে পাই।"
"অভিযুক্তদের ব্যক্তিদের মধ্যে একজন এক সময় আমার বন্ধু ছিল। ন্যাক্কারজনক ব্যাপার।"
ওই চত্বরে উপস্থিত আর এক নারী সাদজিয়া জিমলি বলেন, "নারীবাদের প্রতীক হয়ে উঠেছেন তিনি (জিসেল পেলিকট)।"
আদালতে জড়ো হওয়ার নেপথ্যে আরও একটা কারণ ছিল। সমস্ত কিছুর ঊর্ধ্বে উঠে মনে হচ্ছিল, তারা যেন উত্তর খুঁজছেন।
ফরাসি নারীরা (যাদের সংখ্যা শুধুমাত্র অ্যাভিগননের আদালত প্রাঙ্গণে থেমে থেকেছে এমনটা নয়) মূলত দুটো প্রশ্নের উত্তর খুঁজছেন।
প্রথম প্রশ্ন হলো এই মামলা ফরাসি পুরুষদের সম্পর্কে কী ইঙ্গিত দেয়? ওই ৫০জন পুরুষদের মধ্যে সবাই একটা ছোট, গ্রামীণ পাড়ায়, অপরিচিত ব্যক্তির শয়নকক্ষে অচেতন অবস্থায় পড়ে থাকা এক নারীর সঙ্গে যৌন সম্পর্ক স্থাপনের জন্য নৈমিত্তিক আমন্ত্রণ গ্রহণ করতে ইচ্ছুক ছিলেন?
দ্বিতীয় প্রশ্নটা কিন্তু প্রথম প্রশ্ন থেকেই উঠে আসে- যৌন সহিংসতা এবং মাদক ব্যবহার করে অচেতন করার পর ধর্ষণের যে মহামারি, তার মোকাবিলা করতে এবং 'লজ্জা' ও 'সম্মতি' সম্পর্কে থাকা সংস্কার এবং অজ্ঞতাকে চ্যালেঞ্জ জানাতে কোনওভাবে সাহায্য করতে পারবে কি এই মামলা?
"লজ্জার পক্ষ বদল করা উচিত" (অর্থাৎ লজ্জা ভুক্তভোগীর নয় ধর্ষকের) বলার মধ্যে দিয়ে জিসেল পেলিকট নিজের সাহসী অবস্থান এবং তার দৃঢ় সংকল্পের পরিচয় দিয়েছেন। তাই প্রশ্নটা হলো সেই বদল সত্যিই আসবে কি?
প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবার তার মামলার সাজা ঘোষণার দিন ছিল। মাদক ব্যবহার করে অচেতন অবস্থায় তাকে ধর্ষণ করার জন্য অন্য পুরুষদের উৎসাহিত করা এবং ঘটনার ভিডিও করার অভিযোগ-সহ একাধিক অভিযোগ ছিল তার স্বামী (এখন প্রাক্তন) ডমিনিক পেলিকটের বিরুদ্ধে।
আদালত ডমিনিক পেলিকটের ২০ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে। এর পাশাপাশি অন্যান্য দোষী ব্যক্তিদেরও সাজা ঘোষণা করা হয়েছে।
অভিযুক্তের মুখোশের আড়ালে
একটা দীর্ঘ বিচারপর্ব তার নিজস্ব একটা বাতাবরণ তৈরি করে এবং গত কয়েক সপ্তাহ ধরে, অ্যাভিগননের 'প্যালেস দ্য জাস্টিস'- ভবনের ভিতরে একটা অদ্ভুত ধরণের স্বাভাবিকতা তৈরি হতে দেখা গিয়েছে। টিভি
ক্যামেরা আর আইনজীবীদের কোলাহলের মাঝেও ধর্ষণে অভিযুক্তদের ঝলক মিলেছে। তাদের চেহারা যে সব সময় মুখোশের আড়ালে ঢাকা ছিল তেমনটা নয়।
মামলার বিচারের শুরুর দিকে তাদের দেখতে পেলে যেমন 'শক' (অভিঘাত) লাগত, তেমন অনুভূতি আর হয় না।
অভিযুক্তদের ঘুরে বেড়াতে, আড্ডা দিতে, রসিকতা করতে, মেশিন থেকে কফি নিতে বা রাস্তার ওপারের ক্যাফে থেকে ফিরতে দেখা গিয়েছে। আর এই দৃশ্যগুলো কোনও না কোনওভাবে তাদের (অভিযুক্তদের) বিভিন্ন প্রতিরক্ষা কৌশলগুলোর মূল যুক্তিকেই খাড়া করতে চায় যে, "এরা একেবারে সাধারণ লোক, ফরাসি সমাজের একটা 'ক্রস-সেকশন', যারা অনলাইনে 'সুইঙ্গিং' অ্যাডভেঞ্চারের (যৌন আকাঙ্ক্ষা পূরণের জন্য বিভিন্ন উপায়) সন্ধানে ছিলেন এবং অপ্রত্যাশিত একটা অবস্থার মাঝে পড়ে গিয়েছেন।"
"এটাই (এই যুক্তিই) এই মামলার সবচেয়ে মর্মান্তিক বিষয়। ভাবতে কষ্ট হয়," বলেছেন এলসা লাবোহে, যিনি 'ডেয়ার টু বি ফেমিনিস্ট' নামে একট ফরাসি অ্যাক্টিভিস্ট গ্রুপে কাজ করেন।
তিনি বলেছেন, "পুরুষদের সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদী সম্পর্ক রয়েছে এমন মানুষের মধ্যে বেশির ভাগই নিজের সঙ্গীকে বিশ্বাসযোগ্য ভাবেন। তবে এখন, অনেক নারীই তার (জিসেল পেলিকটের সঙ্গে) মতোই অনুভব করেছেন। তাদের মনে হয়েছে-আচ্ছা, এমনটা তো আমার সঙ্গেও ঘটতে পারে।"
"এরা অপরাধী মাস্টারমাইন্ড নয়। ওরা শুধুমাত্র ইন্টারনেটের সাহায্য নিয়েছিল... তাই আশঙ্কা করা হচ্ছে সব জায়গাতেই একই ধরনের ঘটনা ঘটতে পারে।"
এই একই দৃষ্টিভঙ্গি ফ্রান্সে ব্যাপকভাবে রয়েছে, তবে ব্যতিক্রমও আছে।
ফ্রান্সের 'ইনস্টিটিউট অব পাবলিক পলিসি'-র ২০২৪ সালে প্রকাশিত পরিসংখ্যানে দেখা গিয়েছে ২০১২ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে গড়ে ৮৬% যৌন নির্যাতনের অভিযোগ এবং ৯৪% ধর্ষণের অভিযোগের ক্ষেত্রে হয় বিচার হয়নি বা মামলাগুলো কখনও বিচারের জন্য আসেইনি।
এই প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়ে মিজ লাবোহে যুক্তি দিয়েছেন যে যৌন সহিংসতার ঘটনা ঘটলে যখন কিছু পুরুষ জানে যে তারা "পার পেয়ে যেতে পারে। এবং তাই এটা (এ জাতীয় ঘটনা) ফ্রান্সে এত বেশি ছড়িয়ে পড়েছে বলে আমি মনে করি।"
'দানবও নয়, সাধারণ মানুষও নয়'
চার মাসের বিচার চলাকালীন, আদালতে বিরতির সময় অভিযুক্তদের বেশিরভাগই 'প্রেস কোর'-এর (গণমাধ্যমের) নারী সাংবাদিকদের পেরিয়ে যাওয়ার আগে মেটাল ডিটেক্টর দ্বারা পরীক্ষার জন্য জড়ো হতেন। সাংবাদিকরা অপেক্ষায় থাকতেন চেম্বারে প্রবেশের। ভিতরে ঢুকে অভিযুক্তরা নিজেদের বক্তব্য পেশ করতে থাকতেন।
আদালত নিযুক্ত মনোরোগ বিশেষজ্ঞ লরেন্ট লায়েট সাক্ষ্য দিয়েছেন যে অভিযুক্তরা না "দানব" বা না "সাধারণ মানুষ"। তাদের কেউ কেউ কেঁদেছেন। কয়েকজন স্বীকারোক্তি দিয়েছেন।
কিন্তু বেশির ভাগই নানা অজুহাত দেখিয়েছেন। অনেকে বলেছেন যে তারা কেবল "লিবার্টাইনস" (যৌন তৃপ্তির বিষয়ে যাদের কোনও ছুৎমার্গ নেই)।
ফরাসিরা বলে যেমন থাকেন যে অনেক দম্পতিরই নানান 'ফ্যান্টাসি' (কল্পনা) রয়েছে এবং এক্ষেত্রে তাদের জানার কোনও উপায় ছিল না যে মিজ পেলিকট মিলনের জন্য সম্মতি দেননি।
অন্যরা আবার দাবি করেছেন যে মিজ পেলিকটের স্বামী ডমিনিক পেলিকট তাদের ভয় দেখিয়েছেন।
অভিযুক্তদের চারিত্রিক দিক থেকে স্পষ্টভাবে কোনও বৈশিষ্ট্য বা মিল দেখা যায়নি। তারা সমাজে একটা বিস্তৃত অংশের প্রতিনিধিত্ব করেন।
অভিযুক্তদের মধ্যে তিন-চতুর্থাংশ ব্যক্তির সন্তান আছে। অভিযুক্তদের অর্ধেক বিবাহিত অথবা তাদের কোনও সম্পর্ক রয়েছে। এক চতুর্থাংশের কিছু বেশি জানিয়েছেন, তারা শৈশবে নির্যাতন বা ধর্ষণের শিকার হয়েছেন।
এদের মধ্যে বয়স, চাকরি, সামাজিক শ্রেণিগত দিক থেকে শ্রেণিবদ্ধ করা সম্ভব নয়। যে দুই বৈশিষ্ট্য তারা ভাগ করে নেন তা হলো, তারা পুরুষ এবং 'কোকো' নামে একটা অবৈধ অনলাইন চ্যাট ফোরাম মারফত যোগাযোগ করেছিলেন।
'সুইঙ্গারদের' পাশাপাশি শিশুদের যৌন নির্যাতনে অভিযুক্ত ব্যক্তি এবং ড্রাগ ডিলারদের আকর্ষণ করে থাকে এই চ্যাট ফোরাম।
ফরাসি প্রসিকিউটরদের মতে, চলতি বছরের শুরুতে বন্ধ করে দেওয়া এই অনলাইন সাইটের সঙ্গে ২৩,০০০ এরও বেশি অপরাধমূলক কার্যকলাপের যোগ রয়েছে।
বিবিসি জানতে পেরেছে, বিচারাধীন ব্যক্তিদের মধ্যে ২৩ জন বা ৪৫% পূর্ব অপরাধের মামলায় দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন। যদিও কর্তৃপক্ষ সুনির্দিষ্ট তথ্য সংগ্রহ করে না, তাও এই সংখ্যা ফ্রান্সের জাতীয় অপরাধমূলক ঘটনার গড়ের প্রায় চারগুণ।
এই সমস্ত মিলিয়ে মিজ লাবোহে যে উপসংহারে পৌঁছেছেন তা হলো, "যৌন সহিংসতায় লিপ্ত পুরুষদের কোনও সাধারণ প্রোফাইল থাকে না।"
এই মামলা বেশ কাছ থেকে অনুসরণ করেছেন যারা তাদের মধ্যে একজন হলেন ফরাসি সাংবাদিক জুলিয়েট ক্যাম্পিয়ন। তিনি পাবলিক ব্রডকাস্টার 'ফ্রান্স ইনফোর-এ কর্মরত। সংবাদ প্রতিবেদনের জন্য আদালতের বিচার-প্রক্রিয়া নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করেছেন তিনি।
তার মতে, "আমি মনে করি এই মামলা অন্য দেশেও হতে পারত। তবে এটা (এই মামলা) ফ্রান্সের পুরুষরা নারীদের কীভাবে দেখেন সে সম্পর্কে অনেক কিছু বলে... বিশেষত সম্মতির ধারণা সম্পর্কে।"
"অনেক পুরুষই জানেন না যে সম্মতি আসলে কী। তাই দুঃখজনকভাবে (এই মামলাটি) আমাদের দেশ সম্পর্কে অনেক কিছুই বলছে।"
'আ ম্যাটার অব মিস্টার এভরিম্যান'
ফ্রান্স জুড়ে ধর্ষণের বিষয়ে মানুষের মনোভাবের রূপরেখা গঠনে অবশ্যই সাহায্য করছে পেলিকট মামলা।
গত ২১ শে সেপ্টেম্বর অভিনেতা, গায়ক, সংগীতজ্ঞ এবং সাংবাদিক-সহ একদল বিশিষ্ট ফরাসি পুরুষ গণ চিঠি লিখেছিলেন যা 'লিবারেশন' সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়েছিল।
সেখানে তারা যুক্তি দিয়েছিলেন যে পেলিকট মামলা প্রমাণ করেছে যে সহিংসতার ঘটনা যেখানে অভিযুক্ত একজন পুরুষ কিন্তু আদপে কোনও "দানবের বিষয় নয়।" চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, "এটা পুরুষদের ব্যাপার, মিস্টার এভরিম্যানের ব্যাপার। ব্যতিক্রম ছাড়া সব পুরুষই এমন একটা ব্যবস্থা থেকে উপকৃত হয় যা নারীদের উপর আধিপত্য বিস্তার করে।"
চিঠিতে পিতৃতন্ত্রকে চ্যালেঞ্জ জানাতে চাওয়া পুরুষদের জন্য একটা "রোড ম্যাপ"-ও তৈরি করা ছিল। পত্রে উল্লেখ করা ছিল, "আসুন আমরা এটা মনে করা বন্ধ করি যে আমাদের আচরণকে ন্যায়সঙ্গত বলে দাবি করে এমন একটা পুরুষালি প্রকৃতি রয়েছে।"
বিশেষজ্ঞদের অনেকে মনে করেন এই মামলার সঙ্গে জনস্বার্থও জড়িয়ে রয়েছে।
যেমন আইনজীবী কারেন নোবলিনস্কি বলেছেন, "এই পুরো মামলা সবার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সকল প্রজন্ম- তরুণ, অল্প বয়সী মেয়ে, প্রাপ্তবয়স্ক সবার জন্য দরকারি।" এই আইনজীবী প্যারিস-ভিত্তিক যৌন নিপীড়নের মামলা বিশেষজ্ঞ।
তার মতে, "এটা তরুণদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করেছে যে ধর্ষণ সব সময় বারে হয় না, ক্লাবে হয় না। এটা আমাদের বাড়িতেও ঘটতে পারে।"
#নটঅলমেন
তবে স্পষ্টতই আরও অনেক কিছু করার আছে। এই মামলার শুরুর দিকে আমি লুই বোনেটের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলাম। তিনি পেলিকট দম্পতির আদি নিবাসস্থল মাজানের মেয়র।
যদিও তিনি এই ধর্ষণের অভিযোগের নিন্দা করার ক্ষেত্রে দ্ব্যর্থহীন ছিলেন, তবুও তাকে একটা বিষয় নিয়ে দুইবার মন্তব্য করতে শোনা গিয়েছিল।
তার মতে, "পেলিকটের অভিজ্ঞতা অতিরঞ্জিত হয়েছে" এবং তিনি (লুই বোনেট) যুক্তি দিয়েছিলেন যে যেহেতু মিজ পেলিকট ঘটনার সময় অচৈতন্য অবস্থায় ছিলেন, তাই তিনি ধর্ষণের শিকার অন্যান্যদের তুলনায় কম কষ্ট অনুভব করেছেন।
তার কথায়, "হ্যাঁ, আমি কম হওয়ার কথা বলছি তার কারণ আমার মনে হয় এটা (ঘটনা) আরও খারাপ হতে পারত।"
"যখন (ধর্ষণ বা যৌন হেনস্থার ঘটনায়) শিশুরা ভুক্তভুগী হয় বা নারীদের মেরে ফেলা হয়, তখন সেটা খুবই গুরুতর হয়ে যায়। কারণ ফিরে যাওয়ার সুযোগ নেই।"
"এক্ষেত্রে পরিবারকে পুনর্গঠন করতে হবে। কষ্ট হবে, কিন্তু এখানে কারও মৃত্যু হয়নি। সুতরাং, তারা এটা (পুনর্গঠন) করতে পারবেন।"
লুই বোনেটের এই মন্তব্য ফ্রান্সজুড়ে ক্ষোভের সৃষ্টি করেছিল। পরে মেয়র একটা বিবৃতি জারি করে "আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করেছিলেন।"
'সমস্ত পুরুষই ধর্ষণ করতে সক্ষম'-এই যুক্তির উপর পেলিকট মামলা ফোকাস করছে বলে প্রচুর বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। এই জাতীয় দাবির সমর্থনে কোনও প্রমাণ নেই।
অনলাইন মাধ্যমে #NotAllMen (সব পুরুষরা না) হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করে যুক্তির বিরোধিতা করেছেন পুরুষদের মধ্যে কেউ কেউ।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এক ব্যক্তি প্রশ্ন তুলেছেন, "আমরা অন্য নারীদের খারাপ আচরণের জন্য বাকি নারীদের 'লজ্জা' বয়ে বেড়াতে বলি না, তাই শুধুমাত্র পুরুষ হওয়ার কারণেই আমাদের অন্য কারও লজ্জা বয়ে যেতে হবে?"
এর বিরুদ্ধে দ্রুত প্রতিক্রিয়া মিলেছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে #NotAllMen -এর প্রতিবাদ জানিয়ে নারীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এবং কখনও কখনও নিজেদের নির্যাতনের বিবরণ জানিয়ে জবাব দিয়েছেন।
সাংবাদিক ম্যানন মারিয়ানি লিখেছেন, "এই হ্যাশট্যাগ পুরুষরাই তৈরি করেছেন এবং তা ব্যবহারও করছেন পুরুষরাই। এটা নারীদের দুর্ভোগকে চুপ করানোর একটা উপায়মাত্র।"
পরে, একজন পুরুষ সংগীতশিল্পী এবং ইনফ্লুয়েন্সার ওয়াক্স এই হ্যাশট্যাগের সমালোচনা করেছেন। হ্যাশট্যাগ ব্যবহারকারীদের উদ্দেশ্যে বলেছেন, "চিরতরের জন্য চুপ করুন। এটা আপনার বিষয় নয়, এটা আমাদের বিষয়। পুরুষরা খুন করে। পুরুষরা আক্রমণ করে। ব্যাস।"
এলসা লাবোহে মনে করেন, ফরাসিদের মনোভাব পরিবর্তনের প্রয়োজন রয়েছে। "আমি মনে করি অনেক লোক এখনও মনে করে যে যৌন সহিংসতা রোমান্টিক বিষয় বা এমন কিছু যা আমরা এখানে (ফ্রান্সে) যেভাবে চলি তারই একটা অংশ," তিনি যুক্তি দেন।
"এই জাতীয় যুক্তি মোটেই গ্রহণ না করে তার বিরুদ্ধে প্রশ্ন তোলাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণও।"
'রাসায়নিক আত্মসমর্পণ' এবং প্রমাণ
ফরাসি সাংসদ সান্দ্রিন জোসোর দফতর সেন নদীর তীরে ফরাসি পার্লামেন্ট ভবনের ঠিক পেছনে। সেই ছোট্ট দফতরে একটা ডেস্কের পাশে থাকা পোস্টারে দুই শব্দের শপথ বাক্য লিখে রেখেছেন তিনি।
সেখানে লেখা রয়েছে 'কেমিক্যাল সাবমিশন' (রাসায়নিক আত্মসমর্পণ) যা ইঙ্গিত করে ধর্ষণের উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত মাদকদ্রব্যকে। এরই বিরুদ্ধে মিজ জোসোর লড়াই।
এক বছর আগে, ২০২৩ সালের নভেম্বর মাসে, জোয়েল গুয়েরিয়াউ নামে এক সিনেটরের পার্টিতে গিয়েছিলেন তিনি। প্যারিসস্থিত অ্যাপার্টমেন্টে ছিল ওই পার্টি।
মিজ জোসোর অভিযোগ যে ধর্ষণের উদ্দেশ্যে তার শ্যাম্পেনে মাদক মিশিয়ে দিয়েছিলেন ওই সিনেটর। মি. গুয়েরিয়াউ অবশ্য তাকে মাদক দেওয়ার বিষয়টা অস্বীকার করেছেন। তার যুক্তি ছিল এটা 'হ্যান্ডলিং ত্রুটি' এবং তদন্তকারীদের বলেছিলেন ওই গ্লাস 'দূষিত' হয়েছিল ঘটনার একদিন আগে।
এক বিবৃতিতে মি. গুয়েরিয়াউয়ের আইনজীবী বলেছেন, "সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রাথমিক প্রতিবেদন পড়ে ঘটনা সম্পর্কে যে ধারণা তৈরি হতে পারে, সেই অশ্লীল ব্যাখ্যা থেকে আমরা কয়েক মাইল দূরে আছি।"
আগামী বছরে এই মামলার বিচার হওয়ার কথা রয়েছে।
মিজ জোসো এখন এমন ঘটনার বিরুদ্ধে প্রচার চালাচ্ছেন এবং ফরাসি আইনি ব্যবস্থার নিরিখে "ক্ষতিগ্রস্তদের সফর সহজ করা" তার উদ্দেশ্য।
"এটা একটা বিপর্যয়কর মুহূর্ত। কারণ প্রমাণের অভাবে অভিযোগ দায়ের করা খুব কম ভুক্তভোগীই বিচার পেতে সক্ষম হন। পর্যাপ্ত চিকিৎসা ব্যবস্থা এবং মানসিক বা আইনি সহায়তা নেই। যৌন সহিংসতার মামলায় আমরা সর্বত্রই ত্রুটি দেখতে পাই।"
জিসেল পেলিকটের মেয়ে ক্যারোলিনের সঙ্গে মিজ জোসো উদ্যোগ নিয়েছেন যাতে 'ড্রাগ-টেস্টিং কিট' (মাদক পরীক্ষা করা যায় এমন কিট) ফ্রান্সের ওষুধের দোকানে উপলব্ধ করানো যেতে পারে। পেলিকট মামলার আবহে এই কিট পরীক্ষামূলকভাবে দেখার জন্য সরকারি সমর্থনও পেয়েছে।
"আমি আশাবাদী। চিকিৎসা জগৎ এবং ফরাসি জনগণ চাইছে যে লজ্জা পক্ষ বদলাক (লজ্জা ভুক্তভোগীর বদলে অভিযুক্তের হোক)," জিসেল পেলিকটের বিখ্যাত উদ্ধৃতি আরও একবার তুলে ধরেছেন মিজ জোসো।
তবে 'প্যারিস অ্যাডিকশন মনিটরিং সেন্টার'-এর রসায়নবিদ এবং বিশেষজ্ঞ ড. লেইলা চাওয়াচি বলছেন, মাদক ও ধর্ষণ সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করার দীর্ঘ সংগ্রামের একটা ধাপ হলো এই মামলা।
"এটাকে (মাদক ব্যবহার করে অচৈতন্য করে ধর্ষণ) বড় জনস্বাস্থ্য বিষয়ক সমস্যা হয়ে উঠতে হবে যাতে প্রত্যেকে (বিষয়টাকে) গুরুত্ব সহকারে নেয় এবং ভুক্তভোগীদের যত্ন নেওয়ার ব্যাপারে উন্নতির জন্য কর্তৃপক্ষকে বাধ্য করে।"
তিনি বলেন, "আমাদের সবার বিষয়টা নিয়ে ভাবা দরকার যাতে এটা শুধুমাত্র ন্যায় বিচারের ইস্যু না হয়ে, স্বাস্থ্য সমস্যা হিসাবে বিবেচিত হয়। এটা আমাদের সবার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।"
বর্তমানে ফরাসি আইনে "সম্মতি" শব্দটাকে ধর্ষণের সংজ্ঞায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। তাই কেউ কেউ যুক্তি দেখিয়েছেন যে এটা আরও স্পষ্ট করার জন্য পরিবর্তন করা উচিত।
তবে মিজ নোবলিনস্কি মনে করেন, ফোকাসটা অন্য কোথাও থাকা উচিত।
তিনি বলেছেন, "আইনের বদলের উপর নয়, (ফোকাস) থাকা উচিত, পুলিশের উপর, তদন্তের উপর এবং তার সঠিকভাবে অর্থায়নের উপর।"
"তাদের পর্যাপ্ত সম্পদ নেই। তাদের কাছে অনেক মামলা আছে, আর এটাই আসল বিষয়। যখন আপনাকে অনেক কিছু সামলাতে হয়, তখন প্রমাণ খুঁজে পাওয়া খুব কঠিন।"
বিচারের প্রথম সপ্তাহগুলোতে আদালত প্রাঙ্গণে যখন তিনি প্রতিদিন যাতায়াত করতেন তখন কাঁধ কুঁজো করে হাঁটতেন জিসেল পেলিকট। তার ভঙ্গি প্রতিরক্ষামূলক ছিল।
যেভাবে এই মামলা নজর কেড়েছিল তাতে তাকে তখন বিচলিত বলে মনে হয়েছিল। তবে সমাপনী যুক্তির সময় আসতে আসতে তার আচরণ সম্পূর্ণ অন্য রকম ছিল। একেবারে স্থির হয়ে বসেছিলেন তিনি।
একটা বৃহত্তর পরিবর্তনের সঙ্গে এটা মিলে গিয়েছে। বিচারের অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে মামলার সঙ্গে যুক্ত আইনজীবী, যারা এই মামলা দেখছিলেন এবং মিসেস পেলিকট নিজে তারই নেওয়া একটা সিদ্ধান্তের অসাধারণ প্রভাব বুঝতে পেরেছিলেন।
আর সেই সিদ্ধান্তটা শুধুমাত্র এই মামলার উন্মুক্ত বিচার প্রক্রিয়া হওয়ার বিষয়ে নয়, প্রতিটা প্রমাণ ও ঘটনার বিবরণ আদালতে সর্বসমক্ষে দেখানোর সিদ্ধান্ত।
এলসা লাবোহে বলেছেন, "তিনি আমাদের দেখাচ্ছেন যে... আপনি যদি ভিকটিম (ভুক্তভোগী) হন... তাহলে লজ্জা না বয়ে বেড়ানোর জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করুন। মাথা উঁচু রাখুন।"
"একজন নারী হিসেবে আপনাকে শুরু করতে হবে একজন সন্দেহভাজন হিসাবে। আপনাকে শুরু করতে হবে একজন মিথ্যাবাদী হিসাবে এবং আপনাকেই প্রমাণ করতে হবে যে এটা সত্যি।"
"প্রত্যেক নারীকেই যে কিছু না কিছুর মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছে সেই বিষয় নিয়ে আমার কোনও সন্দেহ নেই। এটা সবাই জানে। আর এইদিক থেকেই তিনি বিশ্বের সব নারীর প্রতিনিধিত্ব করছেন।"
"জিসেল পেলিকট এটাকে (মামলাকে) নিজের চেয়ে বড় করে দেখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। পুরো বিষয়টাকে সমাজের অংশ হিসাবে আমরা যেভাবে যৌন সহিংসতাকে দেখি, তার সঙ্গে জুড়েছেন তিনি।"
ফরাসি সাংবাদিক জুলিয়েট ক্যাম্পিয়ন আদালত কক্ষ থেকে বেরিয়ে আসলে তাকে মামলার প্রভাব সম্পর্কে জানতে চেয়েছিলাম। একটু থেমে চিন্তা করে বললেন, "ওই সমস্ত ভিডিও দেখতে অসুবিধা হচ্ছিল ... একজন নারী হিসাবে, এটা জটিল এবং আমি ক্লান্ত বোধ করছি।"
তার কথায়, "কিন্তু আমরা আমাদের কাজটা অন্তত করেছি আর এটা নিয়ে কথা বলেছি। খুবই ছোট পদক্ষেপ। এতে বড় কিছু হবে না।"
"আমি আপাতত একমাত্র জিনিসই আশা করতে পারি যে এটা কিছু পুরুষের জন্য গেম চেঞ্জার হবে এবং হয়তো কিছু নারীর জন্যও।"
বিশ্বে প্রতি ১০ মিনিটে একজন নারী তার প্রেমিক কিংবা পরিবারের সদস্যের হাতে প্রাণ হারাচ্ছেন। জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে এ উদ্বেগজনক তথ্য উঠে এসেছে।
এই হিসাব অনুযায়ী, প্রতি ঘণ্টায় ছয় জন এবং প্রতিদিন গড়ে ১৪০ জন নারী তাদেরই কোনো ঘনিষ্ঠ মানুষের হাতে প্রাণ হারাচ্ছেন। জাতিসংঘের নারী বিষয়ক সংস্থা ইউএনওমেন এবং মাদক ও অপরাধ বিষয়ক দপ্তর ইউএনওডিসির যৌথ প্রতিবেদন অনুযায়ী, শুধু গত বছরই ৫১ হাজার নারীকে পরিকল্পনা করে হত্যা করা হয়েছে। এদের ঘাতক ছিল তাদের প্রেমিক কিংবা পরিবারের কোনো সদস্য।
‘ফেমিসাইড ২০২৩: ঘনিষ্ঠ সঙ্গী/পরিবারের সদস্যদের দ্বারা নারীর হত্যার বৈশ্বিক পরিসংখ্যান’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এই তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে যে, ২০২৩ সালে বিশ্ব জুড়ে ৮৫ হাজার ফেমিসাইডের ঘটনা ঘটেছে, যার মধ্যে দুই-তৃতীয়াংশই ঘটেছে প্রেমিক বা পরিবারের সদস্যদের হাতে। এ
দের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ঘটনা ঘটেছে আফ্রিকায়, যেখানে ২১ হাজার ৭০০ নারী নিহত হয়েছেন। এশিয়ায় এ সংখ্যা ১৮ হাজার ৫০০, আমেরিকায় ৮ হাজার ৩০০ এবং ইউরোপে ২ হাজার ৩০০।
পশ্চিমবঙ্গের শিলিগুড়ির এক চিকিৎসক বলেছেন, তিনি বাংলাদেশিদের চিকিৎসা দেবেন। কিন্তু এরজন্য ভারতীয় পতাকায় প্রণাম করে তার চেম্বারে প্রবেশ করতে হবে। শিখর বন্দোপাধ্যায় নামে এই চিকিৎসক ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে এ কথা বলেন।
শিখর বন্দোপাধ্যায় বলেন, ‘বাংলাদেশে আমাদের পতাকা অবমাননা করা হয়েছে, যা আমাকে কষ্ট দিয়েছে। আমি রোগীদের ফিরিয়ে দিতে চাই না। কিন্তু যারা আমাদের দেশে আসবে তাদের আমাদের পতাকাকে সম্মান জানাতে হবে।’
পশ্চিমবঙ্গের নর্থবেঙ্গল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের এই চিকিৎসক বলেন, আমি যে সরকারি হাসপাতালে কাজ করি সেখানে কোনো রোগীকেই আমি ফেরাতে পারব না। কিন্তু শিলিগুড়িতে আমার ব্যক্তিগত চেম্বারে আমি জাতীয় পতাকা ঝুলিয়েছি। সেখানে একটি বার্তাও যুক্ত করেছি। যারা আমার মাতৃভূমির পতাকাকে সম্মান জানাবে না তারা আমার কাছ থেকে চিকিৎসাও প্রত্যাশা করতে পারে না।
পতাকার ওপর থাকা বার্তায় লেখা রয়েছে, ‘ভারতবর্ষের জাতীয় পতাকা আমাদের মাতৃসম। এই পতাকাকে প্রণাম করে চেম্বারে প্রবেশ করবেন। বিশেষত বাংলাদেশ থেকে আগত রোগীরা প্রণাম না করলে এখানে রোগী দেখা হবে না।’
চন্দ্রনাথ অধিকারী নামে অপর এক চিকিৎসক ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে বলেছেন, তিনিও যে সরকারি হাসপাতালে কাজ করেন সেখানে সবাইকে চিকিৎসা দেবেন। কিন্তু নিজের ব্যক্তিগত চেম্বারে কোনো বাংলাদেশি রোগীকে তিনি দেখবেন না।
উল্লেখ্য, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়, বিতর্কিত হিন্দু পণ্ডিত চিন্ময় দাসকে নিয়ে ভারতীয় মিডিয়ায় অতিরঞ্জিত খবর এবং অভ্যন্তরীণ বিষয়ে কথা বলায় ঢাকাসহ দেশের বেশ কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রবেশপথে ভারতের পতাকা এঁকে দিয়েছিলেন শিক্ষার্থীরা।
এরপর পতাকাকে অবমাননা এবং হিন্দুদের ওপর কথিত হামলা বৃদ্ধি নিয়ে বাংলাদেশি রোগীদের চিকিৎসা না দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে কলকাতার একটি হাসপাতাল। এরপর আরও কয়েকটি ভারতীয় হাসপাতাল বলেছে তারা বাংলাদেশিদের চিকিৎসা দেবে না।
যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআই-এর পরবর্তী পরিচালক হিসেবে কাশ প্যাটেলকে বেছে নিয়েছেন মার্কিন নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। কাশ প্যাটেল ট্রাম্পের একজন ঘনিষ্ট মিত্র এবং ভারতীয় বংশোদ্ভূত।
ট্রাম্প তার সোশ্যাল ট্রুথে লিখেছেন, কাশ একজন চমৎকার আইনজীবী, তদন্তকারী এবং 'আমেরিকা ফার্স্ট' যোদ্ধা। দুর্নীতি উন্মোচন, ন্যায়বিচার এবং আমেরিকান জনগণকে রক্ষা করার জন্য কাজ করেছেন প্যাটেল।
এছাড়া প্রথম মেয়াদে কাশ প্যাটেলের ভূমিকা নিয়েও প্রশংসা করেছেন ট্রাম্প। ২০১৬ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত ট্রাম্প যখন প্রেসিডেন্ট ছিলেন, তখন যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলের কর্মকর্তা ছিলেন কাশ। তখন প্রতিরক্ষামন্ত্রীর চিফ অব স্টাফও ছিলেন তিনি।
গত বছরই এক অনুষ্ঠানে কাশ প্যাটেলকে ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছিলেন, তৈরি হও কাশ, তুমি তৈরি হও।
১৯৮০ সালে নিউ ইয়র্কে কাশ প্যাটেলের জন্ম। বেড়ে উঠেছেন গার্ডেন সিটিতে। তার প্রকৃত নাম কাশ্যপ প্রমোদ প্যাটেল। তার বাবা-মা দুজনই গুজরাটি। তারা থাকতেন কানাডায়, পরে পাড়ি জমান যুক্তরাষ্ট্রে।
কাশ ২০০২ সালে ইউনিভার্সিটি অব রিচমন্ড থেকে ইতিহাস ও আইনে ডিগ্রি নেন, দুই বছর পর ইউনিভার্সিটি কলেজ থেকে আন্তর্জাতিক আইন বিষয়ে সনদ নেন তিনি।
আটলান্টিক রিপোর্টে বলা হয়েছে, কাশ প্যাটেল এমন একজন যিনি ট্রাম্পের জন্য সবকিছু করতে পারেন। এ ছাড়া কাশ জানিয়েছেন, ভারতের সঙ্গে তার গভীর সম্পর্ক আছে।
টেসলার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ইলন মাস্কের ব্যক্তিগত সম্পদ অর্জনের দিক দিয়ে নতুন রেকর্ড গড়েছেন। মাস্ক এখন ৩৪৮ বিলিয়ন ডলারের মালিক।
সোমবার ব্লুমবার্গের বিলিয়নেয়ার ইনডেক্সের বরাত দিয়ে এই তথ্য জানিয়েছে জিও নিউজ। মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্প বিজয়ী হওয়ার পর থেকেই হুহু করে বাড়ছে টেসলার শেয়ারের দাম। মূলত এ কারণেই ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ সহযোগী মাস্কের সম্পদ বেড়েছে।
ডোনাল্ড ট্রাম্প ব্যবসাবান্ধব নীতিমালা বাস্তবায়ন করবেন, এমনটাই প্রত্যাশা ওয়াল স্ট্রিটে। যার প্রভাব পড়েছে ট্রাম্প-ঘনিষ্ঠ মাস্কের প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দামে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের দিন থেকে ৪০ শতাংশ বেড়েছে টেসলার শেয়ারের দাম। শুধু শুক্রবারেই তিন দশমিক আট শতাংশ বেড়ে যেয়ে এটি ৩৫২ দশমিক ৫৬ ডলারে পৌঁছে, যা গত তিন বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ।
এতে রাতারাতি মাস্ক সাত বিলিয়ন ডলার অর্জন করেন। যার ফলে, সম্পদ আহরণের আগের রেকর্ড (৩২০ দশমিক তিন বিলিয়ন) ছাড়িয়ে যান তিনি। আগের রেকর্ডটি করোনাভাইরাস মহামারির সময়, ২০২১ সালের নভেম্বরে অর্জন করেন মাস্ক।
ট্রাম্পের সঙ্গে মাস্কের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক পুঁজিবাজারের বিনিয়োগকারীদের আত্মবিশ্বাস এনে দিয়েছে। ট্রাম্পের প্রতি সমর্থন জানানোর পর তার প্রচারণা তহবিলে ১০০ মিলিয়ন ডলারেরও বেশি জমা দেন মাস্ক।
সম্প্রতি মাস্ক ট্রাম্প সরকারের সরকারি কর্মদক্ষতা বাড়ানোর বিভাগের (ডোজ) চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পেয়েছেন। সহ-চেয়ারম্যান হিসাবে তার সঙ্গে থাকবেন উদ্যোক্তা বিবেক রামাস্বামী।
টেসলা ছাড়াও আরও বেশ কয়েকটি লাভজনক প্রতিষ্ঠানে ইলন মাস্কের মালিকানা রয়েছে।
আজকের হালনাগাদ তথ্য মতে, ট্রাম্পের পর সম্পদের দিক দিয়ে পরবর্তী কয়েকটি অবস্থানে আছেন অ্যামাজনের জেফ বেজোস (২১৯ বিলিয়ন), ওরাকলের ল্যারি এলিসন (২০৬ বিলিয়ন), মেটার মার্ক জাকারবার্গ (১৯৮ বিলিয়ন), ফরাসি ধনকুবের বার্নার্ড আরনল্ট ( ১৬৩ বিলিয়ন) এবং বিল গেটস ( ১৬২ বিলিয়ন)।
যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁর প্রশাসনে হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি পদে ২৭ বছর বয়সী ক্যারোলিন লেভিতকে মনোনয়ন দিয়েছেন। তিনি নির্বাচনে ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রচার শিবিরের মুখপাত্র হিসেবে কাজ করেছেন।
গতকাল শুক্রবার এক বিবৃতিতে ট্রাম্প বলেন, ‘ক্যারোলিন দক্ষ ও দৃঢ়চেতা একজন মানুষ। যোগাযোগের ক্ষেত্রে নিজের পারদর্শিতা তিনি দুর্দান্তভাবে প্রমাণ করেছেন। আমি অত্যন্ত আত্মবিশ্বাসী যে তিনি ভালোভাবে দায়িত্ব পালন করবেন ও আমেরিকান জনগণের কাছে আমাদের বার্তা পৌঁছে দিতে সহায়তা করবেন।’
৫ নভেম্বরের নির্বাচনে জয়ের পর থেকে নিজের প্রশাসন গোছাতে শুরু করেছেন ট্রাম্প। গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোয় নিয়োগ কিংবা মনোনয়ন দেওয়া শুরু করেছেন। ট্রাম্পের নতুন প্রশাসনে গুরুত্বপূর্ণ পদে জায়গা পাওয়া কম বয়সীদের একজন হলেন ক্যারোলিন। হোয়াইট হাউসে তিনি সাংবাদিকদের মুখোমুখি হবেন। তাঁদের প্রশ্নের জবাব দেবেন।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে সহকারী প্রেস সেক্রেটারির দায়িত্ব পালন করেছিলেন ক্যারোলিন। এরপর ২০২২ সালে নিউ হ্যাম্পশায়ার থেকে যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদের সদস্য হতে নির্বাচনে অংশ নেন তিনি। কিন্তু সফল হতে পারেননি।
এ ছাড়া কংগ্রেস সদস্য এলিস স্টেফানিকের যোগাযোগ পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন ক্যারোলিন। নতুন প্রশাসনে এলিসকে জাতিসংঘে মার্কিন রাষ্ট্রদূত পদে মনোনয়ন দিয়েছেন ট্রাম্প।
গতকাল অনলাইনে সম্প্রচার হওয়া ফক্স নিউজের এক পডকাস্টে অংশ নিয়ে ক্যারোলিন জানান, ট্রাম্পের প্রচার শিবিরে তিনি ন্যাশনাল প্রেস সেক্রেটারি হিসেবে ভূমিকা রেখেছিলেন। নির্বাচনের আগে গত জুলাইয়ে তিনি প্রথম সন্তানের জন্ম দিয়েছেন।
পডকাস্টে ক্যারোলিন বলেন, রাজনৈতিক পরিবারে বেড়ে ওঠেননি তিনি। নিউ হ্যাম্পশায়ার অঙ্গরাজ্যে মধ্যবিত্ত একটি ব্যবসায়ী পরিবারে তাঁর বেড়ে ওঠা। ম্যানচেস্টারে কলেজে পড়ার সময় থেকে রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন।
রয়টার্সের প্রতিবেদনের খবর, এর আগে হোয়াইট হাউসে সর্বকনিষ্ঠ প্রেস সেক্রেটারি ছিলেন রন জিয়েগলার। ১৯৬৯ সালে প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন তাঁকে এই পদে নিয়োগ দেন। দায়িত্ব নেওয়ার সময় রনের বয়স ছিল ২৯ বছর।
Source : Prothomalo
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁর নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে তৎপর হয়ে উঠেছেন। ৫ নভেম্বর নির্বাচনে জয়ী হয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত ট্রাম্প আগামী বছরের ২০ জানুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমতা গ্রহণ করবেন। নির্বাচনের পর থেকেই তিনি বিশ্বজুড়ে শান্তি প্রতিষ্ঠা এবং অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন ইস্যুতে সক্রিয় ভূমিকা পালন করছেন।
ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে উদ্যোগ
যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম ওয়াশিংটন পোস্ট জানিয়েছে, ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধ করতে ট্রাম্প সম্প্রতি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে ফোনে আলোচনা করেছেন। এ সময় তিনি পুতিনকে ইউক্রেন যুদ্ধ সম্প্রসারণ না করার জন্য আহ্বান জানান। তবে ক্রেমলিন থেকে এ ধরনের আলোচনার কথা অস্বীকার করা হয়েছে। ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ এ আলোচনা সম্পর্কে জানিয়ে বলেন, “এটি সম্পূর্ণ কাল্পনিক এবং ভিত্তিহীন।”
এর আগে ট্রাম্প ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গেও ফোনে কথা বলেন। এ কথোপকথনে রিপাবলিকান নেতা ও ধনকুবের ইলন মাস্কও যুক্ত ছিলেন। ট্রাম্প নির্বাচনের প্রচারের সময় বলেছিলেন, ক্ষমতায় আসার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তিনি ইউক্রেনে শান্তি ফিরিয়ে আনবেন, যদিও তিনি তাঁর পদক্ষেপের বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেননি।
ইউরোপে শান্তি প্রতিষ্ঠায় জার্মানির সঙ্গে আলোচনা
ইউরোপে শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎজের সঙ্গেও ফোনালাপ করেছেন ট্রাম্প। জার্মান সরকারের এক মুখপাত্র জানিয়েছেন, ট্রাম্প ও শলৎজ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক ও বর্তমান ভূরাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ নিয়ে আলোচনা করেন। এর আগে ট্রাম্প ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁ, ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি ও ডেনমার্কের প্রধানমন্ত্রী মিত্তে ফ্রেডেরিকসেনের সঙ্গেও কথা বলেন।
গাজায় শান্তি প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ
গাজায় শান্তি ফিরিয়ে আনার প্রচেষ্টায় ফিলিস্তিনি নেতা মাহমুদ আব্বাসের সঙ্গেও ফোনে কথা বলেছেন ট্রাম্প। মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠায় ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ট্রাম্পের সঙ্গে কাজ করার প্রত্যাশা প্রকাশ করেছেন। নেতানিয়াহু বলেন, ইরানের হুমকি মোকাবিলায় তিনি ও ট্রাম্প একই দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে কাজ করবেন।
বিশ্বস্ত ব্যক্তিদের নিয়োগ
বিশ্ব পরিস্থিতি নিয়ে তৎপরতার পাশাপাশি ট্রাম্প নিজ প্রশাসন গোছানোর কাজও শুরু করেছেন। সিনেটে রিপাবলিকানরা সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে চলেছে, ফলে নেতা নির্বাচনে ট্রাম্পের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে। এছাড়া, সীমান্তে কড়াকড়ি আরোপের জন্য অভিবাসনবিরোধী কট্টরপন্থী কর্মকর্তা টম হফম্যানকে নিয়োগ দিয়েছেন তিনি। এছাড়া হোয়াইট হাউসের চিফ অব স্টাফ হিসেবে সুজি ওয়াইলস এবং জাতিসংঘে মার্কিন রাষ্ট্রদূত হিসেবে এলিস স্টেফানিককে মনোনয়ন দিয়েছেন ট্রাম্প।
বিশ্বব্যাপী শান্তি ও অভ্যন্তরীণ স্থিতিশীলতার প্রতিশ্রুতি দিয়ে পুনরায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়া ট্রাম্পের এই সক্রিয় তৎপরতা আন্তর্জাতিক মহলে ইতিবাচক সাড়া ফেলেছে।
এবিসির আয়োজনে আগামী মঙ্গলবার পেনসিলভানিয়া অঙ্গরাজ্যের ফিলাডেলফিয়া শহরে এ বিতর্ক অনুষ্ঠিত হবে। এটি উভয়ের মধ্যে প্রথম এবং সম্ভবত শেষ টেলিভিশন বিতর্ক হতে যাচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রের আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্রেট প্রার্থী কমলা হ্যারিস এবং রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রথমবারের মতো বিতর্কে মুখোমুখি হতে যাচ্ছেন।
এক টেলিভিশন বিতর্কে উভয়ের মুখোমুখি হওয়ার কথা রয়েছে। এবিসির আয়োজনে আগামী মঙ্গলবার পেনসিলভানিয়া অঙ্গরাজ্যের ফিলাডেলফিয়া শহরে এ বিতর্ক অনুষ্ঠিত হবে। এটি উভয়ের মধ্যে প্রথম এবং সম্ভবত শেষ টেলিভিশন বিতর্ক হতে যাচ্ছে এটি।
এর আগে জুনে ট্রাম্পের সঙ্গে টেলিভিশন বিতর্কে বিপর্যয়ের পর প্রার্থীতা প্রত্যাহারে বাধ্য হন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। ডেমোক্রেট দলের কনভেনশনে প্রার্থী হিসেবে তিনি কমলা হ্যারিসকে মনোনয়ন দেন।
এদিকে আমেরিকার নারী, কৃষ্ণাঙ্গ এবং দক্ষিণ এশীয় বংশোদ্ভূত প্রথম ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসকে(৫৯) নিয়ে বিরোধী প্রার্থী ট্রাম্পের আক্রমণাত্মক বক্তব্য থেমে নেই। বিতর্কের আগে জাতীয় জরিপে জনসমর্থনে ট্রাম্পের চেয়ে কমলা এগিয়ে থাকলেও ট্রাম্প তাকে খাটো করে দেখানোর জোর প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন।
বিতর্কেও ট্রাম্প তার আক্রমণাত্মক ভঙ্গি তুলে ধরবেন বলে বিশ্লেষকেরা মনে করছেন।
রুটজার্স ইউনিভার্সিটি স্কুল অব কমিউনিকেশন এন্ড ইনফরমেশনের এরিন ক্রিস্টি বলেছেন," এই ধরনের বিতর্কে একেবারে ভিন্ন ধরনের দুই প্রার্থী এর আগে কখনও মুখোমুখি হননি।"
তিনি বলেন, তাই এই বিতর্ক হবে খুবই আকর্ষণীয় ও সচেতনতামূলক এবং নির্বাচনে জয় পরাজয় নির্ধারণকারী।
হ্যারিস ও ট্রাম্পের মধ্যে মঙ্গলবার এ বিতর্কই হতে পারে শেষ বিতর্ক। কারণ এখনও পর্যন্ত উভয়ের কেউই নতুন বিতর্কের বিষয়ে সম্মতি দেয়নি।
এদিকে বিতর্কের মঞ্চে সত্যিকার অর্থে কি মঞ্চায়িত হতে যাচ্ছে তা নিবিড়ভাবে প্রত্যক্ষ করতে অপেক্ষা করছে লাখ লাখ যুক্তরাষ্ট্রবাসী।
স্থানীয় সময় শনিবার ইস্তাম্বুলে ইসলামিক স্কুলস অ্যাসোসিয়েশনের এক অনুষ্ঠানে এরদোয়ান বলেন, ‘ইসরায়েলি ঔদ্ধত্য, ইসরায়েলি দস্যুতা এবং ইসরায়েলি রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসবাদ বন্ধ করার একমাত্র উপায় হচ্ছে ইসলামিক দেশগুলোর জোট।’
তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান বলেছেন, ইসরায়েলের 'ক্রমবর্ধমান সম্প্রসারণবাদের হুমকি'র বিরুদ্ধে মুসলিম দেশগুলোর একটি জোট গঠন করা উচিত। সম্প্রতি ইসরায়েল অধিকৃত পশ্চিম তীরে বসতি সম্প্রসারণের বিরুদ্ধে বিক্ষোভে অংশ নেওয়া এক তুর্কি-আমেরিকান নারীকে ইসরায়েলি সেনাদের নির্মম হত্যার কথা উল্লেখ করে তিনি এ আহ্বান জানান।
স্থানীয় সময় শনিবার ইস্তাম্বুলে ইসলামিক স্কুলস অ্যাসোসিয়েশনের এক অনুষ্ঠানে এরদোয়ান বলেন, 'ইসরায়েলি ঔদ্ধত্য, ইসরায়েলি দস্যুতা এবং ইসরায়েলি রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসবাদ বন্ধ করার একমাত্র উপায় হচ্ছে ইসলামিক দেশগুলোর জোট।'
তিনি বলেন, মিশর ও সিরিয়ার সাথে সম্পর্ক উন্নয়নে তুরস্ক সম্প্রতি যে পদক্ষেপ নিয়েছে তার লক্ষ্য হচ্ছে 'সম্প্রসারণবাদের ক্রমবর্ধমান হুমকির বিরুদ্ধে সংহতি' গড়ে তোলা। ইসরায়েলের আগ্রাসনের কারণে এখন লেবানন ও সিরিয়াও হুমকির মুখে রয়েছে।
ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ এক বিবৃতিতে এরদোয়ানের মন্তব্যকে 'বিপজ্জনক মিথ্যা ও উস্কানিমূলক' বলে অভিহিত করেছেন।
তিনি এরদোয়ান সম্পর্কে বলেন, এই তুর্কি নেতা এই অঞ্চলের মধ্যপন্থী আরব সরকারগুলোকে দুর্বল করতে বহু বছর ধরে ইরানের সঙ্গে কাজ করছেন।
গত সপ্তাহে তুরস্ক সফরে আসেন মিসরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল সিসি। এটি গত এক যুগের মধ্যে দেশটির প্রথম কেনো প্রেসিডেন্টের সফর। এসময় তারা গাজা যুদ্ধ এবং নিজেদের মধ্যকার দীর্ঘ-হিমশীতল সম্পর্কের উন্নয়ন প্রভৃতি বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন।
২০২০ সালে তুরস্ক সংযুক্ত আরব আমিরাত ও সৌদি আরবসহ বিচ্ছিন্ন আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের সঙ্গে উত্তেজনা প্রশমনের জন্য কূটনৈতিক প্রচেষ্টা শুরু করলে তাদের মধ্যকার বরফ গলতে শুরু করে।
গত জুলাইয়ে এরদোয়ান বলেছিলেন, ২০১১ সালে সিরিয়ার গৃহযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর সম্পর্ক ছিন্ন করা দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে সম্পর্ক পুনঃপ্রতিষ্ঠায় সম্ভাব্য আলোচনার জন্য 'যেকোনো সময়' সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদকে আমন্ত্রণ জানাবে তুরস্ক।
শুক্রবারের ঘটনার পর ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, ওই এলাকায় গোলাগুলির ফলে এক বিদেশি নারী নিহত হয়েছেন বলে যে খবর পাওয়া গেছে, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। বিস্তারিত ঘটনা এবং কোন পরিস্থিতিতে তার ওপর আক্রমণ করা হয়েছে তা পর্যালোচনা করা হচ্ছে।
শুক্রবারের ঘটনা নিয়ে তাৎক্ষণিকভাবে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর কার্যালয় থেকে কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ সাত রাজ্য বা সেভেন সিস্টার্সের অন্তর্ভুক্ত অরুণাচল প্রদেশে ভারতীয় ভূখণ্ডের প্রায় ৬০ কিলোমিটার ভেতরে ঢুকে পড়েছে চীনের সামরিক বাহিনী। শুধু তাই নয়, ভারতীয় ভূখণ্ডে ঢুকে অরুণাচল প্রদেশের আনজাও জেলার কাপাপু এলাকায় ক্যাম্পও করেছে চীনের পিপলস লিবারেশন আর্মি (পিএএল)।
অরুণাচলের স্থানীয় সংবাদমাধ্যম অরুণাচল টোয়েন্টি ফোর ও নিউজফাই সরেজমিন ঘুরে তৈরি করা এক প্রতিবেদনে চাঞ্চল্যকর এই তথ্য জানিয়েছে।
দেশটির সংবাদমাধ্যমকে একাধিক সূত্র বলেছে, কাপাপু এলাকায় কাঠে আগুন ধরানো, পাথরের গায়ে রঙ ব্যবহার করে লেখা চীনের নাম এবং চীনা খাদ্য সামগ্রীর ছবি দেখে বোঝা যায়, সেখানে প্রায় এক সপ্তাহ আগে চীনা সৈন্যদের অনুপ্রবেশ ঘটেছে।
ছবিতে দেখা যায়, পাথরের গায়ে ইংরেজিতে ২০২৪ সাল লেখা রয়েছে। ভারতীয় ভূখণ্ডে নিজেদের মালিকানা দাবি করার জন্য অনুপ্রবেশের সময় চীনা সেনাবাহিনী এসব কৌশল ব্যবহার করে বলে জানা গেছে।
নিউজফাই বলছে, দুই দেশকে বিভক্তকারী ম্যাকমোহন লাইনের হাদিগ্রা পাসের কাছের কাপাপুতে ইন্দো-তিব্বত বর্ডার পুলিশের (আইটিবিপি) একটি ক্যাম্পের অবস্থান রয়েছে। আর আনজাও জেলার নিকটতম প্রশাসনিক এলাকা চাগলাগাম ম্যাকমোহন লাইন থেকে প্রায় ৯০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। এছাড়া চাগলাগাম থেকে প্রায় ৮০ কিলোমিটার দূরে পার্বত্য এলাকায় গ্লাইতাকরু পাসের অবস্থান।
এর আগে, ২০২২ সালের আগস্টে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়া ছবিতে দেখা যায়, পিএলএ সৈন্যরা হাদিগ্রা হ্রদের কাছে নিজেদের অবকাঠামো নির্মাণ কার্যক্রম তদারকি করছে। সেখানে তিনটি খননকারী মেশিন দিয়ে খনন কাজ পরিচালনা করতে দেখা যায় চীনের সামরিক বাহিনীকে।
একই বছরের ১১ আগস্ট চাগলাগাম থেকে ৩০ কিলোমিটারেরও কম দূরের ওই এলাকার নির্মাণ কাজ পর্যবেক্ষণ করে চীনের সামরিক বাহিনীর এলআরপি টহল দল। ওই সময় হাদিগ্রা হ্রদের নির্মাণাধীন স্থাপনা থেকে কিছুটা উত্তরে চীনের সামরিক বাহিনীর সদস্যদের ক্যাম্পের অস্তিত্ব নিশ্চিত হয় ভারতীয় সেনাবাহিনী।
তারও আগে ২০২১ সালে দেশটির সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি স্যাটেলাইটে ধারণ করা চিত্র বিশ্লেষণ করে জানায়, অরুণাচল প্রদেশে ভারতীয় ভূখণ্ডের ভেতরে কমপক্ষে ৬০টি ভবনের দ্বিতীয় ক্লাস্টারের নির্মাণ কাজ পরিচালনা করছে চীনা সামরিক বাহিনী।
২০২০ সালে চীনা সৈন্যরা অরুণাচলের দিবাং উপত্যকা জেলায় ভারতীয় ভূখণ্ডে প্রবেশ করে। ওই সময় দুই দেশের সৈন্যদের মাঝে চরম উত্তেজনা তৈরি হয়। তার আগের বছর অর্থাৎ ২০১৯ সালে অরুণাচলের ভারতীয় ভূখণ্ডের প্রায় ৪০ কিলোমিটার ভেতরে ডোইমরু নালার ওপর একটি কাঠের সেতু তৈরি করে চীনা সামরিক বাহিনী।
ভারতের বহুল আলোচিত অরুণাচল প্রদেশের সীমান্ত লাগোয়া বিশাল অংশের মালিকানা দাবি করে প্রতিবেশি চীন। চীনের সাথে ভারতের মোট ৩ হাজার ৪৮৮ কিলোমিটার সীমান্ত রয়েছে। এর মধ্যে কেবল বিরোধপূর্ণ অরুণাচলের সাথে চীনের সীমান্ত রয়েছে এক হাজার ১২৬ কিলোমিটার।
রুশ সেনারা পূর্ব ইউক্রেনের আরেকটি শহর দখলে নিয়েছেন। রাশিয়ার সেনাবাহিনী আজ রোববার এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
রুশ সেনাদের দখল করা শহরটির নাম নোভোরোদিভকা। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া ইউক্রেনে অভিযান শুরুর আগে শহরটির বাসিন্দার সংখ্যা ছিল ১৪ হাজারের বেশি।
নোভোরোদিভকা ইউক্রেনের পূর্ব দিকের দনবাসের দোনেৎস্ক অঞ্চলের একটি শহর। এই অঞ্চলের কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ পোকরোভস্ক শহর দখলই রুশ সেনাদের প্রধান লক্ষ্য।
গত গ্রীষ্মকাল থেকে এই অঞ্চলে অভিযান জোরদার করেন রুশ সেনারা। তাঁরা এখন পোকরোভস্ক দখলের কাছাকাছি পর্যায়ে চলে এসেছেন।
এদিকে গত ৬ আগস্ট আকস্মিকভাবে রাশিয়ার সীমান্তবর্তী কুরস্ক অঞ্চলে স্থল অভিযান শুরু করে ইউক্রেন। কিন্তু তা সত্ত্বেও দোনেৎস্ক অঞ্চলে ধীরগতিতে নিজেদের লক্ষ্যে এগিয়ে যায় রাশিয়া।
গত বৃহস্পতিবার রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন জানান, ইউক্রেনের পূর্ব দিকের দনবাস দখলই তাঁদের প্রধান লক্ষ্য। রাশিয়ার কুরস্ক অঞ্চলে ইউক্রেনের পাল্টা অভিযানের কারণে দনবাসে তাঁদের অভিযান আরও সহজ হয়েছে।
মার্কিন নিউজ চ্যানেল ফক্সকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেন, ‘এখনও চুক্তি হওয়ার মতো অবস্থা আসেনি।’
নভেম্বরে সর্বশেষ সপ্তাহব্যাপী যুদ্ধবিরতির পর থেকেই কাতার, মিসর ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় হামাস-ইসরায়েলের মধ্যে পরবর্তী পর্যায়ের যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনা চলমান থাকলেও আজও বিষয়টি নিয়ে মতৈক্যে পৌঁছাতে পারেনি কোনো পক্ষই। তবে আজ এ বিষয়ে সুসংবাদ জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনের দাবি, চুক্তির ৯০ শতাংশ বিষয়ে দুইপক্ষ একমত হয়েছে।
ব্লিঙ্কেন জানান, 'এখন যুদ্ধবিরতি নিয়ে পূর্ণ মতৈক্যে পৌঁছানোর পুরো দায় ইসরায়েল ও হামাসের।'
ব্লিঙ্কেন দুই পক্ষকে অনুরোধ করেছেন, তারা যেন বাকি ১০ শতাংশ মতৈক্যে পৌঁছায় ও যুদ্ধবিরতি চুক্তি চূড়ান্ত করে।
'৯০ শতাংশ মতৈক্য হয়ে গেছে। কিন্তু এখনো কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে একমত হওয়া বাকি আছে', যোগ করেন ব্লিঙ্কেন।
তার যুক্তি, 'এটা এখন ইসরায়েল ও হামাসের দায়িত্ব। মতৈক্যে পৌঁছানো, লড়াই বন্ধ করা ও বন্দিদের মুক্তি দেয়া।'
ব্লিঙ্কেন জানিয়েছেন, 'যেসব বিষয়ের এখনো ফয়সালা হয়নি, তার মধ্যে আছে ফিলাডেলফি করিডোর, যা গাজা উপত্যকা ও মিসরের সীমান্তে পড়ে। তাছাড়া কীভাবে ইসরায়েলি জিম্মি ও ইসরায়েলি কারাগারে থাকা ফিলিস্তিনি বন্দিরা মুক্তি পাবেন, সেটা নিয়েও মতভেদ রয়েছে।'
'আমি আশা করছি, মধ্যস্থতাকারী মিসর ও কাতার আমাদের চিন্তাভাবনার কথা হামাসকে জানাবে। আমরা ইসরায়েলের সঙ্গে কথা বলব। তারপর আমরাও দেখব, কেমন করে বাকি বিষয়গুলি নিয়ে একমত হওয়া যায়', যোগ করেন অভিজ্ঞ কূটনীতিবিদ ব্লিঙ্কেন।
অপরদিকে, মার্কিন নিউজ চ্যানেল ফক্সকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেন, 'এখনও চুক্তি হওয়ার মতো অবস্থা আসেনি।'
ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে এই সংঘাতে প্রচুর মানুষের মৃত্যু হয়েছে। ২০২৩-এর ৭ অক্টোবর হামাস ইসরায়েলে ঢুকে এক হাজার দুইশ মানুষকে হত্যা করে, ২৫০ জনেরও বেশি মানুষকে জিম্মি করে নিয়ে যায়। ইসরায়েলি পাল্টা হামলায় এখন পর্যন্ত গাজায় ৪০ হাজার আটশ মানুষ মারা গেছেন বলে হামাস জানিয়েছে।
হামাসকে সন্ত্রাসবাদী সংগঠন বলে ঘোষণা করেছে ইসরায়েল, যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি-সহ বেশ কয়েকটি দেশ।
ইসরায়েল যাচ্ছেন বেয়ারবক
জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রী বেয়ারবক শুক্রবার ইসরায়েলে যাচ্ছেন। তিনি ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও প্রতিরক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করবেন। তিনি অধিকৃত পশ্চিম তীরেও যাবেন।
বৃহস্পতিবার বেয়ারবক তার মধ্যপ্রাচ্য সফর শুরু করেছেন। শুরুতে তিনি সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদে গেছেন।
ডয়চে ভেলের সাংবাদিক নিনা হ্যাসে কূটনৈতিক সূত্রের বরাত দিয়ে জানান, বেয়ারবক সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে বলেছেন, 'ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের নিজেদের এলাকা বজায় রেখে "টু স্টেট" সমাধানের ওপর গুরুত্ব দিতে হবে।'
এরপর জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী জর্ডান যান। সেখানে তিনি ঘোষণা করেন, গাজায় মানবিক সাহায্যের জন্য জার্মানি বাড়তি পাঁচ কোটি ইউরো দেবে। তিনি জর্ডানকেও বাড়তি এক কোটি ২৭ লাখ ইউরো দেয়ার কথা জানিয়েছেন।
এপি, এএফপি, রয়টার্স, ডিপিএ
কলকাতার নিউ মার্কেট, মার্কুইস স্ট্রিট কয়েক মাস আগেও ভিড়ে গমগম করত বাংলাদেশ থেকে যাওয়া মানুষে। কিন্তু গত জুলাই থেকে কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে সৃষ্ট অস্থিরতা এবং পরিণতিতে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেশ ছেড়ে পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নেওয়ার পর থেকে কলকাতা প্রায় বাংলাদেশি পর্যটকশূন্য হয়ে পড়েছে। খবর বিবিসির।
বাংলাদেশি পর্যটক না যাওয়ার ধাক্কা লেগেছে কলকাতার কিছু এলাকার ব্যবসায়। এসব এলাকায় হোটেল রুম প্রায় ফাঁকা থাকছে, ব্যবসায় ভাটা পড়েছে, কমেছে হাসপাতালে রোগীর সংখ্যাও। এতে হুমকির মুখে পড়েছে এসব খাতের সঙ্গে যুক্ত মানুষের জীবিকা। নিউ মার্কেট এলাকায় বিক্রি কমে গেছে প্রায় ৬০ শতাংশ।
ভারতে বাংলাদেশিদের যাওয়া কমে যাওয়ার অন্যতম কারণ হচ্ছে, আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বাংলাদেশে ভারতীয় ভিসা সেন্টার অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। এরপর এখনও বাংলাদেশে ভিসা দেওয়ার ব্যবস্থা সম্পূর্ণ চালু করেনি। সে কারণে যারা আগে থেকে ভিসা নিয়ে রেখেছেন এবং জরুরি চিকিৎসা করাতে যাচ্ছেন, তারাই ভারতে যাওয়ার অনুমতি পাচ্ছেন।
বাংলাদেশি পর্যটকরা মূলত কলকাতার নিউ মার্কেট, মার্কুইস স্ট্রিট বা মুকুন্দপুর অঞ্চলের বেসরকারি হাসপাতালগুলোতেই থাকেন ও কেনাকাটা করেন। সারা বছরই এসব এলাকায় বাংলাদেশি পর্যটকদের ভিড় লেগে থাকে।
কিন্তু মাসখানেকের বেশি সময় ধরে বাংলাদেশ থেকে প্রায় কেউই কলকাতার ওইসব এলাকায় যাচ্ছেন না বলে জানান নিউমার্কেটের শপ ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক অশোক গুপ্তা।
তিনি বিবিসিকে বলেন, 'নিউ মার্কেটের জামাকাপড়ের দোকান বলুন বা অন্যান্য সামগ্রী—এসবের একটা বড় ক্রেতা বাংলাদেশের মানুষ। ভারতীয় ভিসা ব্যবস্থা এখনও পুরোপুরি চালু হয়নি। তাই তারা প্রায় কেউই আসতে পারছেন না। আমাদের বিক্রি প্রায় ৬০ শতাংশ কমে গেছে গত এক মাসে।'
অবশ্য আরজি কর মেডিক্যাল কলেজে তরুণী চিকিৎসকের ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনাও নিউ মার্কেটের ব্যবসা কমে যাওয়ার আরেকটি কারণ।
অশোক গুপ্তার বলেন, 'ওই ঘটনা মানুষকে এতটাই নাড়া দিয়েছে যে বহু মানুষেরই কেনাকাটা করার, উৎসবে মাতার মতো মন নেই। এছাড়া রোজই মিছিল-প্রতিবাদ হচ্ছে। তাই মানুষ এখন এদিকে আসা কমিয়ে দিয়েছে।'
পশ্চিমবঙ্গে গিয়ে বাংলাদেশিরা মূলত মার্কুইস স্ট্রিটের হোটেলগুলোতে ওঠেন। এ এলাকার হোটেল, খাবারের দোকান বা অন্যান্য পরিষেবা—সবই বাংলাদেশি পর্যটক-কেন্দ্রিক। ফলে বাংলাদেশি পর্যটক না যাওয়ায় ওই এলাকার ব্যবসায়ও মন্দা যাচ্ছে।
এছাড়া বাংলাদেশ থেকে বহু মানুষ চিকিৎসা করাতে কলকাতায় যান।
একটি বেসরকারি হাসপাতাল গোষ্ঠী বিবিসিকে জানিয়েছে, বাংলাদেশি রোগীর সংখ্যা এক মাস আগের তুলনায় এক-তৃতীয়াংশ কমে গেছে।
প্রায় ফাঁকা হোটেল
কলকাতার কেন্দ্রস্থল মার্কুইস স্ট্রিটের বহু হোটেল-রেস্তোরাঁর ব্যবসা টিকে আছে মূলত বাংলাদেশি পর্যটকদের ওপরে নির্ভর করে। এছাড়া এ এলাকায় মানি-এক্সচেঞ্জ, বাসের কাউন্টারসহ বাংলাদেশি পর্যটকদের প্রায় সব ধরনের পরিষেবা পাওয়া যায়।
কিন্তু বাংলাদেশিদের যাওয়া প্রায় বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এ এলাকায় অনেক হোটেল প্রায় ফাঁকা থাকছে। হোটেলগুলোর প্রায় ৭০ শতাংশ ঘর ফাঁকা থাকছে।
মার্কুইস স্ট্রিটের হোটেল মালিকদের সংগঠনের নেতা মনোতোষ সরকার বিবিসিকে বলেন, 'কয়েক মাস আগেও আমাদের হোটেলগুলির ৬০ থেকে ৮০ শতাংশ অকুপেন্সি রেট ছিল। এখন সেটা নেমে এসেছে মাত্র ৩০ শতাংশে।
তিনি আরও বলেন, 'মার্কুইস স্ট্রিটে তো শুধু হোটেল নয়, বাংলাদেশি পর্যটকদের আরও বহু পরিষেবা প্রদানকারী সংস্থা আছে। তাদেরও মূল ক্রেতা ওদেশের পর্যটকরাই। তারা এখন এতটাই কম সংখ্যায় আসছেন যে সব ব্যবসায়ীরাই মার খাচ্ছে। বাস আসছে বাংলাদেশি পর্যটক নিয়ে, কিন্তু সেখানেও দেখা যাচ্ছে ওই ৩০ শতাংশমতোই আসন ভর্তি হচ্ছে, বাকিটা ফাঁকা থাকছে।'
এই পরিস্থিতি কতদিন চলবে, তা অনিশ্চিত। সে কারণে অন্য কোনো অঞ্চলের ক্রেতাদের আকৃষ্ট করা যায় কি না, তা নিয়ে ভাবছেন মার্কুইস স্ট্রিটের হোটেল ব্যবসায়ীরা।
নিউমার্কেটে বিক্রিতে মন্দা
এদিকে নিউ মার্কেটে বছরভরই বাংলাদেশি পর্যটকদের ভিড় লেগে থাকত। বিশেষ করে পোশাকের দোকানগুলোতে বাংলাদেশি ক্রেতাদের ভিড় দেখা যেত বেশি।
'কিন্তু এক মাস হয়ে গেল, তারা এখন আর ভারতে আসছেন না প্রায় কেউই। আমাদের দোকানগুলোর ৬০ শতাংশ বিক্রি কমে গেছে এই এক মাসে,' বলেন নিউ মার্কেটের দোকান মালিকদের সংগঠনের প্রধান অশোক গুপ্তা।
তিনি বলেন, 'মাস খানেকের মধ্যেই দুর্গাপুজো। পুজো আর ঈদের আগে আমাদের ব্যবসার বড় সিজন। পুজোর সময়ে শুধু যে হিন্দুরা কেনাকাটা করেন, তা নয়। এই সময়ে অনেক নতুন ডিজাইনের পোশাক বাজারে আসে, তাই মুসলমান এবং অবশ্যই বাংলাদেশিরা এই সময়ে কেনাকাটা করতে আসতেন। আবার পাইকারি বাজার থেকে পোশাক কিনে বাংলাদেশে নিয়ে যাওয়ার জন্য সেদেশ থেকে ব্যবসায়ীরাও আসতেন।
'তবে এ বছর কেউই প্রায় আসছেন না। বাংলাদেশের পরিস্থিতি তো একটা কারণ। আবার কলকাতায় এখন বহু মানুষ আরজি করের ঘটনা নিয়ে এতটাই মন খারাপ করে আছেন যে তারাও কেনাকাটা করতে উৎসাহ পাচ্ছেন না। কবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে, তা বোঝা যাচ্ছে না।'
আগামী পাঁচ-ছয় দিনের মধ্যে বাজারের পরিস্থিতি উন্নতি না হলে এবারের কেনাকাটার পুরো মৌসুমটা তাদের ক্ষতি হবে বলে জানান অশোক গুপ্তা।
নিউ মার্কেটের কাছাকাছি আরও যে কটি বড় শপিং মল বা দোকান আছে, সেখানেও একই পরিস্থিতি বলে জানা গেছে।
হাসপাতালেও রোগী কমেছে
বাংলাদেশ থেকে যারা ভারতে যান, তাদের একটা বড় অংশ যান চিকিৎসা নিতে। কলকাতা, ভেলোর, চেন্নাই, বেঙ্গালুরু, দিল্লি, মুম্বাইয়ের অনেক বেসরকারি হাসপাতালে বাংলাদেশের বহু মানুষ যান। এসব হাসপাতালে বাংলাদেশিদের জন্য আলাদা সার্ভিস-ডেস্কও থাকে।
কলকাতার যেসব বেসরকারি হাসপাতালে বাংলাদেশি রোগীরা বেশি যান, ওই হাসপাতালগুলো বিবিসিকে জানিয়েছে, গত এক মাসে বাংলাদেশ থেকে যাওয়া রোগীর সংখ্যা খুব কম।
মনিপাল হসপিটালস্ গোষ্ঠীর হাসপাতালগুলোতে প্রতি মাসে গড়ে ২ হাজার ১০০ জন বাংলাদেশি রোগী যান। কিন্তু সেই সংখ্যা এখন প্রায় এক-তৃতীয়াংশে নেমে এসেছে।
কলকাতার ইস্টার্ন বাইপাস সংলগ্ন এলাকার হাসপাতালগুলোতে বাংলাদেশি রোগীরা বেশি যান। ওইসব হাসপাতালকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে বড় পরিষেবা শিল্প। খাওয়ার বা থাকার হোটেল, ওষুধের দোকানসহ সবমিলিয়ে প্রায় এক লাখ মানুষের জীবিকা চলে ওই হাসপাতালগুলোকে কেন্দ্র করে।
এই মানুষগুলোর একটা বড় অংশ নির্ভর করে বাংলাদেশি রোগীদের ওপরে। তাই বাংলাদেশ থেকে পর্যটক বা রোগী যাওয়া স্বাভাবিক হওয়ার আগপর্যন্ত এই বিপুলসংখ্যক মানুষের জীবিকা নিয়ে অনিশ্চয়তা কাটবে না।
বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ, নির্বাচনের ফল উপেক্ষা করে প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ দেশটির প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ডানপন্থী মিশেল বার্নিয়েকে নিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
ডানপন্থী রাজনীতিবিদ মিশেল বার্নিয়েকে নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার প্রতিবাদে ফ্রান্সজুড়ে বিক্ষোভ হয়েছে। স্থানীয় সময় শনিবার (৭ সেপ্টেম্বর) এক লাখেরও বেশি মানুষ রাজধানী প্যারিসসহ বিভিন্ন শহরে বিক্ষোভ করেন। খবর বিবিসির।
বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ, নির্বাচনের ফল উপেক্ষা করে প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ দেশটির প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মিশেল বার্নিয়েকে নিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
এর আগে, ফ্রান্সে অনুষ্ঠিত জাতীয় পরিষদ নির্বাচনে কোনো দল একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পেলেও বেশির ভাগ আসন পেয়েছে বামপন্থী ব্লক নিউ পপুলার ফ্রন্ট (এনপিএফ)। তাই বামপন্থীদের বাদ দিয়ে একজন ডানপন্থী রাজনীতিবিদকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার যে সিদ্ধান্ত প্রেসিডেন্ট নিয়েছেন, তার প্রতিবাদেই দেশজুড়ে এ বিক্ষোভের ডাক দিয়েছে বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠন ও বামপন্থী দল।
যদিও ইইউর (ইউরোপীয় ইউনিয়ন) সাবেক এই ব্রেক্সিট আলোচক মিশেল বার্নিয়ে বলেছেন, তিনি বামপন্থী-সহ সকল ধারার রাজনীতিবিদদের নিয়ে সরকার গঠন করতে চান।
এদিকে, দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, রাজধানী প্যারিসে ২৬ হাজাসহ শনিবার দেশব্যাপী অন্তত এক লাখ ১০ হাজার মানুষ বিক্ষোভ করেছেন। তবে বিক্ষোভকারীদের মধ্যে এক নেতার দাবি, দেশজুড়ে মোট বিক্ষোভকারীর সংখ্যা ছিল অন্তত ৩ লাখ।
ডোসিয়ার সেন্টার নামক রুশ অনুসন্ধানী সংবাদমাধ্যমটির প্রতিবেদনে বলা হয়, রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও সাবেক অলিম্পিক জিমন্যাস্ট অ্যালাইনা কাবায়েভার দুই শিশুসন্তান রয়েছে।
রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং সাবেক অলিম্পিক জিমন্যাস্ট অ্যালাইনা কাবায়েভার দুই শিশুসন্তান রয়েছে। জন্মের পর থেকে দুই সন্তানই একটি অজ্ঞাত স্থানে বসবাস করছে। পুতিনের সাবেক এক বিলিয়নিয়ার শত্রুর প্রতিষ্ঠিত একটি অনুসন্ধানী সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে এমনটাই দাবি করা হয়েছে।
তবে এক দশকেরও বেশি সময় ধরে এমন কোনো প্রেমের সম্পর্কে জড়িত থাকার বিষয়টি নাকচ করে দিয়েছেন রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন ও জিমন্যাস্ট কাবায়েভা।
ডোসিয়ার সেন্টার নামক রুশ অনুসন্ধানী সংবাদমাধ্যমটির প্রতিবেদনে বলা হয়, পুতিন ও কাবায়েভার দুই সন্তান ইভান পুতিন ও ভ্লাদিমির পুতিন জুনিয়ের জন্ম যথাক্রমে ২০১৫ ও ২০১৯ সালে। একাধিক অজ্ঞাতনামা সূত্রের বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তারা (সূত্র) নিয়মিতই পুতিনের দুই সন্তানকে দেখতে পান।
সাবেক স্ত্রী লুদমিলা পুতিনের ঘরে তার দুই কন্যাসন্তান জন্ম নেওয়ার কথা প্রকাশ্যে স্বীকার করেছেন পুতিন (৭১)। ক্রেমলিনের তথ্য অনুযায়ী, তারা দুজনেই ১৯৮৩ সালে বৈবাহিক বন্ধনে আবদ্ধ হন। তাদের দুই সন্তানের নাম: মারিয়া (৩৯) ও ক্যাটরিনা (৩৮)।
ডোসিয়ার সেন্টারের দাবি, লুদমিলার সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদ হওয়ার ছয় বছর আগেই ২০০৮ সালের শুরুর দিকে অলিম্পিক জিমন্যাস্ট কাবায়েভার সঙ্গে পুতিনের সম্পর্ক শুরু হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, কাবায়েভা (৪১) সুইজারল্যান্ডের লুগানোর একটি ক্লিনিকে ইভানের জন্ম দেন। আর ভ্লাদিমির জুনিয়রের জন্ম হয় মস্কোতে।
ডোসিয়ার সেন্টারের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইভান ও ভ্লাদিমির মস্কোর উত্তর–পশ্চিমে পুতিনের একটি বাড়িতে থাকে। তবে সমবয়সি অন্য শিশুদের সঙ্গে তাদের কোনো যোগাযোগ নেই। সাঁতার ও আর্টিস্টিক জিমন্যাস্টিকস শেখানোর জন্য তাদের ব্যক্তিগত প্রশিক্ষক রয়েছে।
ইভান ইতোমধ্যে জিমন্যাস্টিক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেছে বলে জানা যায়। এছাড়া বাবার সঙ্গে মাঝেমধ্যে হকিও খেলে সে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দুই সন্তানের ব্যক্তিগত ইংরেজি শিক্ষকের জন্য পুতিন পরিবার প্রতি মাসে ৮ হাজার ৫০০ মার্কিন ডলার খরচ কয়। এ তথ্যের প্রমাণ হিসেবে ডোসিয়ার সেন্টার অনলাইনে প্রকাশিত একটি বিজ্ঞাপনের কথা উল্লেখ করেছে– যেটিতে বলা হয়, শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে পুতিন পরিবার দক্ষিণ আফ্রিকার পাসপোর্টধারী আবেদনকারীদের অগ্রাধিকার দেন। এছাড়া ঐ বিজ্ঞাপনে বলা হয়, পরিবারটি 'বিচ্ছিন্নভাবে বসবাস' করছে।
ডোসিয়ার সেন্টার প্রতিবেদনে আরও বলেছে, পুতিন পশ্চিমা অ্যানিমেশনের সমালোচনা এবং সোভিয়েত আমলের কার্টুনকে প্রাধান্য দিলেও তার ছেলে ইভান ডিজনির কার্টুন ও সিনেমার ভক্ত। এমনকি, পছন্দের সব কার্টুন চরিত্রের পোশাক পড়ে সাজতেও পছন্দ করে সে।
পুতিন ও জিমন্যাস্ট তারকা কাবায়েভার কথিত সম্পর্কের কথা প্রথম প্রকাশ্যে আসে ২০০৮ সালে যখন গুজব ছড়িয়ে পড়ে, পুতিন ও তার স্ত্রীর মধ্যে গোপনে বিবাহবিচ্ছেদ ঘটেছে। তখন নিজেদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক থাকার দাবি অস্বীকার করেছিলেন পুতিন ও কাবায়েভা।
১৩ বছর বয়সে পেশাদার জিমন্যাস্ট হিসেবে অভিষেক হয় কাবায়েভার। ২০০০ সালের সিডনি অলিম্পিকে রিদমিক জিমন্যাস্টিকসে ব্রোঞ্জ পদক জয় করেন তিনি। ২০০৪ সালের অ্যাথেন্স অলিম্পিকে তিনি স্বর্ণ পদক জিতেন এবং বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় আরও বেশ কিছু স্বর্ণ পদক অর্জন করেন।
পরে তিনি অবসর নেন এবং রাশিয়ার পার্লামেন্টের নিম্ন কক্ষে দুই বছর কাজ করেন, যেখানে তিনি পুতিনের ইউনাইটেড রাশিয়া পার্টির প্রতিনিধিত্ব করেন।
২০২২ সালে যুক্তরাজ্য কাবায়েভাসহ পুতিনের পরিবারের বেশ কয়েকজন সদস্যকে নিষেধাজ্ঞার আওতায় আনে।
কাবায়েভা "পুতিনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিগত সম্পর্ক" রাখেন বলে ব্রিটিশ সরকারের পক্ষ থেকে তখন জানানো হয়েছিল।
রাশিয়ার ড্রোন ও বোমা হামলা ঠেকাতে ইউক্রেনে ৬৫০টি আকাশ প্রতিরক্ষা ক্ষেপণাস্ত্র পাঠাবে যুক্তরাজ্য। গতকাল শুক্রবার জার্মানিতে ইউক্রেনের পশ্চিমা মিত্রদের এক বৈঠকে ইউক্রেনকে ২১৩ মিলিয়ন ডলারের এসব ক্ষেপণাস্ত্র দেওয়ার ঘোষণা দেন ব্রিটিশ প্রতিরক্ষামন্ত্রী জন হেইলি।
ব্রিটিশ সরকার জানিয়েছে, লাইটওয়েট মাল্টিরোল মিসাইল (এলএমএম) সিস্টেমের প্রথম ব্যাচটি চলতি বছরের শেষের দিকে ইউক্রেনে পাঠানো হবে। যুক্তরাজ্যের প্রতিরক্ষামন্ত্রী এক বিবৃতিতে বলেন, ‘নতুন এই প্রতিশ্রুতি ইউক্রেনীয় বাহিনীর মনোবল বাড়াবে।
ইউক্রেনের প্রতি সমর্থন বাড়াতে আমাদের নতুন সরকার অঙ্গীকারবদ্ধ। সম্প্রতি আমরা ইউক্রেনের পোলতাভা ও লভিভ অঞ্চলে রাশিয়াকে নির্বিচারে হামলা চালাতে দেখেছি। যুক্তরাজ্য যেসব ক্ষেপণাস্ত্র পাঠাবে, সেগুলো ইউক্রেনকে তাদের জনগণ, অবকাঠামো ও অঞ্চলগুলোকে রক্ষায় সহায়তা করবে।’ ১৪ বছর পর লেবার পার্টি যুক্তরাজ্যের ক্ষমতায় আসার পর গত জুলাইয়ে প্রতিরক্ষামন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পান জন হেইলি।
কয়েক দিন আগে লন্ডনে ইউক্রেনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রুস্তেম উমেরভের সঙ্গে বৈঠক করেন হেইলি। বৈঠকে আসন্ন মাসগুলোতে ইউক্রেনের প্রতি যুক্তরাজ্যের সহযোগিতা বাড়ানো হবে বলে জানিয়েছিলেন তিনি। হেইলি জানান, ৩০০ মিলিয়ন পাউন্ডের গোলাবারুদ আগামী কয়েক মাসের মধ্যে ইউক্রেনে পাঠানো হবে।
যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরের এক ট্রেনে চার যাত্রীকে গুলি করে হত্যার দায়ে এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। আজ বুধবার এই তথ্য জানিয়েছে বিবিসি। সন্দেহভাজন হত্যাকারীর নাম রিহানি ডেভিস (৩০)। তার বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করেছে ফরেস্ট পার্ক পুলিশ।
সোমবার ভোর সাড়ে পাঁচটায় শিকাগোর শহরতলীর ফরেস্ট পার্ক ব্লু লাইন ট্রেনে চার যাত্রীকে গুলি করা হয়। এ সময় যাত্রীরা ঘুমিয়ে ছিলেন বলে জানিয়েছে পুলিশ।
ঘটনাস্থলেই নিহত হন তিন ব্যক্তি। চতুর্থজন পরবর্তীতে হাসপাতালে প্রাণ হারান।
নিহতদের মধ্যে দুইজনের পরিচয় পেয়েছে কতৃপক্ষ। তারা হলেন সিমিওন বিহেসি (২৮) ও অ্যাড্রিয়ান কলিন্স (৬০)।
পরবর্তীতে কুক কাউন্টির মেডিকেল পরিক্ষকের কার্যালয় থেকে জানানো হয়, অপর এক নিহতের নাম মার্গারেট মিলার (৬৪)। চতুর্থ ব্যক্তি একজন পুরুষ, তবে এখনো তার পরিচয় জানানো হয়নি।
ফরেস্ট পার্ক পুলিশ বিভাগের উপ-প্রধান ক্রিস্টোফার চিন জানান, এই সহিংস হামলা একটি 'বিচ্ছিন্ন ঘটনা'। বন্দুকধারী গুলি করে 'ট্রেনে ঘুমিয়ে থাকা চারজন মানুষকে মেরে ফেলেছেন'।
'এটা ডাকাতির ঘটনা নয়। মনে হয়নি তিনি কারো সঙ্গে কোন ধরনের ঝগড়া-বিবাদে জড়িয়েছিল', যোগ করেন তিনি।
মঙ্গলবার কৌঁসুলি কিম ফক্স আদালতে অভিযোগ উপস্থাপনের সময় এ ঘটনাকে 'ব্যাখাতীত' বলে অভিহিত করেন।
'এটা ভয়াবহ ঘটনা', বলেন তিনি। 'আমরা উত্তর চাই'।
পুলিশ ভিডিও ফুটেজে দেখতে পেয়েছে, হামলাকারী ব্যক্তি ট্রেনের ভেতর দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময়য় দুইটি ভিন্ন ভিন্ন ক্যারিয়েজে ঘুমিয়ে থাকা চার ব্যক্তিকে গুলি করেন। নিহতরা কেউই একই বগিতে ছিলেন না।
আজ বুধবার সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে আদালতে উপস্থাপন করা হবে।
ব্লু লাইন ট্রেন দিনে ২৪ ঘণ্টাই চালু থাকে। এটি ফরেস্ট পার্ক থেকে শিকাগোর ও'হারা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পর্যন্ত যাত্রী আনা নেওয়া করে। যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিতীয় বৃহত্তম সরকারি রেল প্রতিষ্ঠান শিকাগো ট্রানজিট অথোরিটি এই সেবা দেখভাল করে।
যুক্তরাষ্ট্রে জনসংখ্যার চেয়ে বন্দুকের সংখ্যা বেশি এবং দেশটিতে এ ধরনের সহিংসতার ঘটনা খুবই সাধারণ।