শেখ হাসিনা সরকারের আমলে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে যেসব চুক্তি হয়েছে, সেগুলো জনসমক্ষে প্রকাশের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)।
আজ বৃহস্পতিবার গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু এ দাবি জানান।
'গত ১৫ বছরে আওয়ামী লীগ আমলে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে অর্থ লুটপাট ও পাচার' শীর্ষক বিশ্লেষণ তুলে ধরতে এই সংবাদ সম্মেলন ডাকেন বিএনপি মহাসচিব।
বিগত সরকারের আমলে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে দুর্নীতি-অনিয়মের চিত্র তুলে ধরেন চার দলীয় জোট সরকারের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী টুকু।
তিনি বলেন, 'আওয়ামী লীগ সরকার বিদ্যুৎখাতে যে ম্যাজিক দেখাতে চেয়েছিল, ম্যাজিক করতে গিয়ে বাংলাদেশের মানুষের পকেট কেটে নিয়ে গেছে। আপনারা প্রত্যেকে বিদ্যুতে বিল পরিশোধ করেন, সবাই ভুক্তভোগী। আসলে তারা এটা একটা ব্যবসার খাত বানিয়ে ছিল। তারা বুঝতে পেরেছিল যে, এই খাত থেকে কুইক মানি বানানো যায় কোনো হিসাব না দিয়ে। কারণ বিদ্যুৎ তো "হাওয়া", এটা দেখা যায় না।'
তিনি আরও বলেন, 'ক্যাপাসিটি চার্জ। এই ক্যাপাসিটি চার্জে কোন মেশিনে কত ক্যাপাসিটি? কে এটা আইডেন্টিফাই করেছে এবং সেই মেশিনগুলোর এফিসিয়েন্সি কি? এগুলো কেউ বিশ্লেষণ করেও না, দেখেও না। এই ক্যাপাসিটি চার্জের নামে তারা ১৫ বছরে অনেক টাকা নিয়ে গেছে—প্রায় এক লাখ কোটি টাকা।'
টুকু বলেন, 'আমি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে দাবি জানাই, বিদ্যুৎখাতের প্রত্যেকটা চুক্তি প্রকাশ করুন। তারা তো কোনো পাবলিক প্রকিউরমেন্ট রুল মানেনি। আইন করে নিয়মনীতি বন্ধ করে দিয়ে ইচ্ছামতো ক্লোজ টেন্ডারে এসব চুক্তি করেছে। জনগণের অধিকার আছে এসব বিষয় জানার।'
'উই মাস্ট সি দ্যা কন্ট্রাক্ট। তারা কীভাবে কন্ট্রাক্টগুলো করেছে, এটা পাবলিক হওয়া উচিত। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রথম কাজ হলো জনগণের সামনে এই কন্ট্রাক্টগুলো উন্মুক্ত করে দেওয়া,' যোগ করেন তিনি।
বিদ্যুৎখাতের দুর্নীতি-লুটপাট
দুর্নীতির পরিসংখ্যান তুলে ধরে টুকু বলেন, 'বিদ্যুৎখাতে ১৫ বছরে মোট খরচ হয়েছে ২ হাজার ৮৩০ কোটি মার্কিন ডলার। বর্তমান বিনিময় হারে সেটা ৩ লাখ ৩৩ হাজার ৯৪০ কোটি টাকা। ক্যাপাসিটি চার্জের নামে লুটপাট হয়েছে প্রায় এক লাখ কোটি টাকা।'
তিনি বলেন, '২০০৮-০৯ অর্থবছরে ১ হাজার ৫০৭ কোটি টাকা, ২০১১-১২ অর্থ বছরে ৫ হাজার কোটি টাকা, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৮ হাজার ৯০০ কোটি টাকা এবং ২০২২-২৩ অর্থবছরে ১৭ হাজার ১৫৫ কোটি টাকা ক্যাপাসিটি চার্জ দিয়েছে। তার অর্থ হলো, বেসরকারি খাতে বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো চলেনি এবং এই টাকাগুলো তাদেরকে পেমেন্ট করেছে। এভাবে দেশের মানুষের কাছ থেকে লুট করে দিয়ে গেছে।'
সাবেক এই বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রীর দাবি করেন, 'ক্যাপাসিটি চার্জ পাওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর বেশিরভাগের মেশিন খারাপ। খারাপ মেশিন এনে টাকা কামাই করে চলে গেছে।'
তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, 'এই লুটপাটের অংশ কারা ছিল? ক্যাপাসিটি চার্জের শীর্ষ পাঁচ কোম্পানির কথা আমি বলছি। সামিট নিয়েছে ১০ হাজার ৬৩০ কোটি টাকা, এ্যাগ্ররো ইন্টারন্যাশনাল নিয়েছে ৭ হাজার ৯৩২ কোটি টাকা, আল্ট্রা পাওয়ার হোল্ডিংস নিয়েছে ৭ হাজার ৫২৩ কোটি টাকা, ইউনাইটেড গ্রুপ নিয়েছে ৬ হাজার ৫৭৫ কোটি টাকা, আরপিসিএল নিয়েছে ৫ হাজার ১১৭ কোটি টাকা।'
তিনি বলেন, 'কুইক রেন্টাল পাওয়ার প্ল্যান্ট করা হয় সাধারণত আপদকালীন বিদ্যুৎ সংকট নিরসনের জন্য। যে প্ল্যান্ট দুই বছরের, সেটা ১৫ বছর পর্যন্ত চালাচ্ছে এবং এসব কুইক রেন্টালে ৭৫ শতাংশ বিনিয়োগ করেছে উইথ আউট রিটার্ন। বুঝেন কি অবস্থা!'
'ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানির নামে নয় বছরে ক্যাপাসিটি চার্জ দিয়েছে ১১ হাজার ১৫ কোটি টাকা,' বলেন তিনি।
'সব কিছু রিভিউ করা হবে'
টুকু বলেন, 'আমরা পুরো বিষয়গুলো রিভিউ করব। মনে রাখতে হবে, রিভিউ মানে বাতিল না। আমরা দেখবো, কোন কোন জায়গায় দুর্বলতা ছিল।'
'যেকোনো সময় মুখ থুবড়ে পড়বে'
সাবেক এই বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রীর দাবি, 'আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বিদ্যুতে যেসব উন্নয়ন করা হয়েছে, সেটা টেকসই না। যেকোনো সময় মুখ থুবড়ে পড়বে।'
'বিদ্যুৎখাতে দুর্নীতির ধরণ দেখার পর বোঝা যায়, তারা বিদ্যুৎখাতকে ফোকলা করে দিয়েছে। আর কিছু নেই। একটা উদাহরণ বলি। প্রতিটি মিটারের জন্য গড়ে অতিরিক্ত খরচ করেছে ৪ হাজার ৫০০ টাকা। কিনেছে ৬ হাজার ২০০ টাকা দিয়ে। তাহলে অতিরিক্ত ১ হাজার ৭২০ টাকা প্রতি মিটারে। তাহলে দেখেন কত টাকা নিয়ে গেছে। এনআইসি কার্ডের দাম ২ হাজার টাকা। তারা ধরেছে ৫ হাজার ২১৫ টাকা। এভাবে এই খাতের সর্বত্র দুর্নীতি। দুর্নীতির কোনো শেষ নেই।'
তিনি আরও বলেন, 'উনারা তো বিল পেমেন্ট করছেন। আমি যতটুকু জানি বকেয়া বেশি নেই। সবই তো পেমেন্ট করছে এই সরকার এসে। কিন্তু আলমেটলি ২০২৭ সালে এসে ধরা খাবে। আমরা মনে করি, এখন যদি টাইট না করি, তাহলে ২০২৭ সালে আমরা বিপদে পড়ে যাবো। ফরেন এক্সচেঞ্জ ঘাটতি হয়ে যাবে। টাকা ছাপানো হবে। এতে মুল্যস্ফীতি বাড়বে।'
'রূপপুর প্রকল্পের দুর্নীতি'
টুকু বলেন, 'রূপপুরে পারমাণবিক প্রকল্পের ৫০০ বিলিয়ন ডলার তারা (শেখ হাসিনাসহ তার পরিবার) নিয়ে গেছে। সেটা নিয়ে আরও তদন্ত হচ্ছে লন্ডনে টিউলিপের (ব্রিটিশ সংসদ সদস্য টিউলিপ সিদ্দিকী। যিনি শেখ রেহানার মেয়ে) ব্যাপারে এবং আরও দুর্নীতি আছে।'
'প্রিপেইড মিটার বাণিজ্যে সিন্ডিকেট'
সাবেক এই বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী বলেন, 'এটা তাদের একটা সিন্ডিকেট। ৭১ লাখ ২০ হাজার গ্রাহকের কাছে তারা মিটার পৌঁছাবে এবং সেখানে বিরাট অংকের একটা দুর্নীতি—প্রায় ৩৬ কোটি টাকা পাচার করেছে। ১ হাজার ২৩৫ কোটি অতিরিক্ত খরচ করেছে এর মধ্যে দুর্নীতি করেছে ৬১৭ কোটি টাকা। মিটার সরবরাহ ও স্থাপনে ছিল ৪ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। সেটা ১২ হাজার কোটি টাকা করেছে।'
তিনি বলেন, 'স্মার্ট প্রিপেইড মিটার প্রকল্পের যে নেটওয়ার্ক তৈরি করেছে, সেটা কিছু ব্যক্তির নেটওয়ার্ক। যেখানে পতিত সরকারের প্রধানমন্ত্রীর আত্মীয়-স্বজনরা আছে। তারা কোটি কোটি টাকা লাভবান হবে এই প্রকল্পে।'
এলএনজি প্রকল্পের নামে সাবেক বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপুর কোম্পানিসহ 'একটি চক্র' কোটি কোটি টাকা লুটপাট করেছে বলে অভিযোগ করেন ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু।
বিদ্যুতখাতে দুর্নীতি ও অনিয়ম প্রতিরোধে এই খাতে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা, প্রকল্পের বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ায় জনগণের অংশগ্রহণ বাড়ানো, দুর্নীতি রোধে কঠোর আইন প্রণয়ন, বিদ্যুৎখাতের দুর্নীতির সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ, নিয়মিত বিদ্যুৎ পরীক্ষা-নিরীক্ষা পর্যবেক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরি বলে মনে করেন তিনি।
অবশেষে বাংলাদেশের জাতীয় কবির রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি পেলেন কাজী নজরুল ইসলাম। ১৯৭২ সালের ৪ মে বাংলাদেশে আসার তারিখ থেকে তাঁকে বাংলাদেশের ‘জাতীয় কবি’ ঘোষণা করে গেজেট প্রজ্ঞাপন প্রকাশ করা হয়েছে।
রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আতাউর রহমান স্বাক্ষরিত এক গেজেট প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, গত ডিসেম্বরে উপদেষ্টা পরিষদের এক সভায় অনুমোদিত প্রস্তাব অনুযায়ী কবি কাজী নজরুল ইসলামকে বাংলাদেশের জাতীয় কবি ঘোষণা করা হয়েছে এবং এটি সকলের অবগতির জন্য গেজেট আকারে প্রকাশ করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, গত ৫ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের সভায় কবি কাজী নজরুল ইসলামকে জাতীয় কবি ঘোষণা করে গেজেট প্রজ্ঞাপন প্রকাশের প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়।
কবি কাজী নজরুল ইসলামের জাতীয় কবির মর্যাদার বিষয়টি ইতোমধ্যে প্রতিষ্ঠিত সত্য এবং রাষ্ট্রীয় পর্যায়েও স্বীকৃত। বাংলাদেশের জনগণ তাঁকে তাঁর ঢাকায় আগমনের তারিখ থেকে জাতীয় কবি ঘোষণা করে সরকারি প্রজ্ঞাপন প্রত্যাশা করে আসছিল। উপদেষ্টা পরিষদ এ প্রত্যাশা অনুযায়ী এ প্রস্তাব অনুমোদন করে।
কবি কাজী নজরুল ইসলামকে ১৯৭২ সালের ২৪ মে কলকাতা থেকে সরকারি উদ্যোগে সপরিবারে ঢাকায় আনা হয় এবং তাঁর বসবাসের জন্য ধানমন্ডির ২৮ নম্বর (পুরাতন) সড়কের ৩৩০-বি বাড়িটি বরাদ্দ প্রদান করা হয়।
এরপর ১৯৭৬ সালের জানুয়ারি বাংলাদেশ সরকার কবিকে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব প্রদান করে। একই বছরের ২১ ফেব্রুয়ারি তাকে একুশে পদকে ভূষিত করা হয়। একুশে পদক বাংলাদেশের দ্বিতীয় বেসামরিক সম্মানসূচক পদক হিসেবে বিবেচিত হয়ে থাকে।
১৯৭৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বাংলা সাহিত্য এবং সংস্কৃতিতে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ অন্যান্য ব্যক্তিবর্গের সঙ্গে কাজী নজরুল ইসলামকে সম্মানসূচক ডি.লিট উপাধি প্রদানের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। ১৯৭৪ সালের ৯ ডিসেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক মিলনায়তনে (টিএসসি) এক সমাবর্তন উৎসবে এই উপাধি প্রদানের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। অসুস্থতার জন্য নজরুলকে এ উৎসবে আনা সম্ভব হয়নি। পরবর্তীকালে ১৯৭৫ সালের ২৫ জানুয়ারি তারিখে বঙ্গভবনে একটি বিশেষ অনুষ্ঠানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর তৎকালীন রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদউল্লাহ নজরুলকে ডি. লিট উপাধিতে ভূষিত করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আবদুল মতিন চৌধুরী নজরুলের উদ্দেশে একটি মানপত্রও পাঠ করেন।
কবি নজরুল ১৯৭৬ সালের ২৯ আগস্ট ইন্তেকাল করেন। নজরুল তার একটি গানে লিখেছেন, ‘মসজিদেরই পাশে আমায় কবর দিও ভাই, যেন গোরে থেকেও মুয়াজ্জিনের আজান শুনতে পাই’। এই ইচ্ছার প্রতি সম্মান জানিয়ে কবিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদের পাশে পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সমাহিত করা হয়।
তার নামাজে জানাজায় ১০ হাজারেরও বেশি মানুষ শরিক হন। জানাজার পর রাষ্ট্রপতি আবু সাদাত মোহাম্মদ সায়েম, মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান, রিয়াল এডমিরাল এম এইচ খান, এয়ার ভাইস মার্শাল এ জি মাহমুদ, মেজর জেনারেল দস্তগীর জাতীয় পতাকা-মোড়ানো নজরুলের মরদেহ বহন করে সোহরাওয়ার্দী ময়দান থেকে বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদ প্রাঙ্গণে নিয়ে যান। বাংলাদেশে তার মৃত্যু উপলক্ষে দুই দিনের রাষ্ট্রীয় শোক দিবস পালিত হয়।
পরবর্তীকালে তাঁকে জাতীয় কবি হিসেবে সম্বোধন করে কবি নজরুল ইনস্টিটিউট আইন, ২০১৮ জারি করা হয়।
১৯২৯ সালের ১০ ডিসেম্বর অবিভক্ত ভারতের কলকাতার এলবার্ট হলে সমগ্র বাঙালি জাতির পক্ষ থেকে নেতাজী সুবাস চন্দ্র বসু, বিজ্ঞানী আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায়, এস, ওয়াজেদ আলী, দীনেশ চন্দ্র দাশসহ বহু বরণ্যে ব্যক্তিত্বের উপস্থিতিতে কবি কাজী নজরুল ইসলামকে ‘জাতীয় কাণ্ডারী’ এবং ‘জাতীয় কবি’ হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করা হয়।
পরবর্তীকালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীন বাংলাদেশে কবির জন্ম বার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষ্যে প্রদত্ত বাণীতে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও প্রধান উপদেষ্টাগণও কবিকে ‘জাতীয় কবি’ হিসেবে আখ্যায়িত করেন। কিন্তু সর্বক্ষেত্রে বাংলাদেশের জাতীয় কবি হিসেবে স্বীকৃত হলেও কবি কাজী নজরুল ইসলামকে জাতীয় কবি হিসেবে ঘোষণা করে ইতোপূর্বে সরকারিভাবে কোনো গেজেট প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়নি।
মোট ৪৩টি পণ্যের ওপরে ভ্যাট বাড়ানোর সিদ্ধান্তে নিত্যপণ্যের দামের ওপর কোনো প্রভাব পড়বে না বলে জানিয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ।
বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এ কথা জানান তিনি।
ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, আইএমএফের শর্ত পূরণে নয়, বরং রাজস্ব বাড়ানোর স্বার্থেই বিভিন্ন পণ্যের ওপর কর বাড়ানো হয়েছে।
তবে, ৪৩টি পণ্যের উপরে ভ্যাট বাড়ানোর সিদ্ধান্তে নিত্যপণ্যের দামের ওপরে প্রভাব পড়বে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, সাধারণ মানুষের কষ্ট হবে না। তিন তারকা মানের ওপরের হোটেলগুলোর ক্ষেত্রে কর বাড়ানো হয়েছে। সাধারণ মানের হোটেল রেস্তোরাঁর ওপরে বাড়ানো হয়নি।
নতুন বছরে দেশের অর্থনীতিতে স্থিতিশীলতা আসবে জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, ব্যাংকগুলোকে পর্যাপ্ত সাপোর্ট দেওয়া হবে। বাজেটে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ বাড়ানো হবে।
দীর্ঘ প্রায় আড়াই দশকের জোট শরিক বিএনপি ও বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে দ্বন্দ্ব বেড়েই চলেছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন কেন্দ্র করে দেশের অন্যতম প্রধান দুটি দল এখন বিপরীতে মুখোমুখি অবস্থানে। উভয় দলের শীর্ষনেতারা একে অপরের প্রতি করছেন কটাক্ষ। এ অবস্থায় আগামী নির্বাচন সামনে রেখে দল দুটির অবস্থান শেষ পর্যন্ত কোন পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছায় এখন দেখার বিষয়।
জামায়াত চাচ্ছে সব সংস্কার শেষ আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচন। আর বিএনপি চাচ্ছে প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষেই নির্বাচন। এদিকে জামায়াত এককভাবে ৩০০ আসনে প্রার্থী দেওয়ার ঘোষণা করেছে, কয়েকটি ইসলামি দল নিয়ে নির্বাচনি মোর্চা গঠনের প্রয়াস চালাচ্ছে। অন্যদিকে বিএনপিও নির্বাচন সামনে রেখে মিত্র দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ করে যাচ্ছে এখানেও নেই জামায়াত।
১৯৯৯ সালে চারদলীয় জোট গঠিত হয়। এ জোটের প্রধান দুটো দল ছিল বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী। দল দুটি ২০০১ সালের নির্বাচনে ক্ষমতায়ও আসে। এর পর আবার বিরোধী দলে যায়। চার দলীয় জোট থেকে ২০ দলীয় জোট হয়। শেখ হাসিনার শাসনের শেষদিকে দল দুটির মধ্যে দূরত্ব দেখা দেয়। গত কয়েক বছর ধরেই নানা বিষয়ে টানাপোড়েন চলছে বিএনপি ও জামায়াতের মধ্যে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, সভা-সমাবেশের বক্তব্য-বিবৃতিতে মন্তব্য ছোড়াছুড়ি চলছে।
জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানের পর এই বিরোধ আরও প্রকট হয়ে দেখা দিয়েছে। ৫ আগস্টের পর থেকেই জামায়াতের সঙ্গে বিএনপির দূরত্ব প্রকাশ্যে আসতে থাকে। দেশের বিভিন্ন স্থানে বিএনপি-জামায়াত এবং ছাত্রদল-শিবিরের সঙ্গে একাধিকবার রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনায়ও ঘটেছে। জামায়াতের শীর্ষনেতারা সভা-সমাবেশ থেকে বিএনপিকে ইঙ্গিত করে দখল বাণিজ্যসহ কড়া সমালোচনা করে বক্তব্য রেখে চলেছে।
এদিকে, গত রবিবার বিএনপির একটি অনুষ্ঠানে দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী জামায়াতের কঠোর সমালোচনা করে বক্তব্য দেন জামায়াতও এর কড়া প্রতিবাদ জানিয়েছে। সব মিলিয়ে দল দুটির দূরত্ব এখন দৃশ্যমান। তবে জামায়াত নেতারা এও বলছেন, মাঠে অনেক রাজনৈতিক কথা হয়। সব দলই সংস্কার চায়। তারা সংস্কারের জন্য কোনো সময় বেঁধে দিতে চান না। তাদের পারস্পরিক সম্পর্কে চূড়ান্ত পর্যায়ে কোনো ঘাটতি হয়েছে বলে মনে করেন না।
তবে এখন তারা বিএনপির সঙ্গে জোটভুক্ত নয়। কিন্তু বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে তাদের যোগাযোগ আছে। তারা ইসলামি দল ও সংগঠনের সঙ্গে এখন আলাপ-আলোচনা করছেন সবাই ঐক্যবদ্ধ হওয়ার জন্য। নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার পর ইসলামি দলগুলোর সঙ্গে কোনো জোট করবেন কি না, এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবেন। আর বিএনপির ব্যাপারেও তাদের একই অবস্থান। এখন কিছু বলা যাচ্ছে না।
অন্যদিকে বিএনপির নেতারা জানান, তারা এখন এককভাবে চলতে চান। কারণ এখন দেশের সবচেয়ে বড় এবং জনপ্রিয় রাজনৈতিক দল হচ্ছে বিএনপি। নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা হলে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জোট করবেন কি না, তখন সিদ্ধান্ত নেবেন। সামনে এখনো রাজনীতির অনেক হিসাব-নিকাশ আছে।
জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, বাংলাদেশকে লুট করেছে একটি পরিবার, একটি গোষ্ঠী। তারা পরিবারকে দেখেছে আগে, এরপর দেখেছে গোষ্ঠীকে, তারপর দলকে। শেষে জুলুম চাপায় দিয়েছে জনগণের ঘাড়ে।
রোববার (১ ডিসেম্বর) সকালে খুলনার খানজাহান আলী থানা জামায়াতের উদ্যোগে স্থানীয় ইস্টার্ন জুট মিলস শ্রমিক ময়দানে কর্মী সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি।
আওয়ামী লীগের তীব্র সমালোচনা করে জামায়াতে ইসলামীর আমীর বলেন, তারা প্রথমে বিডিআর বিদ্রোহের নামে দেশপ্রেমিক ৫৭ জন চৌকস সেনা কর্মকর্তাকে হত্যা করেছে। এরপর জামায়াতের শীর্ষ নেতাদের ফাঁসি দিয়েছে, কারাগারে রেখে তিলে তিলে হত্যা করেছে। কিন্তু তাদের সব নির্যাতনের জবাব ছাত্র-জনতা গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে দিয়েছে। পতিত স্বৈরাচারের দোসররা উস্কানি দিচ্ছে। তাদের ফাঁদে পা দেওয়া যাবে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, তারা যতই ষড়যন্ত্র করুক, সব ব্যর্থ করে দিতে হবে।
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, গত পনের বছর ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ দেশকে কারাগার বানিয়েছিল। তাদের মতের বাইরে গেলে গুম, খুন ও জেল দেওয়া হতো। দেশ কারও একার নয়, দেশ সবার। এ সময় পনের বছরের জঞ্জালমুক্ত করতে সকলকে তিনি ঐক্যবদ্ধ হয়ে এগিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানান।
জুলাই-আগস্টের ছাত্র-জনতার আন্দোলনকে সফল উল্লেখ করে জামায়াতের আমির বলেন, হাজার উস্কানির মধ্যেও তারা মাথা গরম করেনি। রক্ত দিয়ে ফ্যাসিবাদ বিদায় করেছে। এখন সকলকে মর্যাদাশীল দেশ গড়তে কৃষি ও শিল্পের ওপর গুরুত্ব দিতে হবে।
তিনি আরও বলেন, প্রভু নয়, বন্ধু প্রতিবেশী চাই। কোনো আগ্রাসী হাত আমরা দেখতে চাই না।
খানজাহান আলী থানা জামায়াতে ইসলামীর আমির সৈয়দ হাসান মাহমুদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার।
এ সময় মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, খুলনা অঞ্চলের প্রধান দুটি সমস্যা হলো মিল ও বিল। আওয়ামী লীগ আমলে ঐ দুটিই ধ্বংস হয়েছে। একদিকে ২৬টি রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল বন্ধ করে শ্রমিকদের বেকার করা হয়েছে; অপরদিকে ডাকাতিয়া বিলসহ বিভিন্ন জলাশয় দখল ও সুইচ-গেট বন্ধ করে হাজার হাজার মানুষকে পানিবন্দি করে রাখা হয়েছে।
সমাবেশে অন্যান্যদের মধ্যে বক্তৃতা করেন জামায়াতের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সেক্রেটারি ও খুলনা অঞ্চল পরিচালক মুহাদ্দিস আব্দুল খালেক, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য মাওলানা আবুল কালাম আজাদ, টিম সদস্য মাস্টার শফিকুল আলম, খুলনা জেলা আমির মাওলানা এমরান হোসাইন, খুলনা মহানগরী আমির অধ্যাপক মাহফুজুর রহমান, নড়াইল জেলা আমির অ্যাডভোকেট আতাউর রহমান বাচ্চু, মহানগরী সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট শেখ জাহাঙ্গীর হোসাইন হেলাল, জেলা সেক্রেটারি মুন্সী মিজানুর রহমান, ডুমুরিয়া উপজেলা হিন্দু কমিটির সভাপতি কৃষ্ণ নন্দী, খুলনা জেলা ছাত্রশিবিরের সভাপতি বেলাল হোসাইন রিয়াদসহ অনেকে।
এর আগে সকাল সাড়ে ৭টায় খুলনা মহানগরী জামায়াতে ইসলামীর মহিলা বিভাগের উদ্যোগে নগরীর আল ফারুক সোসাইটিতে মহিলা সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তৃতা করেন জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান। শনিবার রাতে নগরীর একটি অভিজাত হোটেলে ন্যাশনাল ডক্টরস ফোরামের উদ্যোগে চিকিৎসকদের সমাবেশেও উপস্থিত হন তিনি।
ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শাসনামলে প্রতিবছর গড়ে ১৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিদেশে পাচার হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। অর্থনীতিতে অনিয়ম ও দুর্নীতি তদন্তে গঠিত শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে আসে।
রোববার (১ ডিসেম্বর) রাজধানীর তেজগাঁও প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যের নেতৃত্বে গঠিত শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নিকট তাদের প্রতিবেদন জমা দেয়।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম জানান বলেন, শ্বেতপত্রের প্রতিবেদনে অর্থনীতির প্রতিটি খাত ধরে ধরে আলাদা বিশ্লেষণ করে দেখানো হয়েছে উন্নয়নের গল্প সাজাতে কিভাবে পরিসংখ্যানকে ম্যান্যুপুলেট করা হয়েছে। উন্নয়নের গল্প শোনানো হলেও ভেতরে ভেতরে চলেছে লুটতরাজের এক মহাযজ্ঞ।
প্রতিবেদন গ্রহণ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, এই প্রতিবেদন আমাদের জন্য একটা ঐতিহাসিক দলিল। আর্থিকখাতে যে ধরনের ঘটনা ঘটেছে, তা ছিল একটা আতঙ্কের বিষয়। আমাদের সামনে এই ঘটনা ঘটেছে কিন্তু কেউ এটা নিয়ে কথা বলেননি বলে তিনি উল্লেখ করেন।
বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ বলয়ের মধ্যে থাকা সাবেক মন্ত্রীসহ রাজনীতিক ও ব্যবসায়ীদের বিপুল পরিমাণ সম্পত্তির সন্ধান পাওয়া গেছে যুক্তরাজ্যে। দেশটির আবাসন খাতে তাদের বিনিয়োগ করা সম্পত্তির পরিমাণ ৪০ কোটি পাউন্ডের (৬ হাজার কোটি টাকা) বেশি। বাংলাদেশ থেকে পাচার করা অর্থ দিয়ে এসব সম্পত্তি কেনা হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম অবজারভার ও বার্লিনভিত্তিক দুর্নীতিবিরোধী প্রতিষ্ঠান ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের যৌথ অনুসন্ধানে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
শনিবার (৩০ নভেম্বর) যুক্তরাজ্যের সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান এই অনুসন্ধান নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
অবজারভার ও ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের অনুসন্ধানে বলা হয়েছে, যুক্তরাজ্যে শেখ হাসিনা–ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিদের নামে প্রায় ৩৫০টি সম্পত্তির সন্ধান পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ফ্ল্যাট থেকে শুরু করে সুবিশাল অট্টালিকা (ম্যানশন) পর্যন্ত রয়েছে। যুক্তরাজ্য ও দেশটির বাইরের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের (অফশোর কোম্পানি) নামে এই সম্পত্তির অনেকগুলো কেনা হয়েছে।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, অফশোর কোম্পানির মাধ্যমে কেনা ওই সম্পত্তির অনেকগুলোর মালিকানায় রয়েছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান ও দেশের অন্য একটি ব্যবসায়িক গ্রুপের পরিবারের সদস্যরা। এ ছাড়া সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী, নাসা গ্রুপের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদার ও তাদের পরিবারের সদস্যদেরও অনেক সম্পত্তির মালিকানা রয়েছে।
সালমান এফ রহমান বেক্সিমকো গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান। তিনি বর্তমানে বাংলাদেশে কারাবন্দী অবস্থায় রয়েছেন। তার বিরুদ্ধে অর্থ পাচারের অভিযোগে তদন্ত করছে বাংলাদেশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। এ ছাড়া সালমান ও তার পরিবারের সদস্যদের ব্যাংক হিসাব জব্দ করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আর্থিক গোয়েন্দা বিভাগ বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)।
অনুসন্ধান অনুযায়ী, সালমানের পরিবারের সদস্যদের লন্ডনের মেফেয়ার এলাকার গ্রোসভেনর স্কয়ারে সাতটি বিলাসবহুল অ্যাপার্টমেন্টের মালিকানা বা মালিকানায় অংশীদারত্ব রয়েছে। এগুলোর বেশির ভাগই অফশোর কোম্পানির মাধ্যমে কেনা। এর মধ্যে ২০২২ সালের মার্চ মাসে ২ কোটি ৬৭ লাখ ৫০ হাজার পাউন্ডে একটি অ্যাপার্টমেন্ট কিনেছিলেন সালমানের ছেলে আহমেদ শায়ান রহমান। সেখানে ৩ কোটি ৫৫ লাখ পাউন্ডে কেনা তার একটি ফ্ল্যাটও রয়েছে। ২০২২ সালে খবর বেরিয়েছিল, লন্ডনে শায়ান রহমানের একটি বাড়িতে বিনা ভাড়ায় থাকতেন শেখ হাসিনার বোন শেখ রেহানা।
গ্রোসভেনর স্কয়ারে এবং এর কাছাকাছি এই পরিবারের আরেক সদস্য আহমেদ শাহরিয়ার রহমানের আরও চারটি সম্পত্তি রয়েছে। এর মূল্য ২ কোটি ৩০ লাখ পাউন্ড। অফশোর কোম্পানির মাধ্যমে এসব সম্পত্তি কেনা। এ বিষয়ে শায়ান রহমান ও শাহরিয়ার রহমানের আইনজীবীরা বলেছেন, মানি–লন্ডারিং আইনসহ আর্থিক বিধিবিধান পরিপূর্ণভাবে মেনেই সম্পত্তিগুলো কেনা হয়েছে।
গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাজ্যের ভূমি নিবন্ধন কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী, দেশটিতে সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী ও তার পরিবারের ৩০০টির বেশি সম্পদ রয়েছে। এগুলোর মূল্য অন্তত ১৬ কোটি পাউন্ড। সাইফুজ্জামান চৌধুরীর বৈশ্বিক সম্পত্তি নিয়ে গত সেপ্টেম্বরে ‘দ্য মিনিস্টার্স মিলিয়নস’ শিরোনামের একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করে সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরা। সেই প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিদেশে থাকা তার সম্পত্তির মূল্য আনুমানিক ৫০ কোটি মার্কিন ডলার।
বাংলাদেশে সাইফুজ্জামান চৌধুরীর ব্যাংক হিসাবও জব্দ করেছে বিএফআইইউ। তার ও তার পরিবারের সদস্যদের স্থাবর সম্পত্তি জব্দ করার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। সাইফুজ্জামান চৌধুরীর ওপর দেশত্যাগের নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে সরকার। এ ছাড়া অবৈধভাবে বিপুল পরিমাণ অর্থ অর্জনের অভিযোগে তার বিরুদ্ধে তদন্ত করছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
গার্ডিয়ান বলেছে, রাজনীতিকদের বাইরে বাংলাদেশের ধনী ও প্রভাবশালী ব্যবসায়ীদেরও যুক্তরাজ্যে সম্পত্তি রয়েছে। এর মধ্যে যুক্তরাজ্যের সারে এলাকায় বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহানের পরিবারের সদস্যদের দুটি সম্পত্তি রয়েছে। ১ কোটি ৩০ লাখ পাউন্ড দিয়ে অফশোর কোম্পানির মাধ্যমে এসব সম্পত্তি কেনা হয়েছে। এ ছাড়া এলাকাটি পরিদর্শনের সময় আহমেদ আকবর সোবহানের এক ছেলের মালিকানাধীন একটি অট্টালিকার সন্ধান পেয়েছে অবজারভার।
গত ২১ অক্টোবর আহমেদ আকবর সোবহানসহ তার পরিবারের ছয় সদস্যের ওপর দেশত্যাগের নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। এ ছাড়া তাদের ব্যাংক হিসাব জব্দ করেছে বিএফআইইউ। এ বিষয়ে গার্ডিয়ান–এর সঙ্গে কথা বলেছেন বসুন্ধরা গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান ও আহমেদ আকবর সোবহানের ছেলে সাফওয়ান সোবহান। তিনি বলেন, তাদের বিরুদ্ধে তোলা সব অভিযোগ দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করছে তার পরিবার।
এদিকে নাসা গ্রুপের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদারের বিরুদ্ধে অর্থ পাচারের অভিযোগে তদন্ত করছে সিআইডি। দেশটিতে তার সম্পত্তিও জব্দ করা হয়েছে। লন্ডনের কেনসিংটনে তিনি ও তার পরিবারের সদস্যরা কীভাবে ৩ কোটি ৮০ লাখ পাউন্ডের পাঁচটি সম্পত্তি কিনেছেন তা খতিয়ে দেখতে চায় বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। তবে নজরুল ইসলাম মজুমদারের ঘনিষ্ঠ সূত্র জানিয়েছে, অবৈধ উপায়ে এসব সম্পত্তি কেনার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন তিনি।
সংসদীয় আসনভিত্তিক নির্বাচনের পরিবর্তে সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতি চায় বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে এই প্রস্তাব দিয়েছে দলটি।
এ ছাড়া নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা পুনর্বহাল; দুবারের বেশি কোনো ব্যক্তির প্রধানমন্ত্রী বা রাষ্ট্রপতি পদে নির্বাচিত হওয়ার সুযোগ না রাখা এবং স্থানীয় সরকার নির্বাচনে রাজনৈতিক দলের মনোনয়ন ও দলীয় প্রতীক ব্যবহার পদ্ধতি বাতিল করার প্রস্তাব দিয়েছে জামায়াত।
গতকাল জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার স্বাক্ষরিত সংস্কার প্রস্তাব নির্বাচন কমিশন-ইসি সংস্কার কমিশনের কাছে জমা দেওয়া হয়। লিখিত প্রস্তাবনায় ২২টি বিষয় উল্লেখ করেছে দলটি।
সূত্র জানিয়েছে, জামায়াতের প্রস্তাবনায় বলা হয়, নির্বাচনের অংশীজন হিসেবে অবাধ, অংশগ্রহণমূলক, নিরপেক্ষ জাতীয় ও স্থানীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে তারা দলনিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতে নির্বাচন চায়।
জামায়াতের ২২ দফা সংস্কার প্রস্তাবের মধ্যে রয়েছে, নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা পুনর্বহাল করা। ইভিএম পদ্ধতি বাতিল করা। ভোটার তালিকা হতে মৃত ও ভুয়া ভোটার বাদ দিয়ে গ্রহণযোগ্য, নির্ভুল ও হালনাগাদ ভোটার তালিকা তৈরি করা। জাতীয় সংসদে অধিকতর দল ও মতের অংশগ্রহণ নিশ্চিতে আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (Proportional Representation) পদ্ধতি চালু করা। দুই বারের বেশি কোনো ব্যক্তির প্রধানমন্ত্রী বা রাষ্ট্রপতি পদে নির্বাচিত হওয়ার সুযোগ না রাখা। স্থানীয় সরকার নির্বাচনে রাজনৈতিক দলের মনোনয়ন ও দলীয় প্রতীক ব্যবহারের পদ্ধতি বাতিল করা। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী বা রাষ্ট্রীয় দায়িত্বে অধিষ্ঠিত কোনো ব্যক্তি তার চাকরি বা পদ হতে অব্যাহতি বা দায়িত্বমুক্ত হওয়ার পর তিন বছর অতিবাহিত হওয়ার পূর্বে জাতীয় সংসদ ও স্থানীয় সরকার নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার সুযোগ না রাখা। রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন আইন বাতিল করা। জাতীয় সংসদ নির্বাচনসহ অন্য কোনো নির্বাচনে নির্বাচন কমিশনের চাহিদা মোতাবেক রাষ্ট্রপতি কর্তৃক সেনাবাহিনী মোতায়েনের সুযোগ রাখা (এক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতি কর্তৃক সেনা মোতায়েনের জন্য প্রধানমন্ত্রী বা প্রধান উপদেষ্টার পরামর্শ গ্রহণের বাধ্যবাধকতা রাখা যাবে না)। নির্বাচনে মোতায়েনকৃত সেনাবাহিনীকে নির্বাচনকালীন সময়ের জন্য নির্বাচন কমিশনের অধীনে ন্যস্ত করা এবং প্রয়োজনবোধে উক্ত সেনাসদস্যদেরকে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা প্রদানের ব্যবস্থা রাখা।
রিটার্নিং অফিসার ও সহকারী রিটার্নিং অফিসার নিয়োগের ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনের নিজস্ব কর্মকর্তা বা জনবলকে প্রাধান্য দেওয়া। গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ এর ৮৯ (ক) অনুচ্ছেদে বর্ণিত ধারা মোতাবেক নির্বাচনি অপরাধ বিচারের নিমিত্তে মোবাইল কোর্ট পরিচালনার জন্য পর্যাপ্ত জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট এবং আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণকারী বাহিনীর সদস্যদের সহায়তা ও প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদানের জন্য নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ করা। নির্বাচনের ফলাফল গেজেট আকারে প্রকাশিত হওয়ার পর হাই কোর্ট বিভাগে নির্বাচন সংক্রান্ত কোনো দরখাস্ত (মামলা) দায়ের করা হলে অনূর্ধ্ব ১২ মাসের মধ্যে তা নিষ্পত্তির বিধান করা। নির্বাচনি দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট কোনো সরকারি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অসদাচরণের অভিযোগ উঠলে তদন্ত সাপেক্ষে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের ক্ষমতা নির্বাচন কমিশনের হাতে ন্যস্ত করা।
নির্বাচনকালে সরকারের সব প্রশাসনিক কার্যক্রমে নির্বাচন কমিশনের নজরদারির সুযোগ রাখা। নির্বাচনকালে ন্যূনতম ৩০ দিনের জন্য নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদেরকে নির্বাচন কমিশনের নিয়ন্ত্রণে ন্যস্ত করা। নির্বাচন কমিশনকে নির্বাচনের যে কোনো সংসদীয় আসনের নির্বাচন সম্পূর্ণ বা আংশিক বাতিল বা স্থগিত করার ক্ষমতা সংবলিত গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের ৯১ (ক) অনুচ্ছেদ পুনর্বহাল করা। ভোট গ্রহণ ও ভোট গণনাকালে নির্বাচন কমিশন কর্তৃক অনুমোদিত নিরপেক্ষ সাংবাদিক এবং দেশি-বিদেশি পর্যবেক্ষকদের উপস্থিত থাকার সুযোগ রাখা। প্রতিটি ভোট কেন্দ্রে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা। নির্বাচিত সব জনপ্রতিনিধিকে প্রতি অর্থবছরে তাদের আয়-ব্যয়ের হিসাবসহ সম্পদ বিবরণী তথা আয়কর রিটার্ন (আয়কর অফিসের রশিদসহ) এর কপি নির্বাচন কমিশনে দাখিল করার বাধ্যবাধকতা আরোপ করা। এবং সর্বশেষ, কোনো রাজনৈতিক দলের প্রার্থী মনোনয়নের ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয়ভাবে মনোনয়নের পরিবর্তে সংশ্লিষ্ট আসনের ভোটারদের মধ্য হতে ওই দলের নেতা-কর্মীদের ভোটের মাধ্যমে প্রার্থী মনোনীত করার ব্যবস্থা করা।
নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ সম্প্রসারণ করা হয়েছে এবং মন্ত্রণালয়গুলোর দায়িত্বে আনা হয়েছে বেশ কিছু রদবদল। উপদেষ্টা পরিষদে নতুন করে যুক্ত হয়েছেন তিনজন বিশিষ্ট ব্যক্তি— ব্যবসায়ী সেখ বশির উদ্দিন, চলচ্চিত্র নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী এবং প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মো. মাহফুজ আলম।
সোমবার সন্ধ্যায় বঙ্গভবনের দরবার হলে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন নতুন উপদেষ্টাদের শপথ পাঠ করান। অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসসহ অন্যান্য উপদেষ্টা, কর্মকর্তারা এবং নতুন উপদেষ্টাদের পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। ব্যবসায়ী সেখ বশির উদ্দিন আকিজ বশির গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক, এবং মোস্তফা সরয়ার ফারুকী প্রখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা। অন্যদিকে, মো. মাহফুজ আলম ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক।
উপদেষ্টা পরিষদের এই সম্প্রসারণের ফলে বর্তমানে সদস্য সংখ্যা দাঁড়ালো ২৪-এ। এছাড়া সরকারি কার্যক্রমে গতি আনতে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় এবং বিভাগের দায়িত্ব পুনর্বণ্টন করা হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টার হাতে থাকা মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, প্রতিরক্ষা, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ, এবং জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় অপরিবর্তিত রাখা হলেও খাদ্য এবং বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব কমানো হয়েছে।
এছাড়া, নতুন দায়িত্বে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তনের মধ্যে রয়েছে— সালেহউদ্দিন আহমেদ অর্থ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে এবং ড. আসিফ নজরুল আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে নিয়োজিত হয়েছেন। হাসান আরিফকে ভূমি মন্ত্রণালয় এবং বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
নতুন উপদেষ্টাদের মধ্যে সেখ বশির উদ্দিন বাণিজ্য এবং বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেয়েছেন, এবং মোস্তফা সরয়ার ফারুকী সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে নিয়োজিত হয়েছেন।
এদিকে, তিনজন বিশেষ সহকারীও নিয়োগ দেওয়া হয়েছে প্রতিমন্ত্রীর পদমর্যাদায়। খোদা বকশ চৌধুরী, ড. সায়েদুর রহমান এবং ড. এম আমিনুল ইসলামকে যথাক্রমে স্বরাষ্ট্র, স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ, এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্বাহী ক্ষমতা প্রদান করা হয়েছে।
এই রদবদল অন্তর্বর্তী সরকারের কার্যক্রমকে আরও গতিশীল করে তুলবে বলে আশা করা হচ্ছে।
ফ্রিল্যান্সিংয়ে সফল হতে হলে ধৈর্য, দক্ষতা এবং সঠিক নির্দেশনা প্রয়োজন। ফ্রিল্যান্সিং রাতারাতি আয়ের পথ নয়।
বর্তমানে বাংলাদেশের তরুণদের মাঝে ফ্রিল্যান্সিং একটি জনপ্রিয় এবং আকর্ষণীয় পেশা হিসেবে বিবেচিত। অনেকেই ফ্রিল্যান্সিংকে সহজে অনলাইনে অর্থ উপার্জনের মাধ্যম মনে করে আগ্রহী হচ্ছেন। তবে, সঠিক ধারণার অভাবে অনেকেই ভুয়া বিজ্ঞাপনের ফাঁদে পড়ে প্রতারিত হচ্ছেন।
ফ্রিল্যান্সিং কী?
ফ্রিল্যান্সিং হলো এমন একটি কাজের ধরণ যেখানে নির্দিষ্ট কোনো প্রতিষ্ঠানে স্থায়ীভাবে যুক্ত হয়ে কিংবা না হয়েও কেউ স্বাধীনভাবে কাজ করে আয় করতে পারেন। এখানে কর্মী নিজেই কাজের ধরন, সময় এবং ক্লায়েন্ট নির্বাচন করতে পারেন। জনপ্রিয় ফ্রিল্যান্সিং কাজের মধ্যে রয়েছে গ্রাফিক ডিজাইন, ওয়েব ডেভেলপমেন্ট, কন্টেন্ট রাইটিং, ডিজিটাল মার্কেটিং এবং ভিডিও এডিটিং।
ফ্রিল্যান্সিংয়ের কাজ কীভাবে পাওয়া যায়?
ফ্রিল্যান্সারদের জন্য বেশ কিছু আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্ম রয়েছে, যেমন Upwork, Freelancer, Fiverr এবং Toptal। এইসব প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে বিভিন্ন প্রজেক্টে আবেদন করে কাজ পাওয়া যায়। এছাড়া, সোশ্যাল মিডিয়া বা নিজস্ব ওয়েবসাইটের মাধ্যমে সরাসরি ক্লায়েন্টদের সঙ্গে যোগাযোগ করেও কাজ করা সম্ভব।
ভুয়া বিজ্ঞাপনের ফাঁদ থেকে সাবধান
ফ্রিল্যান্সিংয়ের জনপ্রিয়তা কাজে লাগিয়ে কিছু অসাধু ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান তরুণদের চটকদার বিজ্ঞাপন দিয়ে বিভ্রান্ত করছে। যেমন: "ফ্রিল্যান্সিং শিখে ঘরে বসে লাখ লাখ টাকা ইনকাম করুন" বা "কোনো অভিজ্ঞতা ছাড়াই হাজার ডলার আয় করুন।" বাস্তবতা হলো, ফ্রিল্যান্সিংয়ে সফল হতে হলে ধৈর্য, দক্ষতা এবং সঠিক নির্দেশনা প্রয়োজন। ফ্রিল্যান্সিং রাতারাতি আয়ের পথ নয়।
ভুয়া প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের ফাঁদ
অনেক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র কম খরচে অনেক কিছু শেখানোর প্রতিশ্রুতি দেয়, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে সেসব কোর্স তেমন সুফল দেয় না। এতে শিক্ষার্থীরা সঠিকভাবে ফ্রিল্যান্সিং শিখতে পারেন না এবং হতাশ হন। সঠিক প্রশিক্ষণ নিতে হলে প্রতিষ্ঠানটির ট্রেনিং মডিউল, প্রশিক্ষকদের অভিজ্ঞতা এবং শিক্ষার্থীদের প্রতিক্রিয়া যাচাই করা জরুরি।
যেভাবে প্রতারণা থেকে বাঁচবেন
• বিজ্ঞাপনে প্রভাবিত হবেন না: প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে যাচাই না করে কোনো বিজ্ঞাপনের উপর ভিত্তি করে সিদ্ধান্ত নেবেন না।
• বিশ্বস্ত উৎস থেকে শিখুন: যেসব প্রতিষ্ঠান সফল প্রশিক্ষণার্থীদের অভিজ্ঞতা শেয়ার করেছে, তাদের কাছে শিখুন।
• ফ্রিল্যান্সিং সম্পর্কে সঠিক ধারণা অর্জন করুন: ইউটিউব ভিডিও, ব্লগ এবং আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্ম থেকে প্রাথমিক ধারণা নিন।
• সহজ আয়ের প্রলোভনে পা দেবেন না: ফ্রিল্যান্সিং দক্ষতাভিত্তিক কাজ। সফল হতে সময়, পরিশ্রম এবং অভিজ্ঞতা প্রয়োজন।
সঠিক দিকনির্দেশনার গুরুত্ব
বাংলাদেশে ফ্রিল্যান্সিংয়ের সম্ভাবনা অত্যন্ত উজ্জ্বল। তবে সঠিক দিকনির্দেশনা ছাড়া সফলতা অর্জন কঠিন। ফ্রিল্যান্সিং শেখার জন্য যথাযথ গবেষণা করুন এবং দক্ষতা উন্নয়নের ওপর জোর দিন। ধৈর্য, সতর্কতা এবং পরিকল্পিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে ফ্রিল্যান্সিংয়ে আপনার স্বপ্ন পূরণ করা সম্ভব।
ভবিষ্যৎ আপনার হাতে, সতর্ক থাকুন এবং সঠিক পথে এগিয়ে যান।
আইন মন্ত্রণালয়ের আইন ও বিচার বিভাগের সচিবের দায়িত্ব পালন করে আসা মো. গোলাম সারওয়ারকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। তাঁকে একই বিভাগে সংযুক্ত করা হয়েছে। তাঁর স্থলে নতুন সচিবের দায়িত্ব পেয়েছেন একই বিভাগের যুগ্ম সচিব মো. গোলাম রব্বানী।
আজ রোববার পৃথক দুটি আদেশে এ সিদ্ধান্ত জানিয়েছে আইন মন্ত্রণালয়।
আইন মন্ত্রণালয় সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, আইনসচিবের দায়িত্ব পাওয়া গোলাম রব্বানী ১৯৯৪ সালে সহকারী জজ হিসেবে বিচার বিভাগে যোগদান করেন। এরপর ২০১৬ সালের ৭ জানুয়ারি জেলা ও দায়রা জজ পদে পদোন্নতি পান। তিনি বিসিএস ১৩তম ব্যাচের কর্মকর্তা। আইন ও বিচার বিভাগে যুগ্ম সচিব হিসেবে যোগদানের আগে তিনি চট্টগ্রামের জেলা ও দায়রা জজ এবং বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
শনিবার (৭ সেপ্টেম্বর) রাতে বোয়িং ৭৮৭-৮ ড্রিমলাইনার উড়োজাহাজ দিয়ে ফ্লাইটটি পরিচালিত হচ্ছিল। ফাটলটি যখন পাইলটের চোখে পড়ে তখন তিনি ওমানের আকাশে। সেখান থেকেই তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্তে আবারও দুবাইয়ে ফিরে যান তিনি।
দুবাই থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হওয়া বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি প্লেনের ককপিটের উইন্ডশিল্ডে (প্লেনের সামনের অংশের কাচ) ফাটল দেখা দেওয়ায় ফ্লাইটটি আবার দুবাই ফিরে যায়।
শনিবার (৭ সেপ্টেম্বর) রাতে বোয়িং ৭৮৭-৮ ড্রিমলাইনার উড়োজাহাজ দিয়ে ফ্লাইটটি পরিচালিত হচ্ছিল। ফাটলটি যখন পাইলটের চোখে পড়ে, তখন তিনি ওমানের আকাশে। সেখান থেকেই তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্তে আবারও দুবাইয়ে ফিরে যান তিনি।
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের জনসংযোগ বিভাগের মহাব্যবস্থাপক বোসরা ইসলাম বলেন, 'ককপিটের কাচে ফাটল দেখা দেওয়ার পর ক্যাপ্টেন প্লেনটিকে দুবাই ফেরানোর সিদ্ধান্ত নেন। যাত্রীরা বর্তমানে দুবাইয়ে আছে। তাদের দেশে ফেরাতে বিমানের একটি রেসকিউ ফ্লাইট দুবাইয়ের উদ্দেশে রওনা হয়েছে।'
বিমান বাংলাদেশ জানায়, বিমানের বিজি-৩৪৮ ফ্লাইটটি স্থানীয় সময় শনিবার ১২টায় দুবাই থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হয়। পথে ফ্লাইটের ককপিটের উইন্ডশিল্ডে ফাটল দেখা দেয়। পাইলট তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত নিয়ে দুবাই ফিরে যান।
এয়ারলাইন্স সূত্রে জানা গেছে, রেসকিউ ফ্লাইটটি ঢাকা থেকে দুপুর ১২টা ৫০ মিনিটে দুবাইয়ের উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছে। ফ্লাইটটি স্থানীয় সময় বিকেল ৫টায় দুবাই পৌঁছাবে এবং আটকে থাকা যাত্রীদের নিয়ে বাংলাদেশ সময় রাত ১০টা ৫০ মিনিটে ঢাকায় পৌঁছাবে।
এর আগে, গত ২০ জানুয়ারি সৌদি আরবের দাম্মামের উদ্দেশে রওনা হয়ে প্লেনের ককপিটের উইন্ডশিল্ডে ফাটল দেখতে পান পাইলট। তাৎক্ষণিক দিল্লির আকাশ থেকে ঢাকায় ফেরার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। তার এ সিদ্ধান্তে ফ্লাইটে থাকা মোট ২৯৭ জনকে নিয়ে অক্ষতভাবে দেশে ফিরেছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি প্লেন। বোয়িং ৭৮৭ ড্রিমলাইনার উড়োজাহাজ দিয়ে পরিচালিত হয়েছিল ওই ফ্লাইট।
দেশের ব্যাংকগুলোর প্রায় ৯৫ শতাংশ হিসাবে জমা অর্থের পরিমাণ দুই লাখ টাকার নিচে। প্রতিটি ব্যাংক হিসাবের বিপরীতে দুই লাখ টাকা পর্যন্ত আমানত বিমার আওতায় থাকে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর এসব তথ্য জানিয়ে বলেন, ব্যাংকে জমা রাখা টাকা ফেরত পাওয়া নিয়ে ক্ষুদ্র আমানতকারীদের দুশ্চিন্তার কিছু নেই। সব আমানতকারীর পাশে আছে সরকার।
বাংলাদেশ ব্যাংকে এক সংবাদ সম্মেলনে আজ রোববার গভর্নর এ কথা বলেন। এ সময় তিনি ব্যাংক খাতের জন্য আগামী ১০ দিনের মধ্যে টাস্কফোর্স গঠনের ঘোষণা দেন। তিনি বলেন, দুর্বল হয়ে পড়া ১০টি ব্যাংককে নিবিড় তদারকিতে রাখা হচ্ছে। ঘুরে দাঁড়ানোর ক্ষেত্রে তাদের সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। সফল না হলে এসব ব্যাংককে একীভূত করে দেওয়া হবে।
আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বিভিন্ন ব্যাংক থেকে নামে-বেনামে ঋণের নামে বিপুল অঙ্কের টাকা সরিয়ে নেওয়া, খেলাপি ঋণ ব্যাপকভাবে বেড়ে যাওয়া, চাপ দিয়ে ব্যাংকের পরিচালকদের সরিয়ে দেওয়া, ব্যাংকে পরিবারতন্ত্র প্রতিষ্ঠাসহ বিভিন্ন অভিযোগ ছিল। ফলে বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ওপর গ্রাহকের আস্থা কমে গিয়েছিল। অনেকেই টাকা তুলে নিচ্ছিলেন। কোনো কোনো ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান সব গ্রাহকের টাকা দিতেও পারছিল না। সরকারের কাছে দাবি ছিল ব্যাংকিং কমিশন গঠন করে ব্যাংক খাতের সংস্কার। তবে আওয়ামী লীগ সরকার তা করেনি।
ব্যাংক খাতের জন্য ১০ দিনের মধ্যে টাস্কফোর্স গঠন করা হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংক চায় সব প্রতিষ্ঠান চালু থাক। প্রতিষ্ঠানের হিসাব স্থগিত করা হয়নি।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর গত ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়। গভর্নর করা হয় পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুরকে।
বিগত এক মাসে বাংলাদেশ ব্যাংক ১০টি ব্যাংকের পর্ষদ পুনর্গঠন করেছে। তবে ব্যাংকিং কমিশন গঠিত হয়নি। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানিয়েছে, সরকার ব্যাংকিং কমিশন গঠনের বদলে টাস্কফোর্স গঠনের পথে হাঁটছে। এ ক্ষেত্রে যুক্তি হলো, কমিশন গঠন করলে সংস্কার অনেক সময়সাপেক্ষ হবে। আবার কমিশনের কোনো ক্ষমতাও থাকে না। তার বদলে একটি শক্তিশালী টাস্কফোর্স গঠনের মাধ্যমে সংস্কার করতে চায় বাংলাদেশ ব্যাংক।
আহসান এইচ মনসুর আজ সংবাদ সম্মেলনে বলেন, দুটি টাস্কফোর্স গঠন করা হবে। একটি কাজ করবে ব্যাংকিং খাত নিয়ে। আপাতত বাংলাদেশ ব্যাংক দুর্বল ১০টি ব্যাংক নিয়ে কাজ করছে। তবে পরে সব ব্যাংক নিয়েই নিরীক্ষা ও মূল্যায়ন করা হবে। এটা ধাপে ধাপে করা হবে। দ্বিতীয় টাস্কফোর্সটি হবে বাংলাদেশ ব্যাংকের কার্যক্রমকে শক্তিশালী করতে। ব্যাংক খাতে বাংলাদেশ ব্যাংকও যথাযথ তদারকি করতে পারেনি, ব্যর্থ হয়েছে। ভবিষ্যতে যেন সেটি করতে পারে, সে জন্য টাস্কফোর্স কাজ করবে। দেশি-বিদেশি সংস্থার মাধ্যমে ব্যাংকের ‘ফরেনসিক অডিট’ করা হবে।
দুর্বল হয়ে পড়া ব্যাংকগুলোর সঙ্গে প্রতিদিন সভা হচ্ছে জানিয়ে আহসান মনসুর বলেন, প্রতিদিন তাদের তদারকির ওপর রাখা হয়েছে। এসব ব্যাংক যেন আরও নিয়মের মধ্যে পরিচালিত হয়, সেই চেষ্টা চলছে। সব সমস্যা চিহ্নিত হলে প্রয়োজনে ব্যাংক আইনে পরিবর্তন আনা হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের লক্ষ্য সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা।
আমানত প্রসঙ্গ
আহসান এইচ মনসুর বলেন, ব্যাংক খাতের ওপর আস্থা বাড়ানো তাঁদের অন্যতম লক্ষ্য। এ জন্য ব্যাংকের আমানত বিমার আওতা হিসাবপ্রতি দুই লাখ টাকা করা হয়েছে। ফলে কোনো ব্যাংক দেউলিয়া হলে ৯৪ দশমিক ৬ শতাংশ ব্যক্তি ও প্রাতিষ্ঠানিক আমানতকারী পুরো টাকা ফেরত পাবেন। তিনি বলেন, পৃথিবীতে কোথাও আমানতের ওপর শতভাগ বিমা সুবিধা নেই। বাংলাদেশে বিমার ‘প্রিমিয়াম’ (নিশ্চয়তার বিপরীতে বিমা প্রতিষ্ঠানকে দেওয়া অর্থ) সবচেয়ে কম। হার শূন্য দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ। অর্থাৎ ১০০ টাকার বিপরীতে মাত্র ৮ পয়সা। ভারতে যা শূন্য দশমিক ১২ শতাংশ। পাকিস্তানে শূন্য দশমিক ১৬ শতাংশ।
আমানতকারীদের টাকা ফেরত দেওয়ার মতো সক্ষমতা ১০টি ব্যাংকের নেই উল্লেখ করে আহসান এইচ মনসুর বলেন, এসব ব্যাংকের আমানতকারীদের ধৈর্য ধরতে হবে। তাদের ঘুরে দাঁড়াতে সাহায্য করা হচ্ছে। বিফল হলে প্রয়োজনে একীভূত করে দেওয়া হবে।
সাম্প্রতিক সময়ে ব্যাংক খাতের বাইরে ৭০ হাজার কোটি টাকা চলে গিয়েছিল জানিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর বলেন, এ কারণে টাকা তোলার ওপর সীমা আরোপ করা হয়েছিল। এর মধ্যে ৩০ হাজার কোটি টাকা ব্যাংকে ফেরত এসেছে। টাকা উত্তোলনের সীমা তুলে নেওয়া হয়েছে।
আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘আমরা আশা করি কোনো ব্যাংক দেউলিয়া হবে না। অন্য দিকে আবার এটাও ঠিক কিছু ব্যাংক দেউলিয়া হয়ে আছে। কিন্তু আমরা গ্রাহকের স্বার্থ রক্ষা করব। এই ব্যাংকগুলোকে আমরা ঘুরে দাঁড়াতে সাহায্য করব এবং আশা করছি সময়ের ব্যবধানে এগুলো ঘুরে দাঁড়াবে।’ তিনি বলেন, প্রত্যেক খারাপ ঋণকে আলাদাভাবে মূল্যায়ন করা হবে। নামে–বেনামে কে এটার মালিক, সেগুলো চিহ্নিত করে দেখা হবে। কোন পরিবার থেকে এটা নেওয়া হয়েছে, তাদের কী সম্পদ রয়েছে, তা–ও বের করা হবে। এরপর সেই সম্পদের দিকে বাংলাদেশ ব্যাংকে যাবে। ওই প্রক্রিয়া চলবে, এটাই চূড়ান্ত সমাধান।
প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাব স্থগিত হয়নি
সংবাদ সম্মেলনে গভর্নর বলেন, ব্যাংক হিসাব জব্দ নিয়ে নানা অপপ্রচার হচ্ছে। বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) কোনো প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাব স্থগিত করেনি, ব্যক্তির হিসাব স্থগিত করেছে। সেটা এস আলম বা বেক্সিমকো গ্রুপ—কোনোটারই না।
আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘আমরা চাই সব প্রতিষ্ঠান চালু থাক। দেশের উৎপাদন-কর্মসংস্থান বাধাগ্রস্ত হোক, এমন কোনো উদ্যোগ কেন্দ্রীয় ব্যাংক নেবে না।’
মব জাস্টিসের ব্যাপারে সরকারের পক্ষ থেকে বারবার কঠোর বার্তা দেওয়া হচ্ছে উল্লেখ করে মাহফুজ আলম আরও বলেন, সরকার এ ব্যাপারে যথেষ্ট কঠোর। ইতোমধ্যে অনেক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। প্রয়োজন হলে আরও আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মাহফুজ আলম বলেছেন, সরকারের পক্ষ থেকে স্পষ্ট বার্তা হলো মব জাস্টিস (গণপিটুনি) এর মতো ঘটনা কোনোভাবে বরদাশত করা হবে না। কেউ অপরাধ করলে আইনানুযায়ী তার বিচার হবে। আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়ার সুযোগ নেই।
অন্তর্বর্তী সরকারের একমাস পূর্তি উপলক্ষে আজ রোববার রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে ছাত্র সংগঠক এবং বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের ছাত্র প্রতিনিধিদের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।
পরে ফরেন সার্ভিস অ্যাকাডেমিতে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মাহফুজ আলম এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, 'মব জাস্টিসের বিষয়ে সরকারের অবস্থান খুব স্পষ্ট। এ ধরনের ঘটনা কোনোভাবে হতে দেওয়া যাবে না। মাজার ও মন্দিরে হামলা বা কোনো ব্যক্তি আক্রোশের কারণে হামলায় জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'
কেউ অপরাধ করে থাকলে আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়ার সুযোগ নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'স্বৈরাচার শেখ হাসিনা সরকারের দোসর হিসেবে যারা কাজ করেছেন, জনগণ তাদের বিচার করবে না। তাদের আইনের আওতায় সোপর্দ করতে হবে। কারোর মানবাধিকার লুণ্ঠিত হোক, সেটা আমরা চাই না।'
তিনি আরও বলেন, 'আইন নিজস্ব গতিতে তাদের বিচার করবে। জনগণ শুধু এটুকু খেয়াল রাখবে, দোসররা যেন কোনোভাবে পার না পেয়ে যায়।'
মব জাস্টিসের ব্যাপারে সরকারের পক্ষ থেকে বারবার কঠোর বার্তা দেওয়া হচ্ছে উল্লেখ করে মাহফুজ আলম আরও বলেন, 'সরকার এ ব্যাপারে যথেষ্ট কঠোর। ইতোমধ্যে অনেক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। প্রয়োজন হলে আরও আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'
ধর্মভিত্তিক রাজনীতি করার বিষয়ে সরকারের কোনো দিক-নির্দেশনা আছে কি না সে বিষয়ে জানতে চাইলে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী বলেন, 'ধর্মভিত্তিক রাজনীতি করতে দেওয়া না দেওয়ার বিষয়ে সরকারের স্পষ্ট কোনো অবস্থান নেই। তবে ধর্মকে রাজনীতির হাতিয়ার বানানো যাবে না। এ বিষয়ে বাংলাদেশে একটা ঐকমত্য আছে। এমনকি ধর্মভিত্তিক রাজনীতি যারা করেন, তারাও এ ব্যাপারে একমত।'
রাজনীতিতে ধর্মের ব্যবহার এবং ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল পরিচালনা দুটি আলাদা বিষয় বলে উল্লেখ করেন তিনি।
দেশের শিক্ষাঙ্গনে ছাত্র রাজনীতি বন্ধ প্রসঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী বলেন, 'দেশের বিভিন্ন ক্যাম্পাসে ছাত্র-শিক্ষক রাজনীতি নিয়ে বিভিন্ন আলোচনা হচ্ছে। সবার মতামত নিয়ে সরকার তার অবস্থান পরিষ্কার করবে। তবে আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ যে অপরাজনীতি করেছে সেই রাজনীতি যেন ক্যাম্পাসে ফিরে না আসে, সেটা আমাদের অঙ্গীকার।'
তিনি বলেন, 'প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে শিক্ষার্থীদের আলোচনায় সরকারের তরফ থেকে হতাহতের ঘটনায় বিচারের ক্ষেত্রে কী কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, তা উঠে এসেছে। একটি ফাউন্ডেশন গঠনের কাজ দ্রুত এগিয়ে নেওয়া হচ্ছে। এর মাধ্যমে শহীদ পরিবারকে ক্ষতিপূরণ, আহত পরিবারকে পুনর্বাসন ও রাষ্ট্রীয়ভাবে সম্মানের বিষয়টি আলোচনা হয়েছে।'
দেশের বিভিন্ন জায়গায় গণহারে মামলা হচ্ছে- এক সাংবাদিকের এমন প্রশ্নের জবাবে মাহফুজ আলম বলেন, 'গণমামলা কোনোভাবে গ্রহণযোগ্য নয়। তবে প্রত্যেকটি মামলার ক্ষেত্রে যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া মেনে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা হবে।'
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, 'আহত ও নিহতের তালিকা তৈরি করতে খুব ভালোভাবে কাজ করছে সরকার। এখন পর্যন্ত ১৮ হাজার মানুষ আহত হয়েছেন বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে।'
তিনি জানান, অনেকেই পুলিশি ঝামেলার কারণে ময়নাতদন্তের প্রক্রিয়ায় যায়নি। ফলে সবার তথ্য সংগ্রহ করতে একটু বেগ পেতে হচ্ছে। অনেকেই জানাজার নামাজ তাড়াতাড়ি করেছেন পুলিশি ঝামেলার এড়াতে। প্রাথমিক একটি তালিকা হয়েছে। এখন ছাত্ররা করছেন, অনেকে ব্যক্তিগতভাবে করছেন। সবগেলো তালিকা পাওয়ার পর সমন্বিত একটি তালিকা প্রকাশ করা হবে।
হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল ব্যবহার করতে যাত্রীদের আরও অন্তত দেড় বছর অপেক্ষা করতে হবে। কেননা, বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ এখনও অত্যাধুনিক টার্মিনালটি পরিচালনার রূপরেখা তৈরি করতে পারেনি।
তৃতীয় টার্মিনালের প্রায় ৯৮ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে বলে জানিয়েছেন গত ৯ আগস্ট দায়িত্ব পাওয়া বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (সিএএবি) চেয়ারম্যান মো. মনজুর কবির ভূঁইয়া।
কাজ প্রায় শেষ হলেও আগের পরিকল্পনা অনুযায়ী অক্টোবরে যাত্রীদের জন্য টার্মিনাল চালু করা সম্ভব হবে না বলে জানান তিনি।
সিএএবির সদ্য সাবেক চেয়ারম্যান সাদিকুর রহমান চৌধুরী জানান, দেরির কারণ হচ্ছে, টার্মিনাল পরিচালনার জন্য ভেন্ডর সুপারিশ ও তাদের জন্য শর্ত নির্ধারণে যে পরামর্শক প্রতিষ্ঠানকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে তারা এখনো প্রতিবেদন জমা দেয়নি।
তৃতীয় টার্মিনালের পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণের বিষয়ে ট্রানজেকশন অ্যাডভাইসরি সার্ভিসের জন্য গত বছরের সেপ্টেম্বরে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অধীন পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ অথরিটি বিশ্বব্যাংক গ্রুপের প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স করপোরেশনের (আইএফসি) সঙ্গে চুক্তি সই করে।
ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকার সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের অধীনে একটি জাপানি কনসোর্টিয়ামের মাধ্যমে তৃতীয় টার্মিনাল পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণের নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছিল।
টার্মিনালের অপারেশনাল কার্যক্রমের জন্য জাপানি প্রতিষ্ঠানটি এবং নিরাপত্তায় সিএএবির দায়িত্ব পালনের কথা ছিল।
আইএফসির প্রতিবেদনে পরিচালনা খরচ এবং সিএএবি ও পরিচালনাকারী ভেন্ডরের মধ্যে লভ্যাংশ বণ্টনের সুপারিশ করার কথা ছিল।
সাদিকুর রহমান চৌধুরী জানান, আইএফসি প্রতিবেদন আসার পর সরকার এটি পরীক্ষা করবে এবং তারপর ভেন্ডরের সঙ্গে চুক্তি সই করবে।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, এই চুক্তি সম্পন্ন হওয়ার পর সিএএবি জনশক্তি নিয়োগ, তাদের প্রশিক্ষণ ও তৃতীয় টার্মিনালের পরীক্ষামূলক ব্যবহার শুরু করবে।
তারা জানান, ২১ হাজার ৩০০ কোটি টাকারও বেশি ব্যয়ে নির্মিত টার্মিনালটির জন্য স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং পদ্ধতি এখনও প্রণয়ন করা হয়নি।
পাঁচ লাখ ৪২ হাজার বর্গমিটারের তৃতীয় টার্মিনালটি চার শিফটে ২৪ ঘণ্টা পরিচালনার জন্য প্রায় ছয় হাজার জনবল প্রয়োজন। শুধু নিরাপত্তার জন্যই প্রায় চার হাজার জনবল প্রয়োজন হবে।
সিএএবি চেয়ারম্যান মো. মনজুর কবির ভূঁইয়া বলেন, 'যাত্রীদের জন্য টার্মিনাল খুলে দিতে আরও সময় লাগবে। কারণ, প্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগ করতে হবে, তাদের প্রশিক্ষণ দিতে হবে।'
সিএএবি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, টার্মিনালটি চালু করতে আরও অন্তত দেড় বছর সময় লাগবে।
গত বছরের ৭ অক্টোবর অত্যাধুনিক টার্মিনালটি আংশিকভাবে উদ্বোধন করেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সিএএবি ও বেসামরিক বিমান পরিবহন মন্ত্রণালয় বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ঘোষণা করে, যাত্রীরা এ বছরের অক্টোবর থেকে তৃতীয় টার্মিনালটি ব্যবহার করতে পারবেন।
কিন্তু টার্মিনালের ঠিকাদার এভিয়েশন ঢাকা কনসোর্টিয়াম (এডিসি) ৬ এপ্রিলের সময়সীমার মধ্যে প্রয়োজনীয় কাজ শেষ করতে না পারায় সিএএবি প্রথম ধাক্কা খায়।
পরবর্তীতে কাজ শেষ করতে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে আরও পাঁচ মাস সময় দেওয়া হয়।
২০১৯ সালের ২৮ ডিসেম্বর তৃতীয় টার্মিনালের নির্মাণ কাজ শুরু করে মিতসুবিশি করপোরেশনের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান এডিসি, ফুজিতা করপোরেশন এবং স্যামস্যাং সিঅ্যান্ডটি।
তৃতীয় টার্মিনালের জন্য সরকার অর্থায়ন করেছে পাঁচ হাজার কোটি টাকা। বাকি অর্থ জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি থেকে ঋণ নেওয়া হয়েছে।
তৃতীয় টার্মিনালে দুই লাখ ৩০ হাজার বর্গমিটারের ফ্লোর স্পেস, ১১৫টি চেক-ইন কাউন্টার, ৬৬টি ডিপার্চার ইমিগ্রেশন ডেস্ক, ৫৯টি এরাইভাল ইমিগ্রেশন ডেস্ক এবং তিনটি ভিআইপি ইমিগ্রেশন ডেস্ক থাকছে।
তৃতীয় টার্মিনালটি পূর্ণাঙ্গভাবে চালু হলে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের বার্ষিক যাত্রী ও পণ্য ব্যবস্থাপনা সক্ষমতা দ্বিগুণ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
♦ এক দিনেই ঢুকেছে ৫০০ অপেক্ষায় ৪০ হাজার ♦ রাখাইনের মংডুতে বেড়েছে যুদ্ধের তীব্রতা
ফের মিয়ানমার থেকে সীমান্ত পেরিয়ে এক দিনেই ৫০০ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করেছে। সীমান্তে আরও অন্তত ৪০ হাজার রোহিঙ্গা এভাবে বাংলাদেশে ঢোকার অপেক্ষায় রয়েছে। মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের মংডুতে সামরিক বাহিনীর সঙ্গে দেশটির সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির চলমান সংঘাত আরও তীব্র হওয়ায় এ প্রেক্ষাপট তৈরি হয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, শনিবার রাত ১১টার দিকে সীমান্তের ওপারে গোলার বিকট শব্দ শোনা যেতে থাকে। গতকাল ভোর পর্যন্ত এই গোলাগুলি চলেছে। টেকনাফে ক্যাম্পের কয়েকজন রোহিঙ্গা জানিয়েছেন, দুই পক্ষের গোলাগুলিতে অনেক রোহিঙ্গা মারা যাচ্ছে। এখন পাশের দেশ হিসেবে বাংলাদেশ ছাড়া তাদের যাওয়ার মতো কোনো জায়গা নেই। তাই যে কোনো সময় তারা বাংলাদেশ সীমান্তের দিকে ছুটতে পারে। কিন্তু যারা এপারে আসার জন্য আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছে, তাদের এখানে না আসতে উৎসাহিত করা হচ্ছে। টেকনাফ পৌরসভার জালিয়াপাড়ার মোজাম্মেল হক বলেন, ওপারে গোলার শব্দে রাতভর নির্ঘুম কেটেছে। শনিবার সারা রাত গোলাগুলি চলেছে। তাই আমরা রাত জেগে বসে ছিলাম। বিশেষ করে নারী ও শিশুরা ভয়ে ছিল। সীমান্তের বাসিন্দা ইমান শরীফ বলেন, ‘রাতভর মংডুতে তুমুল যুদ্ধে আমরা সীমান্তের মানুষ ঘুমাতে পারিনি। অনেকে ঘরের বাইরে রাত কাটিয়েছেন। একটু পরপরই বিকট শব্দে সীমান্ত কেঁপে কেঁপে উঠছিল। এ পরিস্থিতিতে যে কোনো মুহূর্তে সীমান্তে ব্যাপক অনুপ্রবেশ ঘটতে পারে। তবে জানা গেছে, কক্সবাজারের টেকনাফের বিভিন্ন সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে ফের রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ শুরু হয়ে গেছে। শনিবার এক দিনেই বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে ঢুকে পড়েছে প্রায় ৫০০ রোহিঙ্গা। টেকনাফ সীমান্ত এলাকার বাসিন্দারা জানান, চলমান সংঘাতের মধ্যে সীমান্তে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে, নাফ নদ পার হয়ে ফের বাংলাদেশে ঢুকে পড়ছেন রোহিঙ্গারা। পরে তারা চলে যাচ্ছেন উখিয়া-টেকনাফের বিভিন্ন রোহিঙ্গা শিবিরে। এ ছাড়া মিয়ানমারের মংডু মগনিপাড়া, সিকদারপাড়া ও আইরপাড়া এলাকায় অন্তত ৪০ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। স্থানীয়রা বলছেন, এরই মধ্যে এক মাসে ১০ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে ঢুকে পড়েছে। টেকনাফে আশ্রয় শিবিরের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা ১৬ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) সহকারী পুলিশ সুপার মাইন উদ্দিন বলেন, কিছুসংখ্যক রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরে ঢুকে পড়েছে। তাদের নজরদারিতে রাখা হচ্ছে। নতুন করে কোনো রোহিঙ্গা যেন ঢুকতে না পারে, সে ব্যাপারে আশ্রয়শিবিরে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আদনান চৌধুরী বলেন, সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের ঘটনা ঘটছে। অনুপ্রবেশের সময় বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গাকে নাফ নদী থেকে পুনরায় মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো হচ্ছে। অনুপ্রবেশ ঠেকাতে নাফ নদী ও সীমান্তে টহল জোরদার করা হয়েছে।
পররাষ্ট্র উপদেষ্টার বক্তব্য : গতকাল ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের বিষয়ে সরকারের অবস্থান জানতে চাইলে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘আমরা খুব স্পষ্ট করেই বলেছি আমরা আর একজন রোহিঙ্গাকেও আশ্রয় দিতে রাজি না। কিন্তু কিছু ঢুকে যাচ্ছে, এটা আমরা জানি। সেটাকে কতটুকু ঠেকানো যায় ঠেকানোর চেষ্টা করছি। বিজিবি প্রতিদিনই ফেরত পাঠাচ্ছে। কিন্তু তার পরেও একটা বড় এলাকা নিয়ে তারা ঢুকছে। সব এলাকাকে নিয়ন্ত্রণ করার বিষয়ে আমাদের সামর্থ্যরেও সীমাবদ্ধতা আছে। তবে আমরা যেখানে পারছি ফেরত দেওয়ার চেষ্টা করছি। উপদেষ্টা বলেন, ইউএনএইচসিআর চাইছে আমরা যেন তাদের আশ্রয় দিই। কিন্তু আমরা তাদের কাছে স্পষ্ট করেছি, আমরা ১২ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়েছি। আমাদের যেটুকু ভূমিকা নেওয়া প্রয়োজন তার চেয়ে বেশি পালন করেছি। যারা আমাদের উপদেশ দিতে চায় তারা বরং তাদেরকে নিয়ে যাক।
ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার বিলোপ ও নতুন বাংলাদেশের রাজনৈতিক বন্দোবস্ত সফল করার লক্ষ্যে আত্মপ্রকাশ করেছে জাতীয় নাগরিক কমিটি।
রবিবার (৮ সেপ্টেম্বর) বিকেল সাড়ে ৪টায় রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে ৫৫ সদস্যবিশিষ্ট একটি আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করেছে সংগঠনটি।
সংগঠনের পক্ষে কমিটি ঘোষণা করেন আহ্বায়ক মুহাম্মাদ নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী। তিনি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের লিয়াজোঁ কমিটির সদস্য। সংগঠনের সদস্য সচিব হিসেবে গণতান্ত্রিক ছাত্র শক্তির কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক আখতার হোসেন ও মুখপাত্র হিসেবে রয়েছেন সামান্তা শারমিন।
লিখিত বক্তব্যে মুখপাত্র সামান্তা বলেন, জাতীয় নাগরিক কমিটি একটি আহ্বায়ক কমিটি গঠনের মাধ্যমে কাজ শুরু করছে। অচিরেই সকল মহানগর, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের অংশগ্রহণকারী সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় নেতৃত্ব এবং বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সাথে আমরা আলোচনা করবো। তৃণমূল পর্যন্ত এ কমিটির বিস্তৃতি ঘটানোর মাধ্যমে আমরা ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের শক্তিকে সংহত করে বাংলাদেশ রাষ্ট্রকে পুনর্গঠনের লক্ষ্যে কাজ করে যাব।
অনুষ্ঠানে আহ্বায়ক কমিটির কিছু প্রাথমিক কাজ ঘোষণা করা হয়েছে। তা হলো- ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে প্রতিফলিত হওয়া সামষ্টিক অভিপ্রায় ও গণতান্ত্রিক আকাঙ্ক্ষাকে সমুন্নত রাখা; ছাত্র-জনতার ওপর সংঘটিত নির্মম হত্যাযজ্ঞে জড়িতদের বিচারের আওতায় এনে শাস্তি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় কর্মসূচি গ্রহণ;
রাষ্ট্রের জরুরি সংস্কার ও পুনর্গঠন করার লক্ষ্যে অন্তর্বর্তী সরকারকে সহযোগিতা ও জবাবদিহিতার পরিসর তৈরি; বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক উদ্যোগের সাথে আলোচনা, মত বিনিময় ও গণমুখী কর্মসূচির মাধ্যমে সর্বস্তরের জনতাকে সংহত করার লক্ষ্যে কাজ করা; দেশের সর্বস্তরের সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় নেতৃত্বকে সংহত করে গণ-অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা সমুন্নত করে রাখার লক্ষ্যে ফ্যাসিবাদী কাঠামো ও শক্তির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ অব্যাহত রাখা; জনস্বার্থের পক্ষে নীতি নির্ধারণের লক্ষ্যে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ এবং প্রবাসী বাংলাদেশিদের সাথে বিষয়ভিত্তিক সংলাপের আয়োজন করা; রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানসমূহ পুনর্গঠনের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় নীতি নির্ধারণী প্রস্তাবনা তৈরি ও সেটা বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় রাজনৈতিক পদক্ষেপ গ্রহণ ও গণপরিষদ গঠন করে গণভোটের মাধ্যমে নতুন গণতান্ত্রিক সংবিধান তৈরির জন্য গণ-আলোচনার আয়োজন করা।
জাতীয় নাগরিক কমিটির অন্যান্য সদস্যরা হলেন- আরিফুল ইসলাম আদীব, সাইফ মোস্তাফিজ, মনিরা শারমিন, নাহিদা সারোয়ার চৌধুরি, সারোয়ার তুষার, মুতাসিম বিল্লাহ, আশরাফ উদ্দিন মাহদি, আলাউদ্দিন মোহাম্মদ, অনিক রায়, জাবেদ রাসিন, মো. নিজাম উদ্দিন, সাবহানাজ রশীদ দিয়া, প্রাঞ্জল কস্তা, মঈনুল ইসলাম তুহিন, আব্দুল্লাহ আল আমিন, হুযাইফা ইবনে ওমর, শ্রবণা শফিক দীপ্তি, সায়ক চাকমা, সানজিদা রহমান তুলি, আবু রায়হান খান, মাহমুদা আলম মিতু, অলিক মৃ, সাগুফতা বুশরা মিশমা, সৈয়দ হাসান ইমতিয়াজ, তাসনিম জারা, মোহাম্মদ মিরাজ মিয়া, মো. আজহার উদ্দিন অনিক, মো. মেসবাহ কামাল, আতাউল্লাহ, এস. এম. শাহরিয়ার, মানজুর-আল- মতিন, প্রীতম দাশ, তাজনূভা জাবীন, অর্পিতা শ্যামা দেব, মাজহারুল ইসলাম ফকির, সালেহ উদ্দিন সিফাত, মুশফিক উস সালেহীন, তাহসীন রিয়াজ, হাসান আলী খান, মো. আব্দুল আহাদ, ফয়সাল মাহমুদ শান্ত, মশিউর রহমান, আতিক মুজাহিদ, আবদুল্ল্যাহ আল মামুন ফয়সাল, মো. ফারহাদ আলম ভূঁইয়া, তানজিল মাহমুদ, এস.এম. সুজা, মো. আরিফুর রাহমান, কানেতা ইয়া লাম লাম, সৈয়দা আক্তার, স্বর্ণা আক্তার, সালমান মুহাম্মাদ মুক্তাদির, আকরাম হুসেইন।
ফরেন সার্ভিস অ্যাকাডেমিতে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মাহফুজ আলম সাংবাদিকদের জানান, শিক্ষার্থীদের এক প্রশ্নের জবাবে বাংলাদেশ-ভারতের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের বিষয়ে বর্তমান সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরেছেন ড. ইউনূস।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেছেন, 'ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সুসম্পর্ক দরকার। কিন্তু সেই সম্পর্ক হবে ন্যায্যতা ও সমতার ভিত্তিতে।'
আজ রোববার রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে ছাত্র সংগঠক ও বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের ছাত্র প্রতিনিধিদের সঙ্গে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় তিনি এ কথা বলেন।
ড. ইউনূস প্রতিবেশী দেশটির সঙ্গে পারস্পরিক সমান সম্মান এবং ন্যায্যতার ভিত্তিতে সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেন।
পরে ফরেন সার্ভিস অ্যাকাডেমিতে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মাহফুজ আলম সাংবাদিকদের জানান, শিক্ষার্থীদের এক প্রশ্নের জবাবে বাংলাদেশ-ভারতের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের বিষয়ে বর্তমান সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরেছেন ড. ইউনূস।
প্রধান উপদেষ্টা দক্ষিণ এশিয়ায় আঞ্চলিক সহযোগিতা বাড়াতে সার্ক পুনরুজ্জীবিত করার বিষয়ে বলেছেন, এ বিষয়ে বাংলাদেশ সরকার কাজ করতে আগ্রহী।
উল্লেখ্য, ছাত্র-জনতার তীব্র আন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে ভারতে চলে যান। গত ৮ আগস্ট শান্তিতে নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার শপথ নেয়।
সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীর যুক্তরাজ্যে হাজার হাজার কোটি টাকার সম্পদ থাকার বিষয়ে তদন্ত শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
এসব সম্পদের অর্থ পাচার করা হয়েছে, এমন তথ্যের ভিত্তিতে অনুসন্ধান করছে সংস্থাটি। বৈধভাবে এসব সম্পদ অর্জিত হয়েছে কিনা আর হয়ে থাকলে তার প্রকৃত কর পরিশোধ করা হয়েছে কিনা সেই বিষয়টিও অনুসন্ধানে সামনে এসেছে। তদন্তে সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাভেদ ও তার স্ত্রী-সন্তানের নামে যুক্তরাজ্যে ২৬০টি বিলাসবহুল বাড়ির সন্ধান মিলেছে। এর মধ্যে ১৫৫টি বাড়ি রয়েছে রাজধানী লন্ডনে। এ ছাড়া লিভারপুলে রয়েছে ৩০টি আর বাকিগুলো অন্যান্য বড় শহরে। ব্রিটেনের বর্তমান বাজারমূল্যে বাড়িগুলোর মূল্য প্রায় দুই হাজার ৫০০ কোটি টাকা।
সাইফুজ্জামান চৌধুরী ২০১০-২০২১ সাল পর্যন্ত এসব সম্পদের মালিকানা অর্জন করেন। এ ছাড়া তাদের নামে দুবাইয়ে বাড়ি ও ফ্ল্যাট কেনার তথ্য পাওয়া গেছে। সাইফুজ্জামান চৌধুরী ও তার স্ত্রী-সন্তানের নামে দেশে-বিদেশে থাকা স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ অর্জনের বিষয়ে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর অনুসন্ধানে নামার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন দুদকের তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা। তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ খবর জানা গেছে।
বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) সাইফুজ্জামান চৌধুরী, তার স্ত্রী-সন্তানের নামে থাকা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাব স্থগিত করতে ব্যাংকগুলোকে নির্দেশ দিয়েছে। এসব হিসাবে আগামী ৩০ দিন কোনো লেনদেন করা যাবে না। এমনকি তাদের নামে থাকা ক্রেডিট কার্ডেও কোনো লেনদেন হবে না।
দুর্নীতি তদন্ত কমিশনের আমলে নেওয়া অভিযোগের তদন্তে জানা গেছে, যুক্তরাজ্যের কোম্পানি হাউজ তথ্যমতে, সাইফুজ্জামান চৌধুরী ২৬০টি প্রপার্টি কিনতে ব্যয় করেছেন প্রায় ১৩৫ মিলিয়ন ব্রিটিশ পাউন্ড, যা বাংলদেশী মুদ্রায় প্রায় এক হাজার ৮৮৮ কোটি টাকা। তার মধ্যে ১৭৯টি বাড়ি ও ফ্ল্যাট জেডটিএস প্রপার্টিজের আওতায় রয়েছে।
জেডটিএস প্রপার্টিজের একক মালিক সাইফুজ্জামান চৌধুরী। আর বাকি বাড়িগুলো প্রতিমন্ত্রীর অন্যান্য প্রপার্টিজ কোম্পানির আওতায়। এর মধ্যে সবচেয়ে দামী বাড়িটি রয়েছে লন্ডনে। বর্তমানে এই বাড়ির দাম ১৩ মিলিয়ন পাউন্ড, যা বাংলাদেশী মুদ্রায় প্রায় ১৮২ কোটি টাকা। এটি তিনি ২০২১ সালের ১৬ জুলাই এককালীন মূল্য পরিশোধের মাধ্যমে কিনেছেন।
যুক্তরাজ্য সরকারের কোম্পানি হাউজের তথ্য থেকে দেখা যায়, সাইফুজ্জামান চৌধুরীর আটটি প্রপার্টিজ কোম্পানি রয়েছে। এসব কোম্পানি ২০১০ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে খোলা হয়েছে। এর মধ্যে কয়েকটি কোম্পানি তার একক মালিকানাধীন ও কয়েকটিতে তার পরিবারের সদস্যদের শেয়ারহোল্ডার হিসেবে রাখা হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নথিপত্র পর্যালোচনায় দেখা গেছে, সংযুক্ত আরব আমিরাতে ২০১৪ সালে র্যাপিড র্যাপ্টর এফজিই এবং ২০১৫ সালে জেবা ট্রেডিং এফজিই নামে দুটি কোম্পানি খোলেন সাইফুজ্জামান চৌধুরী। এর মধ্যে একটি কম্পিউটার ও সফটওয়্যার ব্যবসা এবং আরেকটি ভবন নির্মাণসামগ্রী বিক্রির ব্যবসা।
সাইফুজ্জামান চৌধুরীর দুবাই ইসলামিক ব্যাংক, ফার্স্ট আবুধাবি ব্যাংক ও জনতা ব্যাংকের দুবাই শাখায় অ্যাকাউন্ট রয়েছে। এসব হিসাবে ৩৯ হাজার ৫৮৩ দিরহাম এবং ছয় হাজার ৬৭০ ডলার জমা রয়েছে। সাইফুজ্জামান চৌধুরী ২০১৭ সাল থেকে চলতি বছরের জুলাই পর্যন্ত দুবাইয়ে ২২৬টি স্থাবর সম্পত্তি কেনাবেচা করেছেন। এ ছাড়া তার স্ত্রী রুখমিলা জামানের নামে ২০২৩ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর এবং ৩০ নভেম্বর দুবাইয়ের আল-বারশা সাউথ-থার্ড এলাকায় ২২ লাখ ৫০ হাজার ৩৬৯ দিরহাম দিয়ে দুটি বাড়ি কেনা হয়; যা বাংলাদেশী মুদ্রায় সাড়ে সাত কোটি টাকা।
সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী ও তার স্ত্রীর মিলে বিদেশী অন্তত ছয়টি কোম্পানি পরিচালনা করছেন বলে তথ্য দেওয়া হয়। যেগুলোর মূল্য ১৬.৬৪ কোটি পাউন্ড বা দুই হাজার ৩১২ কোটি টাকা বলে জানানো হয়। যুক্তরাজ্য সরকারের ওয়েবসাইটে গিয়ে সাইফুজ্জামান চৌধুরীর নামে অন্তত ছয়টি কোম্পানি পাওয়া যায় যার সবই আবাসন ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত। এগুলো হচ্ছে, জেডটিজেড প্রোপার্টি ভেনচার্স লিমিটেড, আরামিট প্রোপার্টিজ লিমিটেড, রুখমিলা প্রোপার্টিজ লিমিটেড, সাদাকাত প্রোপার্টিজ লিমিটেড, জেবা প্রোপার্টিজ লিমিটেড এবং জারিয়া প্রোপার্টিজ লিমিটেড। এসব কোম্পানিরই পরিচালকের দায়িত্বে রয়েছেন তিনি। এর মধ্যে শুধু রুখমিলা প্রোপার্টিজ লিমিটেডের পরিচালক পদ থেকে তিনি সরে দাঁড়িয়েছেন বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এই কোম্পানিটির ঠিকানা লন্ডনের ওয়ারউইক লেন। বাকি সব কোম্পানির ঠিকানা লন্ডনের ডেভনশায়ারস্কয়ার উল্লেখ করা হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক আন্তর্জাতিক অর্থ বিষয়ক সংবাদ সংস্থা ব্লুমবার্গের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাজ্যে সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামানের দুই হাজার ৭০০ কোটি টাকার ‘সাম্রাজ্য’।
ব্লুমবার্গ বলছে, ওই সম্পত্তির মালিক বাংলাদেশের একজন রাজনীতিক (সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী)। বাংলাদেশের কোনো নাগরিক, বাসিন্দা কিংবা সরকারি কর্মচারীর বছরে ১২ হাজার ডলারের বেশি দেশের বাইরে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ রয়েছে। এর অধীনে করপোরেশনগুলোর ক্ষেত্রেও বিদেশে তহবিল স্থানান্তরে বিধিনিষেধ রয়েছে। শুধুমাত্র নির্দিষ্ট কিছু শর্তপূরণ সাপেক্ষে এ অনুমতি (তহবিল স্থানান্তর) দেওয়া হয় বলে জানিয়েছে ব্লুমবার্গ।
প্রতিবেদনে বলা হয়, সাইফুজ্জামান চৌধুরী ২০২৪ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত পাঁচ বছর ভূমিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৬ সাল থেকে তার মালিকানাধীন কোম্পানিগুলো প্রায় ২০০ মিলিয়ন পাউন্ড বা দুই হাজার ৭০০ কোটি টাকার বেশি মূল্যের ৩৫০টিরও বেশি সম্পত্তির রিয়েল এস্টেট সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছেন যুক্তরাজ্যে। যুক্তরাজ্যে কোম্পানি হাউসের করপোরেট অ্যাকাউন্ট, বন্ধকি চার্জ এবং এইচএম ল্যান্ড রেজিস্ট্রি লেনদেনের ওপর ভিত্তি করে ব্লুমবার্গের বিশ্লেষণে এই পরিসংখ্যান তৈরি করা হয়েছে।
সাইফুজ্জামান চৌধুরীর সম্পত্তির মধ্যে রয়েছে সেন্ট্রাল লন্ডনের বিলাসবহুল অ্যাপার্টমেন্ট থেকে শুরু করে টাওয়ার হ্যামলেটসে আবাসন; যেখানে ইংল্যান্ডের বৃহত্তম বাংলাদেশী কমিউনিটির আবাসস্থল এবং লিভারপুলে শিক্ষার্থীদের জন্য আবাসিক ভবন। যুক্তরাজ্যে সাইফুজ্জামানের আড়াইশ’ সম্পত্তির তথ্য বিশ্লেষণ করে ব্লুমবার্গ বলছে, যখন এসব সম্পত্তি কেনা হয় তখন যুক্তরাজ্যজুড়ে তীব্র আবাসন সংকট চলছিল এবং এর ৯০ ভাগই ছিল সদ্য তৈরি অর্থাৎ নতুন বাড়ি।
ব্লুমবার্গের প্রতিবেদনে বলা হয়, গত ডিসেম্বরে প্রাক-নির্বাচনী ঘোষণায় সাইফুজ্জামান তার মোট সম্পদের পরিমাণ ২৫৮ দশমিক ৩ মিলিয়ন টাকা (দুই দশমিক চার মিলিয়ন ডলার) এবং তার স্ত্রী রুখমিলা জামানের মোট সম্পদের পরিমাণ ৯ লাখ ৯৩ হাজার ডলার বলে জানান। কিন্তু তিনি বাংলাদেশে সম্পদের ঘোষণাপত্রে তার যুক্তরাজ্যের সম্পদের পরিমাণ দেখাননি। মন্ত্রী হিসেবে ২০২২-২৩ সালে তার বেতন প্রায় ১০ হাজার পাউন্ড হিসাবে দেখানো হয়।
ব্লুমবার্গের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে বসবাসরত অবস্থায় একজন ব্যক্তির বিদেশে সম্পদ অর্জনের কোনো বিধান নেই। সাধারণ নিয়ম অনুযায়ী, কোনো ব্যক্তিকে এ ধরনের কিছু করার অনুমতি দেওয়া হয় না। যুক্তরাজ্যের ২০১৭ সালের অ্যান্টি-মানিলন্ডারিং আইনে সংজ্ঞায়িত ‘পলিটিক্যালি এক্সপোজড পারসন (পিইপি)’ ক্যাটাগরিতে পড়েন সাইফুজ্জামান।
এটি যুক্তরাজ্যে ব্যবসায়িক লেনদেনের সঙ্গে জড়িত সম্পত্তির এজেন্ট, ঋণদাতা, প্রপার্টি আইনজীবী এবং অন্যদের ওপর পিইপি শনাক্ত করার কাজ করে। এসব ব্যক্তি সম্পত্তি কেনার মতো ব্যবসায়িক লেনদেনে নিযুক্ত থাকলে তাদের সম্পৃক্ততা অতিরিক্ত তদন্তের দাবি রাখে।
২০২২ সালে উত্তর-পশ্চিম লন্ডনের এক আবাসিক এলাকায় একটি সম্পত্তি বিক্রি হয় এক কোটি ১০ লাখ পাউন্ডে। সর্বশেষ যার দাম বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় এক কোটি ৩৮ লাখ পাউন্ড। রিজেন্টস পার্ক এবং লর্ডস ক্রিকেট গ্রাউন্ড থেকে খুব কাছেই যুক্তরাজ্যের রাজধানীর সবচেয়ে সমৃদ্ধ এলাকাগুলোর একটিতে অবস্থিত ওই সম্পত্তি, যেখানে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে আছে অভিজাত বেশ কিছু সাদা রঙের বাড়ি।
ব্লুমবার্গের বিশ্লেষণ অনুসারে, সাইফুজ্জামান চৌধুরী এবং তার কিছু আত্মীয় সরাসরি বা সহায়ক সংস্থার মাধ্যমে এক ডজনের বেশি কোম্পানির ব্যক্তিগত শেয়ারে সংখ্যাগরিষ্ঠ বা নিয়ন্ত্রণকারী অংশীদারিত্বের মালিক। এই পোর্টফোলিওতে চারটি পাবলিক কোম্পানি রয়েছে, তাদের মধ্যে আরামিট এবং ইউসিবির সম্মিলিত বাজার মূলধন প্রায় ২০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।
ব্লুমবার্গ বলেছে, দুর্নীতি মামলার সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তি এবং তাদের সম্পদ বিশ্লেষণের ভিত্তিতে ২০১৬ সাল থেকে যুক্তরাজ্যের আশপাশে সম্পত্তিতে বিনিয়োগ করা ৬ দশমিক ৭ বিলিয়ন পাউন্ড মূল্যের ‘সন্দেহজনক তহবিল’ শনাক্ত করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল।
গত বছরের ২৬ ডিসেম্বর এক সংবাদ সম্মেলনে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) একজন মন্ত্রীর বিদেশে ২০৩ বিলিয়ন টাকার ব্যবসার বিষয়টি প্রথমবারের মতো সামনে আনে। যদিও টিআইবি কোনো মন্ত্রীর নাম প্রকাশ করেনি। তবে তারা বলেছে, কোনো সরকারি কর্তৃপক্ষ যদি তথ্য চায়, তাহলে তারা এর প্রমাণ দিতে প্রস্তুত।
দুর্নীতি তদন্ত সংস্থার এক কর্মকর্তা বলেছেন, রাজনীতিবিদদের সম্পৃক্ততা আছে এমন লেনদেন যাচাইয়ের ক্ষেত্রে যুক্তরাজ্যের আইন আদৌ কার্যকর কি না, সাইফুজ্জামান চৌধুরীর এসব সম্পত্তির কারণে সেই প্রশ্নও উঠতে পারে। এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের ম্যানহাটনেও সাইফুজ্জামানের অন্তত পাঁচটি সম্পত্তি খুঁজে পেয়েছে ব্লুমবার্গ। মিউনিসিপ্যাল প্রপার্টি রেকর্ডসের বরাত দিয়ে বলা হচ্ছে, প্রায় ৬০ লাখ ডলার দিয়ে ২০১৮ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে এসব সম্পত্তি কেনা হয়েছে।
গত ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে সংসদ সদস্য হিসেবে পুনর্নির্বাচিত হন সাইফুজ্জামান চৌধুরী। মন্ত্রিসভায় পদ হারালেও সংসদীয় জমি সংক্রান্ত কমিটির সভাপতির পদে বহাল থাকেন তিনি। সাইফুজ্জামান চৌধুরী তার বাবা, প্রয়াত আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবুর স্থলাভিষিক্ত হয়ে ২০১৩ সালে রাজনীতিতে পা রাখেন। এর এক বছর পর ভূমি প্রতিমন্ত্রী নিযুক্ত হওয়ার পর নির্মাণ কোম্পানি আরামিট পিএলসি এবং ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক পিএলসির বড় পদ থেকে পদত্যাগ করেন তিনি। সাইফুজ্জামান চৌধুরীর স্ত্রী ইউসিবির চেয়ারম্যান, যেটি ছয় বিলিয়ন ডলারের বেশি সম্পদ পরিচালনা করে। আরামিটের ব্যবস্থাপনা পরিচালকও রুখমিলা জামান।
দুদকের তদন্ত সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বলেছেন, বাংলাদেশ থেকে বিদেশে টাকা নেওয়া জটিল প্রক্রিয়া হলেও ভূমিমন্ত্রী কিভাবে বিদেশে এত সম্পদ গড়ে তুলেছেন সেটি নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠছে। তবে ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী সম্প্রতি তার নির্বাচনী এলাকায় এক জনসভায় দাবি করেছেন, তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি প্রমাণ করতে পারলে রাজনীতি ছেড়ে দেবেন তিনি। মন্ত্রী বৈধ নাকি অবৈধ উপায়ে এ অর্থ আয় করেছেন সেটি নিয়ে কেউ কেউ প্রশ্ন তুলছেন। সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হচ্ছে, বিদেশে তিনি এত টাকা নিয়ে গেলেন কিভাবে?
গত বছরের ২৬ ডিসেম্বর টিআইবি এক সংবাদ সম্মেলনে জানায়, এক মন্ত্রীর বিদেশে দুই হাজার ৩১২ কোটি টাকার ব্যবসা রয়েছে। তবে তিনি নির্বাচনী হলফনামায় এ তথ্য দেননি। ওই সংবাদ সম্মেলনে টিআইবি ওই মন্ত্রীর নাম প্রকাশ করেনি।
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান গণমাধ্যমে বলেছেন, রিয়েল এস্টেট খাত, যে ক্ষেত্রে এই ইনভেস্টমেন্টগুলো, এটার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক এখনো কোনো অনুমোদন দেয়নি।
সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীর মোবাইল ফোনে এ বিষয়ে কথা বলার জন্য জন্য যোগাযোগ করা হলে তার ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়। তবে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে এ বিষয়ে সংবাদ প্রকাশিত হলে চট্টগ্রামের আনোয়ারায় এক নির্বাচনী জনসভায় ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী বলেন, তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি প্রমাণ করতে পারলে রাজনীতি ছেড়ে দেবেন তিনি।
শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর দেশের বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠছে, যাদের তৎকালীন সরকারের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল।
এদের মধ্যে এস আলম গ্রুপ, বেক্সিমকো গ্রপ, বসুন্ধরা গ্রুপ, নাসা গ্রুপসহ আরো কয়েকটি বড় ব্যবসায়িক গোষ্ঠীর নাম বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে আলোচিত হচ্ছে। অভিযোগ উঠেছে, এসব ব্যাবসায়িক গোষ্ঠী শেখ হাসিনা সরকারের সাথে আঁতাতের মাধ্যমে তাদের ব্যবসা সম্প্রসারিত করেছেন। একই সাথে আর্থিক অনিয়ম ও দুর্নীতির জোরালো অভিযোগও উঠেছে।
এমন প্রেক্ষাপটে বেক্সিমকো গ্রুপের সব প্রতিষ্ঠান দেখাশোনা করতে কেন রিসিভার নিয়োগ করা হবে না তা জানতে চেয়েছে হাইকোর্ট। একটি রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত এ নির্দেশনা দেয়।
ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল রেদওয়ান আহমেদ রানজীব বলেন, বেক্সিমকো গ্রুপের সব প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে যাবতীয় তথ্য দিতে এবং বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে বেক্সিমকো গ্রুপের নেওয়া কী পরিমাণ ঋণ বকেয়া আছে তা বাংলাদেশ ব্যাংককে জানাতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়েছে আদালত।
বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক সায়েম সোবহান আনভীরসহ স্বার্থ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে অর্থপাচারের অভিযোগ অনুসন্ধান করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সিআইডি।
সিআইডি জানিয়েছে, বসুন্ধরা গ্রুপের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে প্রতারণা, জালিয়াতি, শুল্ক ফাঁকি, ভ্যাট ফাঁকি, আন্ডার ইনভয়েসিং/ওভার ইনভয়েসিং করে হাজার হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ ও পাচার সংক্রান্ত অভিযোগের প্রেক্ষিতে মানিলন্ডারিং অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সিআইডি।
প্রশ্ন হচ্ছে, কোনও ব্যাবসায়িক প্রতিষ্ঠানে যখন রিসিভার নিয়োগ করা হয়, তখন তাদের ভূমিকা কী থাকে? এছাড়া, দুর্নীতির মাধ্যমে যদি ব্যবসা সম্প্রসারণ করা হয় তাহলে আইনগতভাবে কী পদক্ষেপ নেয়া যায়?
রিসিভারের কাজ কী?
হাইকোর্টের আইনজীবী শিহাব উদ্দিন খান বলেন, যদি কোনও প্রতিষ্ঠান পরিচালনার অযোগ্য হয়ে যায় বা পরিচালনার মতো অবস্থা না থাকে সেক্ষেত্রে রিসিভার বা তত্ত্বাবধায়ক নিয়োগ করা হয়। এই রিসিভার অন্তর্বর্তীকালীন সময়ে দেখাশোনা করবেন।
এই কাজটি সরকার তার নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে করতে পারে কিংবা আদালতের আদেশের মাধ্যমেও হতে পারে।
মি. খান বলেন, একজন মালিক যেভাবে প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করেন, রিসিভারও ঠিক সেভাবে পরিচালনা করার ক্ষমতা পায়। তিনি কোম্পানির সব হিসেব-নিকেশ এবং ব্যবস্থাপনার যাবতীয় দেখাশোনা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে থাকেন।
বাংলাদেশে আদালতের মাধ্যমে রিসিভার নিয়োগের ঘটনা অতীতে বিভিন্ন সময় দেখা গেছে। ইভ্যালির ক্ষেত্রেও হাইকোর্ট থেকে রিসিভার নিয়োগ করে দেওয়া হয়েছিল।
তিনি বলেন, বেক্সিমকো গ্রুপের মালিকের বিরুদ্ধে যেহেতু নানাবিধ অভিযোগ রয়েছে সেক্ষেত্রে রিসিভার নিয়োগ না করা হলে প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে অর্থ লোপাট হতে পারে।
যদি কোম্পানির মালিকদের মধ্যে দ্বন্দ্ব তৈরি হয়, এবং কোন একটি পক্ষ যদি আদালতের শরণাপন্ন হয় তাহলে রিসিভার নিয়োগ হতে পারে।
রাষ্ট্র কী করতে পারে?
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী আহসানুল করিম বলেন, কোম্পানি দুর্নীতি করতে পারে না, দুর্নীতি করে মানুষ। অভিযোগের ভিত্তিতে দুর্নীতি প্রমাণিত হয় না, দুর্নীতি আদালতে প্রমাণ করতে হয়।
২০০৭ সালে সেনা-সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলের উদাহরণ দিয়ে মি. করীম বলেন, তখন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে দুর্নীতিগ্রস্ত হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আদালতের মাধ্যমে কিছু প্রমাণ করা সম্ভব হয়নি।
"অনেক কোম্পানির পাবলিক শেয়ার থাকে, প্রচুর মানুষের অংশগ্রহণ থাকে, কিছু মানুষের জন্য যখন কোম্পানিগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়, সাধারণ গ্রাহকরা তখন খুব ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাই, কোম্পানিগুলোকে চলতে দিতে হবে," বলেন মি. করীম।
তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, ইভ্যালির প্রতারণার জন্য দুইজনকে জেলে নেওয়া হয়েছে। কিন্তু ইভ্যালিকে বন্ধ করা হয়নি বলে গ্রাহকরা এখন কিছু কিছু টাকা পাচ্ছে।
তিনি বলেন, একটি কোম্পানিতে মালিকের সংখ্যা একাধিক থাকতে পারে। যার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ আদালতে প্রমাণিত হবে, সেই ব্যক্তির মালিকানার অংশটুকু আদালত বাজেয়াপ্ত করে। সেক্ষেত্রে বাজেয়াপ্ত করা সম্পদ রাষ্ট্রের অধীনে চলে যায়।
কোম্পানির মালিকদের অপরাধের ধরণ অনুযায়ী মামলা কিংবা সাজার বিধান রয়েছে দেশের আইনে। আইনজীবীরা বলছেন সব অপরাধের ক্ষেত্রে সম্পদ বাজেয়াপ্ত হয় না। এক্ষেত্রে জেল জরিমানার বিধানও আইনে রয়েছে বলে আইনজীবীরা উল্লেখ করেন।
তদন্ত প্রক্রিয়া কী?
আইনজীবীরা বলছেন, কোন প্রতিষ্ঠানে দুর্নীতি হয়েছে কী না সেটি নির্ণয় করার জন্য বিভিন্নভাবে তদন্ত হতে পারে।
দুর্নীতির মাধ্যমে ব্যবসা সম্প্রসারণ, কর ফাঁকি, বিদেশে অর্থ পাচার – এসব বিষয় নিয়ে সাধারণত কোম্পানির বিরুদ্ধে তদন্ত হয়।
"আমাদের দেশের দুর্নীতি লব্ধ সম্পদ তদন্ত করার একক এখতিয়ার দুদকের। ব্যক্তির কাছে দুর্নীতির তথ্য থাকলে তিনি দুদককে জানাতে পারেন। কিন্তু নিজ উদ্যোগে কেউ কিছু করতে পারে না। দুদক অভিযোগ না নিলে স্পেশাল কোর্টে অভিযোগ দায়ের করতে পারে," বলেন শিহাব উদ্দিন খান।
দুর্নীতি দমন কমিশন যখন কোন দুর্নীতির মামলা করে সেখানে তারা কিছু প্রক্রিয়া অনুসরণ করে।
দুদকে মামলা হওয়ার প্রাথমিক প্রক্রিয়া হল, প্রাথমিক তথ্য অনুসন্ধান করা, দুদক আইন অনুযায়ী প্রমাণ পেলে নিয়মিত মামলা দায়ের করেন। দুদকের মামলা স্পেশাল আদালতে যায়, সেখানে ফাইনাল রিপোর্ট দাখিল হয়, পরে বিচারপ্রক্রিয়া শুরু হয়।
"আমাদের ট্র্যাডিশনাল ফৌজদারি ব্যবস্থায় একটি দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়ার ভোগান্তি তো আছেই। ভুক্তভোগী সবাই। কিন্তু দুদকের যেহেতু এ সংক্রান্ত অপরাধ বিচারের একক এখতিয়ার, তাদের এর বাইরে অন্য কাজ নাই; সেক্ষেত্রে ওনারা প্রাথমিক তদন্ত দ্রুত করলে আদালতে দ্রুত প্রতিবেদন দাখিল করতে পারে। তখন এটি দ্রুত করা সম্ভব," বলেন মি. খান।
কিন্তু যেহেতু এটা সম্পদের বিষয়, অনেক প্রমাণের বিষয়, কিছুটা সময় দরকার বলে তিনি মনে করেন।
ঢাকায় শেখ হাসিনা সরকারের পতন ও প্রধানমন্ত্রীর দেশ ছাড়ার ঠিক দিন ১৫ আগের কথা। বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্ট বিতর্কিত কোটা পদ্ধতি বাতিল করার ঠিক পরদিন দিল্লিতে প্রথম সারির জাতীয় দৈনিক ‘টাইমস অব ইন্ডিয়া’র সম্পাদকীয়র শিরোনাম ছিল ‘ডিসটার্বিং ইন ঢাকা’।
ওই সম্পাদকীয়তে আরও লেখা হয়েছিল, “কোটা বিরোধী আন্দোলনকে ঘিরে যে সহিংসতা দেখা যাচ্ছে, তা আওয়ামী লীগের কর্তৃত্ববাদী ও স্বৈরাচারী রাজনীতিরই উপসর্গ। ভারতের এখন সময় এসেছে হাসিনার পর কী, তা নিয়ে ভাবার!” ('ইন্ডিয়া মাস্ট থিংক বিয়ন্ড হাসিনা')।
বিগত দেড় দশক ধরে ভারতের বাংলাদেশ নীতি আর শেখ হাসিনা যেভাবে প্রায় সমার্থক হয়ে উঠেছিল, তাতে দিল্লির একটি মূল ধারার শীর্ষস্থানীয় দৈনিক ভারতকে ‘বিয়ন্ড হাসিনা’ ভাববার পরামর্শ দিচ্ছে – সেটা তখনও কিন্তু প্রায় অকল্পনীয় ছিল।
ওই সম্পাদকীয় প্রকাশিত হওয়ার ঠিক দু’সপ্তাহের মাথায় ঢাকায় নাটকীয় পটপরিবর্তনের মাধ্যমে ভারতকে কিন্তু এখন ঠিক সেটাই করতে হচ্ছে – বা বলা ভাল, হাসিনা-পরবর্তী বাংলাদেশে ভারত কী কৌশল নিয়ে এগোবে - দিল্লি সেটা ভাবতে বাধ্য হচ্ছে।
শেখ হাসিনা চিরকাল ঢাকার ক্ষমতায় থাকবেন না, এটা জানা থাকলেও সেই দিন যে এত তাড়াতাড়ি আসবে ভারত আসলে তা ভাবতেই পারেনি।
টাইমস অব ইন্ডিয়ার ওই সম্পাদকীয় থেকে আরও কিছুটা অংশ উদ্ধৃত করা যাক : “আজকের বাংলাদেশ আসলে গণতন্ত্রের মৌলিক চেক-বক্সগুলোতে টিক দিতেই ব্যর্থ হয়েছে – যেগুলো হল একটি কার্যকরী বিরোধী পক্ষ, সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন এবং নিরপেক্ষ ও স্বাধীন বিচারবিভাগ।
আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে ক্রমবর্ধমান জনরোষ ভারতের জন্যও একটি নিরাপত্তাগত দ্বিধা বা সংকট তৈরি করেছে।”
“আওয়ামী লীগ ক্ষমতা থেকে অপসারিত হলে তার জায়গায় একটি পাকিস্তান-সমর্থিত সরকার আসুক, ভারত আর যাই হোক এটা কোনও মতেই চাইবে না। ফলে তাদের এখনই দিশা পাল্টাতে হবে, নিজেদের স্ট্র্যাটেজিক স্বার্থ রক্ষা করতেই বাংলাদেশের সমাজের প্রতিটি শ্রেণির কাছেই তাদের রিচ আউট করতে হবে।”
ভারতে ক্ষমতার অলিন্দে শীর্ষ কর্মকর্তারা একান্ত আলোচনায় মেনে নিচ্ছেন, তখন এ সতর্কবার্তা অনেকটা ‘প্রোফেসি’ বা ভবিষ্যদ্বানীর মতো শোনালেও, ওই সম্পাদকীয়র প্রায় প্রতিটি কথা এখন অক্ষরে অক্ষরে মিলে যাচ্ছে।
ফলে ভারতকে এখন তড়িঘড়ি সে দেশের নতুন অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে সম্পর্কের সেতুগুলো তৈরি করতে হচ্ছে। দিল্লি বোঝার চেষ্টা করছে, সেই সরকারে কাদের প্রভাব বেশি, এবং সেই ব্যক্তি বা গোষ্ঠীগুলোকে তারা আদৌ চেনেন কি না!
পাশাপাশি রাজনৈতিকভাবে আওয়ামী লীগের ভবিষ্যৎ আপাতত অন্ধকার, এটাও বোঝা যাচ্ছে দিব্বি। সে বাস্তবতা থেকেই বিকল্প কোন রাজনৈতিক শক্তির সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করা যেতে পারে এবং সেটা কীভাবে – ভাবতে হচ্ছে তা নিয়েও।
বাংলাদেশে ক্ষমতার পালাবদলের পর সে দেশে জামায়াত বা হেফাজতে ইসলামের মতো ইসলামী শক্তিগুলোর দাপট ও রমরমাও ভারতের জন্য একটা উদ্বেগের কারণ হয়ে উঠছে।
তা ছাড়া গত কয়েক বছরে ভারতের বিভিন্ন রাষ্ট্রায়ত্ত ও বেসরকারি সংস্থা বাংলাদেশে বিভিন্ন খাতে শত শত কোটি টাকা লগ্নি করেছে, এই সংকটের মুহুর্তে সে বিনিয়োগ কীভাবে আর কতটা রক্ষা করা সম্ভব - সেটাও ভারতের আর একটা বড় দুশ্চিন্তা!
এই ধরনের বহু প্রকল্পের কাজ এখন থমকে আছে।
এবং সর্বোপরি 'গোদের ওপর বিষফোঁড়া'র মতো ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনা আজ এক মাস হল ভারতের মাটিতেই অবস্থান করছেন – কর্মকর্তারাই এখন একান্তে স্বীকার করছেন নানা কারণে ভারত তাকে “না পারছে গিলতে, না পারছে ওগরাতে!”
সব মিলিয়ে বাংলাদেশের ঠিক এক মাস আগের নাটকীয় ঘটনাপ্রবাহ কূটনৈতিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক – দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের নানা দিকেই ভারতকে এক অপ্রত্যাশিত সংকটে ফেলেছে।
দিল্লি এই মুহুর্তে ঠিক কীভাবে সেগুলো সামলানোর চেষ্টা করছে – এই প্রতিবেদনে দেখার চেষ্টা করা হয়েছে সেটাই!
অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে ‘পরিচয়’
বাংলাদেশে নতুন অন্তর্বর্তী সরকারের সাংবিধানিক বৈধতা কতটা, তা নিয়ে সে দেশের ভেতরেও হয়তো প্রশ্ন উঠছে – তবে ভারত কিন্তু ওই সরকারকে স্বীকৃতি দিতে কয়েক মিনিটের বেশি সময় নেয়নি।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে মুহাম্মদ ইউনূস গত আট অগাস্ট শপথ নেওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এক্স হ্যান্ডলে পোস্ট করে নতুন দায়িত্ব গ্রহণের জন্য তাকে শুভেচ্ছা জানান।
দুই দেশের মানুষের ‘স্বপ্নপূরণের লক্ষ্যে’ একযোগে কাজ করতে ভারত যে অঙ্গীকারাবদ্ধ থাকবে, ওই পোস্টে সে কথাও জানান মি মোদী।
এর কিছুদিন পরে ভারত যে ‘গ্লোবাল সাউথে’র শীর্ষ সম্মেলন আয়োজন করেছিল, তাতেও বাংলাদেশের পক্ষ থেকে মুহাম্মদ ইউনূসই যোগ দেন এবং সভায় ভার্চুয়ালি ভাষণ দেন। পরে দু’জনের মধ্যে টেলিফোনে কথাবার্তাও হয়েছে।
ফলে ভারতের চোখে বাংলাদেশের নতুন সরকারপ্রধান যে তিনিই, এ নিয়ে কখনোই দ্বিধাদ্বন্দ্বের অবকাশ ছিল না।
শুধু এই নতুন সরকারকে স্বীকৃতি দেওয়া নয়, শেখ হাসিনা যে বাংলাদেশের জন্য ‘অতীত’ – সেটাও গত এক মাসে ভারত বারেবারেই বুঝিয়ে দিয়েছে।
গত ছয়ই অগাস্ট পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর পার্লামেন্টে জানান, ‘আপাতদৃষ্টে’ শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রিত্বে ইস্তফা দিয়েই ভারতে এসেছেন। মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্রও একাধিকবার শেখ হাসিনাকে ‘সাবেক প্রধানমন্ত্রী’ বলে উল্লেখ করেছেন।
সুতরাং ঢাকা থেকে শেখ হাসিনার বিদায়পর্ব যতই বিতর্কিত বা রহস্যে ঘেরা হোক – ভারত কিন্তু সে দেশের নতুন বাস্তবতাকে মেনে নিয়ে নতুন সরকারের সঙ্গেই সম্পর্ক গড়ার কাজে হাত দিয়েছে।
গত সপ্তাহে দিল্লিতে একটি বই প্রকাশ অনুষ্ঠানেও পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর জানিয়েছেন, একাত্তরে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর থেকেই দু’দেশের সম্পর্ক নানা ওঠাপড়ার মধ্যে দিয়ে গেছে – কিন্ত ঢাকাতে যখন যে সরকার ক্ষমতায়, দিল্লি তাদের সঙ্গেই সম্পর্ক রেখে চলবে ‘এটাই স্বাভাবিক’!
সেই সঙ্গেই তিনি বলেন, “আমাদের এটাও মেনে নিতে হবে যে রাজনৈতিক পরিবর্তন হবেই এবং এই ধরনের পরিবর্তন কখনও কখনও ‘ডিসরাপ্টিভ’ হবে। সেরকম ক্ষেত্রে আমাদের স্পষ্টতই দেখতে হবে কোথায় আমাদের পারস্পরিক স্বার্থের মিল হচ্ছে।”
ফলে বাংলাদেশের নতুন সরকারের সঙ্গেও ভারতের ‘স্বার্থ’ কোথায় কোথায় মিলতে পারে, দিল্লি এখন সেই ক্ষেত্রগুলো চিহ্নিত করার ওপরেই জোর দিচ্ছে। আর তারও আগে চলছে নতুন সরকারকে ভাল করে চেনাজানার পালা।
সাউথ ব্লকের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা বিবিসিকে বলছিলেন, “আসলে সত্যি কথা বলতে কী, এই নতুন সরকারের উপদেষ্টা বা নীতিনির্ধারকদের অনেককেই আমরা ভাল করে চিনি না। কীভাবে তারা সরকারে এলেন, কে তাদের নাম সুপারিশ করল সেটাও খুব ভাল জানি না।”
“এমন কী, মুহাম্মদ ইউনূসকেও যে পুরোটা জানি বা বুঝি সেটাও দাবি করতে পারি না। কাজেই বলতে পারেন, শুরুর এই দিনগুলোতে আমরা তাদের ভাল করে চেনার ও বোঝার ওপরেই জোর দিচ্ছি।”
দিনকয়েক আগে ঢাকায় ভারতের হাই কমিশনার প্রণয় কুমার ভার্মা যখন প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করতে যান, ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কিন্তু সেই সাক্ষাৎ-কেও ‘পরিচিতিমূলক’ বলেই বর্ণনা করেছিল।
ফলে বোঝাই যাচ্ছে, গত এক মাস ছিল দু’পক্ষের আলাপ-পরিচয়ের পর্ব – যা এখনও বেশ কিছুদিন চলবে ধরেই নেওয়া যায়।
বিএনপির সঙ্গে যোগাযোগ?
গত প্রায় দেড় দশক ধরে বাংলাদেশে ভারতের বিরুদ্ধে একটা প্রধান অভিযোগ ছিল, তারা শুধু শাসক দল আওয়ামী লীগের সঙ্গেই সম্পর্ক রেখে চলেছে এবং ‘আওয়ামী প্রিজম’ দিয়েই বাংলাদেশের সব কিছুকে দেখার চেষ্টা করেছে।
মজার বিষয় হল, দিল্লিও কিন্তু এই অভিযোগ কখনও পুরোপুরি অস্বীকার করেনি।
বরং তারা আত্মপক্ষ সমর্থনে বলার চেষ্টা করেছে, যে সব দল চিরকাল ভারত-বিরোধিতার রাজনীতি করে এসেছে কিংবা যাদের ট্র্যাক রেকর্ড বলে তারা ক্ষমতায় থাকাকালীন ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক তলানিতে ঠেকেছে – তাদের সঙ্গে কীভাবে সম্পর্ক গড়া সম্ভব?
তা ছাড়া, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী পার্টি বা বিএনপি সম্পর্কে ভারতের আর একটা বক্তব্য ছিল, যতদিন না তারা সুস্পষ্টভাবে জামায়াত-ই-ইসলামীর সঙ্গ ত্যাগ করছে ততদিন তাদের সঙ্গেও ভারতের কোনও সম্পর্ক থাকতে পারে না।
আসলে জামায়াতের রাজনৈতিক বা ধর্মীয় মতাদর্শ ভারতের কাছে এতটাই ‘অস্পৃশ্য’ যে জামায়াতের কোনও রাজনৈতিক সঙ্গী বা শরিককেও বিশ্বাস করা ভারতের পক্ষে সম্ভব নয় – মোটামুটি এ যুক্তিটাই দিল্লির থিঙ্কট্যাঙ্ক সার্কিটে ও অ্যাকাডেমিয়াতে এতদিন ধরে দেওয়া হত।
তবে ঢাকায় গত এক মাসের ঘটনাক্রম ভারতের জন্য বাংলাদেশে নতুন রাজনৈতিক সমীকরণ গড়ে তোলার পথ প্রশস্ত করেছে বলেও অনেক পর্যবেক্ষকই মনে করছেন।
বিশেষ করে, বিএনপি ও জামায়াতের মধ্যে যেভাবে সম্প্রতি নানা ইস্যুতে দূরত্ব তৈরি হচ্ছে, সেটাকেও ভারতের নীতিনির্ধারকরা ইতিবাচক লক্ষণ হিসেবে দেখছেন।
‘জামায়াত-মুক্ত’ বিএনপি-র সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক গড়ার কাজ অনেক সহজ হতে পারে বলেও তাদের অভিমত।
আর একটা বিষয় হল, বিএনপি নেতৃত্বের সঙ্গে সব পর্যায়ে ভারতের সব ধরনের যোগাযোগ এতদিন ধরে সম্পূর্ণ স্তব্ধ ছিল, এটাও ঠিক নয় - বলে ভারতের অনেক বিশ্লেষকই জানাচ্ছেন।
সব সময় প্রকাশ্যে না-হলেও যোগাযোগের কিছু চ্যানেল চালু ছিল বলে তাদের দাবি।
সম্ভবত এরকমই একজন হলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও জিয়া পরিবারের আস্থাভাজন নেতা সালাউদ্দিন আহমেদ – দীর্ঘ প্রায় এক দশক ভারতে কাটিয়ে যিনি সদ্যই বাংলাদেশে ফিরে গেছেন।
শেখ হাসিনার পতনের দু-চারদিন পরেই, মি. আহমেদের বাংলাদেশে ফেরার ঠিক আগে এই প্রতিবেদকের সঙ্গে তার দীর্ঘক্ষণ কথাবার্তা হয়।
লক্ষণীয় বিষয় হল, ভারতে ‘অবৈধ অনুপ্রবেশে’র সব মামলা থেকে অব্যাহতি পাওয়ার পরও তিনি যে বছরের পর বছর দেশে ফিরতে পারেননি, সেজন্য তিনি সেদিন একবারও কিন্তু দিল্লিকে দোষারোপ করেননি – বরং যাবতীয় দায় চাপিয়েছিলেন শেখ হাসিনা সরকারের ওপরেই।
পাশাপাশি ভারতে তার সুদীর্ঘ ‘প্রবাসজীবনে’ ভারত সরকার যেভাবে সহযোগিতা করেছে, শিলংয়ে তার গেস্টহাউসে স্ত্রী ও পরিবারের সদস্যদের এসে নিয়মিত দেখা করার সুযোগ করে দিয়েছে, কিংবা দিল্লিতে গিয়ে চিকিৎসা করানোরও অনুমতি দিয়েছে – তাতে তিনি যে ভারতের প্রতি এক ধরনের কৃতজ্ঞ, কথাবার্তায় মি আহমেদ সেটাও গোপন করেননি।
ভারতের পর্যবেক্ষকরা কেউ কেউ মনে করছেন, এহেন সালাউদ্দিন আহমেদ আগামী দিনে ভারতের সঙ্গে বিএনপি-র সেতু রচনার ক্ষেত্রে একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারেন।
তবে বিএনপি-র সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি হলে দীর্ঘদিনের বন্ধু আওয়ামী লীগের সম্পর্কে ভারতের মনোভাব কী হবে?
“এটা তো আর কোনও ‘বাইনারি’ নয়, যে একটা থাকলে অন্যটা থাকতে পারবে না! ভারত অবশ্যই চাইবে সে দেশের পরবর্তী নির্বাচনে আওয়ামী লীগ যাতে অংশ নেয় এবং সেখানে একটা সুষ্ঠু প্রতিদ্বন্দ্বিতার আবহ থাকে”, জানাচ্ছেন দিল্লিতে একজন প্রথম সারির কর্মকর্তা।
দ্বিপাক্ষিক প্রকল্পের ভবিষ্যৎ
গত ২৭শে অগাস্ট ভারতের প্রথম সারির অর্থনৈতিক পত্রিকা ‘দ্য ইকোনমিক টাইমসে’র এক রিপোর্টে জানানো হয়, ভারতের পাঁচটি বিদ্যুৎ সংস্থার বাংলাদেশের কাছে মোট বকেয়া অর্থের পরিমাণ এক বিলিয়ন বা ১০০ কোটি ডলার ছাড়িয়ে গেছে।
এর মধ্যে, একা ‘আদানি পাওয়ারে’রই ৩০ জুন, ২০২৪ তারিখে ৮০ কোটি ডলার পাওনা ছিল বলে বলা হয়।
এই সংস্থাটি ঝাড়খন্ডের গোড্ডায় অবস্থিত তাদের তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের উৎপাদনের পুরোটাই বাংলাদেশে রফতানি করে থাকে।
এছাড়াও এসইআইএল এনার্জি, পিটিসি ইন্ডিয়া, এনটিপিসি (ডিভিসি ও ত্রিপুরা) ও পাওয়ার গ্রিডের মতো আরও বিভিন্ন সংস্থারও বাংলাদেশের কাছে কোটি কোটি ডলার পেমেন্ট বাকি রয়ে গেছে বলে ওই রিপোর্টে জানানো হয়।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা যে এই অর্থ পরিশোধের সম্ভাবনাকে ব্যাহত করতে পারে, সেই আশঙ্কার কথাও উল্লেখ করা হয়েছিল ওই প্রতিবেদনে।
ইতোমধ্যে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়ালও জানিয়েছেন, গত পাঁচই অগাস্টের পর থেকেই বাংলাদেশ-ভারতের প্রায় সব দ্বিপাক্ষিক প্রকল্পের কাজ থমকে গেছে, কর্মীরাও অনেকে ভারতে ফিরে আসতে বাধ্য হয়েছেন।
“পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে” এই প্রকল্পগুলোর কাজ যে চট করে আবার শুরু হচ্ছে না, সেটাও জানিয়ে দিয়েছেন তিনি।
জানা যাচ্ছে, এরই মধ্যে রামপালের মৈত্রী তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র বা নুমালিগড়-পার্বতীপুর জ্বালানি পাইপলাইনের মতো বহু প্রকল্পের ভবিষ্যৎও অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
তাহলে কি বাংলাদেশের জ্বালানি, বিদ্যুৎ, অবকাঠামো-সহ বিভিন্ন সেক্টরে ভারতের বিভিন্ন সংস্থার বিপুল বিনিয়োগ এখন ঝুঁকির মুখে?
দিল্লিতে থিঙ্কট্যাঙ্ক আরএইএস-র অর্থনীতিবিদ প্রবীর দে কিন্তু এ ব্যাপারে এখনই নিরাশ হতে রাজি নন।
তিনি মনে করিয়ে দিচ্ছেন, বাংলাদেশের নতুন সরকার ভারতের সঙ্গে বিভিন্ন চুক্তি বা সমঝোতা পুনর্বিবেচনা করার কথা বললেও সে দেশের কোনও ভারতীয় প্রকল্প কিন্তু বাতিল ঘোষণা করেনি।
ড. দে বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন, “তাছাড়া এই ধরনের বিনিয়োগে সব সময় একটা ‘সভারেইন গ্যারান্টি’ বা সার্বভৌম নিশ্চয়তার আওতায় থাকে। অর্থাৎ প্রকল্প বাতিল করা হলে রাষ্ট্রের ওপর সেই ক্ষতি পুষিয়ে দেওয়ার দায় বর্তায়।”
এধরনের ক্ষেত্রে ক্ষতিগ্রস্ত কোম্পানির ইন্টারন্যাশনাল আরবিট্রেশন কোর্ট বা আন্তর্জাতিক সালিশি আদালতে যাওয়ার রাস্তাও খোলা থাকে।
বছর কয়েক আগে মালদ্বীপ যখন তাদের দেশের প্রধান বিমানবন্দরটির পরিচালনার ভার একটি ভারতীয় কোম্পানির হাত থেকে ছিনিয়ে নিয়েছিল, সেই সংস্থাটি সিঙ্গাপুরে আন্তর্জাতিক সালিশিতে গিয়ে বিপুল অঙ্কের ক্ষতিপূরণও আদায় করতে সক্ষম হয়।
বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এখনই সে রকম কোনও সম্ভাবনা না-দেখলেও সে দেশের অর্থনৈতিক সংকট ও বৈদেশিক মুদ্রার ঘাটতি মেটাতে যে বেশ কিছুটা সময় লাগবে ও ভারতীয় সংস্থাগুলোকে লগ্নির রিটার্ন পেতে আরও অপেক্ষা করতে হবে – সেই বাস্তবতা অবশ্য দিল্লি এরই মধ্যে অনুধাবন করেছে।
শেখ হাসিনা এবং অত:পর
ঢাকা-দিল্লির দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে এই জটিল পরিস্থিতির মধ্যেই ভারতের জন্য বাড়তি অস্বস্তি বয়ে এনেছেন বাংলাদেশের অপসারিত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি গত এক মাস ধরে ভারতের রাজধানীতেই অবস্থান করছেন।
তাকে ভারতে রাজনৈতিক আশ্রয় দেওয়া হলে সেটা যে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে ও সে দেশের সাধারণ মানুষের সঙ্গে নতুন করে সম্পর্ক গড়ার ক্ষেত্রে অন্তরায় হতে পারে, ভারত তা বিলক্ষণ বুঝতে পারছে।
কিন্তু তা সত্ত্বেও বিগত প্রায় ৫০ বছর ধরে যিনি ভারতের ঘনিষ্ঠ মিত্র ও আস্থাভাজন, সেই শেখ হাসিনার বিপদের মুহুর্তে তার পাশে না দাঁড়ানোটাও ভারতের জন্য কোনও ‘অপশন’ বা বিকল্প নয়!
ফলে তাকে যথাযোগ্য মর্যাদায় ও উপযুক্ত সম্মান দিয়ে ভারত প্রথম দিন থেকেই সব ধরনের আতিথেয়তা দিয়ে চলেছে। তবে কতদিন সেটা করে যেতে হবে, এই মুহুর্তে ভারতেরও সে ব্যাপারে কোনও স্পষ্ট ধারণা নেই।
ভারতের সাবেক শীর্ষস্থানীয় কূটনীতিবিদ ড. মোহন কুমার, যিনি দীর্ঘদিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে বাংলাদেশ বিভাগের দায়িত্বে ছিলেন, তিনি কিন্তু মনে করেন এই ‘সংকট’কেও কাজে লাগানোর উপায় ভারতের হাতে আছে।
তিনি বলছেন, “আমেরিকার একজন রাজনৈতিক বিশ্লেষক বলেছিলেন, কোনও ‘ক্রাইসিস’কেই অপচয় করতে নেই! মানে সব সংকটকেই সুযোগে বদলে ফেলা যায় – আর আমি মনে করি এক্ষেত্রেও সেটা সত্যি।”
শেখ হাসিনা সংক্রান্ত ‘বিপর্যয়’ থেকেও ভারতের আসলে খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা জিনিস শেখার আছে বলে ড: মোহন কুমার মনে করেন।
তিনি বলছেন, “আমাদের নেইবারহুড ফার্স্ট পলিসি-র একটা খুব বড় ত্রুটি হল, অনেক ক্ষেত্রেই প্রতিবেশী দেশগুলোতে আমরা রাজনৈতিক বিনিয়োগ করেছি কোনও একজন ব্যক্তির ওপর, প্রাতিষ্ঠানিকভাবে করিনি!”
বাংলাদেশে শেখ হাসিনা, মালদ্বীপে মোহামেদ নাশিদ, আফগানিস্তানে হামিদ কারজাই, শ্রীলঙ্কায় মৈত্রীপালা সিরিসেনা বা নেপালে বাবুরাম ভট্টরাইকে নিয়ে এই ধরনের ‘ভুল’ ভারত আগেও বারবার করেছে, দিল্লিতে অনেক পর্যবেক্ষকই আসলে সে কথা বিশ্বাস করেন।
“হাসিনা সংকট থেকে শিক্ষা নিয়ে আমরা যদি এখন থেকে বন্ধু দেশগুলোতে কোনও ব্যক্তিবিশেষের বদলে ‘স্ট্রাকচারাল’ বা কাঠামোগত ফ্যাক্টরে লগ্নি করি, সেটা অনেক বেশি ফলপ্রসূ হবে বলে আমার বিশ্বাস। কাজটা কঠিন, তবে অসম্ভব নয়”, বলছেন ড: কুমার।
আর এভাবেই বাংলাদেশ-জনিত ‘সংকট’কে ভারতে ‘সুযোগে’ বদলে দিতে পারে বলে যুক্তি দিচ্ছেন তিনি।
তবে বাংলাদেশে পালাবদলের পর সে দেশে ‘নতুন বন্ধু’দের খুঁজে বের করা ও তারপর ‘কাঠামোগত’ ফ্যাক্টরে বন্ধুতার বিনিয়োগ – সব মিলিয়ে কাজটা যে আদৌ সহজ হবে না, ভারতের শীর্ষ নীতিনির্ধারকরা মাত্র এক মাসের মধ্যেই সেটা দিব্বি টের পাচ্ছেন!