যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশ প্রেসক্লাব ইউকে’র যাত্রা শুরু

যুক্তরাজ‍্যে প্রবাসী গণমাধ্যম কর্মীদের নিয়ে বাংলাদেশ প্রেসক্লাব ইউকে নামে নতুন একটি সংগঠনের যাত্রা শুরু হয়েছে।

মঙ্গলবার (৩১ ডিসেম্বর) পূর্ব লন্ডনের মাইক্রো বিজনেস পার্কের কমিউনিটি হলে কেক কেটে এর শুভ উদ্বোধন করেন রাষ্ট্রপতির সাবেক উপদেষ্টা, বাংলাদেশ ওয়ার্ডওয়াইল্ডের প্রধান সম্পাদক ও ক্লাবের চীফ পেট্রোন মোখলেসুর রহমান চৌধুরী। এ সময় ক্লাবের ওয়েবসাইটও উন্মোচন করেন তিনি।

অনুষ্ঠানে লন্ডন নিউহ্যাম কাউন্সিলের চেয়ার ও কাউন্সিল রহিমা রহমান, এনফিল্ড কাউন্সিলের মেয়র আমিরুল ইসলাম, টাওয়ার হেমলেটস কাউন্সিলের সাবেক ডেপুটি মেয়র মতিন উজ জামান, টাওয়ার হেমলেটস কাউন্সিলের সাবেক স্পিকার আহবাব হোসেন, কাউন্সিলর মজিবুর রহমান, সাপ্তাহিক জনমত পত্রিকার সহকারী সম্পাদক মুসলেহ উদ্দিন, সেন্টার ফর ডেমোক্রেসি এন্ড গুড গভর্নেন্সের চেয়ারম্যান সোয়ালেহীন করীম চৌধুরী, বেস্ট চারিটির চেয়ারম্যান ও কমিউনিটি ব্যক্তিত্ব এডভোকেট আব্দুল হালিম হাওলাদার, কমিউনিটি ব্যক্তিত্ব মোয়াজ্জেম হোসেন সোহরাব, ব‍্যারিস্টার ও সলিসিটর মাহাবুবুর রহমান, চার্টার্ড একাউটেন্ট মো. কায়কোবাদ, কমনওয়েলথ সলিসিটর লিমিটেডের প্রিন্সিপাল ব্যারিস্টার মুফতি নাফিস, একাউটেন্ট অ্যান্ড ট‍্যাক্স এডভাইজর এমডি এমএ খান, লন্ডন লায়ন্স স্পোর্টস ক্লাবের প্রেসিডেন্ট এনামুল হক, ক্লাব ফাউন্ডার জুবায়ের আহমেদসহ অনেকেই উপস্থিত ছিলেন।

এ ছাড়া মিডিয়া ব্যক্তিত্ব আজমীর হাসান কনকের উপস্থাপনায় ক্লাব মেম্বার আব্দুল বাসিত, মাহবুব তোহা, সোহেল সাদ, কামরুল আই রাসেল, আশরাফুর রহমান, জাহাঙ্গীর হোসেন, আবু বকর সিদ্দিক, শাকিল আহমেদ সোহাগ, সোহেল আহমেদ পাপ্পু, শাহ শরীফ উদ্দিন, এমকে জিলানী, মনির উদ্দিন, জাহান চৌধুরী বক্তব্য রাখেন।

অনুষ্ঠান শেষে উপস্থিত সদস্যদের মতামতের ভিত্তিতে শাকির হোসাইনকে আহ্বায়ক ও জুনায়েত রিয়াজকে সদস্য সচিব করে ৩১ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়।

                                 

যুক্তরাজ্য আরো

হারিয়ে যাওয়ার ৫২ বছর পর যুক্তরাজ্যে খোঁজ মিলল নারীর

বহু বছরের পুরোনো একটি ছবি, দাগ পড়ে অনেকটাই আবছা হয়ে গেছে, ছবির মানুষটির চেহারা তেমন একটা বোঝা যায় না। সেই ছবি দিয়েই নিখোঁজ সংবাদ প্রকাশ করে ৫২ বছর আগে হারিয়ে যাওয়া এক নারীর সন্ধান পেয়েছে পুলিশ।

ওই নারীর নাম শিলা ফক্স। এখন তাঁর বয়স ৬৮ বছর। ১৯৭২ সালে কভেন্ট্রি থেকে তিনি নিখোঁজ হন। তখন তাঁর বয়স ছিল ১৬ বছর।

সে সময় তিনি বাবা-মায়ের সঙ্গে বসবাস করতেন। এক ব্যক্তির সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক ছিল বলে জানিয়েছে যুক্তরাজ্যের ওয়েস্ট মিডল্যান্ডস পুলিশ। কর্মকর্তারা বলেছেন, ওই নারীর বিষয়ে সব সময়ই তাঁরা খোঁজখবর রেখেছিলেন। তাঁদের বিশ্বাস ছিল, তিনি হয়তো নিজের এলাকা ছেড়ে অন্য কোথাও চলে গেছেন।

গত রোববার ওয়েস্ট মিডল্যান্ডস পুলিশ ফক্সকে খুঁজে পেতে সাহায্য করার জন্য নতুন করে আবেদন করে। পুলিশের ওয়েবসাইটে এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ফক্সের একটি ছবি দিয়ে তাঁর সন্ধান পেতে সাহায্যের আবেদন করা হয়। ছবিটি ফক্স যে সময় নিখোঁজ হয়েছিলেন, তার কাছাকাছি সময়ে তোলা।

আবেদনটি পোস্ট করার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই সাড়া মেলে। সাধারণ মানুষদের মধ্যে কয়েকজন ফক্সের তথ্য নিয়ে পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। গতকাল বুধবার পুলিশ কর্মকর্তারা ফক্স বেঁচে থাকার এবং সুস্থ থাকার খবর নিশ্চিত করেন। তাঁরা বলেন, ফক্স ইংল্যান্ডেরই অন্য একটি প্রান্তে বসবাস করছেন।

পুলিশের একজন মুখপাত্র বলেছেন, ‘আমরা আনন্দের সঙ্গে ওয়েস্ট মিডল্যান্ডস পুলিশের সবচেয়ে পুরোনো নিখোঁজ তদন্তগুলোর একটির সমাপ্তি ঘোষণা করছি।’

দীর্ঘ সময় ধরে সমাধান করতে না পারা মামলা নিয়ে তদন্তকারী দলের সদস্য ডিএস জেন শ বলেছেন, ‘আমরা যেসব প্রমাণ পেয়েছিলাম, তার প্রতিটি ধরে ধরে অনুসন্ধান করে শেষ পর্যন্ত শিলার একটি ছবি জোগাড় করতে সক্ষম হই। নিখোঁজ হওয়া প্রতিটি ব্যক্তির জীবনের একটি গল্প থাকে। তাঁদের সঙ্গে কী ঘটেছে, সেটা জানার অধিকার তাঁদের পরিবার এবং স্বজনদের রয়েছে। তাদের সঙ্গে পুনর্মিলিত হওয়ার অধিকারও।’

Thursday, January 2, 2025

গবেষণা: যুক্তরাজ্যে ক্ষুধায় ধুকছে ৩০ লাখ শিশু

যুক্তরাজ্যে ৯৩ লাখ মানুষ ক্ষুধা ও দুরাবস্থার মধ্যদিয়ে যাচ্ছেন। এর মধ্যে ৩০ লাখই শিশু। দারিদ্র্যের দিক দিয়ে এই সংখ্যাটা একটা রেকর্ড। অর্থাৎ এর আগে দেশটিতে একসাথে এত সংখ্যক মানুষ কখনও ক্ষুধা ও দারিদ্র্যের মুখোমুখি হননি। সাম্প্রতিক এক গবেষণায় এই তথ্য উঠে এসেছে। বেসরকারি সংস্থা ট্রাসেল ট্রাস্ট গবেষণাটি চালিয়েছে। ৯ অক্টোবর এর গবেষণার প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, চার বছরের কম বয়সি প্রায় এক-চতুর্থাংশ শিশু চরম দারিদ্র্য মোকাবিলা করছে।

ট্রাসেল ট্রাস্ট এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘বিস্ময়করভাবে দুই দশক আগের তুলনায় বর্তমানে ৪৬ শতাংশ বেশি শিশু ক্ষুধা ও দারিদ্র্যের মুখে রয়েছে। প্রতি পাঁচজন শিশুর মধ্যে একজনই এই পরিস্থিতিতে আটকে গেছে।’

যুক্তরাজ্য বিশ্বের প্রথম সারির উন্নত দেশগুলোর একটি। এর অর্থনীতি বিশ্বে ষষ্ঠ বৃহত্তম। ধনী দেশগুলোর সংগঠন জি-৭ এর ও ন্যাটো সদস্য। কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিশেষ করে করোনা মহামারির পর থেকে এর অর্থনীতি ক্রমেই দুর্বল হয়েছে।
 
এর ফলে ক্ষুধা ও দারিদ্র্য বেড়েছে। ইউনিসেফের গত বছরের এক প্রতিবেদন মতে, ধনী দেশগুলোর মধ্যে শিশু দারিদ্র্যের হার সবচেয়ে বেশি যুক্তরাজ্যে। এছাড়া বর্তমানে ৬ কোটি ৯২ লাখ ৫১ হাজার জনসংখ্যার দেশটির ২৫ শতাংশ লোক দারিদ্র সীমার নীচে বাস করছে।
 
দারিদ্র্য যে হারে বাড়ছে তাতে ব্রিটিশ সরকারকে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। ট্রাসেল ট্রাস্ট বলেছে, প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের সরকার ‘জরুরি পদক্ষেপ’ না নিলে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যের মুখোমুখি হওয়া মানুষের সংখ্যা আরও বাড়বে।
 
এর আগে গত মাসেই দাতব্য সংস্থা বাটল ইউকের একটি গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। তাতে বলা হয়, যুক্তরাজ্যে অনেক দরিদ্র পরিবারকে ভীষণ সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে জীবন পার করতে হচ্ছে। খাবার-পোশাক থেকে নিত্যপ্রয়োজনীয় উপকরণের সংকটে ভুগছে বহু পরিবার। এমনকি অনেকের ঘুমানোর জন্য বিছানা পর্যন্ত নেই।
 
১ হাজার ৫৬৭টি পরিবারের ওপর জরিপ চালায় বাটল ইউকে। জরিপে দেখা যায়, বেশিরভাগ পরিবারের অভিভাবকরা এক বেলার খাবার বাদ দিয়েছেন। অনেকে সন্তানদের জন্য নিজেদের বিছানা ছেড়ে দিয়েছেন। সেই সঙ্গে খাবার, জ্বালানি ও পোশাকের মতো আবশ্যক পণ্যের জন্য অর্থ সংগ্রহ করতে হিমশিম খাচ্ছেন। অবনতি হয়েছে স্বাস্থ্য পরিস্থিতিরও।

শীতের দিনে বেশির ভাগ পরিবার ঘর গরম রাখার ব্যবস্থা করতে পারছে না। তারা জীবনযাত্রার ব্যয় মেটাতে হিমশিম খাচ্ছে। অনেক পরিবার–প্রধান বলেছেন, তারা অর্থাভাবে দুপুরের খাবার বাদ দিয়েছেন। জরিপে অংশ নেওয়া অর্ধেক মানুষ বলেছেন, তাদের বাড়িতে সবার ঘুমানোর মতো পর্যাপ্ত বিছানা নেই।
 
অনেকে বলেছেন, সন্তানদের পর্যাপ্ত খাবার দিতে পারছেন না। অসুস্থ হয়ে পড়লেও অর্থাভাবে চিকিৎসা করাতে পারছেন না বলে জানিয়েছেন অনেকেই।
 
বাটল ইউকের প্রধান নির্বাহী জোসেফ হাওস বলেন, ‘এই জরিপের ফলাফল থেকে সহজেই বোঝা যায়, জীবনযাত্রার ব্যয়ে ব্রিটিশ নাগরিকেরা কী রকম পিষ্ট হচ্ছেন। পরিস্থিতি আরও খারাপ হওয়ার আগেই সরকারের জরুরি পদক্ষেপ নেয়া উচিত।’

Thursday, January 2, 2025

পিটিআই সমর্থকদের দোষী সাব্যস্ত করায় উদ্বিগ্ন যুক্তরাষ্ট্র-যুক্তরাজ্য

পাকিস্তানের সামরিক আদালতে ইমরান খানের দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) সমর্থকদের দোষী সাব্যস্ত করায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন। তাদের মতে দেশটির বিচার প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতার অভাব রয়েছে।

গত বছরের মে মাসে গ্রেফতার করা হয় পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে। এরপরই দেশজুড়ে শুরু হয় সহিংসতা। পিটিআই প্রধানকে কারামুক্ত করার জন্য বিক্ষোভে নামে দলটির সমর্থকেরা। হামলা চালায় সামরিক স্থাপনা ও সরকারি ভবনে। এ ঘটনার জেরে প্রায় ১০৫ জন বেসামরিক নাগরিকের বিরুদ্ধে সামরিক আদালতে মামলা করা হয়।

 
এই মামলায় গত শনিবার (২১ ডিসেম্বর) ২৫ জন পিটিআই সমর্থককে শাস্তি দিয়েছেন পাকিস্তানের সামরিক আদালত। এদের মধ্যে অন্তত ১৪ জনকে দেয়া হয়েছে ১০ বছরের কারাদণ্ড। চলতি বছরের এপ্রিলে ২০ জনকে মুক্তি দেয়া হলেও এখনও হেফাজতে রয়েছেন ৮৫ জন।
 
তবে, সামরিক আদালতের সাম্প্রতিক রায় নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছে আন্তর্জাতিক মহলে। বিচার প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা ও স্বাধীনতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন। এই বিচারকে মানবাধিকার লঙ্ঘন হিসেবে দেখা হচ্ছে।

এক বিবৃতিতে ইইউ সতর্ক করে বলেছে, পাকিস্তানের সামরিক আদালতের বিচার প্রক্রিয়া আন্তর্জাতিক মানবাধিকার চুক্তির সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ।
 
পরদিন সোমবার (২৩ ডিসেম্বর)  সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্সে দেয়া এক পোস্টে একই বিষয় নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার। পোস্টে পাকিস্তানের কর্তৃপক্ষকে ন্যায়বিচার ও যথাযথ প্রক্রিয়ার অধিকার রক্ষার আহ্বান জানান তিনি।
 
এর আগে যুক্তরাজ্যের ফরেন কমনওয়েলথ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অফিস এক বিবৃতিতে জানায়, দেশটি পাকিস্তানের সার্বভৌমত্বকে সম্মান জানালেও, সামরিক আদালতে বেসামরিক নাগরিকদের বিচারকে স্বচ্ছতা ও স্বাধীন মূল্যায়নের অভাব হিসেবেই দেখছে।

তবে এসব সমালোচনার কড়া জবাব দিয়েছে পাকিস্তান। দেশটির পররাষ্ট্র দফতর থেকে জারি করা বিবৃতিতে বলা হয়, পাকিস্তানের সংবিধান এবং বিচার ব্যবস্থা কোনো বিদেশি সত্তা নয় যে তারা দেশটির অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক এবং আইনি সিদ্ধান্ত নির্ধারণ করবে। এছাড়া, পাকিস্তানের আইনি ব্যবস্থা মানবাধিকার এবং মৌলিক স্বাধীনতার প্রচার ও সুরক্ষার নিশ্চয়তা দেয় বলেও জানানো হয় বিবৃতিতে।

Thursday, January 2, 2025

দুর্নীতির অভিযোগ: টিউলিপ সিদ্দিককে জিজ্ঞাসাবাদ

বাংলাদেশের বিদ্যুৎ প্রকল্পে দুর্নীতির জন্য সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে যে তদন্ত চলছে তাতে তার ছোট বোন শেখ রেহানার মেয়ে ও যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের নেতৃত্বাধীন সরকারের মন্ত্রী টিউলিপ সিদ্দিকের নাম জড়িয়েছে। এ ঘটনায় তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন দেশটির মন্ত্রিসভার কর্মকর্তারা। যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য সানডে টাইমসের প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, টিউলিপকে গত বৃহস্পতিবার জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তবে এই খবরটি সামনে আসে রোববার। জিজ্ঞাসাবাদে নিজের অবস্থান তুলে ধরেন তিনি। যদিও টিউলিপ নিজে জিজ্ঞাসাবাদের ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করেননি।
 
২০১৩ সালে বাংলাদেশের রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের জন্য রাশিয়ার সঙ্গে চুক্তি করতে সহায়তা করেছিলেন বলে অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে। যে চুক্তিতে প্রায় ১ বিলিয়ন পাউন্ড ঘুষের লেনদেন হয়েছিল বলে অভিযোগ রয়েছে।
 
২০১৩ সালের এক ছবিতে দেখা যায়, ক্রেমলিনে শেখ হাসিনা ও রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে টিউলিপ সিদ্দিক উপস্থিত ছিলেন। চলতি বছরের আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্যদিয়ে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর ভারতে পালিয়ে যান টিউলিপ সিদ্দিকের খালা সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

সম্প্রতি শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) বিস্তৃত তদন্ত শুরু করে। সেই তদন্তের অংশ হিসেবে টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে। উচ্চ আদালতের নির্দেশে এই তদন্ত শুরু করে দুদক।
 
অভিযোগ উঠেছে, রাশিয়ার সঙ্গে ২০১৩ সালে যখন রূপপুর বিদ্যুৎকেন্দ্র নিয়ে আলোচনা হয়, তখন এতে মধ্যস্থতা করেন টিউলিপ। যদিও ওই সময় তিনি ব্রিটেনের কোনো সরকারি দায়িত্বে ছিলেন না।
 
সূত্র জানায়, জিজ্ঞাসাবাদে টিউলিপ জানান যে তিনি এক দশকেরও বেশি সময় আগে তার খালার সঙ্গে দেখা করতে মস্কো গিয়েছিলেন। কারণ বাংলাদেশের চেয়ে রাশিয়ায় যাওয়া তার জন্য সহজ ছিল।

টিউলিপ ব্রিটেনের লেবার মন্ত্রিসভার সদস্য। তিনি ইকোনমিক সেক্রেটারি টু দ্য ট্রেজারি অ্যান্ড সিটি মিনিস্টার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তার কাজ যুক্তরাজ্যের অর্থবাজারের ভেতরের দুর্নীতি সামাল দেয়া।
 
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর দফতর ডাউনিং স্ট্রিটের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, টিউলিপের ওপর প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের আস্থা আছে এবং দুর্নীতিবিরোধী পদক্ষেপগুলোর দেখাশোনো করার ক্ষেত্রে তার দায়িত্ব অব্যাহত থাকবে। তিনি তার মন্ত্রীর দায়িত্ব অব্যাহত রাখবেন।

Thursday, January 2, 2025

বাংলাদেশের ৩ জেলা ভ্রমণে সতর্কতা জারি করল যুক্তরাজ্য

নিজ দেশের নাগরিকদের বাংলাদেশের পার্বত্য অঞ্চলে ভ্রমণের ক্ষেত্রে সতর্ক করেছে যুক্তরাজ্য। ‘সন্ত্রাসী হামলার আশঙ্কা’র কথা তুলে ধরে বাংলাদেশের কয়েকটি এলাকায় অপ্রয়োজনীয় ভ্রমণ এড়ানোর পরামর্শ দেয়া হয়েছে। দেশটির পররাষ্ট্র দফতরের ওয়েবসাইটে এক বিজ্ঞপ্তিতে এ সতর্কতা জারি করা হয়।

ফরেন, কমনওয়েলথ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অফিসের (এফসিডিও) ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সন্ত্রাসীরা বাংলাদেশের ভেতরে হামলা চালাতে পারে। বাংলাদেশের কয়েকটি এলাকায় নিরাপত্তার ঝুঁকি আছে। সাম্প্রতিক ঘটনাবলী ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে এ নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

ফসিডিও বলছে, বাংলাদেশের কিছু এলাকায় সহিংসতা এবং সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের আশঙ্কা রয়েছে। এছাড়া স্থানীয় বিরোধ ও নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনাও এই সতর্কতা জারিতে ভূমিকা রেখেছে। দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের কিছু অংশ এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে ভ্রমণকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
 
বিজ্ঞপ্তিতে রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানের নাম উল্লেখ করা হয়েছে।

ব্রিটিশ নাগরিকদের জরুরি প্রয়োজনে ভ্রমণের সময় সতর্ক থাকা এবং স্থানীয় প্রশাসনের নির্দেশনা মেনে চলার আহ্বানও জানানো হয়েছে। নিরাপত্তাজনিত তথ্য জানার জন্য এফসিডিও’র ওয়েবসাইট নিয়মিত ভিজিটের কথা বলা হয়েছে।

Thursday, January 2, 2025

যুক্তরাজ্যে ছেলেদের নামের ক্ষেত্রে জনপ্রিয়তার শীর্ষে ‘মুহাম্মদ’

যুক্তরাজ্যে ছেলেদের জন্য সবচেয়ে জনপ্রিয় নাম হয়ে উঠেছে ‘মুহাম্মদ’। দেশটির সরকারি সংস্থা অফিস ফর ন্যাশনাল স্ট্যাটিস্টিকসের (ওএনএস) এক জরিপে এ তথ্য জানানো হয়।

ওএনএসের নতুন জরিপ অনুযায়ী, মুহাম্মদ নামটি জনপ্রিয়তায় ‘নোয়াহ’কে ছাড়িয়ে গেছে। নোয়াহ নামটি দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে। যুক্তরাজ্যে ছেলেদের সবচেয়ে জনপ্রিয় নামের তালিকায় তৃতীয় স্থানে রয়েছে ‘অলিভার’ নামটি।

এদিকে যুক্তরাজ্যে টানা অষ্টম বছরের মতো মেয়েদের সবচেয়ে জনপ্রিয় নাম হিসেবে প্রথম অবস্থান ধরে রেখেছে ‘অলিভিয়া’। দ্বিতীয় এবং তৃতীয় স্থানে রয়েছে যথাক্রমে ‘অ্যামেলিয়া’ ও ‘আইলা’।
 
প্রতি বছর ওএনএস সবশেষ শিশুর নাম সম্পর্কিত তথ্য বিশ্লেষণ করে। প্রতিষ্ঠানটি যুক্তরাজ্যের সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং অপ্রিয় নামগুলো প্রকাশ করে।

ওএনএস জানায়, ২০২৩ সালে ইংল্যান্ড এবং ওয়েলসে ৪ হাজার ৬৬১ শিশুর নাম রাখা হয় ‘মুহাম্মদ’। ২০২২ সালে ৪ হাজার ১৭৭টি শিশুর এই নাম রাখা হয়েছিল।

Thursday, January 2, 2025

যুক্তরাজ্যে আকস্মিক বন্যা

প্রবল বৃষ্টির কারণে ইংল্যান্ডের উত্তরাঞ্চলের ম্যানচেস্টার শহরের নিম্নাঞ্চলে দেখা দিয়েছে আকস্মিক বন্যা। এতে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে কয়েকটি শহরের বাসিন্দা। আকস্মিক এ বন্যা মোকাবিলায় জারি করা হয়েছে হলুদ সতর্কতা।

সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে, প্রবল বৃষ্টিপাতে রাস্তা-ঘাট ডুবে যাওয়ায় ব্যাহত হচ্ছে যান চলাচল। বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে বিদ্যুৎ এবং সুপেয় পানির ব্যবস্থা। রাস্তার পাশে দাঁড় করানো গাড়িও তলিয়ে গেছে পানিতে। আকস্মিক এ বন্যায় বছরের প্রথম দিনই চরম দুর্ভোগে পড়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
 
ম্যানচেস্টার পুলিশ জানিয়েছে, কিছু কিছু এলাকায় বহুতল ভবনগুলোর প্রথম তলা ডুবে গিয়েছে। এতে, বাইরে যাওয়া-আসার রাস্তাও বন্ধ হয়ে গেছে। এই অবস্থায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাজে নেমেছে স্থানীয় প্রশাসন।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অলিগলি ঘুরে বন্যার পানি নিষ্কাশনের চেষ্টা চালাচ্ছে কর্মীরা। আটকে পড়াদের কাছে নৌকায় করে সুপেয় পানিও পৌঁছে দেয়া হচ্ছে। চলছে উদ্ধারকাজ। বন্যার কারণে ম্যানচেস্টার বিমানবন্দর এবং রেল স্টেশনও বন্ধ হয়ে গেছে।
 
দেশটির আবহাওয়া দফতর বলছে, ইংল্যান্ডের উত্তর পশ্চিমাঞ্চলের কিছু কিছু এলাকায় গত দুই দিনে যে পরিমাণ বৃষ্টি হয়েছে তা এলাকাগুলোর এক মাসের বৃষ্টিপাতের সমান। এই বৃষ্টিপাত আরো বাড়তে পারে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন তারা।

এদিকে, ইংল্যান্ডজুড়ে প্রায় ১০০ এলাকায় বন্যা সতর্কতা জারি করা হয়েছে। কিছু কিছু এলাকায় তুষারপাতের সম্ভাবনাও রয়েছে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস। জারি করা হয়েছে ‘হলুদ’ সতর্কতা।

Thursday, January 2, 2025

যুক্তরাজ্যসহ ইউরোপ ভ্রমণে মার্কিন নাগরিকদের জন্য নতুন নীতি

যুক্তরাজ্য এবং ইউরোপের দেশসমূহে যেতে আগ্রহী মার্কিন নাগরিকদের অতিরিক্ত ভিসা ফি এবং নতুন কিছু রীতি অনুসরণ করতে হবে। ৮ জানুয়ারি থেকে শুরু হবে এসব বিধি। যুক্তরাষ্ট্র ছাড়াও অ্যান্ডোরা, অস্ট্রিয়া, বেলজিয়াম, ব্রুনাই, কানাডা, ডেনমার্ক, ফিনল্যান্ড, ফ্রাঞ্চ, জার্মানি, গ্রিস, হংকং, আইসল্যান্ড, আয়ারল্যান্ড, ইতালি, জাপান, লিচটেনস্টিন, লুক্সেমবার্গ, মালয়েশিয়া, মাল্টা, মোনাকো, নেদারল্যান্ডস, নরওয়ে এবং পর্তুগালের পাসপোর্টধারীদেরকেও এই ব্যবস্থা অনুসরণ করতে হবে। এছাড়া, যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে যাওয়ার ক্ষেত্রেও (অভ্যন্তরীণ রুটে) আমেরিকানদের লাগবে ‘রিয়েল আইডি’ এবং প্রচলিত আইডির পরিবর্তে রিয়েল আইডি ছাড়া বিমানে ওঠা যাবে না ৭ মে’র পর থেকে।

ওয়াশিংটন ডিসিতে অবস্থিত ব্রিটিশ হাইকমিশন এবং ইউরোপিয় ইউনিয়নের পক্ষ থেকে ১ জানুয়ারি জানানো হয়েছে যে, যুক্তরাজ্য ভ্রমণকারী আমেরিকানদের এখন থেকে যুক্তরাজ্যের ‘ইলেক্ট্রনিক ট্র্যাভেল অথরাইজেশন’ (ইটিএ) সিস্টেমে আবেদন করতে হবে। এটি হচ্ছে ভ্রমণে ইচ্ছুকদের ব্যাপারে তথ্য যাচাইয়ের সর্বাধুনিক একটি প্রক্রিয়া। এজন্যে ফি লাগবে ১৩ ডলার। একবার ইটিএ’র অনুমতি পেলে টানা দু’বছর যতবার খুশি ততবার ব্রিটেনে যেতে পারবেন আমেরিকান পাসপোর্টধারীরা। একইধরনের আরেকটি সিস্টেম এ বছরের ২৫ মে থেকে কার্যকর করবে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের দেশসমূহ এবং সেটি হচ্ছে ‘ইউরোপিয়ান ট্র্যাভেল ইনফরমেশন অ্যান্ড অথরাইজেশন সিস্টেম’। ভিসা ছাড়া যারা ইউরোপের বিভিন্ন দেশ ভ্রমণ করতে চান তাদের জন্যে আগাম স্ক্রিনিংয়ের এই ব্যবস্থা খুবই ফলদায়ক হবে বলে আশা করা হচ্ছে। তবে এজন্যে কত ফি লাগবে তা এখনো স্থির করা হয়নি। ইউএস ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড এডমিনিস্ট্রেশন সূত্রে জানা গেছে, ২০২৩ সালে যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্যে ২০ মিলিয়নের (দুই কোটি) অধিক মানুষ যাতায়াত করেছে। গতবছর বিমানের টিকিটের মূল্য বৃদ্ধি পেলেও ভ্রমণকারীর সংখ্যায় কোন হেরফের হয়নি। তবে এখন নতুন ব্যবস্থাপনায় ফিসা ফি-তে অতিরিক্ত ১৩ ডলারের কোন প্রভাব পড়বে কিনা তা সময়েই জানা যাবে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।

প্রসঙ্গত, উল্লেখ্য ইটিএর অনুমোদন ব্যতিত কাউকেই বিমানে উঠতে দেয়া হবে না। তাই ভ্রমণের তারিখের অন্তত ৩ দিন আগে আবেদন করতে হবে ইটিএর অনুমতির জন্যে।

এদিকে, ১৮ বছরের ঊর্ধ্ব বয়সী আমেরিকানদের ৭ মে থেকে অভ্যন্তরীণ রুটে বিমানে যাতায়াতের জন্যে অবশ্যই প্রচলিত ড্রাইভার লাইসেন্সের পরিবর্তে ‘রিয়েল আইডি’ লাগবে। ‘রিয়েল আইডি’তে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির যাবতীয় তথ্য সংরক্ষিত থাকে অর্থাৎ সেটিকে পাসপোর্টের বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করা যায়। অর্থাৎ ফেডারেল প্রশাসন কর্তৃক নিরাপত্তা ব্যবস্থা যাচাইয়ের সব কিছু সেখানে থাকে।

আমেরিকা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ভ্রমণে ইচ্ছুকদের বছরের শুরুতেই স্মরণ করিয়ে দেয়া হয়েছে নিজ নিজ পাসপোর্টের মেয়াদ পরখ করার জন্যে। কারণ, গতবছরও অনেক আমেরিকান কনফার্ম টিকিটসহ এয়ারপোর্টে গিয়েও গন্তব্যে রওয়ানা দিতে পারেননি। লাগেজ কাউন্টারে যাবার পর ক্লার্ক দেখতে পান যে, পাসপোর্ট নবায়নের সময় অতিবাহিত হয়েছে কিংবা ৩ মাসের কম সময় আছে মেয়াদ শেষ হবার।

Thursday, January 2, 2025

যুক্তরাজ্যে যুক্তরাষ্ট্রের তিন বিমানঘাঁটির ওপর রহস্যময় ড্রোন শনাক্ত

যুক্তরাজ্যে যুক্তরাষ্ট্রের তিনটি বিমানঘাঁটির ওপর ও আশপাশের এলাকায় একাধিক ছোট মানুষবিহীন বিমান বা ড্রোন শনাক্ত করা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিমানবাহিনী (ইউএসএএফ) বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।

এসব ড্রোন সাফোক কাউন্টির আরএএফ লাকেনহিথ, আরএএফ মিলডেনহল এবং পার্শ্ববর্তী কাউন্টি নরফোকের আরএএফ ফেল্টওয়েলের ওপর গত বুধ ও শুক্রবার দেখা গেছে।

ইউএসএএফ জানিয়েছে, এসব ড্রোন নিরাপত্তার জন্য হুমকিস্বরূপ ছিল কি না, তা এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি। ড্রোন মোকাবিলায় কোনো প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ব্যবহার করা হয়েছে কি না, সে ব্যাপারে মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে তারা। তবে নিজেদের স্থাপনা সুরক্ষার অধিকার তাদের রয়েছে বলে জানিয়েছেন।

ইউরোপে ইউএসএএফের এক মুখপাত্র বলেন, “আরএএফ লাকেনহিথ, আরএএফ মিলডেনহল এবং আরএএফ ফেল্টওয়েলের আশপাশে ছোট মানুষবিহীন বিমান (ড্রোন) দেখা গেছে। তবে ড্রোনগুলোর অনুপ্রবেশে কোনো ক্ষতি হয়নি।”

যুক্তরাজ্যের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র বলেছেন, “আমরা এসব হুমকিকে গুরুত্ব সহকারে নিয়েছি এবং ঘাঁটিগুলোর সুরক্ষা নিশ্চিত করতে শক্তিশালী ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি।”

মার্কিন ও ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ যৌথভাবে কাজ করে আকাশসীমার পর্যবেক্ষণ বাড়িয়েছে এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।

Monday, November 25, 2024

যুক্তরাজ্যে বেড়েছে নোরোভাইরাসের সংক্রমণ

যুক্তরাজ্যে প্রতি বছর শীত মৌসুমে নোরোভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে এবং এতে মৃত্যুর ঘটনাও ঘটে। সাম্প্রতিককালে এ ভাইরাসের নতুন একটি স্ট্রেইন, "কাওয়াসাকি", ব্যাপকভাবে সংক্রমণ ঘটাচ্ছে। "উইন্টার ভমিটিং বাগ" নামে পরিচিত এই ভাইরাসের সংক্রমণ গত পাঁচ বছরের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে।

নতুন কাওয়াসাকি স্ট্রেইনটি প্রথম ২০১৪ সালে চীন ও জাপানে শনাক্ত হয়েছিল এবং এখন তা ইউরোপেও ছড়িয়ে পড়ছে। যুক্তরাজ্যের হেলথ সিকিউরিটি এজেন্সি জানিয়েছে, চলতি বছরের এপ্রিল থেকে ইংল্যান্ডে এই স্ট্রেইনের সংক্রমণ বেড়েছে। ২০২৪-২৫ সালের প্রথম ১২ সপ্তাহেই কাওয়াসাকিতে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা আগের তুলনায় অনেক বেশি ছিল। এই স্ট্রেইনটির কারণে গুরুতর শারীরিক অসুস্থতা দেখা দিচ্ছে এবং ফলে হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা গড়ের তুলনায় প্রায় ২৬ শতাংশ বেশি।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উন্নতমানের নজরদারি ও রিপোর্টিং ব্যবস্থার কারণে নোরোভাইরাসের সংক্রমণের হার শনাক্ত করা সহজ হয়েছে। তবে কাওয়াসাকি স্ট্রেইন সম্পর্কে এখনও অনেক কিছু অজানা। সাধারণত নোরোভাইরাসে আক্রান্ত হলে ডায়রিয়া, বমি, জ্বর ও মাথাব্যথা দেখা যায়, তবে নতুন স্ট্রেইনে ভিন্ন ভিন্ন উপসর্গও দেখা যাচ্ছে, যা কিছুটা কোভিড স্ট্রেইনের মতো পরিবর্তিত লক্ষণ প্রকাশ করছে।

লন্ডন স্কুল অফ হাইজিন অ্যান্ড ট্রপিক্যাল মেডিসিনের বিশেষজ্ঞ ডা. ডেভিড অ্যালেন সতর্ক করেছেন যে, এই দ্বিতীয় স্ট্রেইনটি প্রথমটির চেয়ে বেশি মারাত্মক হতে পারে। এই ভাইরাসটি অত্যন্ত সংক্রামক, যা প্রতি বছর যুক্তরাজ্যে কয়েক হাজার মানুষকে হাসপাতালে ভর্তি করাতে বাধ্য করে। বিশ্বব্যাপী নোরোভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে প্রতিবছর প্রায় দুই লাখ মানুষ মারা যায়, যার ২৫ শতাংশ শিশু। যুক্তরাজ্যে এই ভাইরাসের কারণে বছরে গড়ে প্রায় ৮০ জন মানুষ মারা যান, বিশেষত বয়স্ক এবং দুর্বল ইমিউন সিস্টেমের ব্যক্তিরা অধিক ঝুঁকিতে থাকেন।

জনস্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে একাধিক পদক্ষেপ নিয়েছে। মডার্না তাদের নতুন এম-আরএনএ ভ্যাকসিনের চূড়ান্ত পর্যায়ের ট্রায়াল শুরু করতে যাচ্ছে, যা ভাইরাসটির বিরুদ্ধে কার্যকরী হতে পারে। এনএইচএস পরামর্শ দিচ্ছে, সংক্রমণ এড়াতে সাবান ও পানি দিয়ে নিয়মিত হাত ধোয়াই সবচেয়ে কার্যকর পদ্ধতি।

সতর্কতা: নোরোভাইরাসের উপসর্গ দেখা দিলে অন্তত ৪৮ ঘণ্টা লক্ষ্মণমুক্ত না হওয়া পর্যন্ত হাসপাতালে যাওয়া থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দেয়া হয়েছে, যাতে ভাইরাসের সংক্রমণ আরও ছড়িয়ে পড়া প্রতিরোধ করা যায়।

2024-11-11

যুক্তরাজ্যের ভিসা আবেদনে ভুয়া কাগজপত্র

যুক্তরাজ্যে একটি প্রতারক চক্র বিদেশি শিক্ষার্থীদের কাজের ভিসার জন্য ভুয়া কাগজপত্র দিয়ে লাখ লাখ পাউন্ড হাতিয়ে নিয়েছে। বিবিসির একটি অনুসন্ধানে দেখা গেছে, নিয়োগ এজেন্ট হিসেবে কাজ করা দালালরা এমনটা করেছেন। যুক্তরাজ্যের সেবাযত্ন খাতে (কেয়ার ইন্ডাস্ট্রি) চাকরি করতে আগ্রহী বিভিন্ন দেশের শিক্ষার্থীদের নিশানা করেন তাঁরা।

যুক্তরাজ্যে কাজের (ওয়ার্ক পারমিট) ভিসার আবেদন করতে স্পনসরশিপ সনদ জমা দিতে হয়। নিয়োগদাতা প্রতিষ্ঠান এ সনদ দেয়। এতে চাকরিপ্রার্থীর বিস্তারিত তথ্য, পদবি, বেতনসহ চাকরির অন্যান্য তথ্য থাকে।

স্পনসরশিপ সনদ পেতে চাকরিপ্রার্থীকে কোনো অর্থ খরচ করতে হয় না। অথচ ভুক্তভোগী প্রত্যেক শিক্ষার্থীর কাছ থেকে এ সনদের জন্য ১৭ হাজার পাউন্ড (২৬ লাখ ৭০ হাজার টাকা) পর্যন্ত আদায় করেছে প্রতারক চক্র।

পরে শিক্ষার্থীরা দক্ষ কর্মীর ভিসার জন্য আবেদন করতে গিয়ে বুঝতে পারেন যে এসব কাগজ ভুয়া। বৈধতা না থাকায় যুক্তরাজ্যের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পরে তাঁদের কাগজপত্র বাতিল করে দেয়।

এমন প্রতারণার বেশ কিছু নথি বিবিসির হাতে এসেছে। এমনই এক নথিতে দেখা গেছে, তৈমুর রাজা নামের এক ব্যক্তি ১২ লাখ পাউন্ডের (১৮ কোটি ৮৫ লাখ টাকা) বিনিময়ে ১৪১টি ভিসাসংক্রান্ত কাগজ বিক্রি করেছেন, যেগুলোর বেশির ভাগই ভুয়া। তবে তিনি তাঁর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, তিনি অন্যায় কিছু করেননি এবং শিক্ষার্থীদের কিছু অর্থ ফেরত দিয়েছেন।

তৈমুর রাজা যুক্তরাজ্যের ওয়েস্ট মিডল্যান্ডস অঞ্চলে একটি অফিস ভাড়া নিয়ে সেখানে কয়েকজন কর্মী নিয়োগ দিয়েছিলেন। সেখান থেকেই প্রতারণার ফাঁদ পাতেন। তিনি কেয়ার হোমে কাজের ব্যবস্থা করে দেওয়া ও চাকরির স্পনসরশিপ পাইয়ে দেওয়ার আশ্বাস দেন কয়েক ডজন শিক্ষার্থীকে। তাঁদের অনেকেই প্রতারিত হয়ে জীবনের সব সঞ্চয় হারিয়েছেন। তবে অর্থ প্রদান করা কেউ কেউ সত্যিকার অর্থে ভিসা ও চাকরি পেয়েছেন বলে বিবিসিকে বলা হয়েছে।

কাজের ভিসা পাওয়ার চেষ্টা করতে গিয়ে হাজার হাজার পাউন্ড খুইয়েছেন, এমন ১৭ নারী-পুরুষের সঙ্গে কথা বলেছে বিবিসি। তাঁদের মধ্যে তিন নারী শিক্ষার্থী ভিন্ন ভিন্ন দালালকে মোট ৩৮ হাজার পাউন্ড দিয়েছেন। ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীদের বয়স ২০-এর ঘরে। যুক্তরাজ্যে তাঁদের জন্য সৌভাগ্য এনে দেওয়ার আশ্বাস দেন দালালরা। কিন্তু বাস্তবে ঘটেছে উলটো। প্রতারিত হয়ে কানাকড়ি সব হারিয়েছেন তাঁরা। এখন নিজ দেশে পরিবারের কাছে ফিরে যাওয়া নিয়েই আছেন শঙ্কায়।

নীলা নামের (ছদ্মনাম) এক শিক্ষার্থী বিবিসিকে বলেন, ‘আমি এখানে (যুক্তরাজ্য) আটকা পড়ে গেছি। এখন যদি দেশে ফিরে যাই, তবে আমার পরিবারের সব সঞ্চয় বৃথা যাবে।’

২০২২ সালে যুক্তরাজ্যে কেয়ারহোমসহ সেবাযত্ন খাতে রেকর্ড পরিমাণ কর্মসংস্থান তৈরি হয়। খালি হয় ১ লাখ ৬৫ হাজার পদ। সরকার শূন্য পদ পূরণে নিয়োগ বৃদ্ধি করে এবং আন্তর্জাতিক পর্যায় থেকেও আবেদনের অনুমতি দেয়। বিষয়টি ভারত, নাইজেরিয়া ও ফিলিপাইনের মতো দেশগুলোয় ব্যাপক সাড়া ফেলে। আর এ সুযোগ কাজে লাগায় প্রতারক চক্র।

নিয়ম অনুযায়ী, নিবন্ধিত কোনো প্রতিষ্ঠান চাকরিপ্রার্থীর স্পনসর হলে তবেই তিনি ওয়ার্ক পারমিট ভিসার আবেদন করতে পারবেন। আর স্পনসরশিপের জন্য চাকরিপ্রার্থীকে কোনো অর্থ ব্যয় করতে হয় না।

২১ বছর বয়সী নাদিয়ার (ছদ্মনাম) বাড়ি ভারতে। ২০২১ সালে তিনি কম্পিউটার সায়েন্সে স্নাতক সম্পন্ন করার জন্য শিক্ষার্থী ভিসায় যুক্তরাজ্যে যান। তবে এক বছর পর ভাবেন, প্রতিবছর ২২ হাজার পাউন্ড টিউশন ফি দেওয়ার বদলে একটি চাকরি খুঁজবেন।

নাদিয়ার এক বন্ধু তাঁকে এক দালালের ফোন নম্বর জোগাড় করে দেন। ওই দালাল নাদিয়াকে বলেন, কেয়ারহোমে চাকরি পেতে তাঁকে কাগজপত্রের ব্যবস্থা করে দিতে পারবেন তিনি। বিনিময়ে দিতে হবে ১০ হাজার পাউন্ড।

দালালকে নিরাপদ মনে করেছিলেন নাদিয়া। তিনি বলেন, ‘দালাল আমাকে বলেছিলেন, ‘‘আমি তোমার কাছ থেকে বেশি অর্থ নেব না। কারণ, তুমি দেখতে আমার বোনের মতোই।’’’

নাদিয়া দালালকে অগ্রিম আট হাজার পাউন্ড দেন। প্রত্যাশিত কাগজ হাতে পাওয়ার জন্য তাঁকে ছয় মাস অপেক্ষা করতে হয়েছে। কাগজে লেখা ছিল, ওয়ালসালের একটি কেয়ারহোমে চাকরি পেয়েছেন নাদিয়া।

এই শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমি সরাসরি ওই কেয়ারহোমে ফোন করি এবং আমার ভিসা সম্পর্কে জানতে চাই। কিন্তু তারা বলেছে, কোনো স্পনসরশিপ সনদ দেয়নি তারা। কারণ, তাদের অফিসে কোনো পদ খালি নেই।’

এর মধ্যেই দালাল নাদিয়ার ফোন নম্বর ব্লক করে দেন। এ বিষয়ে পুলিশের কাছে অভিযোগ দিতে নাদিয়াকে পরামর্শ দেন কেউ কেউ। কিন্তু বিবিসিকে তিনি বলেন, এ ঘটনায় তিনি অনেক বেশি ঘাবড়ে গিয়েছিলেন।

ভারতীয় শিক্ষার্থী নীলা থাকেন বার্মিংহামে। নীলা বলেন, তাঁর পরিবারের বিশ্বাস ছিল, যুক্তরাজ্যে তাঁর পেছনে বিনিয়োগ করলে তিনি আরও বেশি দক্ষ হয়ে উঠবেন এবং সেখানে ভারতের চেয়ে বেশি অর্থ উপার্জন করতে পারবেন।

প্রতারণার শিকার এ শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমার শ্বশুর সেনাবাহিনীতে ছিলেন। আমার ওপর তাঁর আস্থা ছিল। সে জন্য জীবনের সব সঞ্চয় আমাকে দিয়ে দিয়েছেন।’

নীলা তাঁর শিক্ষার্থী ভিসাকে সেবাযত্নকর্মীর ভিসায় রূপান্তর করতে যুক্তরাজ্যের উলভারহাম্পটনে একটি প্রশিক্ষণ প্রদানকারী সংস্থায় গিয়েছিলেন। তিনি বলেন, সেখানকার কর্মীরা ছিলেন অনেক বেশি ভদ্র ও মার্জিত। তাঁরা নিজেদের স্বচ্ছ প্রমাণ করার জন্য আমাকে ই–মেইল, চিঠি ও বেশ কিছু ভিসার কপি দেখান।

স্পনসরশিপ সনদ পেতে নীলা ওই সংস্থাকে ১৫ হাজার পাউন্ড দেন। কিন্তু পরে যুক্তরাজ্যের হোম অফিস সনদটি বাতিল করে দিলে বুঝতে পারেন যে সেটি ভুয়া। পড়াশোনার খরচ চালানোর জন্য তিনি পরিবারের কাছ থেকে ওই ১৫ হাজার পাউন্ড নিয়ে এসেছিলেন।


এই শিক্ষার্থী বলেন, তাঁর জীবন ধ্বংস হয়ে গেছে। অথচ প্রতারকেরা কোনো ভয় ছাড়াই এখনো মুক্ত বাতাসে ঘুরে বেড়াচ্ছেন।

নাদিয়াসহ ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা বৈধভাবে যুক্তরাজ্যে থেকে যেতে জোর চেষ্টা চালিয়েছেন। কিন্তু এখন তাঁরা ঝুঁকিতে আছেন। তাঁদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হতে পারে।

বিবিসি জানতে পেরেছে, পাকিস্তানের নাগরিক তৈমুর রাজা উলভারহাম্পটনে থাকেন আর কাজ করেন বার্মিংহামে। একটি ভিসা নেটওয়ার্কের শীর্ষ কর্মকর্তা তিনি।

তৈমুর ওয়েস্ট মিডল্যান্ডসের নিয়োগ এজেন্সিগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করেন। এজেন্সিগুলোর গ্রাহকদের জন্য কেয়ারহোমে চাকরি ও সংশ্লিষ্ট ভিসা আবেদনের ব্যবস্থা করে দিতে পারবেন বলে আশ্বাস দেন তিনি।

স্পনসরশিপের অনেকগুলো নথি নজরে এসেছে বিবিসির। এতে দেখা গেছে, তৈমুর একটি এজেন্সিকে ১৪১ জনের আবেদনের কাগজ সরবরাহ করেছেন। বিনিময়ে প্রত্যেক আবেদনকারীর কাছ থেকে নিয়েছেন ১০ থেকে ২০ হাজার পাউন্ড। সে হিসাবে হাতিয়ে নেওয়া মোট অর্থের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১২ লাখ পাউন্ড। তৈমুর এসব কাগজ পিডিএফ আকারে হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে ওই এজেন্সিতে পাঠিয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছে বিবিসি।

দেখা গেছে, আবেদনকারীদের ১৪১টি কাগজের মধ্যে ৮৬টি ভুয়া। যুক্তরাজ্যের হোম অফিস এসব কাগজ বাতিল করে দিয়েছে। যদিও ৫৫ জন আবেদনকারী সফলভাবে ভিসা পেয়েছেন। তবে যেসব কেয়ারহোমে তাঁদের স্পনসরশিপের কথা বলা হয়েছে, সেগুলো জানিয়েছে, তাদের কাছে এ ধরনের বন্দোবস্তের কোনো রেকর্ড নেই।

অজয় থিন্ড নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, সেবাযত্নকর্মীর ভিসার জন্য তিনি তৈমুরকে ১৬ হাজার পাউন্ড দেন। পরে তাঁকে তৈমুরের সঙ্গে কাজ করার জন্য নিয়োগ দেওয়া হয়। তিনিসহ ছয়জন তৈমুরের জন্য কাজ করতেন। তাঁদের সপ্তাহে ৫০০-৭০০ পাউন্ড বেতন দেওয়া হতো। তাঁদের কাজ ছিল কাগজপত্র সংকলন করা এবং আবেদনকারীদের জন্য ফরম পূরণ করে দেওয়া।
অজয় বলেন, তৈমুর ভাড়ায় কয়েকটি অফিস চালাতেন। এমনকি দলের সদস্যদের দুবাইয়ে ব্যয়বহুল ভ্রমণেও নিয়ে গেছেন।


তবে ২০২৩ সালের এপ্রিল থেকে অজয়ের মনে সন্দেহ তৈরি হয়। তিনি দেখেন, হোম অফিস আবেদনগুলো বাতিল করে দিয়েছে। এগুলোর মধ্যে তাঁর কয়েকজন বন্ধুর আবেদনও ছিল, যাঁরা তৈমুরকে মোট ৪০ হাজার পাউন্ড দিয়েছিলেন।

অজয় বলেন, ‘এ বিষয়ে তৈমুরের কাছে জানতে চাইলে তিনি আমাকে বলেন, “তোমার মাথা এত চাপ নিতে পারবে না। এসব চাপ আমাকেই সামলাতে দাও।’”

অজয় আরও বলেন, ‘আমি এসব ছেড়ে চলে যেতে পারিনি। কারণ, টাকাটা আমার দরকার ছিল। আমি খুব বাজে পরিস্থিতির মধ্যে আটকে গেছি।’

অজয়ের দাবি, তৈমুর অনেকগুলো সংস্থার সঙ্গে কাজ করতেন। এর ফলে হাতিয়ে নেওয়া অর্থের পরিমাণ ১২ লাখ পাউন্ডের চেয়ে অনেক বেশি হতে পারে।

অভিযোগ সম্পর্কে জানতে তৈমুরের সঙ্গে যোগাযোগ করে বিবিসি। তিনি বিবিসিকে বলেন, শিক্ষার্থীদের অভিযোগগুলো মিথ্যা ও একপক্ষীয়। তিনি তাঁর আইনজীবীদের সঙ্গে এ বিষয়ে যোগাযোগ করছেন বলেও জানান। ২০২৩ সালের ডিসেম্বরের পর থেকে তৈমুর পাকিস্তানে অবস্থান করছেন।

ভুক্তভোগীদের বড় একটি অংশই পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করেনি। ওয়ার্ক রাইটস সেন্টারের অভিবাসন বিভাগের প্রধান লুক পিপার বলেন, অনেক মানুষ পুলিশের কাছে আসেন না। কারণ, হোম অফিস এবং প্রতিবেদন দাখিলের পরিণতি সম্পর্কে তাঁদের মধ্যে একধরনের আতঙ্ক কাজ করে। পরিবর্তে তাঁরা ওয়েস্ট মিডল্যান্ডসের শিখ উপাসনালয় গুরুদুয়ারায় গিয়ে প্রতিকার চান। গুরুদুয়ারার সদস্যরা প্রতারকদের বিরুদ্ধে অনেক দিন ধরেই লড়াই করছেন। কিছু মানুষের অর্থ উদ্ধারে সক্ষমও হয়েছেন তাঁরা।

গুরুদুয়ারার শিখ পরামর্শ কেন্দ্রের মন্টি সিং বলেন, হাজার হাজার ভুক্তভোগী সহায়তা চেয়ে তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। ২০২২ সাল থেকে কেন্দ্রটি এ ধরনের প্রতারণার ঘটনা নিয়ে কাজ করছে।

মন্টি সিং বলেন, তৈমুর এ পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের ২ লাখ ৫৮ হাজার পাউন্ড ফেরত দিয়েছেন। তাঁরা এখন বিষয়টি জাতীয় অপরাধবিষয়ক সংস্থার কাছে হস্তান্তর করেছেন।

2024-09-07

কী আছে ব্রিটেনের নির্বাচনে জয়ী লেবার পার্টির অভিবাসন নীতিতে?

যুক্তরাজ্যের সদ্যসমাপ্ত নির্বাচনে যে সব ইস্যু নিয়ে প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো প্রচারণা চালিয়েছিল, তার মধ্যে সম্ভবত সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিল অভিবাসন।

কনজারভেটিভ পার্টি অবশ্য বরাবরই তাদের প্রচারে অভিবাসনের প্রশ্নটিকে খুবই গুরুত্ব দিয়ে থাকে, তবে এবারে লেবার পার্টিও ঠিক সেই একই রাস্তায় হেঁটেছে।

বিদেশ থেকে যত লোক ব্রিটেনে আসছেন এবং যত লোক ব্রিটেন ছাড়ছেন, এই দুয়ের মধ্যে যে ব্যবধান– সেই ‘নেট মাইগ্রেশন লেভেল’টা অবশ্য উভয় দলই কমিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল।

ভোটের আগে একটি প্রথম সারির বেসরকারি সংস্থার করা জরিপেও দেখা গিয়েছিল, দেশের ৪৩ শতাংশ লোক মনে করেন অভিবাসন ব্রিটিশ সমাজে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। আর অভিবাসন ইতিবাচক প্রভাব ফেলছে বলে জানিয়েছিলেন ৩৭ শতাংশ লোক।

কিন্তু নির্বাচনে জয়ী লেবার পার্টির অভিবাসন নীতিতে ঠিক কী কী জিনিস ছিল? কনজারভেটিভ পার্টি বা টোরিদের অভিবাসন নীতির সঙ্গে সেগুলোর পার্থক্যই বা কী?

এই প্রতিবেদনে ঠিক সেই বিষয়গুলোই তুলে ধরা হয়েছে।

ডিঙি নৌকায় অবৈধ অভিবাসন

প্রতি বছর হাজার হাজার লোক ইউরোপের মূল ভূখণ্ড থেকে ডিঙি বা ছোট নৌকায় চেপে ইংলিশ চ্যানেল পেরিয়ে ভিসা ছাড়াই যুক্তরাজ্যে প্রবেশ করার চেষ্টা করে থাকেন।

সাগর পেরিয়ে আসা এই নৌকাগুলোকে ব্রিটেনের উপকূলে ভেড়ার আগেই আটকে দেওয়া হবে, যেটাকে বলা হয় ‘স্টপ দ্য বোটস’– তা কিন্তু দুই প্রধান দলেরই প্রতিশ্রতিতে অন্তভু‍র্ক্ত ছিল।

চলতি বছরের প্রথম কয়েক মাসে (৭ জুন পর্যন্ত) চ্যানেল পেরিয়ে মোট ১১ হাজার ৯৫ জন অভিবাসী ব্রিটেনে প্রবেশ করেছে।

গত বছর (২০২৩) ও তার আগের বছরের (২০২২) একই সময় পর্যন্ত যতজন অবৈধ অভিবাসী ব্রিটেনের সাগরতটে এসে নামে, এবারের সংখ্যাটি তার তুলনায় যথাক্রমে ৪৬% ও ১১% বেশি।

এই রুটে অবৈধ অভিবাসন আটকানোর জন্য টোরি সরকার ফ্রান্সের সঙ্গে সহযোগিতা বৃদ্ধি করেছিল, যাতে ওই নৌকাগুলোকে ব্রিটেনের জলসীমায় প্রবেশ করার আগেই আটকে দেওয়া যায়। তাছাড়া মানব পাচারকারীদের চক্রগুলোর মোকাবিলা করতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে সমঝোতাও সই করেছির তারা।

তবে এ ব্যাপারে ঋষি সুনাক সরকারের সবচেয়ে কঠোর ও বিতর্কিত পদক্ষেপ ছিল ‘রোয়ান্ডা নীতি’ ঘোষণা করা – যার আওতায় অবৈধ অভিবাসীদের ব্রিটেনে না রেখে সোজা আফ্রিকার দেশ রোয়ান্ডায় পাঠিয়ে দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছিল।

কনজারভেটিভ পার্টির বক্তব্য ছিল, এই রোয়ান্ডা নীতি অবৈধ অভিবাসীদের ব্রিটেনে আসতেই নিরুত্সাহিত করবে।

আর লেবার পার্টির অবস্থান হলো, রোয়ান্ডা নীতি বাস্তবায়নের নামে যে অর্থ খরচ করা হচ্ছে তারা সেটা অভিবাসন রোখার জন্য আইন প্রয়োগের (‘এনফোর্সসেন্ট’) কর্মকাণ্ডে খরচ করবে।

নির্বাচনি প্রচারণার শুরুতেই তারা যে নীতিগুলো ঘোষণা করে, তার অন্যতম ছিল যে সব অপরাধী চক্র এই ডিঙি নৌকাগুলোতে মানুষ পাঠায় তাদের বিচারের আওতায় আনতে একটি নতুন ‘বর্ডার সিকিওরিটি কমান্ড’ গঠন করা হবে।

নির্বাচিত হলে লেবার পার্টি ‘পরিবর্তনের প্রথম যে সব পদক্ষেপ’ নেবে বলে ঘোষণা করেছিল, তার তিন নম্বরেই ছিল ‘শত শত নতুন বিশেষজ্ঞ তদন্তকারী’ নিয়োগ করার কথা। বলা হয়েছিল, এরা জঙ্গি দমনের বিশেষ ক্ষমতা ব্যবহার করে এই ‘বোট গ্যাং’ গুলোকে নির্মূল করার কাজ চালাবে।

এছাড়াও লেবার পার্টি জানিয়েছে, তারা অবৈধ অভিবাসন রুখতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে নিরাপত্তা সহযোগিতা বাড়াবে, সন্দেহভাজন পাচারকারীদের তল্লাশি ও তাদের আর্থিক লেনদেন মনিটর করার জন্য পুলিশকে অতিরিক্ত ক্ষমতা দেবে এবং ইউ-ভুক্ত দেশগুলো যাতে অবৈধ অভিবাসীদের ফিরিয়ে নেয় সে জন্য ইইউ-এর সঙ্গে নতুন সমঝোতা করার আলোচনা করবে।

রোয়ান্ডা নীতিতে ভিন্ন অবস্থান

অভিবাসনের ইস্যুতে যে প্রশ্নটিতে কনজার্ভেটিভ ও লেবারদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভিন্নতা – তা অবশ্যই বিতর্কিত রোয়ান্ডা নীতি।

গত এপ্রিল মাসেই ঋষি সুনাক সরকারের আনা ‘সেফটি অব রোয়ান্ডা বিল’ পার্লামেন্টে পাস হওয়ার পর আইনে পরিণত হয়েছে।

এর ফলে যদি কেউ বিশ্বের কোনও ‘নিরাপদ দেশ’ থেকে এসে অবৈধভাবে ব্রিটেনে প্রবেশ করেন তাহলে তাকে আফ্রিকার ওই দেশটিতে পাঠিয়ে দেওয়া যাবে এবং তিনি সেখান থেকে অ্যাসাইলামের (আশ্রয়) আবেদন করতে পারবেন।

লেবারের নির্বাচনি ইশতেহারে পরিষ্কার বলা হয়েছে, তারা ক্ষমতায় এলে রোয়ান্ডা পরিকল্পনা পুরোপুরি বাতিল করা হবে। সুতরাং সেক্ষেত্রে অবৈধ অভিবাসীদের নিয়ে কোনও বিমান রোয়ান্ডার উদ্দেশে রওনা দেবে না।

তবে এতদিন যিনি লেবার পার্টির শ্যাডো হোম সেক্রেটারি (ছায়া স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী) ছিলেন, সেই ইয়িভেট কুপার কিন্তু অবৈধ অভিবাসীদের অ্যাসাইলামের আবেদন বাইরের কোনও দেশে প্রসেস করার সম্ভাবনা নাকচ করে দেননি।

লেবার পার্টির নেতা স্যার কিয়ের স্টারমারও গত বছর জানিয়েছিলেন, অভিবাসীদের আবেদন তৃতীয় কোনও দেশে প্রসেস করার লক্ষ্যে একটি ‘অফশোর স্কিম’ তারাও বিবেচনা করবেন – তবে সেই তৃতীয় দেশটি ওই অভিবাসীকে শেষ পর্যন্ত যেখানে ফেরত পাঠানোর কথা ভাবা হচ্ছে সাধারণত সেই রুটেই হবে।

তবে আন্তর্জাতিক আইনি সনদগুলোর প্রতি ব্রিটেনের অঙ্গীকার রক্ষিত হবে বলে লেবার পার্টি কথা দিয়েছে। তাদের ইশতেহারেও পরিষ্কার জানানো হয়েছে, “দ্ব্যর্থহীনভাবে আমরা বলতে চাই ব্রিটেন অবশ্যই ইসিএইচআরের (ইউরোপীয়ান কমিশন অন হিউম্যান রাইটস) সদস্য থাকবে।”

তবে যে অভিবাসীরা ইংলিশ চ্যানেল পেরিয়ে এরপরেও ঢুকবেন, তাদের ব্রিটেনে থেকেই অ্যাসাইলামের আবেদন করতে দেওয়ার পুরনো ব্যবস্থায় ফিরে যাওয়া হবে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েই যাচ্ছে।

‘অ্যাসাইলাম ব্যাকলগ’

২০১৮ থেকে ২০২২ সালের ভেতরে ব্রিটেনে অ্যাসাইলাম সিকার বা আশ্রয়প্রার্থীদের আবেদনের পাহাড় জমতে শুরু করে, যেগুলো প্রসেসই করা যায়নি। ২০২৩ থেকে অবশ্য ‘ব্যাকলগে’র সেই সংখ্যাটা কিছুটা হলেও কমতে শুরু করেছে।

এ বছরের মার্চ মাসের শেষে হোম অফিসের (স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়) পরিসংখ্যান বলছে, তখন পর্যন্ত মোট ১ লাখ ১৮ হাজার ৩২৯ জন আবেদনকারী যুক্তরাজ্যে তাদের অ্যাসাইলামের ব্যাপারে প্রাথমিক সিদ্ধান্ত জানার অপেক্ষায় রয়েছেন।

বস্তুত ২০১০ সালের তুলনায় ব্রিটেনে ‘অ্যাসাইলাম রিমুভালে’র সংখ্যাও (অর্থাত্‌ আবেদনকারীদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর সংখ্যা) প্রায় ৪০ শতাংশ কমে গেছে।

লেবার পার্টি প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, এই পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে তারা নতুন এক হাজার ‘কেসওয়ার্কার’ নিয়োগ করে একটি ‘রিটার্নস অ্যান্ড এনফোর্সমেন্ট ইউনিট’ গঠন করবে।

তাদের ইশতেহারে বলা হয়েছে, নিরাপদ দেশ থেকে আসা যে সব লোকের এখানে থাকার অধিকার নেই, তাদের ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া ‘ফাস্ট-ট্র্যাক’ বা ত্বরান্বিত করতে এই ইউনিট কাজ করবে। ফেরত পাঠানোর আরও নতুন নতুন ব্যবস্থা চালু করতেও আলোচনা চালানো হবে বলে তারা জানিয়েছে।

লেবার পার্টি আরও বলেছে, এই কাজের জন্য তারা দেশের ভেতরে ও বাইরে সিভিল সার্ভেন্টদের নিয়োগ করবে। বিদেশে নিযুক্ত কর্মকর্তারা সেই সব দেশের অভিবাসীদের ফেরানো নিয়ে ওই দেশের সঙ্গে সমঝোতা আলোচনা করবেন।

আর এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে অর্থ আসবে অ্যাসাইলম আবেদনের ‘ব্যাকলগ ক্লিয়ার করে’ – কারণ এখন আশ্রয়প্রার্থীদের হোটেলে রাখতে যে অর্থ খরচ হচ্ছে তার অনেকটাই তখন সাশ্রয় করা সম্ভব হবে।

‘বৈধ অভিবাসন’ নিয়ে লেবার কী বলছে?

বৈধ পথে ব্রিটেনে সবচেয়ে বেশি অভিবাসন হয়ে থাকে মূলত দুটো পদ্ধতিতে – ওয়ার্ক মাইগ্রেশন ও স্টুডেন্ট মাইগ্রেশন। প্রথমটা বিশেষভাবে দক্ষ কর্মীদের জন্য, দ্বিতীয়টা শিক্ষার্থীদের জন্য।

ওয়ার্ক মাইগ্রেশনের আওতায় ব্রিটেনে সবচেয়ে বেশি লোক আসেন ‘স্কিলড ওয়ার্কার ভিসা’য়।

এখানে প্রার্থীকে কোনও সংস্থায় চাকরি নিয়ে আসতে হয় – সেই নিয়োগকর্তার তাকে ‘স্পনসর’ করতে হয়, এছাড়া প্রার্থীর দক্ষতা ও বেতনের ক্ষেত্রেও পূরণ করতে হয় বিশেষ কয়েকটি শর্ত।

গত ২রা জুন স্যার কিয়ের স্টারমার ঘোষণা করেছিলেন যে যুক্তরাজ্যে আরও বেশি বেশি সংখ্যক কর্মীকে প্রশিক্ষণ দিয়ে এবং কাজের উপযুক্ত পরিবেশ রক্ষা করে তারা ‘নেট মাইগ্রেশনে’র সংখ্যা কমিয়ে আনবেন।

তিনি আরও জানান, যে সব নিয়োগকর্তা ব্যবসা চালানোর জন্য বিদেশ থেকে দক্ষ কর্মী আনার ওপরই নির্ভরশীল, তাদের সেই প্রবণতা বন্ধ করার জন্য আইন আনা হবে।

তাছাড়া লেবার পার্টি ব্রিটেনের নিজস্ব কর্মীদের বেশি করে প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্যও আইন আনবে, যাতে করে কোম্পানিগুলোকে বিদেশ থেকে কর্মী নিয়োগ করতে না হয়।

তবে স্বাস্থ্য খাতের কর্মী ও সেবা প্রদানকারীদের (কেয়ার ওয়ার্কার) বিদেশ থেকে নিজের পরিবারের সদস্যদের ব্রিটেনে আনার ক্ষেত্রে যে নিষেধাজ্ঞা আছে, তা পরিবর্তন করার কোনও ‘পরিকল্পনা নেই’ বলেও লেবার পার্টি জানিয়েছে।

লেবারের ইশতেহারেও ‘নেট মাইগ্রেশন’ (যতজন ব্রিটেনে আসছেন আর যতজন ব্রিটেন ছেড়ে চলে যাচ্ছেন, তার ব্যবধান) কমিয়ে আনার কথা বলা হয়েছে – তবে তারা এর জন্য কোনও নির্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্রা স্থির করেনি।

২০১৯ সাল থেকে ব্রিটেনের ‘নেট মাইগ্রেশনে’ এককভাবে সবচেয়ে বড় ভূমিকা ছিল আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী ও তাদের পরিবারের সদস্যদের।

বিদেশ থেকে আসা ছাত্রছাত্রীরা ব্রিটেনে তাদের গ্র্যাজুয়েশন (স্নাতক স্তরের পড়াশুনো) শেষ করার পর দু’বছর সে দেশে বসবাস ও কাজ করতে পারেন। যদি ওই শিক্ষার্থী পিএইডি ডিগ্রিধারী স্নাতক হন, তাহলে তার ক্ষেত্রে এই সময়সীমাটা হলো তিন বছর।

তবে তখন ওই ছাত্রছাত্রীদের স্টুডেন্ট ভিসাকে ‘গ্র্যাজুয়েট ভিসা’য় বদলে নিতে হয়।

চলতি বছরের জানুয়ারিতে কনজারভেটিভ সরকার বেশির ভাগ বিদেশি শিক্ষার্থীর ব্রিটেনে তাদের পরিবারের সদস্যদের নিয়ে আসার নিয়মটি বাতিল করে দিয়েছে।

শুধু পোস্টগ্র্যাজুয়েট (স্নাতকোত্তর) রিসার্চ কোর্সের ছাত্রছাত্রীরা এই নিষেধাজ্ঞা থেকে ছাড় পেয়েছেন।

লেবারের এতদিন যিনি শ্যাডো হোম মিনিস্টার ছিলেন, সেই ইয়িভেট কুপার আগেই জানিয়েছেন তারা জিতে ক্ষমতায় এলে এই পরিবারের সদস্যদের আনার নিষেধাজ্ঞাটি বহাল রাখা হবে।

তবে যে ‘গ্র্যাজুয়েট ভিসা’ পদ্ধতিতে পড়াশুনো শেষ করার পরও ছাত্রছাত্রীরা দু’বছর বা তিন বছর আরও থাকা বা কাজ করার সুযোগ পান, সেই পদ্ধতি পুনর্বিবেচনা করা হবে কি না তা নিয়ে লেবার পার্টি কিছু জানায়নি।

2024-07-06

ব্রিটিশ সরকারে পদ পেলেন রুশনারা আলী ও টিউলিপ সিদ্দিক

ব্রিটেনে সদ্য ক্ষমতায় আসা লেবার পার্টির সরকারে জায়গা পেলেন বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত এমপি রুশনারা আলী ও টিউলিপ সিদ্দিক।

দেশটির পার্লামেন্ট নির্বাচনে রুশনারা আলী এবার পঞ্চমবারের মতো আর টিউলিপ সিদ্দিক চতুর্থবারের মতো লেবার পার্টির প্রার্থী হিসেবে জয়লাভ করেছেন।

তারা ছাড়াও বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত আফসানা বেগম ও রূপা হকও এবার একই দলের প্রার্থী হিসেবে এমপি নির্বাচিত হয়েছেন।

দীর্ঘ চৌদ্দ বছর পর স্যার কিয়ের স্টারমারের নেতৃত্বে নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় ফিরে এসেছে লেবার পার্টি। ইতোমধ্যে মি. স্টারমার তার মন্ত্রীসভা গঠন করেছেন।

এবারের নির্বাচনে ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টির চরম ভরাডুবি হয়েছে এবং ৪১২টি আসন পেয়ে সরকার গঠন করেছেন মি.স্টারমারের দল।

সরকার গঠনের জন্য দরকার ছিলো পার্লামেন্টের ৩২৬ আসন।

কী পদ পেলেন রুশনারা ও টিউলিপ

যুক্তরাজ্যের হাউজিং, কমিউনিটিস অ্যান্ড লোকাল গভর্নমেন্ট মিনিস্ট্রি (আবাসন, কমিউনিটি ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়)’র পার্লামেন্টারি আন্ডার-সেক্রেটারি অফ স্টেট পদ পেয়েছেন দেশটির পার্লামেন্টের প্রথম বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত এমপি রুশনারা আলী।

তিনি পূর্ব লন্ডনের বেথনাল গ্রীন অ্যান্ড বো আসন থেকে ২০১০ সালে প্রথম এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন। ওই আসনে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে একবার ছাড়া সবসময় লেবার পার্টির প্রার্থীরা বিজয়ী হয়ে আসছিলো। এখন তার আসনের নাম বেথানল গ্রীন অ্যান্ড স্টেফনি।

মিজ আলী এবার নিয়ে টানা পঞ্চমবারের মতো ব্রিটিশ পার্লামেন্টের এমপি নির্বাচিত হলেন। ২০১০ সাল থেকেই তিনি বিরোধী দল লেবার পার্টির ছায়ামন্ত্রী হিসেবে কাজ করে আসছিলেন।

তিনি অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক সম্পন্ন করেছিলেন।

আরেক বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত টিউলিপ সিদ্দিকও এবারের নির্বাচনে জয়লাভের পর ব্রিটিশ সরকারে পদ পেয়েছেন।

যুক্তরাজ্য সরকারের ওয়েবসাইটে দেয়া তথ্য অনুযায়ী টিউলিপ সিদ্দিকের পদের নাম পার্লামেন্টারি সেক্রেটারি (ইকনোমিক সেক্রেটারি টু দি ট্রেজারি অ্যান্ড সিটি মিনিস্টার)।

সাধারণত অর্থমন্ত্রণালয়ের অধীনে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ দফতর থাকে এবং তারই একটির নেতৃত্বে থাকছেন টিউলিপ।

২০১৫ সালে খুবই প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ এক নির্বাচনে তিনি লন্ডনের হ্যাম্পস্টেড এন্ড কিলবার্ন আসন থেকে প্রথমবারের মতো জয়ী হয়ে এমপি হয়েছিলেন। তিনি সেবার জিতেছিলেন মাত্র ১১৩৮ ভোটের ব্যবধানে। তবে এবারের নির্বাচনে তিনি প্রায় পনের হাজার ভোটের ব্যবধানে জিতেছেন।

তিনি লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের কিংস কলেজ থেকে মাস্টার্স ডিগ্রি লাভ করেন এবং ২০১০ সাল থেকে চার বছর ক্যামডেন কাউন্সিলের সদস্য ছিলেন।

২০১৬ সাল থেকে তিনি লেবার পার্টির হয়ে ছায়া শিক্ষামন্ত্রী, সর্বদলীয় পার্লামেন্টারি গ্রুপের ভাইস চেয়ার, নারী ও সমতা নির্বাচন কমিটির সদস্যের মতো বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন।

লন্ডনে জন্মগ্রহণ করা মিজ সিদ্দিক বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানের নাতনী এবং বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছোট বোন শেখ রেহানার কন্যা।

এ দুজন ছাড়াও বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত রূপা হক ও আফসানা বেগমও পুনরায় নির্বাচিত হয়েছেন এবার।

মিজ হকও এ নিয়ে টানা চতুর্থবারের মতো নির্বাচিত হলেন পার্লামেন্ট সদস্য হিসেবে। বাংলাদেশের পাবনা জেলায় তার বাবার বাড়ি। তিনি গত কয়েক বছর ধরে লেবার পার্টির শ্যাডো কেবিনেটে দায়িত্ব পালন করছিলেন।

রাজনীতিতে আসার আগে তিনি ম্যানচেস্টার ইউনিভার্সিটি ও কিংস্টন ইউনিভার্সিটিতে শিক্ষকতা ছাড়াও লেখালেখির সাথে জড়িত ছিলেন।

অন্যদিকে আফসানা বেগম এবার দ্বিতীয় বারের মতো ব্রিটিশ পার্লামেন্টের সদস্য হলেন। তিনি বাংলাদেশী অধ্যুষিত টাওয়ার হ্যামলেটসের পপলার অ্যান্ড লাইমহাউজ আসন থেকে নির্বাচিত হয়েছেন।

গাজা যুদ্ধ নিয়ে ভূমিকার জন্য সাম্প্রতিক সময়ে তিনি বেশ আলোচনায় এসেছিলেন। গাজায় যুদ্ধবিরতির পক্ষে ভোট দিয়েছিলেন তিনি।

ব্রিটেনেই জন্ম নেয়া আফসানা বেগমের পৈত্রিক বাড়ী বাংলাদেশের সুনামগঞ্জ জেলার জগন্নাথপুর উপজেলায়। তিনি কুইন মেরি ও সোয়াস বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছেন।

2024-07-11

অ্যাসাঞ্জের বিরুদ্ধে যৌন হেনস্থার অভিযোগ আনলেও মুক্তি পাওয়ায় খুশি

জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ মুক্ত হওয়াতে খুশি হয়েছেন সুইডিশ মানবাধিকার কর্মী আনা আরডিন।

কিন্তু জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জের বিরুদ্ধে তিনি যেসব অভিযোগ এনেছিলেন, তাতে মি. অ্যাসাঞ্জের মুক্তিতে খুশি না হওয়ার সব কারণ তার আছে।

১৪ বছর আগে যে দুইজন নারী উইকিলিকসের প্রতিষ্ঠাতা অ্যাসাঞ্জের বিরুদ্ধে যৌন হেনস্থার অভিযোগ এনেছিলেন তাদের মধ্যে আনা একজন।

জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জের বিরুদ্ধে আনা এসব অভিযোগ ছিল মারাত্মক এবং তিনি সবসময় তা অস্বীকার করেছেন।

সারা বিশ্বজুড়ে এগুলো নিয়ে গণমাধ্যমে হেডলাইন হয়েছে। সুইডেনে প্রত্যর্পণ এড়াতে সাত বছর ধরে লন্ডন অ্যাম্বাসিতে আশ্রয় চেয়ে লুকিয়ে থাকতে বাধ্য হয়েছেন অ্যাসাঞ্জ।

সুইডিশ কর্তৃপক্ষ ২০১৯ সালে অ্যাসাঞ্জের বিরুদ্ধে তাদের তদন্ত শেষ করে এবং প্রত্যর্পণ নিষেধাজ্ঞা বাতিল করে।

পরের পাঁচ বছর তিনি ব্রিটিশ কারাগারে থেকে যুক্তরাষ্ট্রে প্রত্যর্পণের বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন। বিপুল গোপনীয় তথ্য ফাঁসের অভিযোগে তার বিরুদ্ধে মামলা ছিল যুক্তরাষ্ট্রে।

এসব তথ্যের মধ্যে ইরাকে বেসামরিক লোকদের হত্যার মার্কিন সেনাবাহিনীর ফুটেজ রয়েছে। এমন কিছু নথিপত্র পাওয়া গেছে যেগুলোতে ইউএস সামরিক বাহিনী কয়েকশ আফগান বেসামরিক নাগরিককে হত্যা করেছে এমন ইঙ্গিত পাওয়া যায়।

যুক্তরাষ্ট্রের সাথে একটি চুক্তির পর গত মাসে অ্যাসাঞ্জকে মুক্তি দেয়া হয়।

উইকিলিকস নিয়ে অ্যাসাঞ্জের কাজের জন্য অত্যন্ত গর্বিত আরডিন। এজন্য তাকে কারারুদ্ধ করা উচিত হয়নি বলে তিনি মনে করেন।

তিনি বলেন, “আমাদের নামে যেসব যুদ্ধ হয় সেগুলি সম্পর্কে আমাদের জানার অধিকার আছে”।

“আমি তার এবং তার পরিবারের জন্য আন্তরিকভাবে খুশি যে তারা একসাথে থাকতে পারবে। যে অভিযোগে তিনি শাস্তি ভোগ করেছেন, সেটা ঠিক হয়নি,” বলেন তিনি।

স্টকহোমে জুমে আরডিনের সাথে কথা বলার সময় খুব তাড়াতাড়ি স্পষ্ট হয়ে যায় যে, তার মাথার ভেতরে থাকা অ্যাসাঞ্জের দুইটি ভিন্ন প্রতিরূপ রয়েছে। একজন হলো দূরদর্শী অ্যাকটিভিস্ট অ্যাসাঞ্জ, আবার এমন একজন মানুষ যিনি নারীদের যথার্থ সম্মান দেন না।

জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জকে তিনি একজন নায়ক বা ভিলেন- কোনোটাই চিহ্নিত করতে চান না। বরং তিনি একজন জটিল মানুষ বলে বর্ণনা করছেন।

৪৫ বছর বয়সী এই মানবাধিকার কর্মী একজন খ্রিস্টান ডিকন (চার্চের কর্মী) যিনি ক্ষমাতে বিশ্বাস করেন। “সত্য” এবং “স্বচ্ছতা” এই শব্দ দুটো বারবার তিনি সাক্ষাৎকারে উচ্চারণ করেছেন।

এটাকে এভাবে ব্যাখ্যা করা যেতে পারে যে, উইকিলিকস যা করেছে তাতে তিনি অভিভূত। কিন্তু একই সময়ে তিনি হতাশও বোধ করেন, কারণ অ্যাসাঞ্জের বিরুদ্ধে তিনি যৌন হেনস্থার যেসব অভিযোগ করেছেন সেগুলি কখনো আনুষ্ঠানিকভাবে বিচার হয়নি।

‘নো হিরোস, নো মনস্টারস: ইন্টারনেটে সবচেয়ে ঘৃণ্য মহিলা হিসেবে আমি যা শিখেছি’ নামে যে বই লিখেছেন আরডিন, তাতে অ্যাসাঞ্জের সাথে তার মুখোমুখি হওয়ার ঘটনার বর্ণনা দিয়েছেন।

উইকিলিকসে আফগান যুদ্ধের বিভিন্ন তথ্য প্রকাশের মাত্র তিন সপ্তাহ পরে ২০১০ সালে আরডিন তাকে স্টকহোমে আমন্ত্রণ জানান। সুইডেনের সোশ্যাল ডেমোক্র্যাটদের ধর্মীয় শাখার আয়োজিত একটি সেমিনারে অংশ নিতে তাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল।

নিরাপত্তার কারণে অ্যাসাঞ্জ হোটেলে থাকতে চান নি এবং আরডিনের সেই সময় অন্যত্র যাওয়ার কথা ছিল। ফলে অ্যাসাঞ্জকে তিনি নিজের ফ্ল্যাটে থাকার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। যদিও আরডিন তাড়াতাড়ি বাসায় ফিরে আসেন।

রাজনীতি এবং মানবাধিকার নিয়ে আলোচনা শেষে এক সন্ধ্যায় আরডিন, তার ভাষায় অনাকাঙ্ক্ষিত এক যৌন সম্পর্কের মুখোমুখি হয়েছেন বলে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেছেন, অ্যাসাঞ্জ তখন তাকে হেনস্থা করেছে।

আরডিন বলেছেন, তিনি অ্যাসাঞ্জের সাথে যৌন সম্পর্ক করতে রাজি ছিলেন যতক্ষণ তিনি কনডম ব্যবহার করেন ততক্ষণ। কিন্তু কনডম ছিঁড়ে গেলেও অ্যাসাঞ্জ তা চালিয়ে যান।

আরডিন সন্দেহ করেন যে অ্যাসাঞ্জ ইচ্ছাকৃতভাবে এটি ছিঁড়েছেন। সেটা হয়ে থাকে তাহলে অ্যাসাঞ্জ সম্ভবত সুইডিশ আইন অনুযায়ী অপরাধ করেছেন।

পরে, সেমিনারে অংশ নিয়েছেন এমন একজন নারী, আইনি কাগজপত্রে যার নাম এস ডব্লিউ বলে উল্লেখ করা হয়েছে, তার কাছ থেকেও অ্যাসাঞ্জের বিরুদ্ধে অভিযোগ শুনেছেন বলে আরডিন লিখেছেন। এস ডব্লিউ বলেছিলেন, তিনি ঘুমিয়ে থাকার সময়ে অনুমতি ছাড়াই অ্যাসাঞ্জ তার সাথে শারীরিক সম্পর্ক করেন।

তবে সুইডিশ প্রসিকিউটরদের কাছে ২০১৬ সালে দেয়া এক বিবৃতিতে অ্যাসাঞ্জ বলেছিলেন, এসডব্লিউর সাথে তার যৌন সম্পর্ক ছিল সম্পূর্ণ সম্মতিপূর্ণ। তিনি তার আইনজীবীদের সেই খুদে বার্তা দেখিয়েছিলেন যাতে ওই নারী একজন বন্ধুকে বলেছিলেন যে তিনি “আধো ঘূমে ছিলেন”।

দুইজন মহিলাই পুলিশের কাছে রিপোর্ট করেছেন। আরডিনের মামলাটি যৌন অসদাচরণের অভিযোগে এবং এস ডব্লিউর অভিযোগকে ধর্ষণের অভিযোগ হিসাবে নথিভুক্ত করা হয়েছিল।

এসব খবর গণমাধ্যমে ব্যাপকভাবে প্রচারিত হয় এবং পরবর্তীতে বেশি কিছু ঘটনা ঘটে।

অ্যাসাঞ্জ এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, তারা যুক্তরাষ্ট্রের সাজানো অভিযোগ করছেন। উইকিলিকস তখন মাত্র ৭৬ হাজার মার্কিন সামরিক নথি ফাঁস করেছে। যেগুলো ব্যাপক বৈশ্বিক মনোযোগ আকর্ষণ করেছে। এর ফলে মার্কিন পররাষ্ট্র নীতি যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়ায় পড়ে।

২০১০ সালের ২১শে আগস্ট উইকিলিকস টুইট করেছে: “আমাদেরকে ‘নোংরা কৌশলের’ বিষয়ে সতর্ক করা হয়েছিল। এখন আমরা প্রথমটির মুখোমুখি হয়েছি''।

পরের দিন আরেকটি পোস্ট করা হয়েছে: “ সতর্কতা: যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দারা ২০০৮ সাল পর্যন্ত উইকিলিকসকে ধ্বংস করার পরিকল্পনা করেছে”।

অ্যাসাঞ্জের যুক্তরাজ্যের আইনজীবী মার্ক স্টিফেনস দাবি করেছেন, একটি “হানিট্র্যাপ” (যৌনতার প্রলোভন) স্পষ্ট হয়ে উঠেছে এবং “নেপথ্য শক্তি” এতে কাজ করছে।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটা ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছিল, যাতে আরডিনকে “নরক”(জঘন্য) হিসাবে বর্ণনা করেছে। আরডিন বিবিসিকে বলেন, কী পরিমাণ হয়রানি এবং মৃত্যুর হুমকি তাকে এক পর্যায়ে সুইডেন ছেড়ে যেতে বাধ্য করেছিল।

“আমি কাজ করতে পারছিলাম না। আমার জীবন থেকে দুই বছর শেষ হয়ে গিয়েছে” বলেন আরডিন।

এখন পর্যন্ত অনেকে বিশ্বাস করে যে আরডিন যুক্তরাষ্ট্রের ষড়যন্ত্রের একটি অংশ এবং তার অভিযোগগুলো মিথ্যা।

অ্যাসাঞ্জের দীর্ঘদিনের সমর্থক গ্রিসের সাবেক অর্থমন্ত্রী ইয়ানিস ভ্যারোফাকিস। গত সপ্তাহে আরডিনের দাবিগুলিকে ‘কর্দমাক্ত, নোংরা’এবং ‘কটাক্ষ’ হিসাবে বর্ণনা করেছেন।

যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দাদের সাথে আরডিনের যোগসূত্রের কোনো প্রমাণ পাওয়া যায় নি। তিনি স্বীকার করেছেন যে অ্যাসাঞ্জ যেসব বার্তা ছড়িয়ে দিয়েছেন তাতে কিছুটা সম্ভাব্যতা রয়েছে, কারণ তিনি “পেন্টাগনের সাথে ঝামেলা” করেছিলেন। কিন্তু তার দাবীগুলো “মিথ্যা” এবং “একজন পাবলিক ফিগারকে মিথ্যা অভিযোগে অভিযুক্ত করার পরিকল্পনা” ছাড়া আর কিছুই নয়।

এই ঘটনার কয়েক মাস পরে অ্যাসাঞ্জের বিরুদ্ধে একটি আন্তর্জাতিক গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছিল। সেই সময় লন্ডনে ছিলেন তিনি।

২০১০ সালের ডিসেম্বরে বিবিসির কাছে তিনি বলেছিলেন যে, তিনি যে 'হানি ট্রাপের' শিকার হয়েছিলেন, সেটা হয়তো ঠিক না। কিন্তু তিনি কোন অন্যায় করেছেন বলে স্বীকার করেন নি।

অ্যাসাঞ্জ নিশ্চিত ছিলেন, যদি তিনি সুইডেনে যান তাহলে তাকে যুক্তরাষ্ট্রে পাঠানো হবে। যেখানে মৃত্যুদণ্ডের শাস্তি অপেক্ষা করছে বলে তিনি আশঙ্কা করেছিলেন। ২০১২ সালে তিনি লন্ডনে ইকুয়েডর দূতাবাসে আশ্রয় নেন।

তাকে যুক্তরাষ্ট্রে ফেরানো হবে না সুইডেন এই নিশ্চয়তা দিতে রাজি হয়নি। তবে, যেকোনো পদক্ষেপের ক্ষেত্রে যুক্তরাজ্যের অনুমোদন নেয়া হবে বলে জানিয়েছিল। তবে দুই দেশই বলেছে তারা যদি মনে করে যে তাকে মৃত্যুদণ্ডের মুখোমুখি হতে পারে তাহলে তাকে হস্তান্তর করবে না।

দীর্ঘ সময় চলে যাওয়ায় ২০১৫ সালে সুইডিশ প্রসিকিউটররা আরডিনের অভিযোগের তদন্ত বাদ দিয়েছিলেন।

এস ডব্লিউর যৌন অভিযোগের দাবির বিষয়ে ২০১৯ সালে প্রসিকিউটররা তদন্ত বাদ দিয়েছিল।

তারা বলেছিল, “ ঘটনা নিয়ে প্রশ্ন ওঠার পরে লম্বা সময় পার হওয়ার কারণে প্রমাণগুলো দুর্বল হয়ে গেছে”।

এ সময়ের মধ্যে লন্ডনের বেলমার্শের হাই সিকিউরিটি কারাগারে অ্যাসাঞ্জকে রাখা হয়েছিল। গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে যুক্তরাষ্ট্রে প্রত্যর্পণের চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয়েছিল তাকে। সেখানে দোষী সাব্যস্ত হলে ১৭০ বছরের কারাদণ্ডের মুখোমুখি হতে হতো তাকে।

যুক্তরাষ্ট্রের গুপ্তচরবৃত্তি আইনের একটি অভিযোগে দোষ স্বীকার করে দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পরে ২০২৪ সালে অ্যাসাঞ্জ অবশেষে মুক্তি পেয়েছিলেন।

আরডিন এখনও চান, অ্যাসাঞ্জ যৌন হেনস্থার জন্য বিচারের মুখোমুখি হন। “কিন্তু সে করবে না। তাই আমি এটা বাদ দিয়ে দিয়েছি।''

তিনি বলেন, কেউ কেউ তাকে গুরুত্ব সহকারে নেয় নি। কারণ তারা মনে করে না যে, তার অভিজ্ঞতা বা প্রতিক্রিয়া যথেষ্ট নাটকীয় ছিল।

তিনি বলেন, ''যৌন নিপীড়ন সবসময় নৃশংস হবে, ব্যাপক পরিমাণে সহিংসতা জড়িত থাকবে এবং ভিকটিমকে প্রচণ্ড ট্রমাটাইজ করে ফেলবে এমন একটা ধারণা রয়েছে। যদি তা না হয় তবে আপনি প্রকৃত ভিকটিম বা প্রকৃত অপরাধী হতে পারবেন না।''

কিন্তু আরডিন তার অভিজ্ঞতা হিসাবে যা বর্ণনা করেছেন তার সাথে এটি মেলে না।

অ্যাসাঞ্জের অনেক সমর্থক এবং সাংবাদিকদের “একটি একতরফা ঘটনা" খোঁজার জন্য তিনি ধিক্কার করেছেন। যেটা অ্যাসাঞ্জকে একজন নায়ক এবং তাকে একজন দুষ্ট সিআইএ এজেন্টে পরিণত করে।

“ আমি মনে করি আমাদের একটি সমস্যা আছে, যে আমাদের এই নায়কদের নিখুঁত হতে হবে। কিন্তু আসলে রূপকথার বাইরে নায়কদের অস্তিত্ব আছে বলে আমি মনে করি না ”।

আ্যাসাঞ্জকে একজন ওয়ান ডাইমেনশনাল ভিলেন হিসেবে চিহ্নিত করে সমাজ থেকে বের করে দেয়া তার উদ্দেশ্য ছিল না বলে জানান আরডিন।

অপরাধীদেরকে “ দানব, অন্য সব পুরুষদের থেকে সম্পূর্ণ আলাদা " হিসেবে দেখা হয়, যার মানে সামাজিক সিস্টেম ঠিকঠাক মতো চলছে।

কিন্তু তিনি মনে করেন, “স্বাভাবিক” পুরুষরা বুঝতে পারে না যে তারাও সহিংস হয়ে উঠতে পারে। কারণ তারা কখনো নিজেকে নিয়ে প্রশ্ন করে না। '

“তাকে একজন সাধারণ মানুষ হিসেবে দেখা হোক এটা আমি চাই। যেটা স্বাভাবিক পুরুষরা মাঝে মাঝে করে। তারা অন্য মানুষের অধিকারের সীমানা অতিক্রম করে”।

আরডিন মনে করেন, প্রগতিশীল আন্দোলনগুলোর মধ্যে অনেক সময় ভীতি থাকে যে, নেতাদের সমালোচনা করা হলে পুরো আন্দোলনটি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

“আপনার আন্দোলনে সক্রিয় লোকদের সাথে খারাপ আচরণ করে আপনি একজন নেতা হতে পারবেন না, তাহলে আন্দোলন টিকবে না”।

তিনি আরো বলেন, প্রভাবশালী হলেই যৌন অপরাধ, বা অন্য কোনো অপরাধ থেকে লোকজনের পালানো উচিত নয়।

সাক্ষাৎকারে আরডিনের দাবির বিষয়ে অ্যাসাঞ্জের মন্তব্যের জন্য তার আইনজীবীদের সাথে বিবিসি যোগাযোগ করেছিল। কিন্তু তারা জানিয়েছে, তিনি “প্রতিক্রিয়া জানানোর অবস্থায় নেই”।

এই গল্প বা কাহিনীর শেষে তার জন্য ন্যায়বিচার কেমন হতো আরডিনকে আমি জিজ্ঞাসা করি।

আরডিন আমাকে বলেন, সত্য হিসাবে তিনি যা বলেছেন তা পেতেই শুধু তিনি আগ্রহী। শাস্তির প্রতি আগ্রহ কম তার।

“ স্বচ্ছতা পাওয়াই আমার জন্য ন্যায়বিচার হতো। তাকে কারাবন্দী করা হয়েছিল এতে আমি খুশি ছিলাম না। কারণ তাকে ভুল কারণে কারাবন্দী করা হয়েছিল”।

আরডিন একজন বামপন্থী খ্রিস্টান যিনি পুনর্মিলন এবং রূপান্তরকে অত্যন্ত গুরুত্ব দেন।

এ সমস্ত চিন্তাভাবনার পরে, আমি ভাবছি যদি এখন সে অ্যাসাঞ্জের মুখোমুখি হয় তবে তাকে কি বলবে।

অ্যাসাঞ্জকে নিজের বিষয়েআরো ভালোভাবে বিবেচনা করার জন্য আরডিন অনুরোধ করবে বলে আমাকে জানান।

“আমার সাথে সে যা করেছে তা করার অধিকার তার নেই এবং অন্য মহিলাদের প্রতিও তার সেই অধিকার নেই” এটা তাকে স্বীকার করতে বলবেন আরডিন।

“ নিজের জন্যই তাকে তা স্বীকার করতে হবে। সে যা করেছে তাকে তা ভাবতে হবে” বলেন আরডিন।

2024-07-08

কাজ শুরু করেছেন নতুন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী স্টারমার

ব্রিটেনে ক্ষমতার হস্তান্তর ঘটে গেল বেশ দ্রুততার সঙ্গে। শুক্রবার রাজা চার্লস্ এর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে সরে দাঁড়ান ঋষি সুনাক। কিছুক্ষণের মধ্যেই রাজার সাথে দেখা করেন কিয়ের স্টারমার। তাকে সরকার গঠন করার আমন্ত্রণ জানানো হয়।

বাকিংহাম প্যালেস থেকে ফিরেই মন্ত্রিসভা গঠনের কাজ শুরু করেছেন নতুন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ের স্টারমার। ডাউনিং স্ট্রিটে এসেছেন লেবার এমপি অ্যাঞ্জেলা রেনার। মিজ রেনারকে উপপ্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দেয়া হচ্ছে।

অর্থমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিতে যাচ্ছেন র‍্যাচেল রিভস্। অনেক বড় চ্যালেঞ্জ নিতে হবে সে ব্যাপারে অবগত আছেন জানিয়ে র‍্যাচেল বলেন, খুব বেশি অর্থ রেখে যাচ্ছে না পূর্বসূরীরা।

এর আগে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন ১০ নম্বর ডাউনিং স্ট্রিটের সামনে বক্তব্য রাখেন কিয়ের স্টারমার। তিনি বলেন, “আমাদের কাজ জরুরি এবং আজ থেকেই শুরু হচ্ছে।”

বক্তৃতার পর সস্ত্রীক ১০ নম্বর বাড়িটিতে প্রবেশ করেন তিনি।

তারও বেশ কিছু সময় আগে সেই বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসেন সদ্য সাবেক প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক।

রেয়াজ অনুযায়ী উপস্থিত গণমাধ্যমকে ব্রিফ করেন। আনুষ্ঠানিকভাবে পদত্যাগের ঘোষণা দেন।

ফলাফল বিপর্যয়ের দায় নিজের কাঁধে তুলে নেন মি. সুনাক।

বলেন, “দেশবাসীর কাছে সবার প্রথমে যে কথাটা বলতে চাই তা হলো, আমি দুঃখিত।”

“আমি সর্বস্ব দিয়ে চেষ্টা করেছি, কিন্তু, আপনাদের রায় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। যে রায়ের মাধ্যমে আপনারা জানিয়ে দিয়েছেন যুক্তরাজ্যে সরকারের পরিবর্তন দরকার,” যোগ করেন মি. সুনাক।

ব্রিটেনে সংসদের নিম্নকক্ষ হাউস অফ কমন্সে মোট আসন সংখ্যা ৬৫০ টি। সরকার গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে ৩২৬ টি আসনে বিজয়ী হতে হয়।

প্রাপ্ত ফলাফল থেকে জানা যাচ্ছে, লেবার পার্টি ৪১২টি আসনে জয় পেয়েছে। আর কনজারভেটিভ পার্টির ঘরে গেছে ১২১ টি আসন।

২০১৯ সালের তালিকা থেকে টোরিরা ২৫০ টি আসন খুইয়েছে এবার। আর লেবাররা গত নির্বাচনের তুলনায় ২১১ টি আসন বেশি পেয়ে নিরঙ্কুশ বিজয় নিশ্চিত করেছে।

এছাড়া লিবারেল ডেমোক্র্যাটরা ৭১টি আসন পেয়ে তৃতীয় স্থানে রয়েছে। এর বাইরে স্কটিশ ন্যাশনাল পার্টির নয়টি আর রিফর্ম ইউকে চারটি আসন নিজেদের দখলে রাখতে সমর্থ হয়েছে।

এর আগে বুথ ফেরত জরিপেও লেবার পার্টির নিরঙ্কুশ জয়ের কথা বলা হয়েছিল।

নিজের আসনে জয়ের পর মি.স্টারমার বলছিলেন 'পরিবর্তনের সূচনা হলো এখান থেকেই..এটা আমাদের জন্য দেয়ার সময়'।

প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক পরাজয় মেনে নিয়ে মি. স্টারমারকে টেলিফোন করে অভিনন্দন জানান।

রিফর্ম ইউকে দলের নেতা নাইজেল ফারাজ এবার প্রথম বারের মতো এমপি নির্বাচিত হলেন।

এছাড়া লেবার পার্টির সাবেক নেতা জেরেমি করবিনও নিজের আসনে জয় পেয়েছেন। স্বতন্ত্র হিসেবে নির্বাচন করেছিলেন মি. করবিন।

জর্জ গ্যালাওয়ে নিজের আসনে হেরে গেছেন।

স্কটল্যান্ডে কনজারভেটিভ পার্টির নেতা ডগলাস রস তার আসনে পরাজিত হয়েছেন। তার বিরুদ্ধে জিতেছেন লিবারেল ডেমোক্র্যাট প্রার্থী সিমাস লগান।

এটিই কনজারভেটিভ পার্টির ইতিহাসে সবচেয়ে বাজে নির্বাচনী ফল। চৌদ্দ বছর ক্ষমতায় থাকার পর ২৫০ আসন হারিয়ে তারা এখন বড় ধরণের বিপর্যয়ে পড়েছে।

এর ফলে ২০১০ সালের পর আবারো একজন লেবার প্রধানমন্ত্রীর ঠিকানা হলো ডাউনিং স্ট্রিট। অন্যদিকে টোরিদের মধ্যে ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব নিয়ে লড়াই হবে কারণ ঋষি সুনাক নেতৃত্ব থেকে সরে দাঁড়াবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

কনজারভেটিভ অর্থাৎ টোরিরা লিবারেল ডেমোক্র্যাট ও নাইজেল ফারাজের রিফর্ম ইউকে পার্টির দিক থেকেও চ্যালেঞ্জের মুখে আছে। কারণ এই দল দুটির মোট জনসমর্থন আগের চেয়ে বেড়েছে।

টোরি থেকে রিফর্ম ইউকে পার্টিতে যাওয়া লি অ্যান্ডারসন তার নতুন দলের হয়ে প্রথমবারের মতো অ্যাশফিল্ড আসনে এমপি নির্বাচিত হয়েছেন। ওই আসনে দ্বিতীয় আসনে আছে লেবার পার্টির প্রার্থী।

এবার সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল স্যার রবার্ট বাকল্যান্ড হলেন প্রথম টোরি এমপি যিনি তার নিজের আসনে পরাজিত হয়েছেন। বিবিসিকে তিনি বলেন, তার দল নির্বাচনী বিপর্যয়ের মুখে এবং লেবারদের জয় হলো ‘পরিবর্তনের জন্য বড় ভোট’।

তিনি নির্বাচনী প্রচারণা অপেশাদারিত্ব ও বিশৃঙ্খল আচরণের অভিযোগ তুলে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুয়েলা ব্রেভারম্যানসহ তার দলের কয়েকজন সহকর্মীর তীব্র সমালোচনা করেছেন।

“ব্যক্তিগত এজেন্ডা ও পদের জন্য তামাশা করা নিয়ে আমি খুব বিরক্ত,” তিনি বলছিলেন এবং টোরি নেতৃত্ব নিয়ে সামনের প্রতিযোগিতার বিষয়েও সতর্ক করেন।

লেবার পার্টির এবার ভূমিধ্বস বিজয় ১৯৯৭ সালের টনি ব্লেয়ারের নেতৃত্বে পাওয়া আসনের চেয়ে অল্প কিছু কম। সেবার ৪১৯ আসনের সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় এসেছিলেন মি. ব্লেয়ার।

প্রথম নারী চ্যান্সেলর বা অর্থমন্ত্রী হতে যাওয়া র‍্যাচেল রিভস বলেছেন, ‘এটা পরিষ্কার ব্রিটেনের মানুষ পরিবর্তনের জন্য এবং স্যার কিয়ের স্টারমারের নেতৃত্বে ‘উজ্জ্বল ভবিষ্যতের’ জন্য ভোট দিয়েছে।

জয়ের পর দেয়া ভাষণে তিনি বলছিলেন , “আমরা আপনাকে হারতে দেবো না এবং শুরু করার জন্য আমার আর তর সইছে না”।

অন্যদিকে রিফর্ম ইউকের নাইজেল ফারাজ ‘অনেক, অনেক আসনে’ জয়লাভ করার অনুমান করলেও চারটিতেই সন্তুষ্ট থাকতে হচ্ছে তাদের। যদিও শূন্য আসন থেকে চার আসন পাওয়ার তাৎপর্যও কম নয়।

লিবারেল ডেমোক্র্যাটসরা ইংল্যান্ডের দক্ষিণাঞ্চলে টোরিদের ভোট কমিয়েছে , যেখানে চ্যান্সেলর জেরেমি হান্ট ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী গ্রান্ট শ্যাপসসহ কয়েকজন মন্ত্রী ঝুঁকিতে পড়েছেন।

দলটির নেতা স্যার এড ড্যাভি বলেছেন : “মনে হচ্ছে এক প্রজন্মের জন্য এটাই আমাদের সেরা ফল”।

দলটি কনজারভেটিভ পার্টি থেকে হ্যারোগেট ও কেনেয়ারসবরো আসন বড় ব্যবধানে ছিনিয়ে নিয়েছে।

লিবারেল ডেমোক্র্যাট পার্টির চ্যালেঞ্জের মুখে থাকা মন্ত্রী স্যার জ্যাকব রিস-মগ বলেছেন কনজারভেটিভদের জন্য এটি পরিষ্কার ভাবে একটি হতাশার রাত। তিনি বলেন দশ নম্বর ডাউনিং স্ট্রীট নিয়ে বরিস জনসন, লিজ ট্রাস ও মি. সুনাকের টানাটানিকে ভোটাররা সরিয়ে দিয়েছেন।

স্কটিশ ডেপুটি ফার্স্ট মিনিস্টার কেইট ফোর্বস বলেছেন তার দল একটি কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি।

কারণ, তারা ৩৮টি আসন হারিয়েছে।

লেবারের জন্য দারুণ রাত... কিন্তু মুসলিম ভোট

নির্বাচনে লেবার পার্টি দারুণ সাফল্য পেলেও মুসলিম ভোটের ক্ষেত্রে তেমনটি হয়নি।

বিবিসির চীফ পলিটিক্যাল করেসপন্ডেন্ট হেনরি জেফম্যান লিখেছেন যে লেবার পার্টির জন্য রাতটি (নির্বাচনের ফল ঘোষণার) দারুণ ছিলো। কিয়ের স্টারমারের নেতৃত্বে তারা এতো আসন পেয়েছে যা তারা ২০১৯ এর নির্বাচনে ভয়াবহ বিপর্যয়ের পর চিন্তাই করেনি।

কিন্তু এ সাফল্যের মধ্যেও খুঁত আছে। কারণ বড় সংখ্যায় মুসলিম ভোট আছে এমন আসনে দলটি ভালো করেনি। দশ শতাংশের বেশি মুসলিম ভোট আছে এমন আসনে দলটির ভোট কমেছে গড়ে দশ শতাংশ।

লেস্টার পূর্ব আসনে কনজারভেটিভ প্রার্থীর কাছে হারার কারণ এটাই। আবার লেস্টার দক্ষিণে শ্যাডো মন্ত্রী জনাথন অ্যাশওয়ার্থ স্বতন্ত্র প্রার্থীর কাছে হেরে যে বিস্ময়ের জন্ম দিয়েছেন তার কারণও এটি।

অধিক মুসলিম জনগোষ্ঠী আছে এমন পাঁচটি আসনে লেবার হেরে গেছে। এর মধ্যে চারটিতে স্বতন্ত্র আর একটিতে কনজারভেটিভ প্রার্থী জয়ী হয়েছে।

ক্ষমতাসীন দলের বড় যারা হারলেন

কনজারভেটিভ দলের এক ডজনের বেশি মন্ত্রী ও সিনিয়র সদস্য নির্বাচনে হেরে গেছেন।

হাউজ অব কমন্সের নেতা পেনি মরডন্ট নির্বাচনে হেরে বলেছেন 'গণতন্ত্র কখনোই ভুল নয়'। প্রতিরক্ষামন্ত্রী গ্রান্ট শ্যাপস পার্লামেন্টে ছিলেন প্রায় বিশ বছর। তিনিও বিদায়ের পথে।

তিনি বলেছেন 'জনগণ বিভক্ত পার্টিকে ভোট দেয় না'। ব্রেক্সিটের পক্ষে থাকা বড় নেতা জ্যাকব রিস-মগ আর এমপি নন।

সাবেক বিচার মন্ত্রী স্যার রবার্ট বাকল্যান্ড তার পার্টির অন্য নেতাদের তীব্র সমালোচনা করেছেন।

স্কটিল্যান্ডে কনজারভেটিভ পার্টির নেতা ডগলাস রস তার আসনে পরাজিত হয়েছেন। তার বিরুদ্ধে জিতেছেন লিবারেল ডেমোক্র্যাটিক প্রার্থী সিমাস লগান।

ওয়েলসে কোন আসন নেই কনজারভেটিভদের

ওয়েলসে লেবার পার্টি আগের চেয়ে নয়টি আসন বেশী পেয়েছে। এখন তাদের মোট আসন ২৭।

অন্যদিকে কোন আসনই পায়নি কনজারভেটিভ পার্টি।

প্লাইড কামরির এখন পার্লামেন্টে চারটি আসন।

আর লিবারেল ডেমোক্র্যাটিকরা পেয়েছে একটি আসন।

বরিস জনসনের আসনেও পরাজয় দলীয় প্রার্থীর

বরিস জনসনের আসনে এবার জয় পেয়েছে লেবার পার্টির প্রার্থী। গত বছর তিনি এমপি পদ থেকে সরে দাঁড়িয়েছিলেন। পরে উপনির্বাচনে অল্প ভোটের ব্যবধানে আসনটি ধরে রেখেছিলো টোরি প্রার্থী স্টিভ টাকওয়েল।

এবার লেবার পার্টির ডেনি বিলস কনজারভেটিভ প্রার্থীকে হারিয়ে আসনটি জিতে নিলেন। অন্যদিকে সাবেক কনজারভেটিভ প্রধানমন্ত্রী লিজ ট্রাস ছয়শ ভোটে হেরে গেছেন।

দু বছরের কম সময় আগে তিনি অল্প কিছুদিনের জন্য ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন।

এদিকে ঋষি সুনাক ইয়র্কশায়ারে নিজের আসনে জিতেছেন। যেহেতু কনজারভেটিভ পার্টির দ্বিতীয় সর্বোচ্চ আসনে জিতেছে সে কারণে মি.সুনাক পার্লামেন্টে বিরোধী দলীয় নেতা হতে পারেন।

তবে এটি নির্ভর করবে তিনি দলের প্রধান হিসেবে থাকতে চান কি-না তার ওপর।

2024-07-06

ব্রিটেনে মুসলিম অধ্যুষিত এলাকায় গাজাপন্থীদের কাছে হেরেছেন লেবার প্রার্থীরাও

ব্রিটেনের সাধারণ নির্বাচনে লেবার পার্টি জিতলেও দলটির শক্ত ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত বেশ কিছু এলাকায় তাদের প্রার্থীরা গাজাপন্থী স্বতন্ত্র প্রার্থীদের কাছে হেরে গেছেন ।আরও অনেকে পড়েছেন শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতায়।

এর মধ্যে দলটির জন্য বড় আঘাত হলো শ্যাডো মিনিস্টার জনাথন অ্যাশওয়ার্থ লেস্টারের সাউথ আসনে হেরে যাওয়া। যেখানে আগে প্রায় ২২ হাজার ভোটের ব্যবধানে জয় লাভ করেছিলেন তিনি।

১০ শতাংশের বেশি মুসলিম ভোট আছে এমন আসনগুলোতে লেবার পার্টির ভোট কমেছে গড়ে ১১ শতাংশ।

ইলফোর্ড নর্থে শ্যাডো স্বাস্থ্যমন্ত্রী ওয়েস স্ট্রিটিং আগে জয়লাভ করেছিলেন নয় হাজার ভোটের ব্যবধানে। এবার তার জয়ের পার্থক্য মাত্র ৫২৮ ভোট।

তবে জর্জ গ্যালাওয়ের কাছ থেকে রোচডেলের আসন পুনরুদ্ধার করেছে লেবার প্রার্থী পল ওয়াহ।

যেখানে মুসলিম ভোটার বেশি সেখানেই দলটি খারাপ করেছে। যতটুকু জানা যাচ্ছে লেবার অধিক মুসলিম জনগোষ্ঠী আছে এমন পাঁচটি আসনে হেরে গেছে। এর মধ্যে চারটিতে স্বতন্ত্র আর একটিতে কনজারভেটিভ প্রার্থী জয়ী হয়েছে।

লেস্টার সাউথ আসনে শোকাত অ্যাডাম ৯৭৯ ভোটে জয়ের পর ঘোষণা করেছেন ‘এটা গাজার জন্য’।

এই আসনে ৩০ শতাংশ ভোটার মুসলিম। ১৩ বছর ধরে মি. অ্যাশওয়ার্থ আসনটি ধরে রেখেছিলেন।

কাছেই লেস্টার ইস্ট আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা কয়েক হাজার ভোট পাওয়ায় সুবিধা পেয়েছেন কনজারভেটিভ প্রার্থী। বিশেষ করে সাবেক লেবার এমপি ক্লাউডিয়া ওয়েব্বের এলাকায়।

মিস ওয়েব্বে হয়রানির দায়ে দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পর দল থেকে বহিষ্কার হয়েছিলেন। তবে তিনি ফিলিস্তিনপন্থী হিসেবে সোচ্চার কণ্ঠ।

তার সাবেক আসনে টোরি প্রার্থী জয় পেয়েছে ৪৪২৬ ভোটে, যা মিস ওয়েব্বের প্রাপ্ত ভোটের চেয়ে কম।

বার্মিংহামের পেরি বার এলাকা লেবারের খালিদ মাহমুদ ৫৭০ ভোটে হেরে গেছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী আয়ুব খানের কাছে।

অন্যদিকে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা যারা গাজাকেই তাদের প্রচারণার কেন্দ্রবিন্দুতে রেখেছিলেন তারা ডিউজবুরি, বাটলে, ব্ল্যাকবার্ন এলাকায় জয়ী হয়েছেন, যেখানে আগে লেবার পার্টির ভালো সংখ্যাগরিষ্ঠতা ছিল।

মুসলিম জনগোষ্ঠী বেশ বড় এমন আরও কিছু এলাকায় সিনিয়র লেবার নেতারা খুব অল্প ভোটের ব্যবধানে জয়ী হতে পেরেছেন।

ইলফোর্ড নর্থে স্বতন্ত্র প্রার্থী লিয়ানে মোহামাদ, যিনি একজন ফিলিস্তিনি শরণার্থীর নাতি, মি. স্ট্রিটিংয়ের চেয়ে ৫২৮ ভোট পেছনে ছিলেন।

বার্মিংহাম লেডিউডে ছায়া বিচারমন্ত্রী শাবানা মাহমুদকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছিলেন স্বতন্ত্র প্রার্থী ও আইনজীবী আহমেদ ইয়াকুব। টিকটকে মি. ইয়াকুবের অনুসারীর সংখ্যা অনেক।

তবে শাবানা মাহমুদের জয়ের পার্থক্য ৩২ হাজার থেকে কমে হয়েছে ৩৪২১ ভোট।

একইভাবে জেস ফিলিপস পার্লামেন্টে গাজার যুদ্ধবিরতির পক্ষে ভোট দেয়ার জন্য লেবার পার্টির সামনের সারি ছাড়তে হয়েছিল। ভোটে নির্বাচিত হলেও এবার তিনি জয়লাভ করেছেন ৬৯৩ ভোটের ব্যবধানে।

মিজ ফিলিপিস জয়ের পর যখন ভাষণ দিচ্ছিলেন তখন অনেকে চিৎকার করেছে। তিনি বলেছেন ‘আমি যত নির্বাচন করেছি তার মধ্যে এটাই সবচেয়ে খারাপ’। তিনি দাবি করেন তার প্রচারকর্মীরা বাধা ও সহিংসতার শিকার হয়েছেন।

পূর্ব লন্ডনের বেথানল গ্রিন অ্যান্ড স্টেফনি আসনে ছায়ামন্ত্রী রুশনারা আলীর আগে ৩১ হাজার ভোটের ব্যবধানে জয়লাভ করেছিলেন। এবার স্বতন্ত্র প্রার্থী আজমল মাশরুরকে তিনি হারিয়েছেন ১৬৯৮ ভোটের ব্যবধানে।

এমনকি নির্বাচনি প্রচারণার সময় লেবার নেতা স্যার কিয়ের স্টারমার নিজেও ‘ফ্রি প্যালেস্টাইন’ প্ল্যাকার্ডের মুখোমুখি হয়েছেন এবং তার ভোটের ব্যবধান কমেছে। গাজাপন্থী স্বতন্ত্র প্রার্থী এন্ড্রু ফেইনস্টেইন পেয়েছেন ৭৩১২ ভোট।

ইসলিংটন নর্থ আসনে সাবেক লেবার নেতা জেরেমি করবিন জিতেছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে। তিনি লেবার প্রার্থীর চেয়ে সাত হাজার ভোট বেশি পেয়েছেন। এন্টিসেমিটিজম বিষয়ক এক রিপোর্টে প্রতিক্রিয়ার কারণে দলে তার সদস্যপদ স্থগিত হয়েছিলো।

রোচডেইলে লেবার পার্টির পল ওয়াহর কাছে হেরেছেন ওয়ার্কার্স পার্টির নেতা মি. গ্যালাওয়ে। কয়েক মাস আগেই এক উপনির্বাচনে তিনি জিতেছিলেন।

গাজা দ্বন্দ্বের বিষয়ে অবস্থানের জন্য লেবার পার্টির ওপর চাপ ক্রমশ বাড়ছে। ইসরায়েলে গত সাতই অক্টোবরে হামাসের হামলার জবাবে ইসরায়েল গাজায় অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে।

ফেব্রুয়ারিতে গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির আহবান জানিয়েছিল লেবার কিন্তু সমালোচকদের মতে পার্টির এই অবস্থানে পৌঁছার গতি ছিলো খুবই ধীর। নির্বাচনী ইশতেহারে লেবার ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দেয়ার অঙ্গীকার করেছে। গত বছর স্যার কিয়েরের বক্তব্য নিয়ে তীব্র সমালোচনা হয়েছিলো। তিনি বলেছিলেন ইসরায়েলের গাজায় পানি ও জ্বালানী বিচ্ছিন্ন করার ‘অধিকার’ আছে।

পরে তিনি এর ব্যাখ্যা দিয়ে বলেছেন যে তিনি বোঝাতে চেয়েছেন দেশটির আত্মরক্ষার অধিকার আছে।

2024-07-06

প্রথমবারের মতো ফটো আইডি দেখিয়ে ভোট দিচ্ছেন যুক্তরাজ্যের ভোটাররা

ছয় সপ্তাহের নির্বাচনি প্রচারণার পর শুরু হয়েছে যুক্তরাজ্যের সাধারণ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ। ইংল্যান্ড, স্কটল্যান্ড, ওয়েলস এবং উত্তর আয়ারল্যান্ডের ৪০ হাজার কেন্দ্রে ভোটাররা তাদের পছন্দের প্রার্থীদের ভোট দিচ্ছেন। এবারের নির্বাচনে প্রথমবারের মতো ভোট দেওয়ার আগে ফটো আইডি বা শনাক্তকরণ ছবি দেখাতে হবে ভোটারদের।

১৯৪৫ সালের পর থেকে যুক্তরাজ্যে প্রথমবারের মতো জুলাই মাসে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে সাধারণ নির্বাচন।

বৃহস্পতিবার লন্ডন সময় সকাল সাতটা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। স্থানীয় বিদ্যালয়, কমিউনিটি হলের মতো ভবনগুলোকে পোলিং স্টেশন হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।

হাউজ অব কমনের সাড়ে ছয়শো সদস্যকে নির্বাচনের জন্য প্রায় ৪ কোটি ৬০ লাখ ভোটার রয়েছে।

প্রতিটি জায়গার ফলাফল রাতে এবং শুক্রবার সকালে ঘোষণা করা হবে।

সরকার গঠনের জন্য রাজনৈতিক দলগুলোকে অর্ধেকের বেশি অর্থাৎ অন্তত ৩২৬টি আসনে জয় পেতে হবে।

প্রথমবারের মতো ফটো আইডির ব্যবহার

নিবন্ধন সম্পন্ন করেছেন ১৮ বছরের ঊর্ধ্বের এমন নাগরিকরা যুক্তরাজ্যের এবারের নির্বাচনে ভোট দিতে পারবেন। গত ১৮ জুন এই নিবন্ধনের সময়সীমা শেষ হয়েছে।

২০২২ সালের এক আইনি পরিবর্তনের মাধ্যমে দেশটির বাইরে ১৫ বছরের বেশি সময় ধরে অবস্থান করা প্রায় ২০ লাখ ব্রিটিশ নাগরিকও ভোটের জন্য নিবন্ধন করতে পেরেছে।

এবারের নির্বাচনেই প্রথমবারের মতো ইংল্যান্ড, ওয়েলস এবং স্কটল্যান্ডের ভোটারদের ভোট দেওয়ার জন্য ফটো আইডি বা শনাক্তকরণ ছবি দেখাতে হবে।

এক্ষেত্রে পাসপোর্ট, ড্রাইভিং লাইসেন্স, বয়স্ক বা অক্ষম ব্যক্তির বাস পাস এবং ওয়েস্টার ৬০+ কার্ডসহ মোট ২২ ধরনের আইডি কার্ড গ্রহণযোগ্য ধরা হচ্ছে।

অবশ্য উত্তর আয়ারল্যান্ডে ২০০৩ সাল থেকেই ভোট দেয়ার জন্য আইডি দেখাতে হয়। সেখানে নয় ধরনের আইডি কার্ড দেখানো যায়।

অন্যদিকে, যারা সঠিক আইডি ছাড়া ভোট দেওয়ার জন্য নিবন্ধন করেছেন, তারা ভোটার অথরিটি সার্টিফিকেট নামে বিনামূল্যের একটি নথির জন্য আবেদনের সুযোগ পেয়েছেন।

ইংল্যান্ড, স্কটল্যান্ড এবং ওয়েলসের যেসব ভোটারের আইডি কার্ড হারিয়ে গেছে বা চুরি হয়েছে তারা ভোটের দিন বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত ত জরুরি প্রক্সি ভোটের জন্য আবেদন করতে পারবেন, যাতে করে অন্য কোনো নিবন্ধিত ভোটার তাদের পক্ষে ভোট দিতে পারে।

অনেকেই ইতোমধ্যেই ডাকযোগে ভোট দিয়ে নিজ নির্বাচনি এলাকার জন্য নিজের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিয়েছেন।

যারা পোস্টাল ভোটের জন্য আবেদন করেছেন কিন্তু এখনও তা ফেরত দিতে পারেননি তারা রাত ১০টায় ভোট শেষ হওয়ার সময়ের মধ্যে তাদের স্থানীয় ভোটকেন্দ্রে তা হস্তান্তর করতে পারবেন।

এছাড়াও অফিস চলাকালীন স্থানীয় কাউন্সিল অফিসেও পোস্টাল ভোট জমা দেয়া যাবে।

যুক্তরাজ্যের সাধারণ নির্বাচনের খুঁটিনাটি বিষয়

যুক্তরাজ্যে নির্বাচিত সরকারের মেয়াদ হয় পাঁচ বছরের। গতবার, অর্থাৎ ২০১৯ সালের নির্বাচনে জয়ী হয়েছিল কনজারভেটিভ পার্টি।

নিয়ম মাফিক পরবর্তী সাধারণ নির্বাচন ২০২৫ সালের জানুয়ারির মধ্যে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। অনেকে শরতে নির্বাচন হতে পারে এমন অনুমান করলেও বাস্তবে তা হয়নি।

যুক্তরাজ্য ৬৫০টি নির্বাচনি কেন্দ্র বা এলাকায় বিভক্ত। এই প্রত্যেক নির্বাচনি এলাকার ভোটাররা একজন সাংসদ নির্বাচন করেন যারা তাদের হয়ে 'হাউস অফ কমন্স'-এ প্রতিনিধিত্ব করেন।

নির্বাচনি ময়দানে লড়াই করতে নামা প্রার্থীদের মধ্যে অধিকাংশ কোনও না কোনও রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি। তবে কেউ কেউ আবার স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবেও ভোটে লড়েন।

মূল প্রতিদ্বন্দ্বী কারা?

বর্তমানে যে দুই দল সবচেয়ে বেশি ভোট পেতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে তারা হলো ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টি ও লেবার পার্টি।

৪৪ বছরের ঋষি সুনাক কনজারভেটিভ পার্টির নেতৃত্ব দিচ্ছেন। ২০২২ সালে যখন তিনি প্রধানমন্ত্রী হন তখন তার বয়স ছিল ৪২। আধুনিক সময়ে ব্রিটেনের সবচেয়ে কম বয়সের প্রধানমন্ত্রী মি. সুনাক।

শুধু তাই নয়, তার হাত ধরেই এই প্রথমবার কোনও ব্রিটিশ-ভারতীয় ব্যক্তি প্রধানমন্ত্রীর পদে অধিষ্ঠিত হয়েছেন।

অন্যদিকে, লেবার পার্টির নেতৃত্বে রয়েছেন স্যার কিয়ের স্টারমার। তার বয়স ৬১ বছর।

২০২০ সালে জেরেমি করবিনের পর দলের নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য নির্বাচিত হন তিনি।

এর আগে ‘ক্রাউন প্রসিকিউশন সার্ভিস’-এর প্রধান ছিলেন মি. স্টারমার। পাবলিক প্রসিকিউশনের পরিচালক হিসাবেও দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি।

ভোটের ফল ঘোষণার পরের পদক্ষেপ

ভোট গণনার পর যে দলের কাছে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক এমপি (সাংসদ) রয়েছে সেই দলের নেতাকে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার এবং সরকার গঠন করার জন্য আহ্বান জানান রাজা।

দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সাংসদ থাকা দলের নেতাই হন সংসদে বিরোধী দলনেতা।

যদি কোনও দলই সাংসদের নিরিখে সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পায় তাহলে সেই দল নিজেদের সাংসদদের উপর নির্ভর করে আইন পাশ করতে পারে না। এর ফলে 'হাং পার্লামেন্ট' বা ত্রিশঙ্কু অবস্থার সৃষ্টি হয়।

এই পরিস্থিতিতে বৃহত্তম দল সিদ্ধান্ত নিতে পারে অন্য দলের সঙ্গে মিলে জোট সরকার গঠনের।

অথবা সংখ্যালঘু সরকার হিসাবে কাজ করতে পারে। কিন্তু সেই পরিস্থিতিতে কোনও আইন পাশ করার সময় তাদের অন্য দলের ভোটের উপর নির্ভর করে থাকতে হবে।

2024-07-05

যুক্তরাজ্যের কারাগার থেকে মুক্তি পেলেন উইকিলিকস প্রতিষ্ঠাতা জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ

দীর্ঘ আইনি লড়াইয়ের পর অবশেষে যুক্তরাজ্যের কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছেন মার্কিন গোপন দলিল ফাঁস করে সাড়া ফেলে দেওয়া ওয়েবসাইট উইকিলিকসের প্রতিষ্ঠাতা জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ।

গত সোমবার তাকে মুক্তি দিয়েছে যুক্তরাজ্য।

নিজের অপরাধ স্বীকার করার বিষয়ে মি. অ্যাসাঞ্জ সম্প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যে সমঝোতা চুক্তি করেছেন, সেটির ধারাবাহিকতাতেই তাকে ছেড়ে দিয়েছে যুক্তরাজ্য সরকার।

মি. অ্যাসাঞ্জ এখন নিজের দেশ অস্ট্রেলিয়ায় ফিরে যাবেন বলে যুক্তরাজ্যের বিচার বিভাগের একটি চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে।

যুক্তরাজ্যের পুলিশ ৫২ বছর বয়সী মি. অ্যাসাঞ্জকে ২০১৯ সালের গ্রেফতার করে। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, তিনি মার্কিন প্রতিরক্ষা বিষয়ক গোপন তথ্য সংগ্রহ এবং প্রকাশের ষড়যন্ত্রের সঙ্গে যুক্ত।

গত কয়েক বছর ধরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যুক্তি দিয়ে আসছে যে, মি. অ্যাসাঞ্জের প্রতিষ্ঠান উইকিলিকস ইরাক ও আফগানিস্তান যুদ্ধের বিষয়ে এমন কিছু তথ্য প্রকাশ করেছে, যা অনেক মানুষের জীবনকে বিপন্ন করে তুলেছে।

প্রসঙ্গতঃ, ২০১০ সালে ইরাক ও আফগানিস্তানে যুদ্ধের বিষয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গোপন নথি ফাঁস করে বিশ্বজুড়ে ব্যাপক হৈ-চৈ ফেলে দেয় জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ প্রতিষ্ঠিত ওয়েবসাইট উইকিলিকস।

এরপর মি. অ্যাসাঞ্জের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা দায়ের করে যুক্তরাষ্ট্র, শুরু হয় গ্রেফতার তৎপরতা।

গ্রেফতার এড়াতে এক পর্যায়ে মি. অ্যাসাঞ্জ লন্ডনের ইকুয়েডর দূতাবাসে আশ্রয়ে নেন এবং সেখানেই প্রায় সাত বছর কাটান।

২০১৯ সালে গ্রেফতার হওয়ার পর গত পাঁচ বছর যুক্তরাজ্যের কারাগারে ছিলেন মি. অ্যাসাঞ্জ। সেখান থেকেই তিনি যুক্তরাষ্ট্রে প্রত্যার্পণের বিষয়ে আইনি লড়াই চালিয়ে আসছিলেন।

সম্প্রতি মি. অ্যাসাঞ্জ মার্কিন সরকারের সঙ্গে একটি সমঝোতা চুক্তি করেন। চুক্তি অনুযায়ী, তিনি এখন তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ স্বীকার করে নিবেন। কিন্তু তাকে নতুন করে আর কারাগারে যেতে হবে না।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বিবিসি’র পার্টনার সিবিএসের খবরে বলা হয়েছে যে, নিজের অপরাধ স্বীকার করার জন্য মি. অ্যাসাঞ্জকে কারাগারে পাঠানো হবে না। উল্টো, এতদিন তিনি যে কারাভোগ করেছেন, সেটির জন্য ক্ষতিপূরণ পাবেন।

মি. অ্যাসাঞ্জ ইতোমধ্যেই যুক্তরাজ্যের কারাগার থেকে বের হয়েছেন বলে জানিয়েছে তার প্রতিষ্ঠান উইকিলিকস।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ‘এক্স’ এ নিজেদের অ্যাকাউন্টে প্রতিষ্ঠানটি লিখেছে যে, যুক্তরাজ্যের কারাগারের একটি ছোট্ট কক্ষে ১৯০১ দিন বন্দী থাকার পর সোমবার জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ ছাড়া পেয়েছেন।

“(সোমবার) বিকালে তাকে স্ট্যানস্টেড বিমানবন্দরে ছেড়ে দেওয়া হয়, যেখান থেকে তিনি একটি বিমানযোগে যুক্তরাজ্য ত্যাগ করেন,” বলেছে উইকিলিকস।

মি. অ্যাসাঞ্জ এরপর অস্ট্রেলিয়া ফিরবেন বলেও জানানো হয়েছে।

এক্স অ্যাকাউন্টে মি. অ্যাসাঞ্জের একটি ভিডিও পোস্ট করেছে উইকিলিকস।

সেই ভিডিওতে জিনস ও নীল রঙের শার্ট পরা মি. অ্যাসাঞ্জ স্ট্যানস্টেড বিমানবন্দরে দেখা গেছে। তবে বিবিসির পক্ষে স্বাধীনভাবে ভিডিওটি যাচাই করে দেখা সম্ভব হয়নি।

জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জের স্ত্রী স্টেলা মরিস অ্যাসাঞ্জ এক্স পোস্টে মি. অ্যাসাঞ্জের সমর্থকদের ধন্যবাদ জানিয়েছেন।

তিনি বলেছেন, সমর্থকরা বছরের পর বছর ধরে পাশে থেকেছেন বলেই মি. অ্যাসাঞ্জের মুক্তির দাবি পূরণ হয়েছে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যে সমঝোতা চুক্তি হয়েছে, সেটি অনুযায়ী মি. অ্যাসাঞ্জকে দোষী সাব্যস্ত করার বিষয়টি আগামী ২৬শে জুন উত্তর মারিয়ানা দ্বীপপুঞ্জের একটি আদালতে চূড়ান্ত হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

অস্ট্রেলিয়ার কাছাকাছি অবস্থিত বলেই বিচারিক কার্যক্রম চালানোর জন্য প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ওই দ্বীপটিকে বেছে নেওয়া হয়েছে বলে জানা যাচ্ছে।

মি. অ্যাসাঞ্জের মুক্তি এবং মামলার পরবর্তী কার্যক্রমের বিষয়ে তার আইনজীবী রিচার্ড মিলার কোনও মন্তব্য করেননি।

তবে এরআগে দীর্ঘদিন ধরে তার পক্ষের আইনজীবীরা দাবি করে আসছিলেন যে, মি. অ্যাসাঞ্জের বিরুদ্ধে করা মামলা রাজনৈতিকভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।

এদিকে, বার্তাসংস্থা এএফপিকে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে অস্ট্রেলিয়া সরকারের একজন মুখপাত্র বলেছেন যে মামলাটি “অনেক লম্বা সময় ধরে চলছে”।

অস্ট্রেলিয়ার পক্ষ থেকে মার্কিন সরকারের প্রতি অনুরোধ জানানো হয়েছিল যে, তারা যেন জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জের বিরুদ্ধে বিচার কার্যক্রম প্রত্যাহার করেন।

এরপর গত এপ্রিলে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন জানিয়েছেন, তিনি অস্ট্রেলিয়া সরকারের ওই অনুরোধ বিবেচনা করে দেখছেন।

এ ঘটনার পরের মাসেই যুক্তরাজ্যের আদালত রায় দেয় যে মি. অ্যাসাঞ্জ চাইলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রত্যর্পণের বিরুদ্ধে নতুন একটি আপিল আবেদন করতে পারেন।

এই রায়ের পর মি. অ্যাসাঞ্জের স্ত্রী স্টেলা সাংবাদিকদের বলেছিলেন, বাইডেন প্রশাসনের উচিত “লজ্জাজনক এই বিচার” থেকে নিজেকে দূরে রাখা।

তথ্য ফাঁসের পর মার্কিন সরকার মি. অ্যাসাঞ্জের বিরুদ্ধে ১৮টি মামলা করেছিলেন, যেগুলোর বেশিরভাগই করা হয় দেশটির গুপ্তচরবৃত্তি বিষয়ক আইনের অধীনে।

এরপর মার্কিন সরকারের কৌঁসুলিরা চেয়েছিলেন, প্রতিটি মামলার জন্য আলাদা বিচার কার্যক্রম পরিচালনা করে মি. অ্যাসাঞ্জকে শাস্তি দিতে।

জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ ২০০৬ সালে উইকিলিকস নামের ওয়েবসাইট প্রতিষ্ঠা করেন।

মার্কিন সরকারের দাবি অনুযায়ী, এই ওয়েবসাইটটি তাদের এক কোটিরও বেশি গোপন নথি প্রকাশ করেছে, যা দেশটির সরকারি গোপন তথ্য ফাঁসের সবচেয়ে বড় ঘটনা বলে জানানো হয়।

উইকিলিকস ২০১০ সালে মার্কিন সামরিক বাহিনীর একটি ভিডিও প্রকাশ করেছিল।

ওই ভিডিওতে ইরাকের বাগদাদে রয়টার্সের দুই সাংবাদিকসহ এক ডজনেরও বেশি ইরাকি বেসামরিক নাগরিককে হত্যা করা করতে দেখা যায়।

এ ঘটনার জেরে মি. অ্যাসাঞ্জের অন্যতম সহযোগী মার্কিন সেনাবাহিনীর গোয়েন্দা তথ্য বিশ্লেষক চেলসি ম্যানিংকে ৩৫ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

অন্যদিকে, তথ্য ফাঁসের অভিযোগে মার্কিন সরকারের মামলা ছাড়াও সুইডেনেও মি. অ্যাসাঞ্জের বিরুদ্ধে ধর্ষণ ও যৌন নিপীড়নের পৃথক অভিযোগ তোলা হয়।

সেই অভিযোগ অস্বীকার করেছিলেন মি. অ্যাসাঞ্জ।

মূলতঃ সুইডেনে মামলা হওয়ার পরেই মি. অ্যাসাঞ্জ ইকুয়েডরের লন্ডন দূতাবাসে সাত বছর লুকিয়ে ছিলেন।

কারণ তিনি আশঙ্কা করছিলেন যে সুইডেন তাকে গ্রেফতার করে মার্কিন সরকারের হাতে তুলে দিতে পারে।

পরে তিনি লন্ডন পুলিশের কাছে ধরা দেন।

তথ্য ফাঁসের পর দীর্ঘস্থায়ী আইনি লড়াই চলাকালে মি. অ্যাসাঞ্জকে খুব কমই জনসমক্ষে দেখা গেছে।

কারাগারে থাকা অবস্থায় ২০২১ সালে তিনি একবার হৃদরোগেও আক্রান্ত হয়েছিলেন বলে জানা যায়।

2024-06-26

ইউরোপ জুড়ে বাড়ছে উগ্র ডানপন্থী পার্টিগুলোর প্রভাব

ফ্রান্সের অবস্থা এখন ছুরির ফলার ওপর দিয়ে হাঁটার মতো।

মঙ্গলবার প্যারিসের কাছে ফরাসী-আলজেরিয়ান এক ১৭-বছরের তরুণ পুলিশের গুলিতে নিহত হবার পর যে সহিংসতা শুরু হয় - তা এখন সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ছে।

ফ্রান্সে এ ধরনের দাঙ্গা যে আগে হয়নি তা নয়। কিন্তু এবার নিহতের পরিবারের প্রতি সহানুভূতি থেকে হোক বা পুলিশের প্রতি সমর্থন থেকেই হোক - যে আবেগ-অনুভূতির বহিপ্রকাশ ঘটছে, তার এমন তীব্রতা ২০০৫ সালের পরে আর দেখা যায়নি।

একদিকে দেখা যাচ্ছে - প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রঁ এখন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে হিমশিম খাচ্ছেন। আর অন্যদিকে তার রাজনৈতিক শত্রু উগ্র-দক্ষিণপন্থী মারিন লা পেন হয়তো তার নিরাপত্তা এবং অভিবাসন-বিরোধিতার ক্ষেত্রে কড়া বার্তার কারণে জনমত জরিপে এর ফায়দা ওঠাবেন।

ইউরোপের সর্বত্র উগ্র-ডানদের উত্থান ঘটছে

এখন ইউরোপে আপনি চারদিকে তাকিয়ে দেখুন - উত্তর, দক্ষিণ, পূর্ব, পশ্চিম সর্বত্রই রংবেরং এর উগ্র-দক্ষিণপন্থী পার্টিগুলোর উত্থান ঘটছে।

এদের কেউ অতীতচারী বা নস্টালজিক জাতীয়তাবাদী, কেউবা লোকরঞ্জনবাদী বা পপুলিস্ট জাতীয়তাবাদী, কেউ আবার নব্য-ফ্যাসিস্ট শিকড় থেকে গজানো কট্টর রক্ষণশীল পার্টি।

বিংশ শতাব্দীতে ইউরোপে নাৎসী জার্মানি আর ফ্যাসিস্ট ইতালির বিরুদ্ধে যে ব্যাপক যুদ্ধ হয়েছিল - তারপর এখানে বেশির ভাগ ভোটারের মনে একরকম অনুভূতি তৈরি হয়ে গিয়েছিল যে চরম ডানপন্থীদেরকে আর কখনো ভোট দেয়া যাবে না। মূলধারার রাজনৈতিক দলগুলো উগ্র ডানপন্থী দলগুলোর সাথে সহযোগিতা করতে অস্বীকার করতো।

কিন্তু সেই সব পুরোনো 'ট্যাবু' এখন আস্তে আস্তে কেটে যাচ্ছে।

ইউরোপে উগ্র ডানদের উত্থান শুরু হয়েছিল ভিয়েনা থেকে

সেটা ২০০০ সালের কথা। আমি তখন থাকতাম ভিয়েনাতে।

সে বছরই প্রথম একটি মধ্য-ডানপন্থী দল আর ফ্রিডম পার্টি নামে একটি উগ্র-ডানপন্থী দলের সাথে কোয়ালিশন গড়ে।

সে সময় এটা সারা দুনিয়ার সংবাদমাধ্যমে শিরোনাম হয়েছিল।

এমনকি ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন ভিয়েনার ওপর কূটনৈতিক নিষেধাজ্ঞাও আরোপ করেছিল।

আর এখন - ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ ইতালিতে ক্ষমতাসীন জর্জা মেলোনি। তিনি এমন একটি পার্টির প্রধান যার উৎস প্রোথিত নব্য-ফ্যাসিস্ট আন্দোলনে।

ইতালি, ফিনল্যান্ড থেকে হাঙ্গেরি - সবখানেই উগ্র-ডানরা বাড়ছে

ফিনল্যান্ডে তিন মাস ধরে বিতর্ক চলার পর 'দ্য ফিন্স' নামের উগ্র ডানপন্থী জাতীয়তাবাদী পার্টি সম্প্রতি ক্ষমতাসীন কোয়ালিশন সরকারে যোগ দিয়েছে।

সুইডেনের পার্লামেন্টে এখন দ্বিতীয় বৃহত্তম পার্টি হচ্ছে অভিবাসন-বিরোধী এবং বহুসংস্কৃতিবাদ বিরোধী সুইডেন ডেমোক্র্যাটস। ডানপন্থী কোয়ালিশন সরকারের তারা এক গুরুত্বপূর্ণ সমর্থনদাতা।

গত রোববার গ্রিসের নির্বাচনে তিনটি উগ্র ডানপন্থী দল পার্লামেন্টে ঢোকার জন্য যথেষ্ট আসন জিতেছে।

অন্যদিকে স্পেনে সাম্প্রতিক আঞ্চলিক নির্বাচনে ভক্স পার্টি নামে একটি বিতর্কিত জাতীয়তাবাদী দল এতটাই ভালো ফল করেছে - যা সকল হিসেব-নিকেশকে ভুল প্রমাণ করেছে।

এটিই হচ্ছে ১৯৭৫ সালে ফ্যাসিস্ট একনায়ক জেনারেল ফ্রাংকোর মৃত্যুর পর স্পেনে প্রথম সফল উগ্র-ডানপন্থী পার্টি।

স্পেনে আর তিন সপ্তাহ পরেই জাতীয় নির্বাচন এবং তারপর এই ভক্স পার্টি হয়তো রক্ষণশীলদের সাথে কোয়ালিশন সরকার গঠন করবে - এমন কথাবার্তা এর মধ্যেই শুরু হয়ে গেছে।

পোল্যান্ড আর হাঙ্গেরিতেও এখন আছে কট্টর রক্ষণশীল, একনায়কতান্ত্রিক মনোভাবের সরকার।

এই তালিকা লম্বা হচ্ছে তো হচ্ছেই।

জার্মানিতে উঠছে এএফডি

এমনকি জার্মানিতেও উগ্র ডানপন্থী পার্টির উত্থান হচ্ছে - যে দেশটি তাদের নাৎসী অতীত নিয়ে খুবই স্পর্শকাতর।

সেখানে এখন জনমত জরিপগুলোয় দেখা যাচ্ছে - চ্যান্সেলর ওলাফ শোলৎজের সোশ্যাল ডেমোক্র্যাট (এসপিডি) পার্টির সাথে হয় সমানে-সমানে, নয়তো সামান্য এগিয়ে আছে উগ্র-ডানপন্থী দল এএফডি।

গত সপ্তাহ শেষেই জার্মানিতে এএফডির একজন প্রার্থী এই প্রথমবারের মতো একটি স্থানীয় নেতৃত্বের পদে জয়লাভ করেছেন।

এসপিডি একে "রাজনৈতিক বাঁধ ভেঙে দেবার মত ঘটনা" বলে আখ্যায়িত করছে।

তাহলে কী ঘটছে ইউরোপে?

সুতরাং প্রশ্ন হলো, ইউরোপে কী ঘটছে তাহলে?

সত্যিই কি ইউরোপের লক্ষ লক্ষ ভোটার উগ্র ডানপন্থার দিকে মোড় নিচ্ছে? নাকি তারা এর মধ্যে দিয়ে তাদের প্রতিবাদ জানাচ্ছে?

এ প্রশ্নও করা যায় যে, ইউরোপে কি তাহলে শহুরে উদারপন্থী ভোটার এবং বাদবাকি রক্ষণশীল ভোটারদের মধ্যে একরকম মেরুকরণ ঘটছে?

তা ছাড়া, আমরা যখন কিছু দলকে 'উগ্র ডানপন্থী' তকমা দিচ্ছি তখন আমরাই বা আসলে কী বোঝাচ্ছি?

বিশেষ করে নির্বাচনের আগে যদি অভিবাসন-বিষয়ে কোন মূলধারার রাজনীতিকের কথাবার্তা শোনেন তাহলে দেখবেন - তারা কতটা কট্টরপন্থীর মত শোনাতে পারেন।

যেমন মধ্য-ডানপন্থী ডাচ প্রধানমন্ত্রী মার্ক রুটের কথাই ধরুন।অথবা শুনে দেখুন নিরাপত্তার প্রশ্নে স্বঘোষিত মধ্যপন্থী এমানুয়েল ম্যাক্রঁর কথাবার্তা ।

ইউরোপিয়ান কাউন্সিল অব ফরেন রিলেশন্স এর পরিচালক হলেন মার্ক লিওনার্ড।

তিনি বলছেন, এ ব্যাপারটি মারাত্মক সব বৈপরীত্যে ভরা।

একদিকে দেখা যাচ্ছে বেশ কিছু মূলধারার রাজনীতিবিদ সম্প্রতি উগ্র-ডানপন্থীদের শ্লোগান বা অবস্থানকে আত্মসাৎ করে নিয়েছেন। তারা আশা করছেন এতে ওই দলগুলোর সমর্থকরা তার পক্ষে চলে আসবে। কিন্তু এর ফলে উগ্র-ডানপন্থাকে রাজনীতির মূলধারার অংশ দল বলে মনে করাতে সহায়ক হচ্ছেন তারা।

একই সঙ্গে আবার ইউরোপের বেশ কিছু উগ্র ডানপন্থী দল ইচ্ছে করেই নিজেদের রাজনীতির মধ্যপন্থার কাছাকাছি নিয়ে আসছে - যাতে তারা আরো মধ্যপন্থী ভোটারের সমর্থন পাবে বলে আশা করছে।

রাশিয়া ও ব্রেক্সিটের ক্ষেত্রে অবস্থান

উদাহরণ হিসেবে রাশিয়ার ব্যাপারে তাদের মনোভাবটা দেখা যাক।

উগ্র ডানপন্থী দলগুলো যেমন ইতালির দ্য লিগ, ফ্রান্সের মারিন লা পেন এবং অস্ট্রিয়ার ফ্রিডম পার্টি - এদের ঐতিহ্যগতভাবেই মস্কোর সাথে ঘনিষ্ঠতা ছিল।

কিন্তু রাশিয়া ইউক্রেনে অভিযান চালানোর পর এসব দলের নেতারা তাদের কথাবার্তার ধরণ পাল্টে ফেলেছেন।

মার্ক লিওনার্ড বলছেন, উগ্র-ডানপন্থী দলগুলোর সাথে ইইউ-র সম্পর্কের কথা।

২০১৬ সালে ব্রিটেনের ব্রেক্সিট ভোটের পর ব্রাসেলসে একটা ভয় তৈরি হয়েছিল যে এর পর হয়তো ফ্রান্স, ডেনমার্ক ও ইতালি ইইউ থেকে বেরিযে যেতে চাইবে।

অনেক ইউরোপিয়ান দেশের নেতাদেরই ইইউর ব্যাপারে গভীর সংশয় আছে। তবে বেশিরভাগ ইউরোপীয় ভোটারের জন্যই ইইউ ত্যাগ বা ইউরো ত্যাগের মত ধারণা 'খুব বেশি বিপ্লবী' ছিল ।

সে জন্য উগ্র-ডান দলগুলো এখন আর ইইউ বা ইউরো ত্যাগের কথা বলছে না।

জনমত জরিপে দেখা যায়, ইউরোপিয়ানদের মধ্যে ইইউ-তে থাকার চিন্তাই এখন বেশি জনপ্রিয়।

সে কারণে এখন উগ্র-ডানপন্থী দলগুলো বলছে ইইউ-র সংস্কারের কথা - ইইউ থেকে বেরিয়ে যাবার কথা বলছে না।

এসব দলগুলো ইউরোপিয়ান পার্লামেন্টের নির্বাচনে ভালো করবে বলে জরিপে আভাস মিলছে।

মূলধারার রাজনীতি নিয়ে অসন্তোষ

প্যারিস-ভিত্তিক ইনস্টিটিউট মনটেইন-এর ইউরোপ কর্মসূচির পরিচালক জর্জিনা রাইট বলছেন, তিনি মনে করেন মূলধারার রাজনীতি নিয়ে অসন্তোষ সৃষ্টি হবার কারণেই উগ্র-ডানপন্থীদের পুনরুত্থান ঘটছে।

তিনি বলছেন, উগ্র-ডানপন্থীরা যেরকম সোজা-সাপ্টাভাবে কথা বলে তা ইউরোপের অনেক ভোটারই পছন্দ করছে। তা ছাড়া তিনটি ক্ষেত্রে ঐতিহ্যবাহী ধারার রাজনীতিবিদরা তাদের প্রশ্নের জবাব দিতে পারছে না- এতেও তারা হতাশ।

এ তিনটি ক্ষেত্র হলো:

১. আত্মপরিচয় সংক্রান্ত ইস্যু: খোলা সীমান্ত নিয়ে আতংক, জাতীয় আত্মপরিচয় এবং ঐতিহ্যগত মূল্যবোধের অবক্ষয়।

২. অর্থনীতি : বিশ্বায়নকে প্রত্যাখ্যানের মানসিকতা এবং ভোটারদের সন্তান ও নাতি-নাতনীদের জন্য উন্নততর ভবিষ্যতের নিশ্চয়তা মিলছে না - সে জন্য তারা ক্ষুব্ধ।

৩. সামাজিক ন্যায়বিচার: যেসব নিয়মনীতি নাগরিকদের জীবন নিয়ন্ত্রণ করে তার ওপর জাতীয় সরকারগুলোর নিয়ন্ত্রণের অভাব।

এ বছর নেদারল্যান্ডসে উগ্র-ডানপন্থী লোকরঞ্জনবাদী দল ফার্মার-সিটিজেন মুভমেন্ট পার্লামেন্টের উচ্চ কক্ষে সবচেয়ে বেশি আসন পায়। এ ঘটনা সংবাদমাধ্যমে বড় খবর হয়।

ফ্রান্সে এমানুয়েল ম্যাক্রঁ পেট্রোলের দাম বাড়ানোর চেষ্টা করলে তিনি উগ্র-ডানপন্থী গ্রুপ ও তথাকথিত হলুদ-ভেস্টধারী বিক্ষোভকারীদের প্রতিবাদের সম্মুখীন হন।

অন্যদিকে জার্মানিতে গ্রিন পার্টি যেসব পরিবেশগত সংস্কার করার অঙ্গীকার করেছিল - তা তারা বাজেট ও জনরোষের ভয়ে বাস্তবায়ন করতে পারছে না।

2024-07-01

অবৈধ বাংলাদেশিদের নিয়ে লেবার পার্টির নেতার বক্তব্যে ব্রিটেনের রাজনীতিতে তোলপাড়

ব্রিটেনের বিরোধী দল লেবার পার্টির নেতা স্যার কিয়ার স্টারমার দেশটিতে অবৈধ বাংলাদেশি অভিবাসীদের নিয়ে যে মন্তব্য করেছেন, তার জের ধরে তুমুল বিতর্ক চলছে দেশটির রাজনীতিতে। ব্রিটেনে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের অবৈধ অভিবাসী থাকার পরও বাংলাদেশ নিয়ে আলাদা বক্তব্যে মি. স্টারমার নিজ দল ও বাংলাদেশি কমিউনিটির তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছেন।

আগামী চৌঠা জুলাই যুক্তরাজ্যের সাধারণ নির্বাচন সামনে রেখে গত সোমবার ডেইলি সান আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে মি. স্টারমার অবৈধ অভিবাসী হিসেবে উদাহরণ টানতে গিয়ে বাংলাদেশ প্রসঙ্গ টানেন।

তার এ বক্তব্যে বিপাকে পড়েছেন লেবার পার্টির মনোনয়ন পাওয়া বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত প্রার্থীরা। নির্বাচনের আগে ওই বক্তব্যে ক্ষুদ্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন ব্রিটেনে বসবাসরত বাংলাদেশিরা।

ব্রিটেনের সংবাদমাধ্যম দ্যা টেলিগ্রাফের খবরে বলা হয়েছে, অবৈধ অভিবাসী নিয়ে মি. স্টারমারের এই বক্তব্য তীব্র ক্ষোভ সমালোচনা তৈরি করেছে বাংলাদেশ কমিউনিটিতে।

এমনকি এই বক্তব্য দেয়ার পর নিজ দলের সদস্যদেরও তোপের মুখে পড়েছেন লেবার পার্টির এই নেতা।

দলীয় নেতার এই বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় লেবার পার্টির টাওয়ার হ্যামলেটস-এর ডেপুটি লিডার ও কাউন্সিলর বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত সাবিনা আখতার লেবার পার্টি থেকে পদত্যাগ করেছেন।

নিজের এক্স একাউন্টে পদত্যাগের কথা জানিয়ে সাবিনা আক্তার বলেছেন, “দলের নেতা যখন আমার কমিউনিটিকে আলাদা করে এবং আমার বাংলাদেশি পরিচয়কে অপমান করে, তখন আমি আর দল নিয়ে গর্ব করতে পারিনা।’

ব্রিটিশ গণমাধ্যম স্কাই নিউজের খবরে বলা হচ্ছে, বাংলাদেশিদের নিয়ে এমন বক্তব্যে তোপের মুখে এর ব্যাখ্যা দিয়ে দুঃখ প্রকাশ করেছে মি. স্টারমার।

যেখানে তিনি বলেছেন, “আমি কাউকে আঘাত দিতে চাইনি। আপনারা যে আমার কথায় কষ্ট পেয়েছেন এনিয়ে আমি উদ্বিগ্ন”।

বিতর্কের শুরু যেখান থেকে

যুক্তরাজ্যে সাধারণ নির্বাচনের আগে ডেইলি সানের ইলেকশন শো-ডাউন অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন লেবার পার্টির নেতা কিয়ার স্টারমার। সেসময় একজন অবৈধ অভিবাসী ইস্যুতে তার অবস্থান জানতে চান।

জবাবের একপর্যায়ে বাংলাদেশকে উদাহরণ হিসেবে টেনে স্টার্মার বলেন, “যারা বাংলাদেশের মতো দেশ থেকে এদেশে এসেছেন, তাদের ফেরত পাঠানো হতে পারে। কয়েকটি দেশের মানুষের এখানে আসা বন্ধ করতে পারি আমরা।”

রুয়ান্ডা অ্যাসাইলাম প্ল্যানকে ‘ব্যয়বহুল’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, “যে দেশ থেকে তারা এসেছেন, সেখানেই তাদের ফেরত পাঠানো হবে। আমি নিশ্চিত করব সেটা।”

২০২২ সালের এপ্রিলে রুয়ান্ডা অ্যাসাইলাম প্ল্যান নামের একটি অভিবাসন নীতি প্রস্তাব করেছিল ব্রিটিশ সরকার। এতে বলা হয়, যুক্তরাজ্যে অবৈধ অভিবাসী বা আশ্রয়প্রার্থী হিসেবে চিহ্নিত ব্যক্তিদের পূর্ব আফ্রিকার দেশ রুয়ান্ডায় পুনর্বাসনের জন্য স্থানান্তর করা হবে।

বাংলাদেশি কমিউনিটি ও লেবার পার্টিতে প্রতিক্রিয়া

লেবার নেতা স্যার কিয়ার স্টারমারের এই মন্তব্যে বাংলাদেশের নাম ব্যবহার হওয়ার কারণে ক্ষোভ বাড়ে বাংলাদেশ কমিউনিটিতে।

এ মন্তব্যের পর সাম্প্রতিক ব্রিটেনের গণমাধ্যমে আলোচনায় ছিল এ সংবাদ।

যুক্তরাষ্ট্রের আগামী নির্বাচনে বাংলাদেশি যে ৩৪ জন লড়ছেন তাদের মধ্যে লেবার পার্টির মনোনয়ন পেয়েছেন আট জন। এর মধ্যে আছেন বর্তমানে এমপি রুশনারা আলী, টিউলিপ সিদ্দিক, রুপা হক ও আপসানা বেগম।

ব্রিটেনের গণমাধ্যমের খবরে বলা হচ্ছে, স্টারমারের সাম্প্রতিক বক্তব্যে ক্ষুব্ধ কেউ কেউ আবার নির্বাচনে কোনও দলীয় প্রার্থীকে ভোট না দিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী বেছে নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।

বিশেষ করে বাংলাদেশি অধ্যুষিত যেসব এলাকায় বর্তমানে লেবার পার্টির বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ এমপি রয়েছেন, সেখানে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা কিয়ার স্টার্মারের মঙ্গলবারের বক্তব্য তুলে ধরে নিজেদের পক্ষে ভোটার টানার চেষ্টা করছেন।

পদত্যাগ করা টাওয়ার হ্যামলেটের ডেপুটি লিডার সাবিনা আখতার প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, "আমি লেবার পার্টি থেকে পদত্যাগ করেছি। আমি বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কাউন্সিলের প্রথম নারী স্পিকার এবং লেবার পার্টির একজন গর্বিত সদস্য ছিলাম। আমি সারা জীবন দলকে রক্ষা করেছি এবং এর জন্য খুব গর্বিত ছিলাম। কিন্তু এটা স্পষ্ট, আমার এবং আমার কমিউনিটির কাছে এ ধরনের মন্তব্য গ্রহণযোগ্য নয়।’

ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন লেবার পার্টির নির্বাচনী প্রার্থী আপসানা বেগমও।

বুধবার এক ভিডিও বার্তায় আপসানা বেগম বলেন, “আমি স্পষ্টভাবে বলছি, আমি যতদিন আছি, অভিবাসী সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে দোষারোপ সহ্য করব না। আমাদের বাংলাদেশি সম্প্রদায় ১৯৭৮ সালে বর্ণবাদ বিরোধী আন্দোলন করে। সেই আন্দোলনে ইস্ট লন্ডনে ২৫ বছর বয়সী আলতাব আলী নিহত হন।

“তখন আমাদের স্লোগান ছিল- ‘আমরা এখানে ছিলাম, আমরা এখানে থাকব’। আপনারা আমাকে ভোট দিলে শক্তিশালী আওয়াজের জন্য ভোট দিচ্ছেন, সে বিষয়ে নিশ্চিত থাকেন। যিনি সংসদে গিয়ে যেকোনও উপায়ে আমাদের অভিবাসী সম্প্রদায়ের অধিকার এবং সম্মান রক্ষা করবে।”

টানা চারবার নির্বাচিত এমপি রুশনারা আলী “কোনও দেশকে এভাবে এককভাবে বলা ঠিক নয়। এটা ভুল হয়েছে। আমি আমার নেতাদের জানিয়েছি, এভাবে এককভাবে বললে ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হয়।”

লেবার পার্টির বিবৃতি ও স্টারমারের দু:খ প্রকাশ

বাংলাদেশি কমিউনিটিতে তীব্র ক্ষোভের মুখে এর ব্যাখ্যা দিয়েছে লেবার পার্টি। বাংলাদেশের সঙ্গে লেবার পার্টির সম্পর্ক তুলে ধরে দলটি জানায়, স্টারমার কোনো উদ্দেশ্য নিয়ে এমন মন্তব্য করেননি।

টেলিগ্রাফের খবরে বলা হয়, বাংলাদেশি কমিউনিটিতে তীব্র ক্ষোভের মুখে এর ব্যাখ্যা দিয়েছে লেবার পার্টি। বাংলাদেশের সঙ্গে লেবার পার্টির সম্পর্ক তুলে ধরে দলটি জানায়, স্টারমার কোনো উদ্দেশ্য নিয়ে এমন মন্তব্য করেননি।

লেবার পার্টির বিবৃতিতে বলা হয়, তাদের দলের সঙ্গে বাংলাদেশ ও বাংলাদেশ কমিউনিটির সম্পর্ক অত্যন্ত গভীর ও বন্ধুত্বপূর্ণ। স্টারমার নিজেও কয়েকবার বাংলাদেশ ভ্রমণ করেছেন উল্লেখ করেছেন বলেও জানান হয় এতে।

এই বক্তব্যের পর বাংলাদেশের বেসরকারি টেলিভিশন এটিএন বাংলার কাছে একটি সাক্ষাৎকার দেন মি. স্টারমার। সেই সাক্ষাৎকারেটি নিয়ে রিপোর্ট করেছে ব্রিটেনের দ্যা টেলিগ্রাফ।

এটিএন বাংলাকে দেয়া সাক্ষাৎকারে মি. স্টারমার বলেন, এই বক্তব্যের প্রতিক্রিয়া নিয়ে আমি উদ্বিগ্ন। এই ধরনের বক্তব্য দেয়া আমার উদ্দেশ্য ছিল না। আমি কাউকে আঘাত করে বক্তব্য দেই নাই।

যেখানে তিনি আরও বলেন, “লেবার পার্টি ও বাংলাদেশিদের সম্পর্ক ঐতিহাসিকভাবে অনেক সুদৃঢ়। এখানকার বাংলাদেশি সম্প্রদায়ের সাথেও আমার সুসম্পর্ক রয়েছে।

সান পত্রিকার ওই শো’তে নিজের বক্তব্যের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে তিনি এটিএন বাংলাকে বলেন, “আমি মনে করে আগামীতে লেবার পার্টি সরকার গঠন করলে বাংলাদেশ ব্রিটেন দুই দেশ একত্রে কাজ করতে পারবো। এর ফলে দুই দেশই উপকৃত হবে”।

টেলিগ্রাফের ওই খবরে বলা হয়, নিজ দলের প্রতিনিধি ও নেতাদের কাছ থেকে প্রতিক্রিয়া পাওয়ার পরই ক্ষমা ও ব্যাখ্যা দিতে বাধ্য হয়েছিলেন মি. স্টারমার।

যেখানে তিনি বৃটেনের অর্থনীতি ও সংস্কৃতিতে বাংলাদেশি সম্প্রদায়ের অবদানের কথা স্বীকার করেন এবং এই অবদানের জন্য দেশটিতে থাকা বাংলাদেশ কমিউনিটির প্রতি শ্রদ্ধা জানান তিনি।

2024-06-30