ধনকুবের ও বিখ্যাত তারকাদের প্রেমিক হিসেবে স্বপ্ন দেখেন অনেকেই। তবে ধনকুবেররা প্রেমিক বা সঙ্গী হিসেবে কেমন হয় সে খবর কয়জন রাখেন?
যুক্তরাষ্ট্রে রচেস্টার বিশ্ববিদ্যালয় ও ইসরায়েলের রাইকম্যান বিশ্ববিদ্যালয়ের সাম্প্রতিক এক যৌথ গবেষণায় তেমন খবরই জানা গেছে।
গবেষকরা ক্ষমতা কীভাবে সম্পর্কের বিশ্বস্ততা বদলে দেয়, সেটাই খোঁজার চেষ্টা করেছেন এ গবেষনার মাধ্যমে।
এতে জানা যায়, বিখ্যাত তারকা ও শিল্পপতিদের নিয়ে প্রচলিত ধারণা রয়েছে সঙ্গী হিসেবে তাদের সবাই হয়তো দারুণ। কিন্তু তাদের ভেতরে অর্থবিত্ত ও ক্ষমতার অন্ধকার বা ধূসর দিকও আছে।
বাস্তবে তারা রোমান্টিক না–ও হতে পারেন। আর এদিকে গবেষণা বলছে, ক্ষমতাবানেরা বেশির ভাগ সময় সঙ্গীর সঙ্গে প্রতারণা করেন!
ব্যস্ততা ক্ষমতাবানদের দেয় না অবসর
সমাজের প্রভাবশালী ব্যক্তিরা বেশির ভাগ সময় নিজের প্রতিপত্তি সামলাতেই ব্যস্ত থাকেন। নিজেদের ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত রাখতেও তাদের চিন্তার কমতি থাকে না। ফলে সঙ্গীকে নিয়ে তারা খুব বেশি ভাবেন না, নিজেদের আখের গোছাতেই মনোযোগ থাকে।
সুপিরিওরিটি কমপ্লেক্স
ক্ষমতা মানুষের মধ্যে একধরনের আত্মবিশ্বাস তৈরি করে এটা যেমন সত্য, তেমনি ব্যক্তিকে আরও জটিল করে তোলে এটাও সত্য। গবেষণায় দেখা গেছে, ক্ষমতাবানেরা বেশির ভাগ সময় সুপিরিওরিটি কমপ্লেক্সে ভোগেন। সঙ্গীর চেয়ে নিজেদের শ্রেয়তর মনে করেন। প্রেমিক বা প্রেমিকার কেউ একজন যদি তার সঙ্গীর চেয়ে নিজেদের ভালো মনে করেন, কার্যত সে সম্পর্কের সেখানেই ইতি ঘটে।
নার্সিসিস্ট
বিত্তশালী ও ক্ষমতাবানেরা সঙ্গীর চেয়ে নিজেদের বেশি গুরুত্ব দেন। প্রেমিক বা প্রেমিকা হয়তো চাইছে বিকেলটা নিজেদের মতো করে উপভোগ করবেন, অথবা কোনো কফিশপে গিয়ে গল্প করবেন, ক্ষমতাবান সঙ্গীর হয়তো সে সময় কোনো পূর্বনির্ধারিত মিটিং আছে।
গবেষণা বলছে, এসব ক্ষেত্রে সঙ্গীর চেয়ে বরং নিজের কাজকেই বেশি প্রাধান্য দেন বিখ্যাত মানুষেরা। যে কাজ তিনি চাইলে পরেও করতে পারেন, সেসব ক্ষেত্রেও তারা তা করেন না। এভাবে সঙ্গীকে বঞ্চিত করেন। অথচ একটু বুদ্ধি খাটালেই দুইয়ের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করা যায়।
সুর কেটে যায়
এই গবেষণার প্রধান লেখক মনোবিদ গারিট বিরনবাম মনে করেন, রোমান্টিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে ক্ষমতার এই প্রভাব সম্পর্কের মূল সুরটাই নষ্ট করে দেয়। আর এভাবে একটি সম্পর্ক মাঝপথে খেই হারিয়ে ফেলে। প্রভাবশালীরা সম্পর্ক দিয়ে নয়; বরং সবকিছুকেই নিজের পেশাগত দৃষ্টিভঙ্গিতে বিচার করেন।
ক্ষমতার অন্ধকার দিক
গবেষকেরা বেশ কয়েকটি পরীক্ষা চালিয়ে সম্পর্কের ক্ষেত্রে ক্ষমতার প্রভাব বোঝার চেষ্টা করেছেন। এসব পরীক্ষার মধ্যে আছে সঙ্গীর প্রতি চাহিদা, যৌন আকাঙ্ক্ষার মতো বিষয়। গবেষণাপত্রের সহলেখক হ্যারি রেইস মনে করেন, সম্পর্কের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হচ্ছে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকা।
কিন্তু বিখ্যাত ব্যক্তিরা কেবল নিজের অবস্থান ধরে রাখার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, অন্য কিছু নিয়ে নন। গবেষণায় সবচেয়ে ভয়ংকর যে বিষয়টি উঠে এসেছে, তা হলো প্রভাবশালী ব্যক্তিরা সঙ্গীর চেয়ে নিজেদের বেশি গুরুত্বপূর্ণ মনে করেন। ফলে সম্পর্কে থাকার জন্য প্রভাবশালীদের খুব বেশি তাগিদ থাকে না।
তবে গবেষকেরা সতর্ক করে বলেছেন, এই গবেষণার ফল সবার ক্ষেত্রে সত্যি না–ও হতে পারে। তাই এখনই এমন উপসংহার টানবেন না যে বিখ্যাত মানুষেরা সঙ্গী হিসেবে ভালো নন। তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই যে ভালো নন, এর প্রমাণও মিলেছে।
নতুন বছর শুরুতে নানা ধরনের পরিকল্পনা করা হয়। এর মধ্যে সঞ্চয়ের হিসেবটি অবশ্যই মাথায় রাখতে হয়। ভবিষ্যতে বা জরুরি প্রয়োজনের কথা ভেবে খরচের লাগাম টেনে কিছু টাকা সঞ্চয় করা সবারই উচিত। তবে বর্তমান বাজারে টাকা সঞ্চয় তো দূরের বিষয়, বরং খরচের টানাপোড়েনে হিমশিম খেতে হয় সাধারন মানুষকে।
সম্প্রতি খরচ কমিয়ে সঞ্চয়ের উপায় সম্পর্কে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ফোর্বস ম্যাগাজিন। চলুন তাহলে বছরের শুরুতেই সঞ্চয়ের উপায় সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক-
খরচের খাত নির্ধারণ: অর্থ সঞ্চয়ের প্রথম ধাপ হচ্ছে ব্যয়ের অভ্যাস সম্পর্কে জানা। মাসজুড়ে টাকা খরচ করার খাতগুলা সম্পর্কে আগে ভালো করে পর্যালোচনা করুন। কোনো খাতে কত টাকা ব্যয় করবেন, সেটি নির্ধারণ করুন। এতে বাড়তি বা অতিরিক্ত অর্থ খরচ হওয়া কমবে।
বাজেট তৈরি করা: অতিরিক্ত খরচ কমাতে চাইলে সঠিক বাজেট তৈরি করা গুরুত্বপূর্ণ। এ জন্য মোট আয় থেকে মাসের শুরুতেই বাজেট তৈরি করতে হবে। সাধারণ বাজেটের ক্ষেত্রে প্রয়োজন এবং চাহিদার জন্য অর্থ বরাদ্দ রেখে প্রায় চাহিদার সম-পরিমাণ সঞ্চয়ের জন্য রাখার কথা বলা হয়। তবে শুরুতে কম সঞ্চয় দিয়েও সঞ্চয়ের অভ্যাস করা যায়।
অপ্রয়োজনীয় খরচ কমানো: দৈনন্দিন জীবনে জরুরি বা গুরুত্বপূর্ণ নয়, এমন পণ্য বা পরিষেবায় অর্থ ব্যয় করা এড়িয়ে চলুন। যা না হলেও আপনি দিব্যি ভালো চলতে পারেন, সেটি কেনার প্রয়োজন অনুভব করবেন না।
এতে ভবিষ্যতে জরুরি প্রয়োজনে অর্থ সংকট দেখা দেয়ার সম্ভাবনা থাকবে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, অপ্রয়োজনীয়ভাবে ব্যয়বহুল মোবাইল ফোন বা প্রায়ই বাইরে ডিনারে যাওয়ার অভ্যাস থাকলে তা বাদ দিতে পারেন। এতে এই অর্থ থেকে যাবে আপনার।
স্বয়ংক্রিয় সেভিংস অ্যাকাউন্ট সেট করা: সঞ্চয়ের লক্ষ্য থাকলে তাহলে একটি স্বয়ংক্রিয় সেভিংস অ্যাকাউন্ট সেট করে নিন। এতে নিজেরই সুবিধা। অনেক সময় কাজের চাপের কারণে মাসের শুরুতে সঞ্চয়ের অর্থ সরিয়ে রাখতে বা জমা করতে ভুলে যাওয়া হয়। এ ক্ষেত্রে যদি স্বয়ংক্রিয় সেভিংস অ্যাকাউন্ট সেট করা থাকে, তাহলে এ নিয়ে ভাবতে হয় না।
অপ্রয়োজনীয় সাবস্ক্রিপশন বাতিল করা: অনলাইন বা অফলাইনে কোনো সাবস্ক্রিপশন থাকলে তা নিয়মিত চেক করার অভ্যাস করতে হবে। যেসব সাকস্ক্রিপশন গত কয়েক মাস ধরে ব্যবহার করা হয় না ও বর্তমানে প্রয়োজন হচ্ছে না, সেসব বাতিল করুন। এতে অনায়াসেই দেখতে পাবেন ভালো পরিমাণ অর্থ থেকে যাবে পকেটে। যা সঞ্চয়ে যোগ করতে পারবেন।
ঋণ পরিশোধ করা: আপনার যদি ঋণ নেয়া থাকে তাহলে যত দ্রুত সম্ভব তা পরিশোধ করুন। যদি ঋণ থাকে, এতে সঞ্চয়ের পরিবর্তে সুদ বা ঋণের জন্য বেশি অর্থ খরচ হবে আপনার। এ জন্য ঋণমুক্ত হওয়ার চেষ্টা করুন।
অপ্রত্যাশিত আয় সঞ্চয় করা: আপনার নিয়মিত আয় থেকে করা নির্দিষ্ট বাজেট মূলত আপনার চাহিদা ও প্রয়োজনীয়তা পূরণ করার জন্য যথেষ্ট হিসেবে রাখতে হবে। এরমধ্যে সঞ্চয় করতে পারা আপনার জন্য সুবিধাজনক কিংবা এগিয়ে থাকার সমান।
তবে, এর বাইরে যদি অপ্রত্যাশিত কোনো আয় বা অর্থ আসে, যেমন আত্মীয়-স্বজন বা বন্ধুদের কাছ থেকে উপহার, বাসা বা হোস্টেল থেকে অতিরিক্ত আয়, তা সঞ্চয়ের অ্যাকাউন্টে রেখে দিন। এতে আপনারই সঞ্চয়ের পরিমাণ মোটা হবে।
জেনেরিক ব্র্যান্ড নির্বাচন: মাঝে মধ্যে এমন কিছু পণ্য কেনা হয়, যা অনেক নামিদামি ব্র্যান্ডের। অথচ একই পণ্য প্রায় সমপরিমাণ মানের নন-ব্র্যান্ডের পাওয়া যায় পাশের মুদি দোকানে। যাচাই-বাছাইয়ের মাধ্যমে এসব নন-ব্র্যান্ডের পণ্যগুলো ব্যবহার করে দেখতে পারেন। এতে অর্থ অনেকটা কম খরচ হবে।
দুপুরের খাবার বাসা থেকে নেয়া: অফিস-আদালতে বা কর্মস্থলে দুপুরের খাবার অনেকেই বাইরে গিয়ে খেয়ে থাকেন। এতে প্রতিদিনই ভালো অঙ্কের অর্থ খরচ হয়। যা চাইলেই আপনি বন্ধ করতে পারেন।
এ জন্য প্রতিদিন সকালে বাসা থেকে দুপুরের খাবার নিয়ে যেতে পারেন। এতে দুপুরের খাবারের টাকা পকেটে থেকে যাবে। এভাবে মাস শেষে ভালো পরিমাণ অর্থ আপনার অবিশষ্ট থাকবে। যা সঞ্চয়ের খাতায় যোগ করতে পারেন।
বাংলাদেশের জন্ম নিবন্ধন, জাতীয় পরিচয়পত্র অথবা পাসপোর্টের জন্ম তারিখ যাচাই করলে দেখা যাবে, বছরের অন্যান্য দিনগুলোর তুলনায় অনেক বেশি মানুষের জন্ম তারিখ পহেলা জানুয়ারি।
এমনটি কেন হয়েছে, সে বিষয়ে কোনো গবেষণা নেই। এবং সুনির্দিষ্ট কোনো কারণ ও খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। তবে বিভিন্ন সমীক্ষায় অংশ নেওয়া ব্যক্তিদের জন্ম তারিখের ক্ষেত্রে জানুয়ারির এক তারিখের প্রাধান্য দেখা গেছে। শিশুদের নিয়ে কাজ করা বিশেষজ্ঞরাও এই প্রবণতা লক্ষ্য করেছেন।
শিশু বিশেষজ্ঞ ড. ইশতিয়াক মান্নান বলছেন, ‘জানুয়ারির এক তারিখে বেশিরভাগ শিশুর জন্ম হচ্ছে বিষয়টি এমন না। আসলে এখনো আমাদের দেশের বেশিরভাগ শিশুদের জন্ম হয় গ্রামাঞ্চলে নিজ বাড়িতে, বিশেষ করে যারা গ্রামীণ এলাকায় থাকে। সেখানে এখনো শিক্ষার হারটা ততটা ভালো না হওয়ায় অভিভাবকরাও জন্ম নিবন্ধনের তারিখের ক্ষেত্রে ততটা সতর্ক নন।’
‘আবার আমাদের জন্ম নিবন্ধনও সঠিক তারিখে হয় না। বাড়িতে বা হাসপাতালে জন্ম নেওয়া শিশুদেরও ঠিকভাবে সঠিক সময়ে নিবন্ধন হচ্ছে না। স্কুলে ভর্তির সময় অথবা কোনো পরীক্ষার সময় যখন এটা দরকার হয়, তখন স্কুলের শিক্ষকরা সহজে মনে রাখা যায় এমন একটি তারিখ বসিয়ে দেন। এসব কারণে দেখা যায় বাংলাদেশে বেশিরভাগ মানুষের দুটি জন্মদিন থাকে’
জন্ম তারিখ পহেলা জানুয়ারি হওয়ার ব্যাপারে তৌফিক রহমানের (ছদ্মনাম) নামে এক ব্যক্তি জানান, অনেক ভাইবোনের পরিবারে কারো জন্ম তারিখই বাবা-মা লিখে রাখেননি। ফলে স্কুলের মাধ্যমিক পরীক্ষার সময় শিক্ষকরা নিজেদের সুবিধামতো তারিখটি বসিয়ে দেন।
তৌফিক আরও জানান, তার আরও দুই চাচাতো ভাইয়ের জন্ম তারিখ ১ জানুয়ারি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পহেলা জানুয়ারি জন্মদিন হওয়ার বিষয়টি শুধুমাত্র বাংলাদেশ নয়, ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, আফগানিস্তান ও ভিয়েতনামেও এই প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়।
তবে শিশু বিশেষজ্ঞ ড. ইশতিয়াক মান্নান বলছেন, অনেকের জন্ম তারিখ ইচ্ছামতো দেওয়া হলেও, বাংলাদেশে সত্যিকারে এই তারিখেও অনেক শিশু পৃথিবীর আলো দেখছে।
বছরের প্রথম দিনে সবাই যে নতুন বছরকেই স্বাগত জানাতে ব্যস্ত তা নয়, অনেক পরিবার এদিন স্বাগত জানাচ্ছে তাদের পরিবারের নতুন সদস্যকেও।
জাতিসংঘের শিশু বিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফ জানিয়েছে, নতুন বছরের প্রথম দিনে বাংলাদেশে ৮ হাজার ৪২৮টি শিশুর জন্ম হচ্ছে। আর আজ, সারা পৃথিবীতে নতুন মানবশিশু আসছে ৩ লাখ ৯৫ হাজার ৭২টি। আজ, পহেলা জানুয়ারি শুধু দক্ষিণ এশিয়ায় এক চতুর্থাংশের জন্ম হচ্ছে।
বছরের প্রথম দিনে জন্ম নেওয়া এই শিশুদের অনেকের ভিন্ন ভিন্ন নাম দেওয়া হবে। আবার অনেকে হয়তো নাম পাওয়ার আগেই ছেড়ে যেতে পারে পৃথিবী।
সূত্র: বিবিসি বাংলা
সেন্ট্রাল স্পিকারে ঘোষণা শুনে হুড়মুড় করে উঠে বসি। জাহাজের স্পিকারে কেউ একজন বলে চলেছেন, এই যাত্রায় প্রথম বরফের দেখা পাওয়া গেছে। আগ্রহীরা বাইরে আসুন।
ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। বিছানায় উঠে বসি, ঘড়ি দেখি। সকাল ছয়টা বাজে। জানালার দিকে তাকিয়েই চোখ ফেরাতে হলো, বাইরে কড়া রোদ। এই কদিনে বিষয়টায় অভ্যস্ত হয়ে গেছি। এ অঞ্চলে এখন গ্রীষ্মকাল, সূর্য অস্ত যায় না। ২৪ ঘণ্টাই দিন। বাইরের আলো দেখে ঠাহর করা মুশকিল কখন সকাল, ভরদুপুর আর গভীর রাত। কিছুদিন পর আবার উল্টো ঘটনা ঘটবে, সূর্যের আলো দেখা যাবে না, অন্ধকারে ডুবে থাকবে পুরো চরাচর।
আমার কেবিনমেট একজন রুশ তরুণ, নাম দানিল সিদিকভ। বেশ অতিথিপরায়ণ। দুই দিনেই ভালো বন্ধু হয়ে গেছি। পরিবারের সদস্যদের সঙ্গেও কথা বলিয়ে দিয়েছে। জাহাজে অধিকাংশ মানুষই রুশ ভাষায় কথা বলে। আমার দোভাষীর কাজে এই বন্ধুই এখন ভরসা। দুজনে বরফ দেখব বলে কেবিন থেকে বাইরে যাই। অন্যরাও বেরিয়েছে। বারেন্টস সাগরের পানিতে বরফের ছোট ছোট চাক ভাসছে। জাহাজে ধাক্কা খেয়ে কোনো কোনোটা সরে যাচ্ছে। জাহাজ শান্ত সমুদ্রে এগিয়ে যাচ্ছে।
আস্তে আস্তে বরফের চাক বড় হতে থাকল। তারপর পানির ওপর দুধের সরের মতো জমাটবাঁধা সাদা বরফ। পুরুত্ব কম বলে অনায়াসে বরফের বুক চৌচির করে যাচ্ছে জাহাজ। দৃশ্যটা বেশিক্ষণ দেখা হলো না। বাইরে অন্য সময়ের তুলনায় তাপমাত্রা বেশি হলেও বাতাস প্রচণ্ড। কাঁপুনি ধরিয়ে দিচ্ছিল বলে কেবিনের উষ্ণতায় ফিরে যাই। কেবিনে সব সময় হিটার অন করা থাকে।
১৩ আগস্ট রাশিয়ার মুরমানস্ক বন্দর থেকে ‘ফিফটি ইয়ার্স অব ভিক্টরি’ নামের এই রুশ পারমাণবিক শক্তিচালিত জাহাজে আমাদের অভিযান শুরু হয়েছে। তারও আগে উদ্বোধন অনুষ্ঠানে আমরা ভিনদেশিরা নিজেদের সম্পর্কে স্বাগত বক্তব্য রাখি। তারপর টাগবোটে টেনে জাহাজটাকে বন্দর থেকে গভীর সমুদ্রে নেওয়া হয়। এরপর বিকেলে উত্তর মেরু অভিমুখে যাত্রা।
জাহাজের জীবন একেবারে ঘড়িবাঁধা। সকাল আটটায় সবাইকে হেলিপ্যাডে হাজির হয়ে ব্যায়াম করানো হয়। তারপর নাশতার পালা। পাঁচতলা জাহাজের দোতলায় খাবারেরর ব্যবস্থা। নাশতা সেরে চলে যেতে হয় নিচতলায়, মিলনায়তনে। এখানেই বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত চলে নানা সেশন।
আমি এই অভিযানে একজন আলোচক হিসেবে অংশ নিয়েছি। গত মার্চে বিশ্ব যুব উৎসবে ‘আইসব্রেকার অব নলেজ’ নামে একটি প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছিল রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় পরমাণু বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান রোসাটম। আমরা সারা দুনিয়ার দুই হাজারের বেশি প্রতিযোগী অংশ নিই। চার ধাপে যাচাই-বাছাইয়ের পর ১৪ জন উত্তর মেরুর এই অভিযানে আসার সুযোগ পেয়েছি। আমাদের মতোই আলাদা একটি প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে স্কুলপড়ুয়াদের একটি দল অভিযানে এসেছে। তাদের উদ্দেশ্যেই দিনে চার-পাঁচটি লেকচার দেন আলোচকেরা। এ সময় অন্য আলোচকদেরও অংশগ্রহণ করা লাগে।
জাহাজ কেঁপে উঠতে থাকল
অভিযানের তৃতীয় দিন এসে জাহাজ হঠাৎ কেঁপে কেঁপে উঠতে থাকল। অনেকের মধ্যে যখন ‘কী হয়েছে’, ‘কী হয়েছে’ আতঙ্ক, তখন কর্তৃপক্ষ বুঝিয়ে বলল, বিষয় তেমন কিছু না। বরফের পুরুত্ব বেড়েছে। বিশাল বরফে স্লাইড করে জাহাজটাকে উঠতে হয়। তারপর চাপ দিয়ে বরফ ভেঙে সামনে যাওয়ার পথ বের করে নেয়। এ সময় এমনভাবে কেঁপে ওঠে যে শক্ত করে কিছু আঁকড়ে না ধরলে পড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। সেদিন কর্তৃপক্ষের আশ্বাস শুনে পরিস্থিতির সঙ্গে আস্তে আস্তে মানিয়ে নিই।
লেকচার সেশনের ফাঁকে ফাঁকে বিরতি থাকে। তখন মিলনায়তন থেকে বাইরে চলে আসি। সাদা বরফে সূর্যের প্রখর আলো পড়ে চোখ ধাঁধিয়ে দেয়। রোদচশমা ছাড়া তাকানো যায় না। যত দূর দৃষ্টি যায় শুধু বরফ আর বরফ। এই বরফের রাজ্যেই চলতে চলতে ১৭ আগস্ট সকালে আমরা উত্তর মেরুতে প্রবেশ করি। আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসতেই উৎসবে মেতে ওঠে সবাই। সাউন্ডবক্সে বেজে ওঠে বাংলাদেশসহ অংশগ্রহণকারী সব দেশের জাতীয় সংগীত। উত্তর মেরুতে ‘আমার সোনার বাংলা’ বাজতে শুনে গর্বে বুকটা ভরে ওঠে।
জাহাজ সকালে পৌঁছালেও বরফে নামার অনুমতি পেতে পেতে দুপুর হয়ে গেল। জাহাজের চাপে বরফে কোনো চিড় ধরে থাকলে তা যেন জমাট বাঁধার সময় পায়, সে জন্যই এই কয়েক ঘণ্টার অপেক্ষা। জাহাজ থেকে একে একে নেমে যার যার দেশের পতাকা বরফে স্থাপন করি। পতাকা স্থাপনের সময় মনে হচ্ছিল, ঠিক এই দিনটির জন্যই যেন বেঁচে ছিলাম। এরপর আমার শহর ময়মনসিংহের দিক নির্ণয় করি। ময়মনসিংহ থেকে এখানকার দূরত্বসংবলিত একটি দিকনির্দেশনা খুঁটি লাগিয়ে দিই আর সেই সঙ্গে জুড়ে দিই একটা নোট। যেখানে আছে বাংলাদেশের নাম ও পতাকা, আমার মায়ের নাম আর আমার স্বাক্ষর।
এরপর রোমাঞ্চকর পর্বের হাতছানি। বরফ খুঁড়ে সাহসী কয়েকজন শরীরে দড়ি বেঁধে বরফপানিতে ঝাঁপ দিল। কয়েক সেকেন্ড থাকার পর তাকে বাকিরা টেনে তুলল। আমি দাঁড়িয়েই উপভোগ করলাম। একে সাঁতার জানি না, তার ওপর ঠান্ডা, আমার সাহস হলো না।
ততক্ষণে জাহাজ থেকে মনস্টার ট্রাক নামানো হয়েছে। আমরা কয়েকজন ট্রাকে চড়ে বসলাম। আমাদের নিয়ে আশপাশে ঘুরে বেড়ালেন চালক। শ্বেতভালুক দর্শনের ইচ্ছা ছিল খুব। কিন্তু চারপাশে এত কুয়াশা ছিল যে ‘ভালুক মামা’ আশপাশে থাকলেও দেখা যেত না।
এই কদিনে প্রায় সবার সঙ্গেই বন্ধুত্ব হয়ে গেছে। মনস্টার ট্রাকে ঘোরাঘুরি শেষে তাঁদের সঙ্গে ‘বরফকেলি’তে মেতে উঠলাম। তারপর আবারও উঠে পড়লাম জাহাজে।
লাখো পাখির দ্বীপ
১৮ আগস্ট ফিরতি পথ ধরে জাহাজ। তবে যে পথে এসেছি, সে পথে না। অন্য পথে মুরমানস্ক ফিরছি আমরা। ১৯ আগস্ট বিকেল নাগাদ আমরা ফ্রাঞ্জ জোসেফ ল্যান্ডে পৌঁছাই। ১৮৭৩ সালে অস্ট্রিয়া-হাঙ্গেরির যৌথ অভিযানে উত্তর মেরুতে এসে অভিযাত্রী জুলিয়াস ভন পেয়ার এবং কার্ল ওয়েপ্রেক্ট আর্কটিক সাগরের দ্বীপপুঞ্জটি আবিষ্কার করেন। ১৯১ দ্বীপ নিয়ে জায়গাটা ছবির মতো সুন্দর। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের পাশাপাশি বিভিন্ন প্রজাতির আর্কটিক প্রাণী, সিল, পাখি, ডলফিন, তিমি ইত্যাদির দেখা মিলল। অভিযানে আমরা প্রথম যে বরফের চাক দেখেছি, তা এই এলাকা থেকেই ভেঙে ভেঙে যায়।
ফ্রাঞ্জ জোসেফ ল্যান্ডে যাত্রাবিরতিতে আমরা যেখানে নামি সেটা ‘বার্ডস আইল্যান্ড’ নামে পরিচিত। চারপাশে তাকিয়ে মনে হলো সত্যিই পাখির রাজ্যে ঢুকে পড়েছি। একসঙ্গে এত পাখি জীবনে দেখিনি! পাখির কিচিরমিচিরে কান পাতা দায়। লাখ লাখ পাখির বাসা এই দ্বীপে। ফুড়ুৎ ফুড়ুৎ করে বাসায় ঢুকছে আর বের হচ্ছে।
বার্ডস আইল্যান্ডের সময়টা মনে গেঁথে নিয়ে জাহাজে উঠে পড়ি। সেই যে জাহাজ ছাড়ল, এরপর আর কোথাও যাত্রাবিরতি দেওয়া হলো না। একে একে কাটতে থাকল দিন। জাহাজের মিলনায়তনে চলতে থাকল নিয়মিত লেকচার, সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা, বারবিকিউ নাইট, ট্রেনিং প্রোগ্রাম। ২২ আগস্ট সকাল সাতটায় মুরমানস্ক বন্দরে পৌঁছালাম আমরা।
এটির পুরো নাম অটিজম স্পেকট্রাম ডিসঅর্ডার (ASD) অটিজম একটি অত্যন্ত পরিবর্তনশীল, নিউরোডেভেলপমেন্টাল ডিসঅর্ডার, যা তিন বছর বয়স হবার পূর্বেই প্রকাশ পায়। অটিজম শিশুরা সামাজিক যোগাযোগে দুর্বল হয়, পারস্পরিক যোগাযোগের ক্ষেত্রে সক্ষমতা কম হয়। মানসিক সীমাবদ্ধতা ও একই কাজ বারংবার করার প্রবণতা থেকে এদের শনাক্ত করা যায়। এই রোগের কারণ সর্ম্পকে এখনও কোন পরিষ্কার ধারণা পাওয়া যায়নি। তবে জেনেটিক কারণে এটি হয় বলে প্রমাণ আছে। অটিজম জিনগত এবং পরিবেশগত কারণের সংমিশ্রণের সাথে জড়িত।
এক থেকে দুই বছর বয়সে শিশুর আচরণে এ রোগের লক্ষণ দেখা দিতে থাকে। অভিভাবকরাই সাধারণত প্রথমে এ রোগের লক্ষণ বুঝতে শুরু করেন। লক্ষণ প্রকাশ পেলে দ্রুত বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেয়া জরুরি। রোগ নির্ণয়ে মূলত শিশুর সম্পূর্ণ আচরণের ইতিহাস এবং স্নায়ু-তাত্ত্বিক গণনার হিসাব বিবেচনা করা হয়। আক্রান্ত শিশুর পরিচর্যা করার জন্য দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ অতন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে এ রোগের ক্ষেত্রে একে জীবনযাপনের একটি বিশেষত্ব মনে করে চিকিৎসা করাই ভাল।
অটিজম বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন হারে প্রকাশ পায়। আধুনিক গবেষণা মতে, প্রতি হাজারে ১ থেকে ৩ জন অটিজম রোগে আক্রান্ত হতে পারে। বিশেষ করে ১৯৮০ সালের পর থেকে আক্রান্ত হয়েছে জানা গেছে এমন রোগীর সংখ্যা বেড়ে গেছে।
অটিজমের লক্ষণ-
কিছু কথা বারবার বলা।
কোনও কিছু ছোটখাটো জিনিসের জন্য প্রচণ্ড চিৎকার করে কাঁদা।
প্রশ্নকর্তার চোখের দিকে না তাকিয়ে কথা বলা।
ব্যথা/শারীরিক আঘাতের বোধ কম হওয়া।
বেশি আলো সহ্য করতে না পারা।
লোকজনের তীব্র হুল্লোড়ে অস্বস্তি।
কোনও জিনিস নিচু থেকে তোলার সময়ে অসুবিধা।
মুখের পেশীর উপর নিয়ন্ত্রণহীনতা।
মুখভঙ্গিমা নিয়ন্ত্রণে অপারগতা।
প্রচণ্ড মেজাজ দেখানো ইত্যাদি।
অটিজম শিশুরা সারাক্ষণ নিজেদের নিয়ে ব্যস্ত থাকে। সর্বদা কল্পনার এক অবাস্তব জগতে ডুবে থাকে তারা। নানা রকমের কাল্পনিক শব্দ শোনে, কাল্পনিক দৃশ্য দেখে। কিছু বিষয়কে তারা খুবই পছন্দ করে এবং দিনরাত সেগুলো নিয়েই পড়ে থাকে। আবার কিছু বিষয়কে তারা ভয় পায়, সহ্য করতে পারে না। বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে তাদের বিচার-বুদ্ধির কোন উন্নতি হয় না।
চিকিৎসাঃ
বাচ্চাকে নিয়মিত মেডিসিন খাওতে হবে। বাবা-মা, পরিবারের লোকজন মিলে বাচ্চাকে কাউন্সিলিং করে যেতে হবে। অটিজম সমস্যায় হতাশ বা অধৈর্য না হয়ে একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক এর পরামর্শ মত চিকিৎসা করতে হবে।
লেখক: সিনিয়র কনসালটেন্ট, চিকিৎসক ও অটিজম গবেষক। ফার্মভিউ সুপার মার্কেট ক্লিনিক, ফার্মগেট, ঢাকা।
খাত সংশ্লিষ্টরা দীর্ঘদিন ধরেই প্রবাসী খাতে গতি আনতে, জালিয়াতি বন্ধে ও খরচ কমাতে এমন একটি ডেটাবেস ও রিক্রুটিং ব্যবস্থার দাবিতে কথা বলে আসছেন।
কাজের সন্ধানে বিদেশ যেতে ইচ্ছুক বাংলাদেশি কর্মীদের জন্য রয়েছে 'আমি প্রবাসী' অ্যাপ। এটি দক্ষ ও অদক্ষ উভয় কর্মীদের বিশাল ডেটাবেজের মাধ্যমে সহযোগিতা করে থাকে। এক্ষেত্রে প্রবাসীদের নানা জটিল কাজ সহজে সমাধান করার সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও অ্যাপটির সুসজ্জিত ডেটাবেস ও সংশ্লিষ্ট নানা সেবা অব্যবহৃত রয়ে যাচ্ছে।
অভিবাসন খাত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো বেশিরভাগ সময়ই ডেটাবেজ ব্যবহারের বিষয়টি এড়িয়ে যায়। কেননা তারা অভিবাসন ফি যথাসম্ভব বাড়িয়ে বেশি লাভ করতে চায়।
'আমি প্রবাসী' অ্যাপটি বেশ উন্নত রিক্রুটমেন্ট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমের মাধ্যমে পরিচালনা করা হয়। যার মাধ্যমে প্রবাসে যেতে ইচ্ছুক লাখ লাখ প্রবাসী কর্মী সম্ভাব্য নিয়োগকর্তাদের সাথে যুক্ত হতে পারে। অর্থাৎ, প্ল্যাটফর্মটির মাধ্যমে ব্যবহারকারীরা সহজেই সরাসরি যোগাযোগ, অনলাইনে ইন্টারভিউ ও চাকরি খুঁজে পেতে পারে।
অ্যাপটি দক্ষ কর্মীদের জন্য একটি অপার সম্ভাবনা। বিশেষ করে যারা কি-না নিয়োগের ক্ষেত্রে মধ্যস্বত্বভোগীদের এড়িয়ে বৈধ চাকরি খুঁজে পেতে চান।
খাত সংশ্লিষ্টরা দীর্ঘদিন ধরেই প্রবাসী খাতে গতি আনতে, জালিয়াতি বন্ধে ও খরচ কমাতে এমন একটি ডেটাবেস ও রিক্রুটিং ব্যবস্থার দাবিতে কথা বলে আসছেন।
বর্তমানে বহু বাংলাদেশি শ্রমিকদের বিদেশে কম বেতনের চাকরি পেতে মোটা অঙ্কের অর্থ খরচ করতে হয়। মূলত আমলাতান্ত্রিক জটিলতা, মধ্যস্বত্বভোগী ও রিক্রুটিং এজেন্সির কারণে এমনটা হয়ে থাকে।
২০২০ সালের মাঝামাঝি সময়ে চালু হয় 'আমি প্রবাসী' অ্যাপ। এরপর থেকেই এটি প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এবং জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) সহযোগিতায় এসব সমস্যার নতুনভাবে প্রযুক্তিগত সমাধানের চেষ্টা করে আসছে।
অভিবাসী কর্মী উন্নয়ন প্রোগ্রামের চেয়ারম্যান শাকিরুল ইসলাম টিবিএস-কে বলেন, "আমরা দীর্ঘদিন ধরে প্রবাসীদের জন্য একটি ডেটাবেস তৈরির দাবি জানিয়ে আসছিলাম। কিন্তু রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো এতে খুব কম আগ্রহ দেখিয়েছে।"
শাকিরুল ইসলাম আরও বলেন, "এখন আমাদের ডেটাবেজ আছে। সেক্ষেত্রে এখান থেকেই এখন এজেন্সিগুলো কর্মী নিতে অঙ্গীকারবদ্ধ থাকা উচিত।"
'আমি প্রবাসী' অ্যাপটির প্রভাবও বেশ নজরে আসার মতো। মাত্র দুই বছরে এটি ব্যবহার করে প্রায় ২৫ লাখ বিএমইটি রেজিস্ট্রেশন করা হয়েছে।
বর্তমানে অ্যাপটির ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৫৫ লাখ। দেশের ২৫০০ রিক্রুটিং এজেন্সির মধ্যে শতকরা ৮৫ ভাগ বিএমইটি ক্লিয়ারেন্স কার্ডের জন্য ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মটি ব্যবহার করছে। তবে মাত্র ৫০টি এজেন্সি কর্মী নিয়োগ প্রক্রিয়ার জন্য 'আমি প্রবাসী' অ্যাপটি ব্যবহার করছে।
বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সিসের সাবেক সাধারণ সম্পাদক শামীম আহমেদ চৌধুরী নোমান অবশ্য ডেটাবেসটি ব্যবহৃত না হওয়ার পেছনে বিভিন্ন কারণ উল্লেখ করেছেন। তিনি টিবিএস-কে বলেন, "অনেকে অ্যাপটি সম্পর্কে জানেনই না। একইসাথে প্রায়শই আমাদের যে নির্দিষ্ট ধরনের কর্মী প্রয়োজন তাদের ডেটাবেজে সেটি সবসময় পাওয়া যায় না।"
শামীম আহমেদ আরও বলেন, "উপরন্তু, নির্দিষ্ট খরচে কর্মী পাঠানোর বিষয়টি বাধ্যতামূলক থাকা উচিত নয়। এর পরিবর্তে ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে লেনদেনের সুবিধার মাধ্যমে সিস্টেমটি আরও নমনীয় করা উচিত।"
এদিকে অ্যাপ কর্তৃপক্ষ আগামী মাস থেকে প্রবাসীদের জন্য সরাসরি রিক্রুটমেন্ট কার্যক্রম শুরুর পরিকল্পনা করেছে। যাতে করে বিদেশি নিয়োগকর্তারা রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে ডেটাবেস থেকে কর্মী নিতে পারেন।
'আমি প্রবাসী' অ্যাপ লিমিটেডের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান তারিক ই হক দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "আমাদের কাছে তথ্য আছে, কর্মী রয়েছে এবং বাংলাদেশ থেকে নিয়োগের ব্যবস্থা আছে। এটি আগে কখনো ছিল না। বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিয়োগের বিষয়টি বিদেশি কোম্পানির কাছে স্পষ্ট নয়। এক্ষেত্রে আমরা একটি সিস্টেম তৈরি করেছি যার মাধ্যমে তারা নিরাপদে কর্মী নিয়োগ করতে পারবে। তবে এটিকে আন্তর্জাতিকভাবে প্রচার করতে আমাদের সরকারের সহায়তা প্রয়োজন।"
তারিক ই হক আরও বলেন, "সরকারের উচিত 'আমি প্রবাসী' অ্যাপকে সহযোগিতা করা। যাতে করে বিদেশি নিয়োগকারীরা সরাসরি সাধারণ বা দক্ষ কর্মী নির্বাচন করতে পারে। কর্মীদের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য আমাদের আরও সরকারি সহায়তা প্রয়োজন। উদাহরণস্বরূপ, প্রবাসে যেতে ইচ্ছুক ব্যক্তিদের মধ্যে যারা ইংরেজি পরীক্ষায় লেভেল ২ শেষ করে তাদেরকে কীভাবে তাদের লেভেলে ৩ শেষ করানো যায় সেটি নিয়ে ভাবতে হবে।"
তারিক ই হক বিদেশে থাকা বাংলাদেশ দূতাবাসগুলোতে চাকরির চাহিদাপত্রের জন্য অনলাইন প্রত্যয়ন ব্যবস্থা চালুর জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানান।
'আমি প্রবাসী' যেভাবে সময় সাশ্রয় করছে
অতীতে বাংলাদেশি প্রবাসী কর্মীদের সরকারি কার্যক্রমের প্রতিটি ধাপ নানা অফিসে দৌড়ঝাঁপ করে ম্যানুয়ালি করতে হতো। এজন্য প্রায়শই চাকরি থেকে ছুটি নিতে হতো। এমনকি চাকরি হওয়ার পরেও এই সরকারি প্রক্রিয়াগুলি সম্পন্ন করতে দালালদের সাহায্য নিতে হতো। এক্ষেত্রে পোর্টালসহ 'আমি প্রবাসী' অ্যাপ চালুর পর থেকে সরকারি সব সার্ভিসগুলো এখন অনলাইনেই পাওয়া যাচ্ছে।
অ্যাপটির মূল সেবা হচ্ছে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের ব্যাক-এন্ড সফটওয়্যার। যেটি এখন অনলাইনে প্রতিটি ফাইল ও আবেদন অনুমোদনে ব্যবহৃত হয়।
আমি প্রবাসী অ্যাপ ব্যবহার করে প্রি-ডিপারচার ওরিয়েন্টেশন সম্পন্ন করতে এক মাসের মতো সময় লেগে যেতো। তবে এখন মাত্র তিন দিনের মতো সময় লাগে। এছাড়াও বিএমইটি রেজিস্ট্রেশনে আগে চার-পাঁচ দিন সময় লেগে যেতো। কিন্তু এখন তা কয়েক ঘণ্টার মধ্যে করা যায়।
অতীতে চাকরি খোঁজার পর বিদেশে যেতে অন্তত দুই মাসের মতো সময় লেগে যেত। এখন এটি ২০ দিনের মধ্যে করা সম্ভব। ফলে অ্যাপটি বিদেশগমনের কাগজপত্র প্রক্রিয়ার সময় উল্লেখযোগ্যভাবে কমিয়ে এনেছে।
অ্যাপটি যেভাবে প্রবাসীদের খরচ কমিয়েছে
অতীতে নিজেই কাগজপত্র গুছিয়ে বিদেশে যেতে চাইলে ঐ ব্যক্তিদের বিএমইটির ইস্যু করা স্মার্ট ইমিগ্রেশন ক্লিয়ারেন্স কার্ড পাওয়ার কোনো সুযোগ ছিল না। এজন্য তাদের রিক্রুটিং এজেন্সির কাছে যেতে হতো।
অ্যাপটির কর্তৃপক্ষের দাবি, কার্ডটি পেতে আগে এজেন্সিগুলোকে ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা দিতে হতো। 'আমি প্রবাসী' অ্যাপ চালুর পর এই প্রবণতা বন্ধ হয়েছে।
বর্তমানে একজন কর্মীকে শুধু নিজ থেকে ভিসা যোগাড় করতে হবে। এরপর তাকে ইমিগ্রেশন ক্লিয়ারেন্স কার্ড পেতে কারো ওপরই নির্ভর করতে হবে না।
এখন বিদেশে যেতে ইচ্ছুক বেশিরভাগ কর্মীই ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মটি ব্যবহার করছে। তারা এর এক বা একাধিক ফিচার চালাচ্ছেন। এমনকি কেউ কোনো ফিচার ব্যবহার না করলেও তাকে 'আমি প্রবাসী' অ্যাপের পক্ষ থেকে কিউআর কোড দেওয়া হচ্ছে। কোডটি বিনামূল্যে পাওয়া যায় বলে এখানে ব্যবহারকারীদের অর্থ বেঁচে যাচ্ছে।
নিজ থেকেই যারা ভিসা ও চাকরি যোগাড় করে ফেলতে পারেন তারা এখন বাকি কাজও নিজ থেকে করে ফেলতে পারছেন। যেমনটা আগে সম্ভব ছিল না। এতে করে তাদের ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা সাশ্রয় হচ্ছে।
এখন টেকনোলজির যুগ। জীবনের সর্বত্র টেকনোলজির স্পর্শ। নিত্য কাজে হাজার টেকনোলজির মধ্যে অন্যতম হলো- ফোন, কম্পিউটার, টিভি এসব। ১৫৭০ সালে কুইন্স অব নেপলসের জন্য প্রথম হাতঘড়ি বানানো হয়েছিল। কিন্তু সাধারণ মানুষের জন্য বাজারে আসতে তা ২০০ বছর লেগেছিল।
১৮১২ সালে সাধারণ মানুষ প্রথম হাতঘড়ি পরা শুরু করে। এখন আরও ২০০ বছর পর স্মার্ট ওয়াচ পরে। তবে এখন সেই স্মার্ট ওয়াচে সময় দেখার চেয়ে অন্য কিছু দেখে। মানুষ এখন হাতঘড়ির দিকে গড়ে তিনবার তাকায় দিনে, কিন্তু ফোনের দিকে গড়ে ৫২ বার তাকায়। এই হিসাবে বছরে ২০ হাজার বার ফোন হাতে নিয়ে স্ক্রিন চেক করে।
দৈনন্দিন জীবনে আর কোনো বস্তু এমন করে মানুষকে এতটা আগ্রহী করে তোলেনি। সারা দিনে খাওয়া-দাওয়া করতে এখন যত সময় যায়, তার চেয়ে লোকে এখন বেশি সময় দেয় মোবাইল ফোনে। এক গবেষণায় দেখা গেছে, দৈনিক আমরা আড়াই ঘণ্টার বেশি সময় ফোনের পিছনে ব্যয় করি। তিন বেলা খেতে নিশ্চয়ই এত সময় ব্যয় করি না আমরা।
আরেক গবেষণায় দেখা গেছে, গড়ে একজন মানুষ সারা দিনে খাবার খেতে এক ঘণ্টার চেয়ে কিছু বেশি সময় ব্যয় করে। নিজেই পরীক্ষা করে দেখুন, তিন বেলা খেতে আপনার কতটা সময় লাগে। এক সময় চিকিৎসকরা ড্রাগ এডিকশন বা মাদকাসক্তির চিকিৎসা নিয়ে ব্যস্ত থাকত। একুশ শতকে এসে মাদকাসক্তির চেয়ে টেকনো আসক্তি বা প্রযুক্তির আসক্তি চিকিৎসকদের ভাবিয়ে তুলেছে।
প্রযুক্তি আসক্তির মধ্যে প্রধানত মোবাইল ফোন প্রধান। তারপরে আছে বিভিন্ন ধরনের ভিডিও গেম, মোবাইল গেম, গেম কনসোলের গেম। পূর্বের দেশগুলোতে প্রভাবটি কম থাকলেও গ্যাম্বলিং অথবা অনলাইন গ্যাম্বলিং বা অনলাইন কাসিনো, জুয়া, এসবও এখন পশ্চিমে টেকনো আসক্তির মধ্যে পড়ে। কেউ কেউ গোটা ব্যাপারটিকে ডিজিটাল আসক্তি বা ইন্টারনেট এডিকশন বলতে চায়। তবে এ নিয়ে মতানৈক্য আছে।
সমস্যাটি কি ডিভাইস বা যন্ত্রের, নাকি প্রযুক্তি ব্যবহারকারীর, নাকি শরীরের ওপর প্রযুক্তির প্রভাব। যন্ত্র একধারে জীবনকে সহজ এবং উন্নত যেমন করেছে, একই সঙ্গে অন্য ধারে যন্ত্র আমাদের এডিক্ট বা আসক্ত করেছে। শরীরে, বিশেষ করে, মস্তিষ্কে ড্রাগ বা মাদক ঠিক যেমন করে আসক্তি গড়ে তোলে, বিজ্ঞানী এবং চিকিৎসকরা দেখলেন-ঠিক একইভাবে প্রযুক্তি বা যন্ত্রের অতিরিক্ত ব্যবহার মস্তিষ্কে সমান প্রতিক্রিয়া এবং একই ধরনের আসক্তি তৈরি করছে। সঙ্গে দেখা দিচ্ছে-শারীরিক এবং বিভিন্ন মানসিক সমস্যা। ফলে যন্ত্রের সুফল পেতে গিয়ে যন্ত্রের দানব রূপটিও আস্তে আস্তে পরিষ্কার হয়ে আসছে। কিন্তু এর সমাধান কোথায়।
এ নিয়ে ভাবনার আগে আরেকটি বিষয় জেনে নিই-এই যন্ত্র আসক্তির ধরন কেমন, কী সমস্যা তৈরি করছে, কেমন করে করছে। সমস্যা চিহ্নিতকরণ, সমাধানের অর্ধেক। অভ্যাস এক জিনিস, বদঅভ্যাস আরেক জিনিস। স্বভাব এক ব্যাপার, আসক্তি আরেক ব্যাপার। স্বভাব হলো একটি কাজ বারবার করার কারণে যে অভ্যাস তৈরি হয়। এডিকশন বা আসক্তি হলো সেই কাজ প্রয়োজনের চেয়ে মাত্রাতিরিক্ত করা।
কিন্তু কী করে বুঝবেন-কোনটি স্বভাব, কোনটি আসক্তি! স্বভাবের অভ্যাস দৈনন্দিন কাজের অংশ হিসেবে গড়ে ওঠে, ফ্লেকিসেবেল, চাইলে সময়ে পরিবর্তন করে নিতে পারেন। কিন্তু আসক্তি তার বিপরীত। আসক্তির কাজ কোনো প্রয়োজন ছাড়াই বারবার করতে থাকেন, যা করতে থাকেন, তা নিজের অন্য কাজের ক্ষতি করলেও একই কাজে লেগে থাকেন এবং সময়ে নিজেকে সেই বদ অভ্যাসটি থেকে সহজে বের করে আনতে পারেন না। বুঝতে হবে ব্যাপারটি আর আপনার স্বভাব নেই, আপনি ওটায় আসক্ত।
এক গবেষণায় দেখা গেছে-মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীদের ৬০ ভাগ কোনো না কোনোভাবে মোবাইল ফোনে আসক্ত কোনো একটা সময়ে। এই আসক্তদের অর্ধেকের চেয়ে বেশি হলো- টিন-এজ এবং তরুণ-তরুণীরা। আরেকটি গবেষণায় দেখা গেছে, বিভিন্ন ধরনের টেকনো যন্ত্রপাতিতে এখন বিশ্বের আট থেকে দশ পার্সেন্ট প্রাপ্তবয়স্ক আসক্ত।
আসক্তির ফল জীবনকে একদিকে যেমন বিষাক্ত করে ফেলে, সঙ্গে সমাজ, পরিবেশ এবং অর্থনীতিতেও প্রভাব ফেলে। যন্ত্র, বিশেষত মোবাইল ফোন আসক্তির কারণে বিশ্বের বিভিন্ন অংশের লোকেরা সবচেয়ে বেশি ভুগছে নির্ঘুমতায়। লোকের চোখ এখন অন্ধকারেও ফোনের স্ক্রিনে বিড়ালের মতো তাকিয়ে পিট পিট করে।
একুশ শতকে মানুষের ঘুমের কোয়ালিটি কমে গেছে। ঘুমের সময় নিজেরাই কমিয়ে ফেলেছে। আবার যেটুকু বিছানায় পিঠ দেয়, তখনো ফোনের স্ক্রিনে প্রহরীর মতো চোখ রাখে। বিশ্রাম বাড়লেও ঘুম বাড়েনি। ঘুম বাড়লেও ঘুমের গভীরতা বাড়েনি। ফলে দেখা দিচ্ছে শরীরে প্রতিক্রিয়া। চোখের সমস্যা থেকে মস্তিষ্কে সমস্যা। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা থেকে খাদ্যাভ্যাসে সমস্যা। মোটা হয়ে যাওয়া থেকে, সহজে এবং স্থূল বিষয়ে বিষণতায় ভোগা, বিভিন্ন মানসিক সমস্যায় জড়িয়ে যাওয়া থেকে আত্মহত্যা, ক্রনিক হতাশা থেকে অস্থিরতা।
মুখের সামনে যন্ত্র নিয়ে বসে থাকতে থাকতে মানুষ এখন অনেক অসামাজিক, শারীরিক পরিশ্রমের চেয়ে অলস সময় কাটানো প্রাণী। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সংজ্ঞা অনুযায়ী রোগ মুক্ত শরীর মানে সুস্থতা নয়।
শারীরিক, মানসিক এবং সামাজিক, তিনটি দিকেই ভালো থাকাকে সুস্থতা বলে। সময় এসেছে উঠে দাঁড়ানোর। যন্ত্র এবং মানুষের যুদ্ধে জয় হওয়ার। মানুষ যন্ত্রের আবিষ্কার এবং তৈরি করেছে এবং করছে তার জীবনকে সহজ করতে, স্বাস্থ্যকর করতে এবং নিজেকে ভালো রাখতে। কিন্তু তার বিপরীতে ছুটলে বলতে হবে নিজেদের তৈরি যন্ত্র এখন নিজেদেরই দখল করে বসেছে।
টেকনো আসক্তির আরেক নাম একুশ শতকের যন্ত্র মহামারি। তাই এ বিষয়ে আমাদের সবাইকে সচেতন হতে হবে। টেকনোর ভালো দিকগুলো গ্রহণ করতে হবে। বর্জন করতে হবে খারাপ দিকগুলো। বাড়াতে হবে সচেতনতা, অবহেলা না করে হতে হবে আরও বেশি যত্নবান।
লেখক : ডা. অপূর্ব চৌধুরী
ইংল্যান্ড প্রবাসী চিকিৎসক।
সুস্থ, সতেজ এবং স্নিগ্ধ ত্বকের জন্য প্রয়োজন বিশেষ যত্ন। কেননা, অনিয়মিত যত্নে ভালো ফল আসে না। আর এর জন্য দামি প্রসাধনের প্রয়োজন নেয়, বরং ঘরে থাকা সহজলভ্য কিছু উপকরণ দিয়ে সহজেই বানানো যায় কিছু কার্যকর মাস্ক।
অ্যালোভেরা মাস্ক
এতে আছে অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল ও অ্যান্টিইনফ্ল্যামেটরি উপাদান, যা ত্বকের টেক্সচার উন্নত করতে সহায়তা করে। এটি রোদে পোড়াভাব এবং দূষণজনিত ক্ষতি কমাতে পারে। এর জন্য লাগবে দুই টেবিল চামচ অ্যালোভেরা জেল, এক টেবিল চামচ দুধের ক্রিম ও এক চিমটি হলুদের গুঁড়া। সব কটি উপাদান একসঙ্গে মিশিয়ে মুখ ও গলার ত্বকে লাগিয়ে রাখতে হবে ১৫ মিনিট। এরপর কুসুম গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে।
আলু ও পেঁপের মাস্ক
আলুতে আছে ক্যাটেকোলেস নামক এনজাইম। যা ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায়। দাগছোপ দূর করে। আর পেঁপের পেপেইন এনজাইম, আলফা-হাইড্রোক্সি অ্যাসিড নতুন কোষ তৈরি করে। অর্ধেকটা আলু, পাকা পেঁপের কয়েক টুকরা কেটে নিতে হবে। পরিমাণমতো দই মিশিয়ে ব্লেন্ড করে নিতে হবে। চাইলে এক ফোঁটা এসেনশিয়াল অয়েল মেশানো যেতে পারে। এই মাস্ক মুখে ও গলায় ভালো করে মাখিয়ে নিতে হবে। রাখতে হবে অন্তত ১৫ মিনিট। মুখ ধুয়ে মাস্কটি ব্যবহার করতে হবে। ত্বকের আর্দ্রতা বজায় রাখতে এই মাস্কগুলো ব্যবহারের পাশাপাশি ত্বকে সব সময় পানিভিত্তিক জেল ময়েশ্চারাইজার লাগাতে হবে এবং অবশ্যই প্রচুর পানি পান করতে হবে।
দীর্ঘ বন্ধের পর ক্যাম্পাসে ফেরার অভিজ্ঞতা তো শিক্ষার্থীদের জন্য নতুন নয়। প্রায় দেড় বছর ক্লাসে পা না রাখতে পারলে কেমন লাগে, সেই অভিজ্ঞতাও তো দিয়ে গিয়েছিল করোনাকাল। তবে হ্যাঁ, এবারের ফেরাটা সত্যিই অন্য রকম। জুলাইজুড়ে দেশে যে গণ-অভ্যুত্থান হয়েছে, তাতে শিক্ষার্থীরা নেতৃত্ব দিয়েছেন সামনে থেকে। মাস দুই আগেও হয়তো ক্যাম্পাসের আনাচকানাচে রাজনৈতিক আলাপ খুব একটা চোখে পড়ত না। এখন যেকোনো আড্ডায় কান পাতলেই বুঝবেন, ছেলেমেয়েরা বেশ রাজনীতিসচেতন। অনেক ভয়-শঙ্কা-রোমাঞ্চ পেরিয়ে, অনেকগুলো তাজা প্রাণ হারিয়ে নতুন করে ক্যাম্পাসে ফিরেছেন শিক্ষার্থীরা। নতুন শুরুর প্রত্যয়ে।
গান, নীরবতা, স্মৃতিচারণা
এখনো সব বিশ্ববিদ্যালয় পুরোদমে ক্লাস শুরু করতে পারেনি। কোথাও কোথাও প্রশাসনিক অবস্থা এখনো টালমাটাল। কোথাও–বা অনলাইনে চলছে ক্লাস।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি ১৮ আগস্ট থেকেই ক্লাস শুরু করেছে। সেদিন পতাকা উত্তোলন, সম্মিলিত কণ্ঠে গান আর শপথ পাঠের আয়োজন করেছিলেন শিক্ষার্থীরা। উপাচার্য শামস্ রহমানসহ বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষকদের উপস্থিতিতে শিক্ষার্থীরা গেয়েছেন, ‘মুক্তির মন্দির সোপানতলে/কত প্রাণ হলো বলিদান/লেখা আছে অশ্রুজলে।’ বৈষম্যহীন ও অন্তর্ভুক্তিমূলক একটি সমাজ গড়ে তোলার বার্তাই উঠে এসেছে এ আয়োজনে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী পুনম শাহরিয়ার। বললেন, ‘এই আন্দোলনে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। তাঁদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করতে বিশ্ববিদ্যালয়ের এমন উদ্যোগ খুবই প্রশংসনীয়। আমরা এ আয়োজনে পতাকা উত্তোলনের পর সবাই শপথ গ্রহণ করেছি, যেন সততার সঙ্গে দেশের সেবা করতে পারি। ন্যায় ও সাম্যের মূল্যবোধকে সমুন্নত রেখে, যেকোনো ধরনের বৈষম্যের বিরুদ্ধে আমরা সব সময় দৃঢ়ভাবে দাঁড়াতে পারি।’
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে এখনো ক্লাস শুরু হয়নি। তবে কয়েকটি বিভাগ নিজেদের উদ্যোগে ক্লাস নিচ্ছে। ইতিহাস বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা যেমন ক্লাসের শুরুতেই নীরবতা পালনের পর কবিতা ও গানে শহীদদের স্মরণ করেছেন। প্রথম ক্লাসের অভিজ্ঞতা জানিয়ে বিভাগের শিক্ষার্থী শামীমা জান্নাত বলেন, ‘প্রায় তিন মাস পর আমাদের ক্লাস শুরু হলো। তবে এ ক্লাসটি অন্য দিনের ক্লাসগুলোর মতো ছিল না। শুরুতে আমরা আমাদের শহীদ ভাইবোনদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করেছি। এরপর সবাই মিলে গেয়েছি মুক্তির মন্দির সোপানতলে, ধনধান্য পুষ্প ভরা ইত্যাদি। এই গানগুলো গাওয়ার সময় অন্য রকম একটা অনুভূতি কাজ করে। যে বৈষম্যহীন সমাজের স্বপ্নে শহীদেরা তাঁদের জীবন ত্যাগ করেছেন, আমরা যেন তাঁদের স্বপ্ন বাস্তবায়নের সারথি হই।’
আন্দোলন চলাকালে ১৮ জুলাই নিহত হন মিলিটারি ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির (এমআইএসটি) কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের শিক্ষার্থী শাইখ আসহাবুল ইয়ামিন এবং যন্ত্রকৌশল বিভাগের প্রাক্তন শিক্ষার্থী মো. রাকিবুল হোসেন। তাঁদের স্মরণে বিশ্ববিদ্যালয়ের নবনির্মিত মিলনায়তন ও মুক্তমঞ্চের নামকরণ করা হয়েছে। একই সঙ্গে এমআইএসটির কেন্দ্রীয় পাঠাগারে স্থাপন করা হয়েছে শহীদ ইয়ামিন-শহীদ রাকিবুল কর্নার। ১ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হয় প্রতিষ্ঠানটির শ্রেণি কার্যক্রম। ক্লাস শুরুর দিনে সহপাঠীদের স্মৃতিচারণা করেন বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা। তড়িৎ, ইলেকট্রনিকস ও যোগাযোগ প্রকৌশল বিভাগের শিক্ষার্থী রাইসুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা অনেকে নিজেদের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেছি। শহীদ ভাইদের নিয়েও কথা হয়েছে।’
শিক্ষকেরা পাশে আছেন
আন্দোলনটা শিক্ষার্থীদের হাত ধরে শুরু হলেও পরে শিক্ষকদের সংহতি একে আরও বেগবান করেছে। ফলে নতুন করে ফেরার পর ছাত্র–শিক্ষক সম্পর্কও একটা নতুন মাত্রা পেয়েছে। বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক ইমরান হোসেন বলেন, ‘আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থী এই আন্দোলনে শহীদ হয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনসহ আমরাও তাঁকে ক্লাসে স্মরণ করেছি। তবে লম্বা সময় পরে ক্লাসে ঢুকে আমি শিক্ষার্থীদের নতুনভাবে আবিষ্কার করেছি। দেশ সংস্কারে তাদের মধ্যে যে উদ্দীপনা দেখেছি, তা সত্যিই প্রশংসার দাবিদার। আমি বিশ্বাস করি, জেনারেশন জি–র হাতেই আগামীর বাংলাদেশ। নিজেদের মেধা ও যোগ্যতা দিয়ে বাংলাদেশকে একটি দুর্নীতিমুক্ত বৈষম্যবিরোধী ও অন্তর্ভুক্তিমূলক দেশ হিসেবে গড়ে তোলার সুযোগ তাদের হয়েছে। সবচেয়ে ইতিবাচক বিষয় হলো, ক্লাসে প্রায় সব শিক্ষার্থীই নতুন দেশ গড়ার প্রত্যয়ে বেশ উজ্জীবিত। আমরা এই শক্তিরই ইতিবাচক প্রতিফলন দেখতে চাই।’
হতাশা ও হীনম্মন্যতার মতো মানসিক সমস্যা নিয়ে মন খুলে তরুণদের সামনে কথা বলেছেন, প্রকাশ্যে কেঁদেছেন হুহু করে। কোটি কোটি অনুসারীকে না জানিয়ে হুট করেই বিদায় নিয়েছিলেন ইনস্টাগ্রাম থেকে। আবার ফিরেও এসেছেন। জীবনের নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়ে স্থিতি খুঁজে পেয়েছেন নতুন প্রেমিকের বাহুডোরে। তাঁর সঙ্গে কখনো রান্না করেন, কখনো–বা কাঁধে মাথা এলিয়ে ঘুমানোর ছবি ভাগ করে নেন ভক্তদের সঙ্গে। নিজের ব্যবসার একটা বড় অংশ খরচ করেন মানসিক স্বাস্থ্যসেবায়। অনেক তরুণীই নাকি তাঁর ভেতরে খুঁজে পান নিজেকে। বলছি গায়িকা, গীতিকার, নায়িকা, প্রযোজক, উদ্যোক্তা ও ইনফ্লুয়েন্সার সেলেনা গোমেজের কথা। মাত্র ৩২ বছর বয়সে তিনি নাম লিখিয়েছেন ‘সেলফ-মেড’ তরুণ বিলিয়নিয়ারদের তালিকায়। ছবি দেখতে দেখতে আলো ফেলা যাক এই তারকার জীবনের মোড় ঘোরানো সব ঘটনায়।
সেলেনাকে আপনি গায়িকা হিসেবে চিনলেও তিনি কিন্তু প্রথম পরিচিতি পান অভিনয় দিয়ে। ডিজনি চ্যানেলের শিশুশিল্পী হিসেবে জনপ্রিয়তা পান সেলেনা গোমেজ
ফ্যান্টাসি টিন সিটকম ‘উইজার্ডস অব ওয়েভারলি প্লেস’, ‘প্রিন্সেস প্রটেকশন প্রোগ্রাম’–এ অভিনয় করে রীতিমতো তারকা বনে যান। ২০২১ সালে কমেডি ড্রামা ‘অনলি মার্ডারস ইন দ্য বিল্ডিং’–এ অভিনয় করে সেলেনা সেরা অভিনেত্রী হিসেবে গোল্ডেন গ্লোবে মনোনয়ন পান
২০১০–এর দশকে সংগীত তারকা হিসেবে সেলেনার নাম ছড়াতে থাকে। ২০১৩ সালে মুক্তি পায় সেলেনার প্রথম একক অ্যালবাম ‘স্টার ড্যান্স’। ২০১৫ ও ২০২০ সালে আসে আরও দুটি অ্যালবাম, রিভাইভাল ও রেয়ার। অ্যালবামগুলোর ‘কাম অ্যান্ড গেট ইট’, ‘গুড ফর ইউ’, ‘সেম ওল্ড লাভ’, ‘লুজ ইউ টু লাভ মি’ সেলেনাকে বিশ্বব্যাপী পরিচিতি দেয়
একসময় আরেক পপ তারকা জাস্টিন বিবারের সঙ্গে সেলেনার প্রেম-বিচ্ছেদ ছিল তুমুল আলোচনার বিষয়। বেশ কয়েকটি গানে উঠে এসেছে বিবারের সঙ্গে তাঁর প্রেম ও বিচ্ছেদের কথা। ২০২২ সালে তাঁর ওপর নির্মিত তথ্যচিত্রে তিনি প্রেমিকের নাম উল্লেখ না করে বলেন, বিবারের সঙ্গে বিচ্ছেদ তাঁকে বছরের পর বছর তাড়া করেছে। সেটা ছিল তাঁর জীবনের সবচেয়ে কঠিন সময়। তবে সেটা এখন কেবলই অতীত, যা থেকে তিনি সেরে উঠেছেন
সেলেনা তাঁর বিউটি ব্র্যান্ড রেয়ার বিউটি বাজারে আনেন ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে। রেয়ার খুবই দামি বিউটি ব্র্যান্ড। তবু সেলেনার ব্র্যান্ডের পণ্য বিক্রি হয়েছে দেদার—বিশেষ করে লিকুইড ব্লাশ, লিপস্টিক আর নেইলপলিশ। ২০২৩ সালে সেলেনা গোমেজ তাঁর ‘ভেগান’ আর ‘ক্রুয়েলিটি ফ্রি’ ব্র্যান্ড থেকে বিক্রি করেছেন ৭৬ মিলিয়ন ডলার বা প্রায় ৯১০ কোটি টাকার পণ্য। ২০২৪ সালে দাঁড়িয়ে রেয়ার বিউটি ব্র্যান্ডের মূল্য দাঁড়িয়েছে ২ বিলিয়ন ডলার বা প্রায় ২৪ হাজার কোটি টাকায়
সেলেনার মোট সম্পদের পরিমাণ ১ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলার বা প্রায় ১৫ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। এর মধ্য দিয়ে সবচেয়ে কমবয়সী ‘সেলফ–মেড’ বিলিয়নিয়ারদের সংক্ষিপ্ত তালিকায়ও নাম উঠল এই গায়িকার
সেলেনার সবচেয়ে কাছের বন্ধু কে জানেন? ঠিক ধরেছেন, টেইলর সুইফট!
অথচ ছোটবেলায় দুঃসহ দারিদ্র্যকে সঙ্গী করে বড় হয়েছেন। ১৯৯২ সালের ২২ জুলাই যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসে সেলেনার যখন জন্ম, তখন তাঁর মায়ের বয়স তখন মাত্র ১৬। মা-বাবার যখন বিচ্ছেদ হয়, তখন সেলেনার বয়স ছিল ৫। সেলেনার মায়ের জীবনের একটাই লক্ষ্য ছিল, মেয়েকে প্রতিষ্ঠিত করা। সেলেনা নিজের জীবনের সব সফলতা ভাগ করে নেন মায়ের সঙ্গে
সেলেনা ১১ বছর বয়সী সৎবোন গ্রেসি এলিয়ট টেফিকে খুবই ভালোবাসেন
বর্তমানে ৩৬ বছর বয়সী মার্কিন র্যাপার বেনি ব্লাঙ্কোর প্রেমে মজেছেন সেলেনা। সেলেনার সঙ্গে সম্পর্কে জড়ানোর পর নতুন করে আলোচনায় আসেন বেনি
ইনস্টাগ্রামে সেলেনার অনুসারীসংখ্যা ছাড়িয়ে গেছে ৪২ কোটি ৪০ লাখ। অন্যদিকে বেনির অনুসারী মাত্র ১৭ লাখ। সেলেনার সঙ্গে সম্পর্কে জড়ানোর আগে এই সংখ্যা ছিল ১০ লাখের কাছাকাছি
শুরু থেকেই বেনির সঙ্গে সম্পর্ককে প্রকাশ্যে নিয়ে এসেছেন সেলেনা। নিজেই প্রকাশ করেছেন নিজেদের ঘনিষ্ঠ ছবি। জানিয়েছেন, বেনিই তাঁর জীবনের চূড়ান্ত ভালোবাসা
সেলেনার মোট সম্পদের পরিমাণ তো আগেই জেনেছেন। এদিকে প্রেমিক বেনি মাত্র ৫০ মিলিয়ন ডলার বা প্রায় ৫৯৮ কোটি টাকার মালিক
শিশুদের প্রতি সদয় হতে বলে ইসলাম। শিশুদের প্রতি আমাদের সবারই বন্ধুসুলভ আচরণ করা উচিত। কারণ আজকের শিশু আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। শিশুদের স্নেহ করা এবং তাদের প্রতি সদয় হওয়া এবং মমত্বপূর্ণ আচরণ করা রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নত।
রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শিশুদের খুব স্নেহ করতেন। তাদের প্রতি তিনি খুব যত্নবান ছিলেন। শিশুদের অধিকার ক্ষুণ্ণহলে বা কেউ তাদের সঙ্গে রূঢ় আচরণ করলে তিনি খুব কষ্ট পেতেন। ইসলামের প্রাথমিক অবস্থায় মহিলারা যখন মসজিদে এসে জামাতে শরিক হতো তখন শিশুদের কান্না শুনলে নবীজি নামাজ সংক্ষিপ্ত করে ফেলতেন।
তাঁর আদরের নাতি হজরত হাসান ও হুসাইন (রা.) নামাজরত অবস্থায় নবীজির কাঁধে চড়ে বসতেন। যতক্ষণ তারা ইচ্ছা করে না নামতেন রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সিজদা থেকে মাথা তুলতেন না। জনৈক সাহাবি তাদের এহেন আচরণে নবীজির নামাজের ব্যাঘাত হয় মনে করে মৃদু ধমক দিলে নবীজি খুবই অসন্তুষ্ট হন। সব শিশুকেই তিনি আদর করতেন।
হজরত আয়েশা সিদ্দিকা (রা.) বলেন, একজন বেদুইন রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দরবারে এসে শিশুদের স্নেহভরে চুমু খেতে দেখে বললেন, আপনারা কি শিশুদের স্নেহভরে চুমু খান? আমরা তো শিশুদের স্নেহভরে চুমু খাই না। নবীজি বললেন, আল্লাহ তোমার হৃদয় থেকে দয়ামায়া উঠিয়ে নিয়েছেন। তাতে আমার কী করার আছে। অর্থাৎ তোমাদের হৃদয়ে শিশুদের প্রতি মায়া নেই বলে তুমি শিশুদের স্নেহভরে চুমু খেতে পার না।
রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কন্যাশিশুদের প্রতি বেশি যত্নবান হতে নির্দেশ দিয়েছেন। ছেলের তুলনায় মেয়ে সন্তানের ভালো খাবার এবং ভালো পোশাক-পরিচ্ছদ দেওয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। যাতে তারা অবহেলার শিকার না হয়।
রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘কেউ যদি কন্যাসন্তানের প্রতিপালন নিয়ে কষ্টে পড়ে এবং ধৈর্য ধরে তাদের প্রতি সুন্দর আচরণ ও যত্নসহকারে লালনপালন করে এবং তাদের শিষ্টাচার করে গড়ে তোলে কিয়ামতের দিন এ কন্যাসন্তানরা তার জন্য জাহান্নামের মাঝে আড়াল হয়ে দাঁড়াবে।’ বুখারি, মুসলিম।
ইসলামের আবির্ভাবের আগে আরবে অনেকে কন্যাশিশুর জন্মদানকে অপমানজনক মনে করত। তাদের জীবিত কবর দেওয়ার নির্দয় ঘটনাও ঘটেছে আইয়ামে জাহেলিয়ায়। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ বিষয়ে কঠোর অবস্থান নেন। কোরআনে শিশু হত্যার বিরুদ্ধে কঠোর হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে।
হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি তিনজন মেয়ে অথবা তিনজন বোনকে সুন্দরভাবে আদব শিক্ষা দিয়ে তাদের প্রতি সদয় হয়ে প্রতিপালন করবে, বিয়ের মাধ্যমে তারা স্বাবলম্বী হওয়া পর্যন্ত আল্লাহ তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব করে দেবেন। এক ব্যক্তি জিজ্ঞাসা করলেন দুজনকে প্রতিপালন করলে? নবীজি বললেন দুজনকে করলেও। এমনকি একজনের কথা বললেও নবীজি একই কথা বলতেন।’
লেখক : মুহম্মাদ ওমর ফারুক
ইসলামবিষয়ক গবেষক।
বাড়িতেই তৈরি করতে পারবেন এই চা। রেসিপি জানা থাকলে মালাই চা খাওয়ার জন্য আর বাইরে যাওয়ার দরকার হয় না।
বর্ষণমুখর বিকেলে মনটা একটু চা চায়। এমন দিনে নিয়মিত গ্রিন টির বদলে চুমুক দিতে ইচ্ছে হয় ঘন দুধের মালাই চায়ে। কিংবা ছুটির দিনে নিয়ম ভেঙে নাস্তার পরে মালাই চা হতেই পারে।
রেসিপি জানা থাকলে মালাই চা খাওয়ার জন্য আর বাইরে যাওয়ার দরকার হবে না। বাড়িতেই তৈরি করতে পারবেন এই চা।
মালাই চা তৈরি করার জন্য প্রথমেই আধা লিটার দুধকে ঘন করে জ্বাল করে নিতে হবে। এরপর চুলা নিভিয়ে ঠান্ডা করে নিলে এর উপরে সর জমা হবে। দুটো কাপে ছাঁকনির সাহায্যে সর তুলে নিতে হবে।
এবার জ্বাল হতে থাকা সেই দুধে এক চা চামচ ডিমের কুসুম ভালোভাবে মিশিয়ে নিতে হবে। ভাবছেন ডিমের গন্ধ আপনার চা খাওয়া পণ্ড করে দিবে? মোটেই না। ডিমের কুসুমের সুন্দর ক্রিমই ঘনত্ব তৈরি করবে আপনার চায়ে। এবার দুটো এলাচ আর এক টুকরো আদা দিন। মালাই চায়ের জন্য চাই ভালো মানের চা পাতা। দুধে এবার দুই টেবিল চামচ চা পাতা আর দুই চা চামচ চিনি দিয়ে দিতে হবে। দুধের নিজস্ব মিষ্টতার কারণে অতিরিক্ত চিনি দেওয়ার দরকার নেই। পছন্দমতো রং না আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। চা যত কড়া খেতে চান তত বেশি সময় জ্বাল দেবেন। চায়ের রং মনমতো হলেই চা চুলো থেকে নামিয়ে ছেঁকে নিন।
আগে থেকে সর দেওয়া কাপে খানিকটা উপর থেকে ধীরে ধীরে চা ঢালুন। এতে করে কাপটা চায়ের সঙ্গে ফেনায় ভরে উঠবে আর সুন্দর একটা মিষ্টি ঘ্রাণ ছড়াবে। যে পরিমাপ বলা হলো, এতে করে দুই কাপ চা হবে। এবার উপভোগ করুন নিজের তৈরি পারফেক্ট মালাই চা।
অনেকেই অতিরিক্ত ওজন নিয়ে দুশ্চিন্তায় থাকেন।
ওজন কমানোর জন্য পরামর্শ দিয়েছেন: ডা. জুবায়ের আহমদ, সিনিয়র কনসালট্যান্ট, ইন্টারনাল মেডিসিন অ্যান্ড রিউম্যাটোলজি, ল্যাবএইড ক্যানসার হাসপাতাল অ্যান্ড সুপারস্পেশালিটি সেন্টার।
পরামর্শ
আপনার ওজন নিয়ন্ত্রণে সবচেয়ে কার্যকর পন্থা হলো সুষম খাদ্যাভ্যাস গড়ে তোলা। আরেকটি জরুরি বিষয়, নিয়মিত শারীরিক ব্যায়াম করা। তবে প্রথমত বিএমআই বা বডি ম্যাস ইনডেক্স (বিএমআই) অনুসারে আপনার উচ্চতার বিপরীতে কাঙ্ক্ষিত ওজনের মাত্রা জেনে নিতে পারেন। বিএমআই যদি ২৫ থেকে ৩৯.৯ এর ভেতর থাকে তাহলে আপনি ‘ওভারওয়েট’ বা আপনার ওজন অতিরিক্ত বেশি। আপনার বিএমআই ২৮.৩৮। আপনাকে স্বাভাবিক ওজনের ভেতর যেতে হলে বিএমআই কমপক্ষে ২৪.৯ হতে হবে। এর মানে আপনার ওজন হতে হবে ৬৫। অর্থাৎ আপনাকে অন্তত ১০ কেজি ওজন কমাতে হবে।
একজন পুষ্টিবিদের পরামর্শে সব ধরনের পুষ্টিসমৃদ্ধ খাবারের সমন্বয়ে একটি খাদ্যতালিকা তৈরি করুন এবং তা মেনে চলুন। এ সময় শর্করাজাতীয় খাবারের ব্যাপারে সতর্ক থাকুন। এ জাতীয় খাবার বেশি খেলে দ্রুত ওজন বেড়ে যায়। তাই খাদ্যতালিকায় ভাত ও আলুর পরিমাণ কিছুটা কম রাখবেন। আর প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে খাবার খেতে হবে। তবে প্রয়োজনের অতিরিক্ত খাওয়া যাবে না। এ ছাড়া বাইরের জাংক ফুড পরিহার করুন। ঘরেও অতিরিক্ত তেল ও চর্বিজাতীয় খাবার গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকুন। পাশাপাশি নিয়মিত শারীরিক ব্যায়াম করতে পারেন। আশা করি এতে উপকার পাবেন।